যমুনা কিনারে

হমে একসরি পিঅতম নহি গাম

হমে একসরি পিঅতম নহি গাম।
তেঁ মোহি তরতম দেইতে ঠাম।।
অনতহু কতহু দেঅইতহু বাস।
জৌঁ কেও দোসরি পড়উসিনি পাস।।
চল চল পথুক চলহ পথ মাহ।
বাস নগর বোলি অনতহু যাহ।।
আঁতর পাঁতর সাঁঝক বেরি।
পরদেস বসিঅ অনাগত হেরি।।
ঘোর পয়োধর জামিনি ভেদ।
জেকর বহ তাকর পরিছেদ।।
ভনই বিদ্যাপতি নাগরি রীতি।
ব্যাজ বচনে উপজাব পিরীতি।।

অন্তঃকথন:
বর্ষার রাতে এক অচেনা পথিক আশ্রয় চাওয়ায় গৃহবাসিনী নারীটি তাকে বলছে, আমি একা স্ত্রীলোক, আমার প্রিয়তম স্বামীও গ্রামে নেই সেইজন্য তোমায় ঘরে থাকতে দিতে আমার দ্বিধা হচ্ছে। যদি কোনো পড়শিনী কাছে থাকতো তা হলেও না হয় হোতো, তোমার জন্য অন্য কোনো বাড়িতে থাকার জায়গা করে দিতাম। কিন্তু তেমন কেউও তো নেই কাছাকাছি, যাও যাও পথিক তুমি পথেই ফিরে যাও, রাত কাটানোর জন্য অন্য কোথাও আশ্রয় খুঁজে নাও। দূরে কেবল প্রান্তর দেখা যায়, এদিকে সন্ধ্যাও সমাগত, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি পরদেশ থেকে আসছো, এখানকার কিছু ভালো চেনোও না, কাজেই আর দেরি করা তোমার উচিৎ নয়, রাত হবার আগে তুমি অন্যত্র ঠাঁই খুঁজে নাও। আকাশ ও মেঘে ছেয়ে গেছে, এমন ঝড়জলের রাতে যে বের হয় তার আর বাঁচার আশা থাকে না। এখানে এই মেয়েটি একদিকে যেমন পথিককে আশ্রয় দিতে দ্বিধা করছে অন্যদিকে তার জন্য উদ্বেগও প্রকাশ করছে। এই কারণেই বিদ্যাপতি বলছেন, নাগরীর ধারাই এই, ছলযুক্ত কথা বলে প্রীতি উৎপন্ন করে। অর্থাৎ এখানে মেয়েটির আশ্রয় দিতে প্রত্যাখ্যান করার ধরণের মধ্যেই একধরণের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় ও আকাঙ্ক্ষা লুকিয়ে আছে বলেই কবির কল্পনা। এই পদটি রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদ নয়, সাধারণ পরকীয়া প্রেমের পদ। এই জাতীয় পরকীয়া প্রেমরসাত্মক কবিতার একটি ধারা সংস্কৃত সাহিত্য থেকেই প্রচলিত ছিল, লৌকিক সাহিত্যে তো এর বিস্তার ছিলোই। বিদ্যাপতি রচিত এই রাধাকৃষ্ণ সম্পর্কহীন পরকীয়া প্রেমের পদগুলি পাঠ করলে বোঝা যায় যে এর ওপরে প্রাথমিক ভিত্তি করেই রাধাকৃষ্ণ পরকীয়া প্রেমের পদগুলি রচিত হয়েছিল। রসমাধুর্য্য ছাড়াও রাধাকৃষ্ণের প্রেমের মূল কাঠামোটি নির্মাণ করার ক্ষেত্রে এই পদগুলির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী