যমুনা কিনারে

একে যে সুন্দরী কনক পুতলি

একে যে সুন্দরী কনক পুতলি
খঞ্জন লোচন তার।
বদন কমলে ভ্রমরা বলয়ে
তিমির কেশের ধার।।
সই, নবীন বালিকা সে।
দৈবে উপজিল দেখিতে না পাইল
সুমতি না দিল কে ।।
নয়ন উজরে পরাণ ছটয়ে
ধৈরয উঠাল যে।
সঙ্গে কেহ নাই শুন কহি ভাই
কাহারে সুধাব কে।।
দন্ত দ্বিজ দাড়িম্ব বীজ
ওষ্ঠ বিম্বক শোভা।
দেখিয়া যুবকে মদন কোপে
মনেতে হইল লোভা।।
গলায় মাল শোভিত ভাল
তাম্বুল বদনে তার।
চর্ব্বিত চর্ব্বণে পড়িছে বদনে
বহিছে পিঙ্গল ধার।।
চণ্ডীদাস বলে গিয়াছিল জলে
আইল আপন ঘরে ।
বাজার ঝিয়ারি সুন্দরী নাগরী
তুমি কি করিবে তারে।।

অন্তঃকথন:
কৃষ্ণের পূর্বরাগের এই পদে রাধার রূপ ও কৃষ্ণের প্রথম প্রণয়ারাগ সুন্দর ফুটে উঠেছে। কে এই সুন্দরী! যেন সোনার পুতুল! খঞ্জনের মতো চঞ্চল ওদুটি আঁখি। তার পদ্মকোমল মুখখানিতে ভ্রমর ভ্রমণ করে। কেশ তার তিমিরের অবগুণ্ঠন। সখা, এ যে নবীন বালিকা! কোন দেবভাগ্যে সে এখানে এল! কিন্তু ও যে আমায় দেখলই না। এতটুকু সুমতি কি কেউ দেয়নি। ওই উজ্জ্বল নয়নের টানে ধৈর্য ভঙ্গ করে এ পোড়া পরাণ যে ছুটে পালিয়ে গেল। কিন্তু ওর সঙ্গে যে কেউ নেই বন্ধু, কাকে শুধাই বলতো ওর কথা? ও কে? দন্ত যেন তার দাড়িম্ব বীজ। আর অধরে বিম্বফলের শোভা। সে যুবতীকে দেখে হৃদ্‌মাঝারে মদনের কোপে লোভের উদয় হচ্ছে। তার কণ্ঠের মালার কি অপরূপ শোভা! মুখে তার তাম্বুল। তাম্বুল চর্বণের ফলে অধরের সীমা পার করে পিঙ্গল ধারা গড়িয়ে নামছে চিবুকে। কৃষ্ণমুখে এ রূপের বর্ণনা শুনে চণ্ডীদাস অনুমান করতে পারলেন কৃষ্ণের ইঙ্গিত। তাই তিনি বললেন, সে যে রাজার মেয়ে, সুন্দরী নাগরী। জল আনতে গিয়েছিল। আপন ঘরে ফিরল। কিন্তু কী করবে তুমি তার কথা জেনে?

পদকর্তা:চণ্ডীদাস
রাগ:শ্রীগান্ধার
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:মুনমুন ঘোষ

সন্ধিনী

শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ42