ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
(শ্রীধাম নবদ্বীপ, শ্রীরাধারমণ-বাগে শ্রীশ্রীমদ্ রাধারমণ-চরণ দাস দেবের বিরহ-উৎসবে নবরাত্র শ্রীশ্রীনামযজ্ঞের দ্বিতীয় দিবস, ১৩৩২ সাল ২৩শে মাঘ শনিবার অষ্টমী, রাত্র ৮-১১।।০টা পর্য্যন্ত—)
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’ [মাতন]
ভজ ভাই রে—নিতাই গৌর রাধে শ্যাম রাধে
ভজ,–নিতাই গৌর রাধে শ্যাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
জপ,–রাম রাম হরে হরে—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
রমে রামে মনোরমে—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
শ্রীরাধারমণ রাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
ভজ,–নিতাই গৌর রাধে শ্যাম রাধে
ভাই রে,–আমার নিতাই গুণমণি
আমি,–কি জানি গুণ কত বা বাখানি—ভাই রে,–আমার নিতাই গুণমণি
যেচে,–বিলায় রে প্রেম-চিন্তামণি
আচণ্ডালের দ্বারে দ্বারে গিয়ে—যেচে,—বিলায় রে প্রেম-চিন্তামণি
দন্তে,–তৃণ ধরি’ করি’ যোড়পাণি—যেচে,–বিলায় রে প্রেম-চিন্তামণি
দুনয়নে,–বহে ধারা যেন সুরধুনী—যেচে,–বিলায় রে প্রেম-চিন্তামণি
জাতি,–কুল, অধিকার কিছু না গণি—যেচে,–বিলায় রে প্রেম-চিন্তামণি
ও তার,–গৌর-প্রেমে গড়া কলেবর—ওরে,–ভাই রে আমার নিতাই সুন্দর
নিতাই আমার,–গোরাভাবে সদাই বিভোর
জানে না নিতাই আপন কি পর
গৌরপ্রেম,–মদিরা-পানে হয়ে বিভোর—জানে না নিতাই আপন কি পর
আমরি,–প্রেম-বাহু পসারিয়ে—নিতাই আমার,–আচণ্ডালে ধেয়ে করে কোর
তোর,–পাপ-তাপের বোঝা নিয়ে—বলে ভাই,–বিনামূলে আমি হব তোর
একবার,–মুখে বল ভাই গৌর গৌর –বলে ভাই,–বিনামূলে আমি হব তোর
নিতাইচাঁদের,–দুনয়নে বহে অবিরত লোর—নিতাই আমার,–গৌর
নিতাই আমার,–শ্রীচৈতন্যচাঁদের চকোর
ওগো,–আমার নিতাই, আমার নিতাই—নিতাই আমার,–শ্রীচৈতন্য-
নিতাই আমার,–গোরাপদ্মে মত্ত-মধুকর
প্রেম-মধু-পানে সদাই বিভোর—নিতাই আমার,–গোরাপদ্মে মত্ত-মধুকর
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেম-বিনোদিয়া—ভাই রে,–নিতাই রঙ্গিয়া আমার
আমরি,–গোরারসে রসিয়া—ভাই রে,–নিতাই রঙ্গিয়া আমার
আমার,–গৌরপ্রেমের পাগলা নিতাই—নিতাই আমার,–নিশিদিশি
এই,–সুরধুনীর তীর দিয়া—নিতাই আমার,–নিশিদিশি বেড়ায় কাঁদিয়া
গলবাসে দন্তে তৃণ ধরিয়া—নিতাই আমার,–নিশিদিশি বেড়ায় কাঁদিয়া
সর্ব্বত্র বিহরে আমার নিত্যানন্দ-রাম।। রে !!
গলবাসে দন্তে তৃণ ধরিয়া—নিতাই আমার,–আচণ্ডালে বলে যাচিয়া
আচণ্ডালের দ্বারেতে গিয়া—নিতাই আমার,–করযোড়ে বলে কাঁদিয়া।
কতশত,–ধারা বহে মুখ বুক বাহিয়া–নিতাই আমার,—করযোড়ে বলে কাঁদিয়া
তোদের,–পাপ-তাপের বোঝা নিয়া—আমি,–বিনামূলে যাব বিকাইয়া
একবার,–গৌরহরি বলে আমায় লও কিনিয়া—আমি,–বিনামূলে যাব বিকাইয়া
আমার,–গৌরহরি ভজ বলিয়া—নিতাই আমার,–চলে যেতে পড়ে ঢলিয়া
রামাই-গৌরীদাসের কাঁধে হাত দিয়া নিতাই আমার, চলে যেতে পড়ে ঢলিয়া
ধুলি-ধূসরিত-অঙ্গে আবার উঠিয়া—আমার,–নিতাই কাঁদে
বাহু পসারি’,–আচণ্ডালে কোলে তুলিয়া—আমার,–নিতাই কাঁদে ফুলিয়া ফুলিয়া
আয় বলি’,–পতিতেরে বুকে ধরিয়া—আমার,–নিতাই কাঁদে ফুলিয়া ফুলিয়া
নিতাইচাঁদের,–নয়ন-ধারায় ধরা যায় ভাসিয়া—আমার,–নিতাই কাঁদে
নিতাইচাঁদের,–কতশত ধারা বহে মুখ বুক বাহিয়া—আমার,–নিতাই
ভাই রে,–আমার নিতাই নয়নতারা
তার,–গৌর-প্রেমে তনু পড়া—ভাই রে,–আমার নিতাই নয়ন তারা
নিতাই আমার,–গৌরপ্রেমে পাগল-পারা
নিতাই আমার,–গৌরপ্রেমে দিগ্বিদিক হারা
নিতাই আমার,–গৌরপ্রেমে আত্মহারা
নিতাই আমার,–নিশিদিশি গায় গোরা গোরা
গৌর বলিতে,–শ্রীঅঙ্গ পুলকে ভরা দুনয়নে শত-ধারা—নিতাই আমার,–
নিতাইচাঁদের,–নয়ন-ধারায় ভেসে যায় ধরা—নিতাই আমার,–
ভাই রে,–আমার প্রভু নিত্যানন্দ
নিত্যানন্দ-দাস মুঞি—ভাই রে,–আমার প্রভু নিত্যানন্দ
আমার,–পাগলের প্রাণ নিতাই—আমার,–প্রভুর প্রভু নিত্যানন্দ
আমার,–ঐ গরবে হৃদয় ভরা—আমার,–প্রভু নিত্যানন্দ
আমি,–ঐ গরবে গরব করি—আমার,–প্রভুর প্রভু নিত্যানন্দ
আমি,–ঐ গরবে সদাই ফিরি—আমার,–প্রভুর প্রভু নিত্যানন্দ
নিতাই আমার,–অক্রোধ-পরমানন্দ
আমার,–অদোষ-দরশী নিতাই—নিতাই আমার,–অক্রোধ-পরমানন্দ
আমার,–অযাচিত-কৃপাকরী নিতাই—নিতাই আমার,–অক্রোধ-পরমানন্দ
চাঁদ,–নিতাই আমার পতিতের বন্ধু
তার,–পতিত-উদ্বারে সঙ্কল্প একান্ত—চাঁদ,–নিতাই আমার পতিতের বন্ধু
প্রেমবন্যায় ভাসাইল ব্রহ্মাণ্ড—নিতাই আমার,–শ্রীগৌরাঙ্গ—প্রেমভাণ্ড
প্রেমে মাতাইল পতিত-পাষণ্ড—নিতাই আমার,–শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমভাণ্ড
আমার,–নিতাই-গুণমণির নাম—আমরি,–গৌরবশীকরণ-মন্ত্র
সে নিশ্চয় দেখিবে আমার স্বরূপ-প্রকাশ।। রে !!
সংসারের পার হইয়া ভক্তির সাগরে। রে !
যে ডুবিবে সে ভজুক আমার নিতাইচাঁদেরে।। রে !!
গোপীগণের যেই প্রেম কহে ভাগবতে। রে !
আমার,–একলা নিত্যানন্দ হইতে পাইবে জগতে।।’’ রে !!
সে,–ভজুক আমার নিতাইচাঁদে—গোপী,–প্রেমে পেতে সাধ যার চিতে
আমার,–নিতাই-কৃপা বিনে ভাই—কোন কালে,–প্রেম কেউ পায় নাই
ভজিলেও সে কভু আমার প্রিয় নহে।’’ রে !!
আমার,–নিতাই সর্ব্বস্ব যার—সে আমার আমি তার
ঊর্দ্ধবাহে গৌরহরি ঘোষে—আমি,–বাঁধা তারই প্রেম-পাশে
আমার নিতাইকে যে ভালবাসে—আমি,–বাঁধা তারই প্রেম-পাশে
মাধাই মারে জগাই রাখে
গৌরহরি তারে ধরে বুকে—মাধাই মারে জগাই রাখে
গৌরহরি বলেন বাহু ঊর্দ্ধ করে—আমি, বিকাইলাম নিতাই-করে
এবার,–বিশ্বম্ভর নাম ধরে—আমি,–বিকাইলাম নিতাই-করে
যে,–হেলায় শ্রদ্ধায় বলে নিতাই
তারই কাছে বিকাই আমায়—যে,–হেলায় শ্রদ্ধায় বলে নিতাই
তাহারে নিজস্বরূপ দেখাই—যে,–হেলায় শ্রদ্ধায় বলে নিতাই
সে,–বিনামূলে কিনে আমাকে—যে,–নিতাই নিতাই বলে ডাকে
আমি,–বসতি করি তারই হৃদে—যে,–বিকায়েছে নিতাই-পদে
যে—নিত্যানন্দ-গুণে ঝুরে
গূঢ়লীলা তার হৃদে স্ফুলে—যে,–নিত্যানন্দ–গুণে ঝুরে
আমার,–নিতাই-পদ যে করেছে সার
লীলাভোগে তারই অধিকার—আমার,–নিতাই-পদ যে করেছে সার
তোমার,–সবে মিলে কৃপা কর গো—কতদিনে সে-দিন হবে আমার
আমি,–বিকাইব অকপটে—কবে,–সে-দিন হবে নিতাই-পদে
গৌরসুন্দর জাগবে হৃদি-পটে—করে,–সে-দিন হবে নিতাই-পদে
গোপনে বলেন গৌরহরি
পানিহাটি-গ্রামে বসি’—গোপনে বলিন গৌরহরি
রাঘবের করে ধরি’—গোপনে বলেন গৌরহরি
আমার দ্বিতীয় নাই নিত্যানন্দ বই।।’’ হে !!
আরে,–‘‘তিলার্দ্ধেক নিত্যানন্দে দ্বেষ যার রহে। রে !!
আমায়,–‘‘ভজিলেও সে কভু আমার প্রিয় নহে।। রে !!
আমার,–‘‘নিত্যানন্দ-স্বরূপেপে যে প্রীতি করয়ে অন্তরে। রে !
সত্য সত্য সেই প্রীতি করয়ে আমারে।।’’ রে !!
ব্রজ-নদীয়ায় একই কথা
মধুর শ্রীবৃন্দাবনে
শ্রীকৃষ্ণ বিষয়, শ্রীরাধিকা আশ্রয়
আর,–মধুর শ্রীনবদ্বীপ
শ্রীগৌরাঙ্গ বিষয়, শ্রীনিতাই আশ্রয়
বৃন্দাবনে এই প্রতিজ্ঞা
কোটি-জন্ম যদি আমারে ভজয়ে বিফল ভজন তার।।’’ রে !!
ভজিলেও সে কভু আমার প্রিয় নহে।।’’ রে !!
নিতাই ভজিলেই আমায় ভজা হয়—আমায় ভজিলেই আমায় ভজা হয় না
কত-গুণের নিতাই আমার—আবেশে বলেন গৌরহরি
কুমারহট্ট—গ্রামে বসি’—আবেশে বলেন গৌরহরি
নিত্যানন্দে নিষ্ঠা দেখি’—আবেশে বলেন গৌরহরি
শ্রীবাসপণ্ডিতের,–নিত্যানন্দে নিষ্ঠা দেখি’—আবেশে বলেন গৌরহরি
নিতাই-মহিমা জানাবার লাগি’—অবেশে বলেন গৌরহরি
‘নিতাই-মহিমা জানাবার লাগি’—
অবিশ্বাসি-জনে আজ—নিতাই-মহিমা জানাবার লাগি’
তথাপি ব্রহ্মার বন্দ্য কহে গৌরচন্দ্র।।’’ রে !!
কত-গুণের নিতাই আমার—কি বা বলব নিতাই-গুণ
আরও গূঢ়-কথা শোন ভাই
একের অপ্রিয় আরে সম্ভাষা না করে।। রে !!
গদাধর-পণ্ডিতের সঙ্কল্প এইরূপ। রে !
নিত্যানন্দ-বিমুখের না দেখেন মুখ।। রে !!
নিত্যানন্দ-স্বরূপেতে প্রীতি যার নাই। রে !!
দেখাও না দেন তারে পণ্ডিত গোসাঞি।।’’ রে !!
নিতাই আমার কে বটে—একবার,–প্রাণে প্রাণে অনুভব কর ভাই
গদাধরের কথা স্মঙরি—একবার,–প্রাণে প্রাণে অনুভব কর ভাই
বিকাও গৌর-গদাধর-চরণে—যদি,–কিনতে চাও নিতাই-ধনে
অদ্বৈত-বলে বলী হয়ে—বিকাও গৌর-গদাধর-চরণে
মিলবে নিতাই-গূঢ়-ধনে—বিকাও গৌর-গদাধর-চরণে
নিতাই-দাসের কৃপা বল করে—বিকাও গৌর-গদাধর-চরণে
নরহরির আনুগত্যে—বিকাও গৌর-গদাধর-চরণে
যদি,–কিনবে নিতা-গূঢ়-ধনে—বিকাও গৌর-গদাধর-চরণে
আজ,–ভাই ভাই হয়েছি এক ঠাঁই—আয় ভাই আমরা নিতাই-গুণ গাই
‘আজ,–ভাই ভাই হয়েছি এক ঠাঁই—
শ্রীগুরুদেবের কৃপায়—আজ,–ভাই ভাই হয়েছি এক ঠাঁই
প্রাণভরে নিতাই-গুণ গাই
এমন সুযোগ আর পাই কি না পাই—প্রাণভরে নিতাই-গুণ গাই
নিতাইচাঁদের বিহার-ভুমিতে বসি’—প্রাণভরে নিতাই-গুণ গাই
এই মধুর-নদীয়া—নিতাইচাঁদের বিহার-ভূমি
ভাগ্যবতী-সুরধুনী-তীর—নিতাইচাঁদের বিহার-ভূমি
এই মধুর-নদীয়া-পদাঙ্কিত-ভূমি রে
আমার প্রভু নিত্যানন্দের—পদাঙ্কিত-ভূমি রে
এই,–সুরধুনীর কূলে কূলে—আমার পাগলা নিতাই নাচে
এই নদীয়ার পথে পথে-–আমার,–নিতাই কেঁদে কেঁদে বলে
এই,–সুরধুনীর কূলে কূলে—আমার,–নিতাই কেঁদে কেঁদে বলে
ভজ প্রাণ-শচীদুলালে—আমার,–নিতাই কেঁদে কেঁদে বলে
অভিমান-শূন্য নিতাই নগরে বেড়ায়।। রে !!
অধম-চণ্ডাল-জনার ঘরে ঘরে গিয়া।। রে !
ব্রহ্মার দুর্ল্লভ-প্রেম দিছেন যাচিয়া।। রে !!
যে না লয় তারে কয় দন্তে তৃণ ধরি’।।’’ রে !
প্রেম না দিলেই নয়—যেন,–কত-দায় ঠেকেছে
করুণার,–বালাই লয়ে মরে যাই—আমরি কি করুণা রে
যা’,–চিরকালের আনর্পিত—যা’,–গোলোকেও গোপনে ছিল
যা’,–ব্রহ্মাদিরও সুদুর্ল্লভ—যা’,–গোলোকেও গোপনে ছিল
‘যা’,–ব্রহ্মাদিরও সুদুর্ল্লভ’—
যার,–কোটি-কল্প সাধনেও কেউ সন্ধান পায় নাই—যা’,–ব্রহ্মাদিরও সুদুর্ল্লভ
সুদুর্ল্লভ-প্রেমধন—যারে তারে যেচে বেড়ায়
নিতাই,–কেঁদে বেড়ায় জীবের দ্বারে দ্বারে—আয় কে তোরা প্রেম নিবি রে
আমায়,–বিনামূলে কিনে রে—আয় কে তোরা প্রেম নিবি রে
আমারে কিনিয়া লহ ভজ গৌরহরি।।’’ রে !!
গোরা-নিবি মিলাইব—আমি,–বিনামূলে বিকাইব
নিতাই,–কেঁদে বলে জীবের দ্বারে দ্বারে—আমারে কিনে নে রে
‘নিতাই,–কেঁদে বলে জীবের দ্বারে দ্বারে’—
এই মধুর-নদীয়ায়—নিতাই,–কেঁদে বলে জীবের দ্বারে দ্বারে
বিকাইব বিনামূলে [মাতন]
আমায়,–কিনে নে রে গৌর বলে—বিকাইব বিনামুলে
‘‘ভজ গৌরাঙ্গ কহ গৌরাঙ্গ লহ গৌরাঙ্গের নাম। রে !
যে জন গৌরাঙ্গ ভজে সেই আমার প্রাণ।। রে !!
দিন গেলে হা গৌরাঙ্গ যে বলে একবার। রে !
সে জন আমার হয় আমি হই তার।।’’ রে !!
নিতাই,–কেঁদে বলে বার বার—সে আমার আমি তার
হউক্ না কেন সুদুরাচার—সে আমার আমি তার
যে সে,–কূলে জনম হইক্ না তার—সে আমার আমি তার
নিতাই,–কেঁদে বলে বার বার—সে আমার আমি তার
যে,–গৌর বলে একবার—সে আমার আমি তার
এই,–সুরধুনীর কূলে কূলে—বিহরে আমার পাগলা নিতাই
পাগলের পারা দিশে হারা—বিহরে আমার গুণের নিতাই
কেঁদে কেঁদে আঁখি রাঙ্গা—ডেকে ডেকে গলা ভাঙ্গা
আয় আয়,–কলিহত-জীব বলি’—ডেকে ডেকে গলা ভাঙ্গা
গৌরহরি ভজ বলে—কেঁদে কেঁদে আঁখি রাঙ্গা
‘গৌর ভজ’ বলতে হারায় সংজ্ঞা—কেঁদে কেঁদে আঁখি রাঙ্গা
গৌরহরি ভজ বলে—মূরছি পড়ে ভূমিতলে
সুললিত-কলেবরে—নিতাই,–কেঁদে বলে করযোড়ে
ভজ প্রাণের গৌরহরি—ভাই রে তোদের পায়ে পড়ি
ভজলাম না এমন দয়াল—ঠাকুর—না জানি মুঞি কেমন অসুর
যেন নিতাই ভজতে পারি
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরি’—যেন নিতাই ভজতে পারি
কলিহত-পতিত-জীব মোরা—আমাদের,–নিতাই বিনে আর গতি নাই
এমন কার প্রাণ কাঁদে
কে,–সেধে যেচে বিলায় রে
চির,–অনর্পিত-প্রেমধন—কে,–সেধে যেচে বিলায় রে
কত কত অবতার হয়েছে—কেউ কি শুনেছ কোথা
পাপ লয়ে প্রেম যাচে—কে কোথায় শুনেছ
‘পাপ লয়ে প্রেম যাচে’—
কে কোথায়,–পতিত আছে খুঁজে খুঁজে—পাপ লয়ে প্রেম যাচে
কেউ কি শুনেছ কোথা
মার খেয়ে প্রেম বিলায়—কেউ কি শুনেছ কোথা
‘মার খেয়ে প্রেম বিলায়’—
মধুর-শ্রীনদীয়ায়—মার খেয়ে প্রেম বিলায়
মেরেছ মার আবার খাব
মেরেছ কলসীর কাণা
তা বলে কি প্রেম দিব না—মেরেছ কলসীর কাণা
হবে কি আর হয়েছে—এমন দয়াল আর কে আছে
মার খেয়ে প্রেম যাচে—আমার,–নিতাই বিনে আর কে আছে
ও পতিতের বন্ধু—আরে আমার নিতাই রে
আমি,–কি জানি গুণ কত বা বাখানি—কত গুণের নিতাই আমার
অশেষ-দোষের দোষী জেনে—জগৎ–যারে দেখে ঘৃণার চোখে
এ,–জগৎ যারে ত্যাগ করে
অশেষ-দোষের দোষী জেনে—এ,–জগৎ যার ত্যাগ করে
এ,–জগৎ যারে ঠেলে ফেলে—আমার,–নিতাই তারে করে কোলে
‘এ,–জগৎ যারে ঠেলে ফেলে’—
অদৃশ্য অস্পৃশ্য বলে—এ,–জগৎ যারে ঠেলে ফেলে
প্রেমবাহ পসারিয়ে—আমার,–নিতাই তারে করে কোলে
প্রেম—দিঠে চেয়ে আয় আয়ে বলে—আমার, নিতাই তারে করে কোলে
ভয় নাই,–আমি তোর আছি বলে—আমার, নিতাই তারে করে কোলে
আমাদের তরে আছে নিতাই—আর,–ভয় কি আছে পতিত-ভাই [মাতন]
ভাই ভাই মিলেছি এক ঠাঁই—আয় ভাই আমরা নিতাই—গুণ গাই
‘ভাই ভাই মিলেছি এক ঠাঁই’—
শ্রীগুরুদেবের কৃপায়—আজ,–ভাই ভাই মিলেছি এক ঠাই
নিতাইচাঁদের বিহার-ভূমিতে—আজ,–ভাই ভাই মিলেছি এক ঠাঁই
এ-যে,–নিতাইচাঁদের বিহার-ভূমি
এই মধুর-শ্রীনদীয়া—এ-যে,–নিতাইচাঁদের বিহার-ভূমি
ভাগ্যবতী-সুরধুনী-তীরে—এ-যে,–নিতাইচাঁদের বিহার-ভূমি
আমার প্রভু-নিতাই প্রাণ-গৌরাঙ্গের—এ-যে,–পদাঙ্কিত-ভূমি রে
এই,–ভূমির প্রতি-ধূলিকণা—পেয়েছে নিতাই-করুণা
এই,–সুরধুনীর কুলে কুলে-পাগলা নিতাই নেচে গেছে
গৌরাঙ্গ-নাম-প্রেম যেচে—পাগলা নিতাই নেচে গেছে
এই,–সুরধুনীর কূলে কূলে—নিতাই কেঁদে গেল বলে
ভজ প্রাণ শচীদুলালে—নিতাই কেঁদে গেল বলে
আয় ভাই আমরা নিতাই গুণ গাই
এমন সুযোগ আর পাই কি না পাই—আয় ভাই আমরা নিতাই-গুণ গাই
কত-গুণের নিতাই আমার
যা’,–চিরকালের অনর্পিত—যার সন্ধান কেউ জানত না
যা’,–ব্রহ্মাদিরও সুদুর্ল্লভ—যার সন্ধান কেউ জানত না
যা’,–কোটি-কল্প সাধনেও মিলে না—যার সন্ধান কেউ জানত না
‘‘ভকতি রতন-খনিউঘাড়িয়া প্রেমমণি,
যার সন্ধান কেউ জানত না
যা’,—চিরকালের অনর্পিত—যার সন্ধান কেউ জানত না
যা’,—ব্রহ্মাদিরও সুদুর্ল্লভ—যার সন্ধান কেউ জানত না
যা’,—গোলোকেও গোপনে ছিল—যার সন্ধান কেউ জানত না
যা’,—কোটি-কল্প সাধনেও মিলে না—যার সন্ধান কেউ জানত না
নিজ-গুণ সোণাতে মুড়িয়া।’’
অশেষ-গুণের খনি—আমার নিতাই গুণমণি
আমার,–অদোষ-দরশী নিতাই—যারে দেখে তার ঠাঁই
আমার,–অযাচিত-কৃপাচিত নিতাই—যরে দেখে তার ঠাঁই
আমার,–গৌর-প্রেমের পাগলা নিতাই—নিতাই,–যারে দেখে আপন কাছে
তার,–জাতি, কূল, অধিকার কিছু না বাছে—নিতাই,—যারে দেখে আপন কাছে
দন্তে তৃণ গলবাসে,–করযোড়ে নাম-প্রেম যাচে—নিতাই,–যারে দেখে
আমার,–দাতা-শিরোমণি নিতাই
ভাই রে,–এমন দাতা আর কেহ নাই—আমার,–দাতা-শিরোমণি নিতাই
নিতাই আমার,–ডাকে বাহু ঊর্দ্ধ করে—বলে,–আয় কে তোরা প্রেম নিবি রে
বয়ান ভাসে নয়ন-নীরে—বলে,–আয় কে তোরা প্রেম নিবি রে
আমায়,–বিনামূলে কিনিবি রে—বলে,–আয় কে তোরা প্রেম নিবি রে [মাতন]
‘‘নিতাই গুণমণি আমার নিতাই গুণমণি। রে !
আনিয়া প্রেমের বন্যা ভাসাল অবনি।। রে !!
প্রেমবন্যা লইয়া নিতাই আইলা গৌড়দেশে।’’ রে !
নিতাই আইলা গৌড়দেশে
শিরে ধরি’ গৌরাঙ্গ-অদেশে—নিতাই আইলা গৌড়দেশে
ডুবিল ভকতগণ দীন-হীন ভাসে।।’’ রে !!
সবাই,–প্রেমধনে ধনী হল—যত দুঃখী কাঙ্গাল ছিল
এই,–সুরধুনীর তীরে তীরে—বিহরে আমার পাগলা নিতাই
সর্ব্বত্র বিহরে আমার নিত্যানন্দ-রাম।।’’ রে !!
আমার,–নিতাইচাঁদের করুণায়—জগৎ ভাসল প্রেমের বন্যায়
এই,–সুরধুনীর কূলে কূলে—বিহরে আমার পাগলা নিতাই
গৌর-প্রেমের পাগলা নিতাই—নিতাই,–যারে দেখে তারে বলে
বৃন্দাবন-বনদেবা।’’
শ্রী,–বৃন্দাবিপিন-বিহারী—আমার প্রাণের রাধারমণ
ও-সে,–রসময় বংশীধারী—আমার প্রাণের রাধারমণ
অভিনব-রাস,- রসিকবর নাগর’’,
ভাবাবেশে নিতাই বলে—নিতুই নিতুই নব নব
আমার প্রাণের রাধারমণ—নিতুই নিতুই নব নব
বৃন্দা,–বিপিন-বিহারী বনমালী—নব নব বিভ্রম-শালী
বরজ,–যুবতী-কূলে দিতে কালি—নব নব বিভ্রম-শালী
ব্রজ,–নাগরীগণ-কৃত-সেবা।।’
ব্রজ,–নাগরীগণ-কৃত—নিশিদিশি সেব্যমান
গোপস্ত্রী-পরিসেবিত—গোপাল-চূড়ামণি
‘‘ব্রজপতি-দম্পতী,– হৃদয় আনন্দন,’’
আমার প্রাণের রাধারমণ—মা-যশোদার নীলমণি
বিশুদ্ধ,–বাৎসল্য-প্রেমার বশে—দণ্ডে দশবার খায় নবনী
শ্যাম নবজলদ—নন্দ-হৃদি আনন্দদ
বরজ-বাসীগণ—নয়নাভিরাম নবঘন শ্যাম—নয়নাভিরাম
নন্দন-নবঘন শ্যাম।
নন্দীশ্বর পুর, পুরট পটাম্বর,’’
আমার বরজ-শশী—নন্দীশ্বর-পুর-বাসী
শ্যাম-সুন্দর—পীতাম্বর-ধর
শ্যাম-অঙ্গে পীতাম্বর-যেন থির,–বিজুরী-জড়িত নবঘনে
রামানুজ গুণধাম।।’’
আবেশ বলেন নিতাই-সুন্দর—বলরামের ছোট ভাই
আমার প্রাণের রাধারমণ—বলরামের ছোট ভাই
ভাবাবেশে নিতাই আমার—আপনা ভুলেছে
আপনি বলাই তা—ভুলে যে গেছে গো
আদর করে সদাই ডাকে
কা-কা-কাহ্নাইয়া—আদর করে সদাই ডাকে
‘কা-কা-কাহ্নাইয়া’—
আরে আরে মেরো ভেইয়া—কা-কা-কাহ্নাইয়া
শ্রীদাম-সুদাম,- সুবল-সখা সুন্দর,’’
আমার প্রাণের রাধারমণ—শ্রীদামের উচ্ছিষ্ট-ভোজী
বিশুদ্ধ-সখ্য-প্রেমার বশে—শ্রীদামের উচ্ছিষ্ট-ভোজী
খেতে খেতে বেঁধে রাখে
বনফল মিঠ লাগল—খেতে খেতে বেঁধে রাখে
এ-যে বড় মিঠ লাগল—বলে,–আর ত’ খাওয়া হল না
আধ থাক ভাই কানাইকে দিব—বলে,–আর ত’ খাওয়া হল না
কত যতন করে—ধড়ার,–অঞ্চলে বেঁধে রাখে
বাম-করে গলা জড়ায়ে ধরে—ছুটে এসে তুলে দেয়
অনিমিখে বদন চেয়ে—বলে,–খা রে আমার প্রাণ-কানাই
এ-যে,–বড় মিঠ-ফল ভাই—বলে,–খা রে আমার প্রাণ-কানাই
সুবলের মরম-সখা
শ্যাম ত্রিভঙ্গ-বাঁকা—সুবলের মরম-সখা
রাই-বিরহে প্রাণ-রাধা—সুবলের মরম-সখা
কালীয়-দমন শ্যাম—ব্রজ-রাখালের পরাণ
বিনোদিয়ার বিনোদ-চূড়া—বিনোদ বিনোদ বিনোদ দোলে
বিনোদ-দায়ে বিনোদ-বরিহা—বিনোদ বিনোদ বিনোদ দোলে
চূড়ার দোলন দেখে মদন—মূরছি পড়ে ভূমিতলে
তার যুগল-কর্ণে—মকর-কুণ্ডল দোলে
মকরাকৃতি—কুণ্ডল দোলে গো
মকরাকৃতি কুণ্ডল—মুখ ব্যাদান করে দোলে
মনো-মীন গিলিবে বলে—মুখ ব্যাদান করে দোলে
‘মনো-মীন গিলিবে বলে’—
বরজ-ললনার-মনো-মীন গিলিবে বলে
গোবর্দ্ধন-ধর, ধরণী-সুধাকর,’’
ব্রজবাসী রক্ষা-করা—বামকরে গিরি-ধরা
লীলামৃত-রসপুর—বরজ-সুধাকর
শ্রী,–নন্দকূল-চন্দ্রমা—তাপ-বিমোচন
ব্রজ,–তরুণী-লোচন—তাপ-বিমোচন
নবকৈশোরনটবর—বেণু-বাদন-পর
‘নবকৈশোর নটবর’—
গোপবেশ বেণুকর—নবকৈশোর নটবর
সে,–বেণু বাজায় গো
ধীর-সমীরে যমুনা-তীরে—সে,–বেণু বজায় গো
বংশীবট-তটে—সে,–বেণু বাজায় গো
‘বংশীবট-তটে’—
ধীর-সমীরে যমুনা-নিকটে—বংশীবট-তটে
মধুর-পঞ্চম-তানে—বেণু বাজায় গো
ললিত-ত্রিভঙ্গ-ঠামে—বেণু বাজায় গো
‘ললিত-ত্রিভঙ্গ-ঠামে’—
বংশীবট হেলনে—ললিত-ত্রিভঙ্গ-ঠামে
চৌদ্দভূবন আকর্ষিত
সেই মধুর-বেণুরবে—চৌদ্দভূবন আকর্ষিত
বেণু-ধ্বনি পশি’ শ্রবণে—প্রাণ পণে প্রাণ টানে
ধ্বনি পশিয়া মরম—স্থানে—জগবাসীর প্রাণ টানে
যোগী যোগ ভুলে গো
মুনি-জনার ধ্যান টলে—যোগী যোগ ভুলে গো
সেই মধুর-রেণুরবে—বিপরীত—ধর্ম্ম ধরে
হয়,–তরল কঠিন, কঠিন তরল—হয়,–সচল অচল, অচল সচল
শ্যামের মুরলীর গানে—হয়,–সচল অচল, অচল সচল
গিরিরাজ চলে গো
যমুনা উজান চলে
শ্যামের,–মোহন-মুরলীর রোলে—যমুনা উজান চলে
উত্তাল-তরঙ্গ-ছলে—নেচে নেচে উজান চলে
যমুনার জলে হেলে দুলে—মকর-মীন নাচে গো
‘যমুনার জলে হেলে দূলে’—
মোহন-মূরলী-রোলে—যমুনার জলে হেলে দুলে
মৃত-তরু মুঞ্জরে
শ্যামের,–মোহন-মুরলী-স্বরে—মৃত-তরু মুঞ্জরে
শ্যামের, –মুরলীর গানে—হয়,–তরু-লতা পুলকিত
ব্রজের যত তরু-লতা—হয়,–পুষ্পিত ফলিত
নব নব ফুল-ফলে—হয়,–পুষ্পিত ফলিত
একই কালে—ষড়ঋতুর উদয় হয়
শ্যামের,–মোহন-মুরলীর স্বরে—পাষাণ গলিয়া যায়
ধায়,–কাননে ব্রজ-কামিনী—ত্যজি’ নিজ-কুলে গো
‘ধায়,–কাননে ব্রজ-কামিনী’—
আমার,–প্রাণ-বল্লভ কৃষ্ণ বলে—ধায়,–কাননে ব্রজ-কামিনী
কালীয়-দমন, গমন জিতি কুঞ্জর
কুঞ্জ রচিত রতি-রঙ্গ।’’
আমার প্রাণের রাধারমণ—অপ্রাকৃত নবীন-মদন
মন্মথের মন মথে
চড়ি’ গোপীর মনোরথে—মন্মথের মন মথে
কন্দর্প-দর্পহারী
রাসরস-বিহারী—কন্দর্প-দর্পহারী
নাগর রসিয়া—কেলিরস-বিনোদিয়া
রাস-রসিক-বর—কেলিরস-তৎপর
মদন-দরপ-হর—কেলিরস-তৎপর
শৃঙ্গার-রসময়-মূরতি—কেলিরস-ভূপতি
এই,–জগবাসীর দ্বারে দ্বারে—আমার,–পাগ্লা নিতাই কেঁদে বলে
আমার,–গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হল—তোমরা,–জান না কি নদীয়াবাসী
শ্রীরাধানায়ক নাগর শ্যাম।
সো শচীনন্দন, নদীয়া,-পুরন্দর,’’
নন্দের নন্দন যেই—শচীসুত হইল সেই
সেই কৃষ্ণ অবতীর্ণ চৈতন্য-গোসাঞি।।’’ রে !!
‘‘সো শচীনন্দন, নদীয়া-পুরন্দর,
সুর-মুনিগণ-মনো-মোহন-ধাম।।’’
গৌরকথা কৈতে কৈতে—মাতিল নিতাই রে
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমার ভরে—মাতিল নিতাই রে
দুনয়নে শতধারা—পুলকেতে অঙ্গ-ভরা
শ্রীগৌরাঙ্গ-রহস্য—ভাবাবেশে বলে রে
জয় নিজ-প্রেয়সী-ভাব-বিনোদ।’’
আমার প্রাণ-রাধারমণ—রাধাভাব-দ্যুতি-চোরা
তিন বাঞ্ছা পুরাইতে—রাধাভাব-দ্যুতি-চোরা
স্বমাধুর্য্য আস্বাদিতে—রাধাভাব-দ্যুতি-চোরা
চির,–অনর্পিত বিতরিতে—রাধাবাভ-দ্যুতি-চোরা
আপনি,–আচরি ধর্ম্ম শিখাইতে—রাধাভাব-দ্যুতি-চোরা
আমার,–নিতাই কেঁদে কেঁদে বলে—জান না কি কলি-জীব
আমার,–নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলা—অপরূপ রহস্য ভাই রে
কেঁদে বলে দয়াল-নিতাই—অপরূপ রহস্য ভাই রে
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দের—চিরকাল প্রতিজ্ঞা ছিল
যে আমারে যৈছে ভজবে—আমি তারে তৈছে ভজব
যে,–আমায় যেমন করে ভজবে—আমি তার,–ভজনের প্রতিদান দিব
ব্রজ-গোপিকার ভজনে—সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হইল
ব্রজ-গোপিকার ভজনের—প্রতিদান দিতে নারিল
বলতে হল ‘‘ন পারায়ে হম্’’
হৈল ইচ্ছার উদ্গম
কৈছন সুখে তিঁহো ভোর। রে !
এ তিন বাঞ্ছিত-ধন, ব্রজে নহিল পূরণ,
কি করিবে না পাইয়া ওর।। রে !!
ভাবিয়া দেখিল মনে, শ্রী,–রাধার স্বরূপ বিনে,
এ বাসনা পূর্ণ কভু নয়। রে !
তাই,–রাধাভাব-কান্তি ধরি’, রাধাপ্রেম গুরু করি’,
আসি,–নদীয়াতে করল উদয়।।’’ রে !!
‘‘ব্রজ-তরুণীগণ,- লোচন-মঙ্গল,
নদীয়া-বধূগণ-নয়ন-আমোদ।।’’
নিতাই,–কেঁদে বলে জীবের দ্বারে দ্বারে—এবার,–এসেছে রে তোদের তরে
রাই-কানু এক-দেহ ধরি’—বিহরে নদীয়া-পুরী
এবার,–এসেছে রে তোদের তরে
গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে—এবার,–এসেছে রে তোদের তরে
‘গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে’—
শ্রী,–রাধাভাব-কান্তি লয়ে—গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে
আয় কলিহত জীব
আর তোদের ভয় নাই রে
পাপ-তাপ সব আমি নিব
তোদের,–জন্ম-জন্মার্জ্জিত—পাপ-তাপ সব আমি নিব
বিনামুলে বিকাইব—পাপ-তাপ সব আমি নিব
পাপ-তাপের বোঝা নিব—বিকাইব প্রেম দিব
একবার গৌরহরি বোল—বিকাইব প্রেম দিব
গৌর,–অনুরাগ-সোহাগায় শোধন করা—ভাই রে,–চাঁদ নিতাই আমার শুদ্ধস্বর্ণ
যারে তারে পরশ করে—আমরি,–ধরায় পরশমণির বর্ণ
সোণা ছুঁলে পরশ হয়—ভাই রে,–কে কোথায় শুনেছ
পরশ ছুঁলে সোণা হয়—জগজনে এই ত’ জানে
পরশমণি বলে যারে—সে-ও ত’ ধাতুর বিচার করে
প্রাণ-গৌরাঙ্গের প্রেমরাজ্যে—এ-যে,–বিপরীত গতি রে
যারে তারে পরশ করে
আমার,–নিতাই-সোণা পরশ করে—যারে তারে পরশ করে
এমনি আমার নিতাই-সোণা—পরশিতেও হয় না
মুখ বলা বা কাণেতে শোনা—পরশেরও অপেক্ষা রাখে না
আমার নিতাই-সোণার নাম-মুখে বলা বা কাণেতে শোনা
বললেই হয় বা শুনলেই হয়
হেলায় শ্রদ্ধায় নিতাই নিতাই—বললেই হয় বা শুনলেই হয়
নিতাই নিতাই বলতে শুনতে—চিত্তদর্পণ মার্জ্জিত হয়
নিতাই নিতাই বলতে শুনতে—হৃদয়ে জাগে রে
পরশমণির খনি অমনি,–হৃদয়ে জাগে রে
‘পরশমণির খনি’—
মহাভাব-প্রেম-রসময়—পরশমণির খনি
অখিল-লাবণ্য-মাধুর্য্য-আলয়—পরশমণির খনি
মূর্ত্তিমান হয়ে খনি—হৃদয়ে জাগে রে
‘মূর্ত্তিমান হয়ে’—
কীর্ত্তন-নাটুয়া-বেশে—মূর্ত্তিমান হয়ে
‘কীর্ত্তন-নাটুয়া-বেশে’—
রসাবেশে হেসে হেসে—কীর্ত্তন-নাটুয়া-বেশে
নিতাই নিতাই বলতে শুনতে—হৃদয়ে গৌর উদয় হয়
হৃদয়ে গৌর উদয় হয়ে—নিশিদিশি শুণেতে কাঁদায়
গৌর হৃদয়ে,–উদয় হয়ে গুণে কাঁদায়ে—প্রাকৃত-ভোগ-বাসনা-ঘুচায়
দারুণ,–সংসার-বন্ধনের একমাত্র কারণ—দেহাভিমান যায় রে দূরে
গৌর-গুণে ঝুরে ঝুরে—দেহাভিমান যায় রে দূরে
দেহাভিমান ঘুচাইবার—আর কোন উপায় নাই রে
গৌর বলে কাঁদা বিনে—আর কোন উপায় নাই রে
গৌর গৌর বলতে বলতে—গোপীভাবামৃতে লুব্ধ করে
গৌর-গুণে ঝুরে ঝুরে—রাধাদাসী-অভিমান দেয় রে
গৌর হৃদয়ে,–উদয় হয়ে গুণে কাঁদায়ে—রাধাদাসী-অভিমান দেয় রে
রাধাদাসী-অভিমান দিয়ে—যুগল-রূপে দেখা দেয় রে
রাই-কানু-মিলিত গৌর—যুগল-রূপে দেখা দেয় রে
হৃদি-মণিমন্দিরে—রাধাশ্যাম-রূপে দেখা দেয় রে
পরম-করুণ শ্রীগুরুদেব—বলে দেন ইঙ্গিত করে
‘হরে কৃষ্ণ রাম’ নাম—নিশিদিশি জপ কর
রাধাদাসী-অভিমান ধর—নিশিদিশি জপ কর
হৃদয়ে যুগল স্মঙর—নিশিদিশি জপ কর
রাধাদাসী,–অভিমানে নাম জপে—নিত্যলীলা দেখতে পাবে
যমুনা-পুলিন-বনে—যুগল-বিলাস হেরে
রাধাদাসী,–অভিমানে নাম জপে—নিত্যলীলা স্ফূত্তি’ পায় রে
শ্রীগুরু-আজ্ঞায় নাম জপে—নিত্যলীলা স্ফূর্ত্তি’ পায় রে
নিভৃত-নিকুঞ্জ-বনে—যুগল-বিলাস হেরে
গুরুরূপা—সখীর আনুগত্যে—যুগল-বিলাস হেরে
লয়ে যায় তার করেতে ধরে
শ্রীগুরুরূপা-সখীর আনুগত্যে—যুগল-বিলাস হেরে
লয়ে যায় তার করেতে ধরে
শ্রীগুরুরূপা সখী—লয়ে যায়তার করেতে ধরে
শ্রীরাস মণ্ডলের মাঝে—লয়ে যায় তার করেতে ধরে
বলে,–ঐ মূরতি কি দেখেছ
যার,–নাম জপে এখানে এলে সেই—বলে,–ঐ মূরতি কি দেখেছ
শ্রীরাসমণ্ডল দেখে—মূরতিমন্ত নাম-মালা
একমাত্র ভোগ্যনিধি
‘হরে কৃষ্ণ’ নাম-রহস্য—একমাত্র ভোগ্যনিধি
এ রহস্য কি কেউ বুঝেছ
শ্রীগুরু-কৃপায় সাধক দেখে
মূরতিমন্ত নাম-মালায়-শ্রীগুরু-কৃপায় সাধক দেখে
অনুভব কর ভাই রে
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরি’- অনুভব কর ভাই রে
‘হরে কৃষ্ণ’ নাম-রহস্য—অনুভব কর ভাই রে
মহামন্ত্র-নাম-মালা-রহস্য—অনুভব কর ভাই রে
মাঝে দোলে সুমেরু—জড়াজড়ি কিশোরী কিশোর
নামের মালা ব্রজবালা
সুমেরু-যুগলকিশোর ঘিরে’—নামের মালা ব্রজবালা
গ্রন্থিরূপে চিকণ-কালা—যুগল,–প্রেমসূত্রে গাঁথা আছে
নামের মালা-ব্রজবালার—মাঝে মাঝে বিহরে
গ্রন্থিরূপে চিকণ-কালা,–নামের মালা-ব্রজবালার
দেখতে দেখতে কিছুই দেখে না
কোন মূর্ত্তি দেখতে পায় না
কেবল দেখে গৌরবর্ণ
আবির্ভাব দেখে—এক,–অপরূপ গৌরবর্ণ
যে’,–গৌরবর্ণের প্রভাবেতে—কোন মূর্ত্তি দেখা যায় না
মূরতি দেখিবার তরে—অত্যন্ত উৎকণ্ঠা বাড়ে
অপরূপ এক গৌর-মূরতি—কিছু পরে দেখতে পায়
মাখামাখি পুরুষ-প্রকৃতি—দেখে,–অপরূপ এক নব-মূরতি
যা’,–ব্রজে কখনও দেখে নাই—দেখে,–অপরূপ এক নব-মূরতি
অপরূপ এক নব-মূরতি
রাইএর বরণ শ্যামের গঠন—অপরূপ এক নব-মূরতি
মহাভাব-প্রেম-রস-ঘনাকৃতি—যা’,–রাস-বিলাসের পরিণতি
মূরতিমন্ত প্রেমবৈচিত্ত্য—যা’,–রাস-বিলাসের পরিণতি
দেখে আমার গৌর-মূরতি
‘হরে কৃষ্ণ’ নামের স্বরূপ—দেখে আমার গৌর-মূরতি
শ্রীযমুনা দেখে সুরধুনী
শ্রীরাসমণ্ডল শ্রীবাস-অঙ্গন
মাঝে নাচে শচীনন্দন
চারিদিকে ঘিরে নাচে
সখা-সখী-মিলিত পরিকর—চারিদিকে ঘিরে নাচে
যুগলে যুগলে খেলা—নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলা
‘যুগলে যুগলে খেলা’—
গৌর যুগল, পরিকর যুগল—যুগলে যুগলে খেলা
সখা-সখী-মিলিত পরিকর—চারিদিকে ঘিরে নাচে
পরিকর সব কায়ব্যূহ-যুগল
সকলেই উনমত
কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে—সকলেই উনমত
নিতাই ভজলে এই সকলই পাব—আয় ভাই আমরা নিতাই ভজি
এই,–গুপত-গৌরাঙ্গ-লীলায়—আমার,–অতিগূঢ় শ্রীনিত্যানন্দ
আমার,–অতিগূঢ়-নিতাই-ধনে—যারে জানায় সে ত’ জানে
প্রাণ-গৌরাঙ্গ নিজ-গুণে—যারে জানায় সে ত’ জানে
শ্রীচৈতন্য যারে জানায় সে জানিতে পারে।।’’ রে !!
আমার,–‘‘নিতাই জগতময়।’’ রে !
জানে না গৌরের নিজ-জনে
গৌরহরি, না জানালে নিজ-গুণে—নিতাই-ধনে,–জানে না গৌরের নিজ-গুণে
শ্রীনবদ্বীপে শ্রীনিতাই-সনে—প্রাণ-গৌরাঙ্গের প্রথম-মিলনে
নিজ-প্রিয়গণের প্রতি-পূবের্ব ইঙ্গিত করিলেন প্রভু
অবিলম্বে নদীয়ায় আসবেন নিতাই—পূর্ব্বে ইঙ্গিত করিলেন প্রভু
আসিয়া রহিলেন গোপনে
শ্রীনন্দন-আচার্য্যের ঘরে—আসিয়া রহিলেন গোপনে
প্রাণ-গৌরাঙ্গের ইচ্ছাক্রমে—আসিয়া রহিলেন গোপনে
নিশিশেষে দেখি স্বপন—প্রভাতে উঠি গৌরহরি
করিতে,–নিতাইচাঁদের অন্বেষণে –আদেশিলেন নিজ-প্রিয়গণে
খুঁজিলেন নদীয়ার ঘরে ঘরে
কিন্তু,–কোথাও দেখতে পেলেন না তাঁরে—খুঁজিলেন নদীয়ার ঘরে ঘরে
আমারা,–খুঁজিলাম নদীয়ার ঘরে ঘরে
কোথাও দেখতে,–পেলাম না সে মহাপুরুষবরে—আমরা,–খুঁজিলাম
তখন,–মৃদু-হাসিলেন গৌরহরি
প্রিয়গণের ঐ কথা শুনি—তখন,–মৃদু-হাসিলেন গৌরহরি
আমার,–অতিগূঢ় শ্রীনিত্যানন্দ
আমি,–না জানালে কেউ জানতে নারে—আমার,–আতিগূঢ় শ্রীনিত্যানন্দ
আমি,–না দেখালে কেউ দেখতে নারে—আমার,–অতিগূঢ় শ্রীনিত্যানন্দ
শ্রীমুখে,–হরিবোল হরিবোল হরিবোল বলি’—তখন,–ভাবাবেশে ঢুলি ঢুলি
নিজ—প্রিয়গণ মেলি—তখন,–ভাবাবেশে ঢুলি ঢুলি
আনন্দ আর ধরে না
আজ,–বহুদিন পরে মিলিবেন বলে—আনন্দ আর ধরে না
শ্রীমুখে,–হরিবোল হরিবোল হরিবোল বলে—উপনীত নন্দন—আচার্য্যের ঘরে
নিজ-ইষ্ট-ধ্যাননন্দে—গোপনে ছিলেন নিতাই-সুন্দর
গৌর,–মুখোদ্গীর্ণ-নামের রোলে—অকস্মাৎ হইল ধ্যান ভঙ্গ
এসেছেন আমার প্রাণের ঠাকুর—প্রাণে প্রাণে জানলেন নিতাই
আমার প্রাণের ঠাকুর বিনে—নইলে,–আমার প্রাণ ধরে কে বা টানে
ভেটিবারে প্রাণ-গৌরহরি—উঠি চলিলেন আগুসরি
শ্রীনন্দন-আচার্য্যের ঘরে—অপরূপ সে মিলন-রঙ্গ
হৃদে ধরে শ্রীগুরু-চরণ—একবার ভাই কর রে স্মরণ
এই আমাদের ভাবনার ধন—একবার ভাই কর রে স্মরণ
নিতাই-গৌরাঙ্গের মধুর-মিলন –এই আমাদের ভাবনার ধন
কারও মুখে না সরে ‘রা’—আর,–কারও পদ চলে না
দূর পরস্পর হেরি’—আর,–কারও পদ চলে না
না চলে ‘পা’ না সরে ‘রা’
দুনয়নে বহে ধারা—না চলে ‘পা’ না সরে ‘রা’
থকিত পারা উঠর হারা—না চলে ‘পা’ না সরে ‘রা’
যমুনা-তীরের সেই রঙ্গ—নদীয়াতে হল প্রকট
মধুর-শ্রীব্রজলীলায়
শ্রীকৃষ্ণ বিষয়, শ্রীরাধিকা আশ্রয়
মধুর-নদীয়ালীলায়
শ্রীগৌরাঙ্গ বিষয়, শ্রীনিতাই আশ্রয়
পহিলহি রাগ রে
এ-যে,–নিতাই-গৌরাঙ্গ-লীলার—পহিলহি রাগ রে
নাগর-নাগরী, নাগরী-নাগরেরর—পহিলহি রাগ রে
অবধি ত কেউ পাবে না—দিনে দিনে বাড়বে
হইল দোঁহে,–থাকিত পারা ঠউর হারা—না চলে ‘পা’ না সরে ‘রা’
দুনয়নে বহে ধারা—না চলে ‘পা’ না সরে ‘রা’
সাত্ত্বিক-বিকার যত—দোঁহার শ্রীঅঙ্গে হল বেকত
‘সাত্ত্বিক-বিকার যত’—
কম্প, অশ্রু, পুলকাদি—সাত্ত্বিক-বিকার যত
প্রাণ,–গৌরের যত নিতাইএর তত—দোঁহার শ্রীঅঙ্গে হল বেকত
অষ্ট-সাত্ত্বিক-ভূষণেতে—দোহাঁর শ্রীঅঙ্গ বিভূষিত
গৌরের যত নিতাইএর তত—দোঁহার শ্রীঅঙ্গ বিভূষিত
দেখি দোঁহার শ্রীঅঙ্গে,–সমান সমান ভাব-ভূষণ—তখন,–চিনিলেন গৌরাঙ্গগণ
অতিগূঢ় নিতাই-ধন—তখন,–চিনিলেন গৌরাঙ্গগণ
নিতাইচাঁদের বদন চেয়ে—তখন,–ভাবাবেশে সবাই বলে
গুপত হল বেকত—ওগো,–নিচেছি নিচেছি মোরা
আজ,–ভাবে বাবে পড়েছে ধরা—ওগো,–চিনেছি চিনেছি মোরা
ওগো,–চিনেছি চিনেছি মোরা—এই ঠাকুর অবধূত
অভিন্ন-চৈতন্য-তনু—এই ঠাকুর অবধূত
ভাবাবেশে বলেন গৌরাঙ্গগণ-বিহরে নদীয়াপরে
এক আত্মা দুই দেহ ধরে—বিহরে নদীয়াপুরে
নিতাইচাঁদের বদন চেয়ে—ভাবাবেশে সবাই বলে
গৌরাঙ্গ-প্রণয়-রসময়-পুরন্দর।। রে !!
গোরারসে গঠিত এই নিতাই-কলেবল। রে !
গোরারস-কমলের মত্ত-মধুকর।। রে !!
গোরারস-চাঁদের চকোর নিত্যানন্দ। রে !
জীব-হৃদি-তমো-বিনাশের পূর্ণতম-চন্দ্র।।‘ রে !!
কলিহত-জীব-হৃদি—তমোবিনাশের পূর্ণচন্দ্র
ঐ-যে,–মূরতি ধরে এসেছে—হৃদি,–তমোবিনাশের পূর্ণচন্দ্র
জগদ্গুরু নিত্যানন্দ—হৃদি,–তমোবিনাশের পূর্ণচন্দ্র
আমার,–নিতাইএর সত্তায় জগতের সত্তা—অনন্ত-ব্রহ্মাণ্ড নিতাইএর প্রকাশ
আরও,–গুঢ়-রহস্য আছে ভাই
আবেশে বলেন ঠাকুর বৃন্দাবন—আরও,–গূঢ়-রহস্য আছে ভাই
শ্রীগৌরাঙ্গ-বিলাসের তনু নিতাই—চাঁদ,–নিতাই আমার সকলই জানে
প্রাণ,–গৌরাঙ্গের যখন যে ভাব মনে—চাঁদ—নিতাই আমার সকলই জানে
প্রাণ,–গৌরাঙ্গ সুখ দিবার লাগি’—যখন যেমন তেমনি হয় রে
ভাবনিধির ভাব পুষ্টির লাগি’—যখন যেমন তেমনি হয় রে
গৌরাঙ্গ-সুখের খনি নিতাই—যখন যেমন তেমনি হয় রে
প্রাণ,–গৌর যখন মানিনী হয়—নিতাই,–নাগর হয়ে তার পায়ে ধরে রে
‘প্রাণ,–গৌর যখন মানিনী হয়’—
ভাবিনীর ভাবাবেশে—প্রাণ,–গৌর যখন মানিনী হয়
গললগ্নীকৃত-বাসে—নিতাই,–নাগর হয়ে তার পায়ে ধরে রে
অপরাধ ক্ষমা কর বলে—নিতাই,–নাগর হয়ে তার পায়ে ধরে রে
সকল-রসের গুরু। রে !
যে যাহা চায়, তারে তাহা দেয়,
বাঞ্ছা-কল্পতরু।।’’
নিতাই,–সকল-রসের আশ্রয়-আলয়—সে যাহা চায় তারে তারা দেয়
নিতাই অখিল-রসের গুরু—আবার,–বাঞ্ছা পূরণে কল্পতরু
নিত্যানন্দ জগদ্গুরু—আবার,–বাঞ্ছা পুরণে কল্পতরু
এই,–নিত্যানন্দ গুরুরূপে—কর্ত্তব্য বুঝায় জীবে
কর্ম্মী, জ্ঞানী, যোগী, ভক্ত—যত দেখ শ্রীগুরুরূপ
শ্রী,–নিত্যানন্দ গুরুরূপে—পরাভক্তি দেয় জীবে
বাঞ্ছা-কল্পতরু।।’’ রে !!
নিতাই,–রাধার সমান, কৃষ্ণে করে মান,
সতত থাকয়ে সঙ্গে। রে !
নিশিদিশি নাই, ফিরয়ে সদাই,
কৃষ্ণকথা-রস-রঙ্গে।। রে !!
বসি বাম-পাশে, মৃদু মৃদু হাসে,
প্রাণনাথ বলি ডাকে।’’ রে !
আমার,–‘‘প্রাণনাথ বলি’ ডাকে।’’ রে।
কতই না গরব করে—আমার,–প্রাণনাথ বলি’ ডাকে রে
চেয়ে,–আড্নয়নে গৌর-পানে—আমার,–প্রাণনাথ বলি’ ডাকে রে
‘চেয়ে,–আড়নয়নে গৌর-পানে’—
আধ-বদনে ঘোমটা টেনে—চেয়ে,–আড়নয়নে গৌর-পানে
প্রধানা-নাগরী নিতাই—আমার,–প্রাণনাথ বলি’ ডাকে রে
রসরাজ-গৌরাঙ্গ-নাগরের—প্রধানা-নাগরী নিতাই
নিত্যানন্দ-রমে গোরা
কীর্ত্তন-কেলি-বিলাস-রঙ্গে—নিত্যানন্দ-রমে গোরা
সঙ্কীর্ত্তন-রাসরঙ্গে–নিত্যানন্দ-রমে গোরা
বিলাস-বিবর্ত্ত-বিলাস-রঙ্গে—নিত্যানন্দ রমে গোরা
তেমতি করিয়া থাকে।।” রে!!
সাধন নিতাই, নাগরী নিতাই, নিতাই-কথা সে কয়।। রে!!
সাধন নিতাই, ভজন নিতাই, নিতাই নয়ন-তারা।” রে।
আমার,—নিতাই নয়ন তারা।” রে।
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমের মূরতি—আমার,—নিতাই নয়ন-তারা রে
নিতাই বিহনে সব আঁধারিয়া—আমার,–নিতাই নয়ন-তারা রে
“দশ-দিকময়, নিতাই সুন্দর, নিতাই ভূবন-ভরা।।” রে!!
তোমরা,—সবে মিলে এই কৃপা কর গো—আমার,—কতদিনে সে দিন হবে
জগত,—নিত্যানন্দ হেরিব—আমার,—কতদিনে সে দিন হবে
গৌরপ্রেমের মূরতি নিতাই—যে দিকে চাইব দেখতে পাব
“দশ-দিকময়, নিতাই-সুন্দর, নিতাই ভুবন-ভরা।। রে!!
রাধার মাধুরী, অনঙ্গমঞ্জরী, নিতাই নিতু সে সেবে। রে!!
কোতি শশধর, বদন সুন্দর, সখা-সখী বলদেবে। রে!
রাধার ভগিনী, শ্যাম-সোহাগিনী, সব-সখীগণ-প্রাণ।” রে!!
অনঙ্গমঞ্জরী নিতাই—সব-সখীগণ-প্রাণ রে
অনঙ্গমঞ্জরী-ভাবে বিভাবিত বলাই–সেই ত’ আমার গুণের নিতাই
অনঙ্গমঞ্জরী নিতাই—সব-সখীগণ-প্রাণ রে
বাহু নাড়া দিয়ে নিতাই—তাই,—গরব করে সদাই ফিরে রে
গরবিণীর কনিষ্ঠা বলে—তাই,–গরব করে সদাই ফিরে রে
নিতাই,–‘‘সব-সখীগণ-প্রাণ।’’ রে !
‘‘যাঁহার লাবণী, মণ্ডপ-সাজনী, শ্রীমণিমন্দির নাম।।’’ রে!!
এ-কি,–কইবার কথা কইব কোথা—যার লাবণ্যের মূরতি রে
নিতাইচাঁদের,–লাবণ্য মূর্ত্তিমান্ হয়ে—মণি-মন্দিররূপ ধরেছে
গৌর,–গোবিন্দ বিলসিবে বলে—মণি-মন্দিররূপ ধরেছে
‘‘নিতাই-সুন্দরে, যোগপীঠ ধরে, রত্ন-সিংহাসন সেজে।’’ রে !
রত্ন-সিংহাহন সেজে—ভাই রে আমার নিতাই সে-যে
সেবিতে গোরা-রসরাজ—সেজেছে নিতাই কতই সাজে
গৌর-গোবিন্দে দিয়া নিত্য আনন্দ—নাম ধরে নিত্যানন্দ
গৌর-গোবিন্দের যত সেব্য-দ্রব্য—সকলেই যে নিতাই আমার
ব্রজমণ্ডল, শ্রীগৌরমণ্ডল—বিহার-ভূমিরূপে নিতাই আমার
শ্রীযমুনা, শ্রীসুরধনী—স্রোতস্বিনীরূপে নিতাই আমার
গৌর, গোবিন্দ কেলি করবে বল—স্রোতস্বিনীরূপে নিতাই আমার
স্নান, পান, কেলি করবে বলে—স্রোতস্বিনীরূপে নিতাই আমার
ছায়া দিয়ে সেবা করবে বলে—তরু,–গুল্মরূপে নিতাই আমার
‘ছায়া দিয়ে সেবা করবে বলে’—
পত্র, পুষ্প, ফল—ছায়া দিয়ে সেবা করবে বলে
যোগপীঠ নিতাই আমার
মণিমন্দির নিতাই আমার
তাতে,–পুষ্পশয্যা নিতাই আমার
গৌর, গোবিন্দ বিলাসিবে বলে—তাতে,–পুষ্পশয্যা নিতাই আমার
বসন, ভূষণ, ভোজ্য, পেয়—সকলই যে নিতাই আমার
নিতাই অনন্তরূপ ধরে—গৌর-গোবিন্দের সেবা করে
অনন্ত-পরিকররূপে—সেবে গোরা-রসভূপে
আমার আমার আমার আমার—আমার নিত্যানন্দ-দেহ
গৌর-সেবা-বিগ্রহ—আমার নিত্যানন্দ-দেহ
গৌর-সেরা মূরতি ধরে—নিত্যানন্দরূপে বিহরে
গৌর-করুণা-রস মূরতিমন্ত—আমার প্রভু নিত্যানন্দ
আমার আমার আমার আমার—আমার নিতাই-কলেবর
শ্রীগৌরাঙ্গ-বিলাসের ঘর—আমার নিতাই-কলেবর
শ্রী,–গৌরাঙ্গ-ক্রীড়ার বসতিভূমি—আমার নিতাইএর তনুখানি
প্রাণ-গৌরাঙ্গের রঙ্গ-ভূমি—আমার নিতাইএর তনুখানি
রসরাজ-গৌরাঙ্গ বিহরে—নিতাই-দেহ-কুঞ্জ-কুটিরে
রসের গোরা সুখে সাঁতারে—নিতাই,–দেহ-কেলিপারাবারে
শ্রীগৌরাঙ্গ-সুখের খনি—আমার নিতাই গুণমণি
সুখ দিতে গৌরাঙ্গ-ধনে—কেউ নাই আমার নিতাই বিনে
নিতাই-বূকে গোরার শয়ন—নিতাই ওড়ন নিতাই পাড়ন
কি কহিব আর, নিতাই সবার, আঁখি, মুখ, সর্ব্ব-অঙ্গ। রে !
নিতাই নিতাই, নিতাই নিতাই, নিতাই নূতন-রঙ্গ।। রে !!
গুপত-গৌরাঙ্গ-লীলায়—চাঁদ,–নিতাই আমার নূতন-রঙ্গ
মিলিত বলাই অনঙ্গমঞ্জরী-সঙ্গ—চাঁদ,–নিতাই আমার নূতন-রঙ্গ
অন্তরঙ্গ-বিলাস-অঙ্গ—চাঁদ,–নিতাই আমার নূতন-রঙ্গ
অন্তরঙ্গ-খেলার অঙ্গ—চাঁদ,–নিতাই আমার নূতন-রঙ্গ
পঞ্চ তত্ত্বময় নিতাই—বল ভাই নিতাই নিতাই
নিতাই-গুণ কীর্ত্তন নর্ত্তন—আমাদের,–ব্রজে যাবার এই ত’ সাধন
যে যা জানে সে তাই করুক—আমাদের,–ব্রজে যাবার এই ত’ সাধন
গৌর-রহস্য ভোগের লাগি’,–
মহা,–রাস-বিলাসের পরিণতি—গৌর-রহস্য ভোগের লাগি’
নিতাই ভজে গোপী হব
রাধাদাসী নাম ধরাব
নিতুই নিতুই মিলাইব
নিভৃত-নিকুঞ্জে যুগল—নিতুই নিতুই মিলাইব
অভিসারে রাই কানু—নিতুই নিতুই মিলাইব
হা নিতাই প্রভু নিতাই—তেমনি করে আবার এস
জগজীবের গোচর হয়ে—তেমনি করে আবার এস
হাতে ধরে কেঁদে কেঁদে—তোমারে ত’ করেছেন আজ্ঞা
কৃপা করি লওয়াইও নাম।।
কৃত-পাপী দুরাচার, নিন্দুক পাষণ্ডী আর,
কেহ যেন বঞ্চিত না হয়।
শমন বলিয়া ভয়, জীবে যেন নাহি হয়,
সুখে যেন হরিনাম লয়।।
কুমতি তার্কিক জন, পড়ুয়া অধমগণ,
জন্মে জন্মে ভকতি-বিমুখ।’’
অবিদ্যামদে অন্ধ—তারা,–তর্কনিষ্ঠ অভিমানী
তারা,–অভিমানী বলে যেন—তাদের বঞ্চিত করো না নিতাই
খণ্ডাইও সবাকার দুঃখ।।’’
যাও,–যাও নিতাই ত্বরা করি—জীবের,–দারিদ্রতা ঘুচাও গিয়ে
হউ্ক না কেন,–ধনী, মানী, কুলীন, পণ্ডিত—জগ-মাঝে সেই দারিদ্র
যার,–নাই কৃষ্ণ-প্রেমধন—জগ-মাঝে সে দরিদ্র
সেধে যেচে নাম-প্রেম দিয়ে—তাদের,–দারিদ্রতা ঘুচাও গিয়ে
হাতে ধরে কেঁদে বলছেন প্রভু—আমার,-বিশ্বম্ভর-নাম পূর্ণ কর
যাও,–যাও নিতাই ত্বরা করি’—আমার,–বিশ্বম্ভর-নাম পূর্ণ কর
নাম-প্রেম দিয়ে বিশ্ব ভর—আমার,–বিশ্বম্ভর-নাম পূর্ণ কর
এখনও যে অনেক বাকী
আজ্ঞা-পালন হয় নাই তোমার—এখনও যে অনেক বাকী
আমরা,–দেশ-বিদেশে ঘুরে দেখলাম—এখনও যে অনেক বাকী
‘দেশ-বিদেশে ঘুরে দেখলাম—
তোমার,–কৃপা ভোগ করিবার লাগি’—দেশ-বিদেশে ঘুরে দেখলাম
কতদিনে পূর্ণ হবে
হা নিতাই প্রভু নিতাই—কতদিনে পূর্ণ হবে
প্রাণ-গৌরাঙ্গের মুখের কথা—কতদিনে পূর্ণ হবে
সর্ব্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম।।’’ রে !!
আমার দেখতে পাব না কি—সে-দিনের আর ক’দিন বাকী
হা নিতাই প্রভু নিতাই—সকল সুখেই বঞ্চিত মোরা
শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-লীলায়—বঞ্চিত হয়েছি মোরা
আশাপথ চেয়ে আছি
দগ্ধ-হৃদয় জুড়াবার তরে—আশাপথ চেয়ে আছি
আমরা দেখতে পাব না কি—সে-দিনের আর কদিন বাকী
হা নিতাই প্রভু নিতাই—সে-দিনের আর কদিন বাকী
গৌর,–পাবার আমাদের অধিকার নাই—চাই না তোমার গৌর চাই না
দুবর্বাসনার কিঙ্কর মোরা—কোন গুণে গৌরাঙ্গ পাব
কপটতার মূরতি মোরা—কোন গুণে গৌরাঙ্গ পাব
অভিমানের খনি মোরা—কোন গুণে গৌরাঙ্গ পাব
প্রতিষ্ঠার কিঙ্কর মোরা—কোন গুণে গৌরাঙ্গ পাব
শ্রীরূপ,–সনাতনের সাধনের ধন—কোন গুণে গৌরাঙ্গ পাব
দাস,–রঘুনাথের সাধ্য-নিধি—কোন গুণে গৌরাঙ্গ পাব
গৌর পাবার কোনও আশা নেই—কোন গুণে গৌরাঙ্গ পাব
পুরাও আমার নিতাই-সোণা—এই মনের বাসনা
যেখানে যাব দেখতে পাব
ঘরে ঘরে সবাই ঝুর্ছে
ম্লেচ্ছ-যবনাদি নর-নারী—ঘরে ঘরে সবাই ঝুরছে
কোথায়,–সোণার গৌর প্রভু বলে—ঘরে ঘরে সবাই ঝুঁরছে
কাঁদবে দেহ পাসরি
পরস্পর গলা ধরি’—কাঁদবে দেহ পাসরি’
বলে প্রাণ-গোরহরি—কাঁদবে দেহ পাসরি’
পাগল হয়ে বেড়াই সদাই—এই বাসনা পুরাও নিতাই
‘পাগল হয়ে বেড়াই সদাই’—
মিলে সব ভাই ভাই—পাগল হয়ে বেড়াই সদাই
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’