যমুনা কিনারে

জাহি লাগি গেলি হে তাহি কহাঁ লইলি হে

জাহি লাগি গেলি হে তাহি কহাঁ লইলি হে
তা পতি বৈরি পিতু কাহাঁ।
অছলি হে দুখ সুখে কহহ অপন মুখে
ভূসন গমওলহ জাঁহা।।
সুন্দরি,কি কএ বুঝাওব কন্তে।
জহ্নিকা জনম হোইত তোঁহে গেলিহে
অইলি হে তহ্নিকা অন্তে।।
জাহি লাগি গেলাহুঁ সে চলি আএল
তেঁ মোহি ধএলাঈ নুকাঈ।
সে চলি গেল তাহি লএ চললাহুঁ
তেঁ পথ ভেল অনেআঈ।।
সঙ্কর-বাহন খেড়ি খেলাইতে
মেদিনি বাহন আগে।
যে সব অছলি সঙ্গে সে সব চললি ভঙ্গ
উবরি অএলাহুঁ অছ ভাগে।।
জাহি দুই খোজ করইছহি সাসুহ্নি
সে মিলু অপনা সঙ্গে।
ভনই বিদ্যাপতি সুন বর জউবতি
গুপুত নেহ রতি-রঙ্গে।।

অন্তঃকথন:
রাধারানি ঘট কাঁখে জল আনতে যাওয়ার ছল করে অভিসারে গেছিলেন, মিলন শেষে পূর্ণ মনে ঘট ভুলে খালিহাতেই ঘরে ফিরেছেন। সেই সঙ্গে মিলনে মুছে গেছে যাবতীয় অঙ্গরাগ! এমতাবস্থায় ননদিনীর চোখকে কি ফাঁকি দেওয়া যায়? কুটিলা ননদিনী হেঁয়ালিতে সওয়াল করছেন, কিন্তু রাধারানিও কম যান না, মুখে মুখে উত্তর তাঁরও তৈরিই আছে! ননদিনী জিগ্যেস করছেন, যে জন্য গেছিলি তা কই? তার পতির শত্রু পিতাই বা কই? এ হেঁয়ালির অর্থ হল, জলের অধিপতি সমুদ্র আর তার বৈরী অগস্ত্য, সেই অগস্ত্যর জন্ম ঘটে। অর্থাৎ ননদিনী জানতে চাইছেন ঘট নিয়ে যে জল আনতে গেলি সেই জলই বা কই আর ঘটই বা কই? যেখানে অঙ্গরাগ হারিয়ে এলি সেখানে সুখে দুঃখে কেমন ছিলি সে–কথা নিজের মুখে বল তো দেখি! সুন্দরী আমার থেকে নাহয় বেঁচে যাবি কিন্তু স্বামীকে কী করে বোঝাবি? যার জন্ম হতে গেলি তার অন্তে কিনা ফিরলি! অর্থাৎ দিনের দিনের শুরুতে সেই ভোরবেলায় ঘড়া নিয়ে জল আনতে গেলি আর দিন শেষ হয়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে ফিরলি, তাও আবার জল ঘট কিছুই না নিয়ে! রাধারানী ননদিনীর এই কথার জবাবে বলছেন, যার জন্য গেছিলাম সেই যে চলে এল! জল আনতে গেলাম আর পথেই বৃষ্টির জল নামলো! সে চলে গেল যখন তখন তাকে নিয়ে আসছিলাম। বৃষ্টি থামতে তবেই না জল নিয়ে ঘরে আসতে পেলাম তাই তো পথে এত দেরি হল। তার ওপর আসার সময় পথের একদিকে একটা ষাঁড় আর অন্যদিকে একটা সাপ। সেই দেখে তো সঙ্গে যারা ছিল সবাই পালালো, আমার অনেক ভাগ্য যে রক্ষা পেয়ে প্রাণ নিয়ে ঘরে ফিরতে পেরেছি! শাশুড়ি যে দুইয়ের খোঁজ করছেন তারা নিজের সঙ্গেই মিলিয়ে গেল! অর্থাৎ প্রাণভয়ে পালিয়ে আসতে গিয়ে মাটির কলস ভেঙে মাটিতে মিশে গেল আর কলসীর জল বৃষ্টির জলে মিলে গেল! এইসব কথা শুনে বিদ্যাপতি বলছেন, শোন ভরযুবতি তুমি যতই উত্তর দাও, তোমায় দেখে গুপ্ত স্নেহ আর রতিরঙ্গ বেশ অনুমান করা যাচ্ছে!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী