যমুনা কিনারে

সুন্দরি রাধা সুণ সমুখে

সুন্দরি রাধা সুণ সমুখে
পুছো মোএঁ হৃষীকেশে।
কথাঁ না বসবি কথাঁ তোর ঘর
জাইবেঁ কোমণঁ দেশে।।ল রাধা।।
গোকুলে যাকোঁ মো গোআল জাতী
তোহ্মে না পুছহ কিকে।
ষোল শত গোপী পসার সাজিআঁ
মথুরা জাওঁ মো বিকে।।
ওলাহা রাখা মাথার চুপড়ী
দেখোঁ মো তোহ্মার পসারা।
কোণ বথু লঁআ জাহা মথুরা
তাহার দেহ বিচারা।।
ঘৃত দধি দুধ আওর ঘোল
এ সব মোর পসারা।
তোহ্মে তা কমণ কারণে কাহাঞিঁ
চাহ এহার বিচারা।।
তোএঁ না জাণসি মোএঁ মাহাদাণী
এ দাণ সব আহ্মারে।
ভাণ্ডে ষোল পণ দিআঁ মাহাদাণ
চল মথুরা নগরে।।
বিধর কালে বিথর শুণী
হেন বিপরীত বাণী।
আনেক সমএ মথুরার পথে
ঘৃত দুখে মাহাদাণী।।
আজলী রাধা তোঁ আবালী বড়ী
হের পাঞ্জী পরমাণে।
আপন চিহ্নিআঁ দিআঁ যাহা দাণ
রাখহ আপণ মাণে।।

অন্তঃকথন:
শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের তাম্বুল খন্ডে শ্রীরাধিকা তো কৃষ্ণের পাঠানো তাম্বুলে পদাঘাত করে তাঁর প্রেমপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। তখন বড়াই এর সঙ্গে পরামর্শ করে শ্রীকৃষ্ণ ঠিক করলেন রাধাকে তাঁর এই কর্মের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। কিকরে শাস্তি দেবেন তিনি? বড়াই এর সঙ্গে যুক্তি করলেন কানাই, যে পথে রাধা দধি-দুগ্ধ বেচতে মথুরায় যান সেই পথে তিনি যমুনার তীরে মহাদানী সেজে বসে থাকবেন আর রাধার কাছে সমস্ত বিক্রয়দ্রব্যের শুল্ক আদায় করবেন। আর সেই ছলে শুল্ক রূপে আদায় করে নেবেন রাধাকেও, এই আসলে তাঁর মনোগত ইচ্ছে। এই গানে আমরা দেখছি দানীরূপী শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে শ্রীরাধিকার বাদানুবাদ চূড়ান্ত নাটকীয় হয়ে উঠেছে। কৃষ্ণ দানী সেজে রাধাকে বলছেন, সুন্দরী রাধা , শোন আমি হৃষিকেশ তোমাকে জিগ্যেস করছি তুমিকোথায় থাকো? তোমার ঘর কোথায়? তুমি যাবেই বা কোথায়? রাধা রোজ এ পথে যান,কোনদিন এমন প্রশ্নের মুখে পড়েননি। তিনি অবাক হয়ে বলছেন, আমি গোকুলে থাকি, গোয়ালা জাতি, ষোলশো গোপিনী নিয়ে মথুরায় দধি দুগ্ধ বিক্রয় করতে যাচ্ছি কিন্তু তুমি কে? আর কেনই বা তুমি আমায় এসব প্রশ্ন করছ? রাধার প্রশ্নের কোন সদুত্তোর না দিয়ে কৃষ্ণ বললেন তুমি তোমার পসরা নামাও আমি দেখব। তুমি কিকি জিনিস নিয়ে মথুরায় যাচ্ছ আমায় তার হিসাব দাও। রাধা তখন বলছেন আমার পসরায় তো দধি দুগ্ধ ঘৃত আর ঘোল আছে কিন্তু তুমি এসবের হিসেব চাইছো কেন? তখন কৃষ্ণ বললেন তুমি জানো না আমি মহাদানী( প্রধান শুল্ক সংগ্রাহক), এই সব জিনিসের শুল্ক আমার। প্রত্যেক ভান্ডে ষোল পণ করে দান দিলে তবেই তুমি মথুরায় যেতে পারবে। রাধা কিন্তু দমবার পাত্রী নন , তিনিও তর্ক করতে লাগলেন, এতকাল ধরে অনেক কথা শুনেছি কিন্তু এমন বিপরীত কথা তো কখনো শুনিনি! এতদিন পড়ে হঠাৎ মথুরার ঘৃত দুগ্ধের করের জন্য দানী নিযুক্ত হল! এবারে কৃষ্ণ রেগে গিয়ে বলছেন শোন রাধা তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি একেবারে নাবালিকা। শুল্ক আদায়ের বই দেখ আর নিযে সব বুঝেশুনে দান দিয়ে আপনার মান রক্ষা কর। এই গানের নাটকীয়তাই এর পরম সম্পদ!

পদকর্তা:বড়ু চন্ডীদাস
রাগ:গুজ্জরী
তাল:ক্রীড়া
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী