যমুনা কিনারে

লোচন অরুন বুঝলি বড় ভেদ

লোচন অরুন বুঝলি বড় ভেদ।
রঅনি উজাগর গরুঅ নিবেদ।।
ততহি জাহ হরি ন করহ লাথ।
রঅনি গমওলহ জহ্নিকে সাথ।।
কুচ কুঙ্কুম মাখল হিয় তোর।
জনি অনুরাগ রাঁগি করু গোর।।
আনক ভূসন লাগল অঙ্গ।
উকুনিত বেকত হোঅ আনক সঙ্গ।।
ভনই বিদ্যাপতি বজবহুঁ বাদ।
বড়াক অনয় মৌন পয় সাথ।।

অন্তঃকথন:
বহুবল্লভ শ্রীহরি অন্য নারীর সঙ্গে রাত্রিযাপন করে প্রভাতে প্রেমপ্রার্থী হয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন রাধিকার কাছে। শ্রীমতীর অন্তরের সব ব্যথা সব অভিমান অভিযোগের তীর হয়ে ধেয়ে যাচ্ছে তখন হরির দিকে। শ্রীমতী বলছেন, তোমার রাঙা চোখ দেখেই সব রহস্য বোঝা যাচ্ছে, রাত্রিজাগরণের গুরুতর কথা তোমার চোখই বলে দিচ্ছে। হরি, আর মিছে ছলনা কোরো না, যার সঙ্গে রাত কাটালে তার কাছেই যাও। তোমার বুক কুচকুঙ্কুমে রঞ্জিত, যেন অনুরাগের রঙ তোমায় গৌরবর্ণ করে তুলেছে। অন্যের ভূষণ তোমার অঙ্গে, তাতেই ব্যক্ত যে তুমি অন্যের সঙ্গ করেছো। একভাবে দেখলে, প্রেমরসে রসিক সহৃদয় বিদ্যাপতি রাধারানীর যন্ত্রণার অভিযোগবাণী রচনা করেও যেন মন্তব্যে রাজকবি রূপে বড়মানুষের পক্ষ নিয়ে রাজ অনুগ্রহের মূল্য চুকিয়ে গেলেন! আর বৈষ্ণব ভক্ত রসিকের দৃষ্টি থেকে দেখলে বোঝা যায়, বিদ্যাপতি তো জানেন ভগবান শ্রীহরি ‘অখিলরসামৃতমূর্তি’, এও তাঁর রসাস্বাদনেরই এক প্রকার, খণ্ডিতা রাধারানীকে তাই যেন তিনি একটু ধৈর্য ধরে থাকতে বলছেন, তাহলেই এই রসের অর্থ রাধারানীও বুঝবেন, তখন আর এ মনোভাব থাকবে না।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী