(আশ্বিন-শুক্লাদ্বাদশী)
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
যাঁহা ছিলা কবিরাজ গোসাঞি।
শ্রীনিত্যানন্দ দয়া করি,’’
আপনি শ্রীনিত্যানন্দ—স্বপনে দর্শন দিয়ে
শ্যামল-সুন্দর-বেশে—স্বপনে দর্শন দিয়ে
শ্যামল-চিক্কণ-গোপবেশে—স্বপনে দর্শন দিয়ে
‘শ্যামল-চিক্কণ-গোপবেশে’—
শ্রীকৃষ্ণের,–অভেদ স্বরূপ জানাইতে—শ্যামল-চিক্কণ-গোপবেশে
জগদ্গুরু নিত্যানন্দ—স্বপনে দর্শন দিয়ে
সাক্ষাৎ দর্শন দিয়া তাঁরে—আজ্ঞা দিলা যেতে ব্রজপুরে
কবিরাজ,–যাও তুমি তোমার নিজ-ঠাঁই।।
মোর প্রভু গোসাঞি কৃষ্ণদাস।
রহেন রূপ-রঘূনাথ-পাশ।।’’
শুনি গৌর-কথামৃত—সদাই প্রেমে উনমত
রাধাকুণ্ড-তীরে বসে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
দাস গোসাঞির মুখে গৌর-কথা শুনে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
দেখিতে পেলাম না বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
দেখতে পেলাম না শচীদুলাল—হায় মোর পোড়া-কপাল
দন্তে তৃণ ধরি’ কয়-হায় আমি,–কৃষ্ণদাস দুরাশয়
একে নিত্যানন্দ-শক্তি,’’
নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলা-নৈলে,—বর্ণিতে কি পারে আনে
নিতাই-কৃপাপাত্র বিনে—নৈলে,–বর্ণিতে কি পারে আনে
গৌর-রহস্য-লীলা-গুণে—কে শক্তি ধরে বর্ণনে
আমার,–প্রভু-নিতাই-কৃপা বিনে—কে শক্তি ধরে বর্ণনে
নিগূঢ়-গৌর-লীলা-রহস্য—স্ফূর্ত্তি পাবে না কার মুখে
গৌরাঙ্গ,–বিলাসের তনু না ধরলে বুকে—স্ফূর্ত্তি পাবে না কার মুখে
শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃত—শ্রীনিত্যানন্দ-কৃপায় স্ফুরিত
কবিরাজ,–নিতাই-এর সাক্ষাৎ কৃপাপাত্র—শ্রীনিত্যানন্দ-কৃপায় স্ফুরিত
তাহে রূপ-রঘূনাথ-সঙ্গে।
রাধাকৃষ্ণ-লীলা যত, গৌর-লীলা অভিমত,
ভাসেন গোসাঞি এ-দুই তরঙ্গে।।’’
শ্রীরূপ-রঘুনাথ-,সঙ্গে—ভাসেন সদা প্রেমতরঙ্গে
শ্রীগৌর-গোবিন্দ-লীলা-প্রসঙ্গে—ভাসেন সদা প্রেম-তরঙ্গে
দুই-লীলা-কথা-প্রসঙ্গে—কভু ভাসে বা ডুবে
লীলা-পাথারে সাঁতার দিতে দিতে—কভু ভাসে কভু বা ডুবে
‘লীলা-পাথারে সাঁতার দিতে দিতে’—
শ্রীরূপ-রঘুনাথ-সঙ্গে—লীলা-পাথারে সাঁতার দিতে দিতে
ভাবাবেশে বলিলেন
দুই লীলা আস্বাদিয়ে—ভাবাবেশে বলিলেন
নিগম-নিগূঢ়-গৌর কি নিধি—ভাই তোমরা জান কি
গৌর-আমার,–যুগল-উজ্জ্বল-রস-নির্য্যাস-মূরতি—ভাই তোমরা জানকি
আবেশে বলেন কবিরাজ-গোসাঞি
শ্রীগ্রন্থের উপসংহারে—আবেশে বলেন কবিরাজ-গোসাঞি
‘শ্রীগ্রন্থের উপসংহারে’—
শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃত—শ্রীগ্রন্থের উপসংহারে
দশদিক বহে যাহা হৈতে।
সে চৈতন্য-লীলা হয়, সরোবর অক্ষয়,
মনোহংস চরাহ তাহাতে।।’’
শ্রীচৈতন্য-লীলা হয়—অক্ষয় সরোবর
যাহা হতে কৃষ্ণলীলা বয়—অক্ষয় সরোবর
‘যাহা হতে কৃষ্ণলীলা বয়’—
দশদিকে শত শত ধারে—যাহা হতে কৃষ্ণলীলা বয়
মেতে থাক দিবারাতি
সেই,–মধুর-গৌরাঙ্গ-লীলায়—মেতে থাক দিবারাতি
‘সেই,–মধুর-গৌরাঙ্গ-লীলায়’—
শ্রীকৃষ্ণ-লীলার পরিণতি—সেই,–মধুর-গৌরাঙ্গ-লীলায়
তা হতে জানিলা সর্ব্বতত্ত্ব।’’
দাস-রঘুনাথর সঙ্গ পাইয়া—গৌর-লীলারহস্য সব জানিলা
কৃষ্ণদাস-কবিরাজ গোসাঞি—গৌর-লীলারহস্য পায়
দাস-রঘুনাথের কৃপায়—গৌর-লীলারহস্য পায়
জানাইলা সকল-মহত্ত্ব।।’’
নীলাচলের গূঢ়-লীলা—হাতে ধরি’ শুনাইলা
প্রাণ-গৌরাঙ্গের লীলাগুণ—কবিরাজ শুন শুন
আর– ‘‘ভট্ট-যুগ শ্রীজীব গোসাঞি।
সবে তাঁরে দয়া কৈলা সর্ব্বতত্ত্ব জানাইলা,
ত্রিভুবনে যাঁহা সম নাই।।
সেই সূত্র-বৃত্তি করি’, নিজ-গ্রন্থ বিবরি,
তাহে হৈলা ‘চরিতামৃত’ নাম।’’
গোস্বামীগণের মর্ম্মসার—শ্রীচরিতামৃত নাম তার
সকল-সিদ্ধান্তের সার—শ্রীচরিতামৃত নাম তার
গোস্বামীগণের গ্রন্থসার—শ্রীচরিতামৃত নাম তার
সুদয়া-করুণা-বলে, জগৎ তারিলা হেলে,
নিজ-গ্রন্থ-সুধা দিয়া দান।।’’
কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোসাঞি—জগৎ উদ্ধার কৈলা
শ্রীচরিতামৃত-গ্রন্থ দিয়া—জগৎ উদ্ধার কৈলা
যোগী ন্যাসী কর্ম্মনিষ্ঠের গণ।
গ্রন্থ আস্বাদন করি’, নিজ নিজ মত ছাড়ি’,
সবে হইলা জগত-পাবন।।
হেন গোসাঞির অনুক্রম, যে না জানে সে অধম,
জগতে রহল লৌহপিণ্ড।
মুকুন্দের দয়া করি’, কর নিজ-সহচরী,
ভব-বন্ধ করি’ খণ্ড খণ্ড।।’’
(২)
সুকবি পণ্ডিত-অগ্রগণ্য।’’
কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোসাঞির—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
সবে যাঁরে করে ধন্য ধন্য।।’’
তাই করে ধন্য ধন্য
জানাইলা শ্রীচৈতন্য—তাই করে ধন্য ধন্য
অবশেষে যে সব রহিল।’’
গৌর-অবতারের গূঢ়-রহস্য—যত অন্তরঙ্গ-লীলা
যা না জানালে কেউ জানত না—যত অন্তরঙ্গ-লীলা
জগ-মাঝে ব্যাপিত হইল।’’
যদি কবিরাজ না জানাত—কে বা জানত রে
যদি কবিরাজ না জানাত—
গ্রন্থাকারে বর্ণন করে—যদি কবিরাজ না জানাত
গৌর-অবতারের গূঢ়-রহস্য—যদি কবিরাজ না জানাত
গৌরাঙ্গ-স্বরূপের মর্ম্ম—যদি কবিরাজ না জানাত
গৌরাঙ্গ-স্বরূপের মর্ম্ম—
মহারাস-বিলাসের পরিণতি—গৌরাঙ্গ-স্বরূপের মর্ম্ম
নিগম-নিগূঢ়-গৌর-লীলা—যদি কবিরাজ না জানাত
‘নিগম-নিগূঢ়-গৌর-লীলা’—
তিন-বাঞ্ছা-পূর্ত্তি-লীলা—নিগম-নিগূঢ়-গৌর-লীলা
‘তিন-বাঞ্ছা-পূত্তি-লীলা’—
শ্রীমদন-গোপালের—তিন-বাঞ্ছা-পূর্ত্তি-লীলা
‘শ্রীমদন-গোপালের’—
রাধাভাবে আপন-আস্বাদন—শ্রীমদন-গোপালের
গৌরের অতি-নিগূঢ়-অন্তলীলা—তিন-বাঞ্ছা-পূর্ত্তি-লীলা
বাঞ্ছা-পূর্ত্তিকারী নীলাচল-বিহার—তিন-বাঞ্ছা-পূর্ত্তি-লীলা
কে বা জানত রে
কেউ জানতে পেত না
গৌরের নিগূঢ়-গম্ভীরা-লীলা—কেউ জানতে পেত না
যদি কবিরাজ না জানাত—কেউ জানতে পেত না
লীলা-মাধুর্য্য-প্রাচুর্য্য—কার অনুভব হত
যদি গ্রন্থরূপে না প্রচারিত—কার অনুভব হত
দোঁহে মিলি হয় সুমাধুর্য্য।
সাধু-গুরু-প্রসাদে, ইহা যেই আস্বাদে,
সেই জানে মাধুর্য্য-প্রাচুর্য্য।।’’
যদি কবিরাজ না বর্ণিত—কে বা জানত রে
মহারাস-রসের পরিণাম—নিগূঢ়,–গৌর-লীলা রসধাম
‘শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত’ নাম—নিগূঢ়,–গৌর-লীলা রসধাম
পরিণতি-স্বরূপের কথা—যাহাতে হইল ব্যক্ত
‘পরিণতি-স্বরূপের কথা’—
মহারাস-বিলাসের—পরিণতি-স্বরূপের কথা
সাক্ষাৎ বিলাস-বিবর্ত্ত—যাহাতে হইল ব্যক্ত
শ্রীগ্রন্থের লেখক শ্রীমদনমোহন—অপরূপ গ্রন্থ ভাই রে
মদনগোপাল নিজ-গৌরলীলা—লিখিলেন কবিরাজ-দ্বারে
কবিরাজের বুকে বসে—আপন,–গূঢ়-লীলা আপনি প্রকাশে
কবিরাজের পয়ার, ভাবের সমুদ্র-সার,’’
ও ত ন পয়ার—ভাবের সমুদ্র-সার
অকূল-পাথার শ্রীগৌরাঙ্গ—যেন,–প্রেমসিন্ধুর তরঙ্গ রে
আপনি যে বলাইছেন
কবিরাজের বুকে বসে—আপনি যে বলাইছেন
নিগম-নিগূঢ়-লীলা—আপনি যে বলাইছেন
শ্রীকবিরাজের পয়ার—বুঝা যায় না বিদ্যা-পাণ্ডিত্যের বলে
অভিমানে শ্রীগ্রন্থ পড়লে—ফেলে দেয় অন্ধকারে
বুঝতে গিয়ে পাণ্ডিত্যের দ্বারে—হিতে বিপরীত করে
নিজে পড়ে আগে ফেলে অন্ধকারে—হিতে বিপরীত করে
পাণ্ডিত্যে বুঝা যায় না রে—সেই ত’ বুঝতে শকতি ধরে
কবিরাজ বুঝায় যারে—সেই ত’ বুঝতে শকতি ধরে
করিবারে শ্রীগ্রন্থ-অনুশীলন—যে,–একান্তে লয় কবিরাজের শরণ
পয়ারের মর্ম্ম হয় তারি স্ফুরণ—যে,–একান্তে লয় কবিরাজের শরণ
কবিরাজের করুণা বিনা—অনুভব হবে না এক-কণা
কেবল,–কবিরাজের চরণ হৃদয়ে ধরে—যে,– অভিমান ছেড়ে পাঠ করে
‘কেবল,–কবিরাজের চরণ হৃদয়ে ধরে’—
শ্রীগুরুপদাশ্রয় করে—কেবল,–কবিরাজের চরণ হৃদয়ে ধরে
শ্রীগ্রন্থ-রহস্য তারি ভোগ হয় রে—যে,–অভিমান ছেড়ে পাঠ করে
যেই গৌর সেই গ্রন্থ—অপরূপ শ্রীগ্রন্থ রে
এ যে অপূরব—অপরূপ শ্রীগ্রন্থ রে
এবার কেবল অবতীর্ণ—অপরূপ শ্রীগ্রন্থ রে
নিগূঢ় গৌরাঙ্গ সুন্দর—শ্রীগ্রন্থরূপে অবতীর্ণ
জানাইতে নিজ-লীলামর্ম্ম—শ্রীগ্রন্থরূপে অবতীর্ণ
‘জানাইতে নিজ-লীলামর্ম্ম’—
কলিহত-পতিত-জীবে—জানাইতে নিজ-লীলামর্ম্ম
গ্রন্থরূপে প্রকটিত
এ যে সাক্ষাৎ শচীসুত—গ্রন্থরূপে প্রকটিত
‘এ যে সাক্ষাৎ শচীসুত’—
এ ত’ ভাই নয় গ্রন্থ—এ যে সাক্ষাৎ শচীসুত
কাব্য নাটক কত, পুরাণাদি শত শত,
করিলেন বিবিধ প্রকারে।।
চৈতন্য-চরিতামৃত, শাস্ত্র-সিন্ধু মথি কত,
লিখে কবিরাজ কৃষ্ণদাস।’’
শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃত—শাস্ত্র-সিন্ধু মন্থন করা
শাস্ত্র-সিন্ধু মথি তার মর্ম্ম—দিলেন নিজ-পয়ারে
সর্ব্ব-শাস্ত্রে মর্ম্ম গোসাঞি—দিলেন নিজ-পয়ারে
কেবল,–নিত্যানন্দ-কৃপা-বলে—দিলেন নিজ-পয়ারে
কাব্য-পুরাণ-তত্ত্বরস—সকল গ্রন্থের নির্য্যাস
শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃত—সকল গ্রন্থের নির্য্যাস
লালারস-সিদ্ধান্তের খনি—লিখিলেন কবিরাজ গুণমণি
নাস্তিকতা সমূলে বিনাশ।।’’
এ যে কেবল,–নিত্যানন্দের কৃপার ফল—এমনই গ্রন্থের মহাবল
শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত—পড়ি শুনি শ্রীগ্রন্থ
হৃদে ধরি কবিরাজের চরণ—একান্ত হয়ে গ্রন্থের লয় শরণ
যুক্তি-মার্গে সবে হারি মানে।
উদ্ধব মূঢ় কুমতি, কি হবে তাহার গতি,
কবিরাজ রাখহ চরণে।।’’
কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোসাঞি—এইবার আমায় দয়া কর
তোমার,–চরিতামৃতের মর্ম্ম বুঝাও—কৃপা-নয়ন-কোণে চাও
গৌরের রহস্য জানাও—কৃপা-নয়ন-কোণে চাও
তোমাকৃত চরিতামৃত—যেন ভোগ করতে পারি
তোমার চরণ হৃদে ধরি’—যেন ভোগ করতে পারি
শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃতের লীলা—যেন ভোগ করতে পারি
লীলারহস্য অনুভবে—যেন ভোগ করতে পারি
কবিরাজ দয়া কর মোরে—যেন আমার মতি থাকে
তুমি যে উপদেশ কৈলে—তাতে,–যেন আমার মতি থাকে
‘তুমি যে উপদেশ কৈলে’—
শ্রীচরিতামৃতের পরিশিষ্টে—তুমি যে উপদেশ কৈলে
দাও তাতে লোভ দাও হে
যেন তোমার,–আজ্ঞা-পালন করতে পারি
যেন,–আমার মনোহংস চরে
তোমার,–আশীর্ব্বাদ যেন ফলে মোরে—যেন,–আমার মনোহংস চরে
শ্রীচৈতন্য-লীলা পারাবারে—যেন—আমার মনোহংস চরে
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—যেন,–আমার মনোহংস চরে
তাঁর বলে বলী হয়ে—যেন,–গৌর-লীলায় ডুবে থাকি
তাঁর বলে বলী হয়ে’—
তুমি,–বলী হয়ে যাঁর বলে—তাঁর বলে বলী হয়ে
‘তুমি,–বলী হয়ে যাঁর বলে’—
শ্রীচরিতামৃত লিখলে—তুমি,–বলী হয়ে যাঁর বলে
তাঁর বলে বলী হয়ে—যেন,–গৌর-লীলায় ডুবে থাকি
প্রভু নিতাই হৃদে ধরে—ডুবে যাই,–গৌরপ্রেম-পাথারে
গৌরের গম্ভীরা-বিহার সঙরি’—যেন,–নিশিদিশি ঝুরে মরি
শ্রীগৌরাঙ্গ-লীলা-গুণ—যেন,–প্রাণভরে গাইতে পারি
তোমার,–দাস-রঘুনাথের গুণ গাই—আর,–কৃপা কর কবিরাজ গোসাঞি