যমুনা কিনারে

আউলাইল কুন্তল মোর সত্বর গমনে

আউলাইল কুন্তল মোর সত্বর গমনে।
করযুগ তুলী তার করিলোঁ বন্ধনে।।
শ্রমের কারণে হাম্ভী হৈল ঘন ঘনে।
গাঅ মোড়িএ কাহ্নঞিঁ আলস্য কারণে।।
তোহ্মা দেখি যদি মোর বিচলিল মনে।
তবেঁ মোরে জীতেঁ না জুআএ এখনে।।ধ্রেু।।
পবনে চলিল মোর হৃদয় বসনে।
দৈবযোগেঁ তাত তোর পড়িল নয়নে।।
লাজ ভএঁ ভৈল মোর তরল নয়নে।
সত্বরেঁ ঢাকিলোঁ মুখ দেহের বসনে।।
যুমনা নদীর আহ্মে তুলিল পাণী।
এহো দোষ নহে যেন বুয়িলোঁ খর বাণী।।
জীবার আন্তরে কাহ্নাঞিঁ রাখহ গোকুল।
পাপ পামর তোর জাণোঁ আদিমূল।।
আপদ পাএ যাক না চিহ্নে আপণা।
এহা জাণী তেজ কাহ্নাঞিঁ নাগরপণা।।
পাগল হৈলা কাহ্নাঞিঁ নিজ মতিমোষে।
বাসলী শিরে বন্দী গাইল চণ্ডীদাসে।

অন্তঃকথন:
শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের যমুনান্তর্তগত বস্ত্রহরণ খন্ডে 'বাহু তুলিলেঁ কেশ বন্ধন ছলে' গানটিতে শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে দোষারোপ করেন,যে শ্রীমতীই তাঁর আচরণ ও অঙ্গভঙ্গী দ্বারা কৃষ্ণকে প্রলুব্ধ করেছেন। তিনি ওই গানে আরো বলেন রাধাই যখন কানাই এর মনে মদনাগুণ জ্বালিয়েছেন তখন তাকে নির্বাপণ করার দ্বায়িত্বও রাধাকেই নিতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের সমস্ত দোষারোপের সমুচিত জবাব দিয়ে রাধারানী এই গানে বলছেন, আমি মোটেও তোমাকে দেখাবার জন্য বাহু তুলে কেশবন্ধন করছিলাম না। আসলে আমি তোমার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দ্রুত পদপাতে গমন করছিলাম।। আর তাতেই আমার কেশের বাঁধন খুলে যায়। আমি সেই আলুলায়িত কেশ বন্ধনের চেষ্টা করছিলাম মাত্র, এর মধ্যে ছলনার কিছুই নেই। অধিক শ্রমের জন্য আমার ঘন ঘন হাই উঠছিল, তাই আলস্য নিবারণের জন্য আমি আরমোড়া ভাঙছিলাম, তুমি তাকে অঙ্গভঙ্গী বলে ভুল করছো। শ্রীমতী বলছেন, শোনো কানাই, তোমাকে দেখে যদি আমার মন বিচলিত হয়, তাহলে আমার বেঁচে থাকাই উছিৎ নয়, তোমাকে চাওয়ার চেয়ে আমার মরণ ভালো। বাতাসে আমার বুকের বসন খসে পড়েছিল, আর তখনি দৈবযোগে তোমার নজর পড়ে, সেই দেখে লজ্জায় আমার দৃষ্টি চকিতচঞ্চল হয়ে পড়েছিল, সেই কারণেই আমি দ্রুত বস্ত্রাঞ্চলে মুখ আবৃত করি, তোমাকে উত্তেজিত করার মোটেই আমার কোন উদ্দেশ্য ছিল না। আর শোনো আমি তো যমুনা থেকে জল তোলার সময় তোমার সঙ্গে মধুরভাষন করি নি, বরং রূঢ় ভাবেই কথা বলেছিলাম। সেটা মোটেই দোষের নয়। তুমি মিথ্যেই আমায় দোষারোপ করছো। রাধারানী কি প্রখর যুক্তিতে কৃষ্ণের সকল দাবী নস্যাৎ করে দেন, বলেন তুমি আমার জন্য গোকুল রক্ষা করো না ছাই, নিজে বাঁচার জন্য গোকুল রক্ষা কর তুমি। তোমার আদি মূল আমার কিছুই যানতে বাকী নেই, তুমি পাপিষ্ঠ পামর। শেষ কালে রাধিকা কৃষ্ণের প্রতি কিঞ্চিৎ ধমক পুর্ণ উপদেশ বানী বর্ষন করে বলছেন, যাকে আপদে পায় সে নিজেকে চিনতে পারে না , এইবার তুমি সত্যিটা বুঝে নাগরপনা ত্যাগ কর। আমি তোমাকে পাগল করিনি, তুমি নিজের মতিচ্ছন্ন দোষে পাগল হয়েছো এই কথাটা জেনে রাখো। এইভাবে এই গানে রাধিকা শুধু কৃষ্ণের কথার জবাবই দিলেন না, উলটে কৃষ্ণকেই দোষী সব্যস্ত করে দিলেন। শ্রীমতির কথার কি অপরূপ চাতুরী। নাট্যরসে ভরা এই জাতীয় গান শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের সম্পদ।

পদকর্তা:বড়ু চন্ডীদাস
রাগ:রামগিরী
তাল:রূপক
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী