যমুনা কিনারে

সখি হে কিলয় বুঝাএব কন্তে

সখি হে কিলয় বুঝাএব কন্তে।
জনিকা জন্ম হোইত হম গেলহুঁ
ঐলেহুঁ তনিকর অন্তে।।
জাহি লয় গেলহুঁ সে চল আএল
তৈঁ তরু রহলি ছপাঈ।
সে পুনি গেল তাহি হম আনলি
তৈঁ হম পরম অন্যাঈ।।
জৈতহিঁ নাল কমল হম তোরলি
করয় চাহ অবশেখে।
কোহ কোহাএল মধুকর ধায়ল
তেঁহি অধর করু দঁশে।।
লেলি ভরল কুম্ভ তৈঁ উর গাসলি
সসরি খসল কেশ পাশে।
সখি দস আগুপাছু ভয় চললিহি
তৈঁ উর্ধ খাস ন বাকে।।
ভনহিঁ বিদ্যাপতি সুনু বর জৌমতি
ঈ সভ রাখু মন গোঈ।
দিন দিন ননদি সঁ প্রীতি বঢ়াএব
বোলি বেকত জনু হোঈ।।

অন্তঃকথন:
জল আনতে যাওয়ার ছল করে শ্রীমতী গেছিলেন অভিসারে। সকালে জল আনতে গিয়ে ফিরেছেন দিবাবসানে! মনে ভয় স্বামী যদি ধরে ফেলেন! তাই রাধারানী নানাভাবে দেরি হওয়ার উপযুক্ত কারণ বানাচ্ছেন, তৈরী করছেন মিথ্যে অজুহাত। তবে প্রেমের জন্য তো কোন মিথ্যেই মিথ্যে নয়। রাধারানী সখী কে বলছেন, হে সখি, এখন আমি কান্তকে কী করে বোঝাবো? দিনের জন্মক্ষণে সেই ভোরবেলায় আমি গেলাম আর ফিরলাম দিনের শেষে। আসলে যা আনতে গেলাম সেই জলই এসে পড়ল যে, মাঝপথে বৃষ্টি নামলো তাই মাথা বাঁচাতে গাছতলায় আশ্রয় নিলাম। বৃষ্টি থামতে তবে জল এনেছি, এতে আমার কী দোষ বল? জল আনতে গিয়ে কমলের নাল ছিঁড়ছিলাম, স্নান করতে ইচ্ছে করল, তা সেই চান করতে গিয়ে জল উছলে উঠলো তো, আর তখনই তো কমল ছেড়ে মধুকর আমার দিকে ধেয়ে এসে অধর দংশন করল! চুম্বনচিহ্ন গোপন করার রাধারানীর কি প্রাণান্ত প্রচেষ্টা! মিলনক্লেশে প্রশ্বাস দ্রুত হয়েছে, কিন্তু রাধারানি বলছেন, নানা কখনও না! ভরা কলসী মাথায় বয়ে নিয়ে আসতে গিয়েই তো নিশ্বাস এমন দ্রুতগতি, শ্রমে মাথার কেশপাশ খসে পড়ল। দশজন সখী আগে আর দশজন সখী পশ্চাতে তাদের তালে তাল মিলিয়ে আসতে গিয়ে ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে বাকরোধ হল। রাধারানীর কথা শুনে বিদ্যাপতি বলছেন, শোন বরযুবতী, এসব কথা মনে গোপন করে রাখো। দিনে দিনে ননদিনীর সঙ্গে ভাব করবে যেন তোমার গোপন কথা সে প্রকাশ না করে!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী