যমুনা কিনারে

বুঝহি ন পারলি পরিণতি তোরি

বুঝহি ন পারলি পরিণতি তোরি।
অধরে ওললএ বাটট কাটারি।।
ফল পাওল কএ তোহসনি সীট।
কএলহ হাতী বাসক বীট।।
মঞে জানলি অনুরাগিনি মোরি।।
ওল্‌ বধির হতি হৃদয় সঁগ চোরি।।
নিরজন জানি কএল তুঅ কান।
গুপুত রহল নহি জানত আন।।
সবতহু ভেটী কএলহ বোল।
দুরজন বচনে বজওলহ ঢোল।।
বিদ্যাপতি তা জীবন সার।
জে পরদেসে লুকাবএ পার।।

অন্তঃকথন:
এক প্রেমিক পুরুষ তার ছলনাময়ী প্রেমিকাকে বলছে তুমি যে ঠিক কি পরিণতি চাও বুঝতেই পারলাম না। একান্তে দেখা হলে তোমার মুখে মিষ্টি কথা কিন্তু পথে দেখা হলে দা দিয়ে কাটতে আসো। তোমার সঙ্গে প্রেম করে খুব ফল পেলাম। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমার অনুরাগিনী, আমাদের মন চুরির কথা শুধু তুমিই জানবে, তুমি বধিরের মত থাকবে কিছু শোনো নি কিছু জানো না এমন ভাব করবে। একান্ত নির্জন জেনেই তোমায় মনের কথা বলেছিলাম। কিন্তু সে কথা তো কই গোপন রইলো না। সবাই জেনে গেছে। যার সঙ্গে দেখা হয়েছে তাকেই বলেছো সব কথা। দুর্জনের কথায় চারদিকে যেন ঢোল বেজে উঠলো। বিদ্যাপতি বলছেন যে পরের কাছ থেকে নিজের মনের কথা লুকোতে পারে তারই জীবন সার। এই পদটি রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদ নয়, সাধারণ পরকীয়া প্রেমের পদ। এই জাতীয় পরকীয়া প্রেমরসাত্মক কবিতার একটি ধারা সংস্কৃত সাহিত্য থেকেই প্রচলিত ছিল, লৌকিক সাহিত্যে তো এর বিস্তার ছিলোই। বিদ্যাপতি রচিত এই রাধাকৃষ্ণ সম্পর্কহীন পরকীয়া প্রেমের পদগুলি পাঠ করলে বোঝা যায় যে এর ওপরে প্রাথমিক ভিত্তি করেই রাধাকৃষ্ণ পরকীয়া প্রেমের পদগুলি রচিত হয়েছিল। রসমাধুর্য্য ছাড়াও রাধাকৃষ্ণের প্রেমের মূল কাঠামোটি নির্মাণ করার ক্ষেত্রে এই পদগুলির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী