যমুনা কিনারে

খনরি খন মহঘি ভই কিছু অরুন নয়ন কই

খনরি খন মহঘি ভই কিছু অরুন নয়ন কই
কপটে ধরি মান সম্মান লেহী।
কনয় জয়ঁ পেম কসি পুনু পলটি বাঙ্ক হসি
আধি সয়ঁ অধর মধুপান দেহী।।

(অরেরে)
ইন্দুমুখি অঢ়ন কর পিয়হৃদয়খেদহর
কুসুম রস রঙ্গ সংসারসারা।।

বচনে বস হোসি জনু সসরি ভিন হোইহ তনু
সহজে বরু ছাড়ি দেহ সয়নসীমা।
প্রথমে রসভঙ্গ ভেলে লোভে মুখ সোভ গেলে
বাঁধি ভুজপাস পিয় ধরব গীমা।।

জদি নয়ন কমলবর মুকুলকের কান্তিধর
খর নখর ঘাত কই সেহে বেলা।
পরম পদ লাভসম মোদে চির হৃদয় রম
নাগরী সুরতসুখ অমিয় মেলা।।

সরস কবি সুরস ভনে চারুতর চতুরপনে
নারি আরাহিঅই পঞ্চবানা।
সকল জন সুজনগতি রানি লখিমাক পতি
রূপনরাএন সিবসিংঘ জানা।।

অন্তঃকথন:
মাধব মিলনে যাবেন রাই! আমাদের রাধারানী যাবেন প্রথমবার প্রিয়মিলনে! সখীদের তাই কত চিন্তা! অবলা কিশোরী রাই, পাছে কোন ভুল করে বসেন, পাছে মিলন পূর্ণতা না পায়, মধুময় না হয়, তাই সখীরা রাধারানীকে মিলনের রীতিনীতি শিক্ষা দিচ্ছেন। সখীরা বলছেন, শোনো রাই মাঝে মাঝে মান ও দেখাতে হয়, সেটাই প্রেমের রীতি। ক্ষণকালের জন্য নিজেকে দুর্লভ করে তুলো, কপট রাগ দেখিয়ে তোমার ওদুটি কাজল নয়নকে অরুণ করে তুলে, মানের ছলনা করে নিজের সম্মান আদায় করে নিয়ো। সোনা যেমন খাঁটি কিনা দেখে নিতে হয়, সেভাবেই প্রেমের পরীক্ষা নিয়ে তারপর ফিরে তাকিয়ো,ঈষৎ বাঁকা হেসে তারপর তোমার অর্ধ অধরের সুধা তাকে পান করতে দিয়ো, বুঝেছো! ওহে ইন্দুমণি, নিজের মান রেখো কিন্তু প্রিয়-হৃদয়ের খেদ ও হরণ করে নিয়ো। মানে তুমি দেখে শুনে মান কোরো, বেশি ও না কম ও না, বেশি তে প্রিয়ের মনে খেদ হতে পারে, তা কিন্তু হতে দেওয়া যাবে না! কুসুমশর কন্দর্পের এই রঙ্গলীলা সংসারের সারবস্তু! বুঝেশুনে লীলারসামৃত পান কোর! প্রিয়ের কথায় যেন বশ হয়ে যেও না, মাধব নিকটে এলে অঙ্গস্পর্শ করতে না দিয়ে ভিন্নতনু হয়ে সরে যেও, বরং শয্যা পার্শ ছেড়ে দিও তাকে, তুমি বুঝে শুনে দূরত্ব বজায় রেখে মিলনের উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি কোরো! প্রথমেই যদি রসভঙ্গ হয়, তুমি যদি লোভে পড়ে প্রিয় মুখ চুম্বন করতে যাও, আর তোমার মুখ প্রসাধন মুছে যায়, তাহলেই কিন্তু বনমালী তোমায় বশে পেয়ে জোর করে ভুজপাশে বেঁধে তোমার গ্রীবা ধারণ করবে! যদি প্রেম মোহে তোমার নয়ন দুটি আবেশে মুদে আসে, মুকুলের কান্তিধরে অর্থাৎ ঈষৎ বিকশিত পদ্মের মত হয়ে পড়ে, তাহলেই মাধব তোমার মন পড়ে ফেলে সেই সময় তোমার খর নখরে আঘাত করে সুখ প্রদান করবে! হে শ্রীমতী, হে নাগরি, পরম-পদ-লাভের তুল্য আনন্দিত হৃদয়ে চিরকাল রমণ করো, এই সুরত সুখ অমৃতের উৎসব!পরিপূর্ণ হৃদয়ে অমৃত পান কোরো! সরস কবি আমাদের বিদ্যাপতি এই সুরসের বর্ণনা দিয়ে বলছেন, হে নারী, চারুতর চতুরপনার সঙ্গে পঞ্চশর কন্দর্পের আরাধনা কর, তবেই মিলন সার্থক হবে! মর্ত্যলোকে এই রসের মাহাত্ম্য জানেন কেবল, সকল সুজনের গতি রানী লছিমার পতি রাজা শিবসিংহ।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী