যমুনা কিনারে

কাজর রঙ্গ বমএ জনি রাতি

কাজর রঙ্গ বমএ জনি রাতি।
অইসন বাহর হোইতে সাতি।।
তড়িতহু তেজলি মিত আঁধিআর।
আসা সংসয় পরু অভিসার।।
ভল ন কএল মঞে দেল বিসবাস।
নিকট জোএন সত কাহ্নক বাস।।
জলদ ভুজঙ্গম দুহু ভেল সঙ্গ।
নিচল নিসাচর কর রসভঙ্গ।।
মন অবগাহএ মনমথ রোস।
জিবঞো দেলে নহি হোএত ভরোস।।
আগমন গমন বুঝএ মতিমান।
বিদ্যাপতি কবি এহু রস জান।।

অন্তঃকথন:
শ্রীমতী অভিসারে যাবেন, কিন্তু রাত্রি অতি ঘোর! শ্রীমতীর মনে তাই নানা বিপদের আশঙ্কা! তাই তিনি বলছেন, এমন ঘন আঁধার যে মনে হচ্ছে রাত্রি যেন কাজলের রঙ বমন করছে! এমন নিশীথে ঘরের বাইরে যাওয়াই শাস্তি! মেঘে ঢাকা এ রাতে বিজলীও চমকাচ্ছে না যে ক্ষণকালের তরেও পথ দেখা যাবে, মনে হয় বিদ্যুতও তার মিত্র অন্ধকারকে ত্যাগ করেছে! হায়! আমার অভিসারের আশা সংশয়ময় হয়ে উঠল! মাধবকে অভিসারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমি ভালো করিনি! মাধব সঙ্কেত কুঞ্জে আমার অপেক্ষা করছেন, সে স্থান তো বেশি দূরে নয়, কিন্তু এমন আঁধার রাতে আমার যে সে কুঞ্জ শতযোজন দূর বলে মনে হচ্ছে! পদে পদে বিপদ, মাথার ওপর মেঘ আর পায়ের তলায় বিষধর সর্প! পথের পাশে পাশে শৃগাল ব্যাঘ্রাদি নিশ্চল নিশাচরেরা রসভঙ্গ করছে! মন্মথের রোষে আমার মন ডুবে গেল! আমি কি যে করি! জীবন দিলেও কানাইকে যে পাবো এমন ভরসা পাচ্ছি না। মতিমান মানুষ যাওয়া আর না যেতে পারার মর্ম বোঝে! একান্ত ইচ্ছা থাকলেও অনিবার্য কারণে যেতে না পারলে বুদ্ধিমান ব্যক্তি ক্রুদ্ধ হন না! মাধবও নিশ্চই আমার অপারগতা বুঝতে পারবেন! শ্রীমতীর মনের দোলাচলতার অন্তরে লুকিয়ে থাকা একান্ত অভিসার আকাঙ্ক্ষার যে আর্তি সেই রস বিদ্যাপতি কবি জানেন! তাই তো তাকে কাব্যে ফুটিয়ে তুলতে পারেন!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী