যমুনা কিনারে

দুর সিনেহা বচনে বাঢ়ল

দুর সিনেহা বচনে বাঢ়ল।।
মনক পিরিতি জানি।
অলপ কাজ বড়ী দুর আঁতর
করম পাওল আনি।।
চরন নূপুর ঘন সবদএ
চাঁদহু রাতি উজোরি।
ননন্দি বৈরিনি নিন্দে ন নোঅএ
আবে অনাইতি মোরি।।
দূতী বোলে বুঝাবহ কাহ্নু।
আজুক রয়নি আএ ন হোএতে
হৃদয় কোপথি জনু।।
চরন নুপুর করে উতারব
সামর বসন তনু।
খেড়হু কউতুকে ননন্দ বোধবি
বিলঁব লাগএ জনু।।
ও ভরে লাগল নব সিনেহা
এঁ ভরে কুলক গারি।
সকল পেম সম্ভারি ন হোএত
হঠে বিনাসতি নারি।।
ভন বিদ্যাপতি উগন্ত সেবিঅ
মদন চিন্তথু আউ।
পিরিতি কারনে জিব উপেখব
এ বেরি হোউ কি জাউ।।

অন্তঃকথন:
যে মাধব দূরে আছেন তাঁর প্রেমবাসনার কথা দূতীর মুখে জেনে রাধারানীর মনেও প্রেম জাগ্রত হল, বেড়ে উঠলো আকাঙ্ক্ষা! বড় সহজেই মিলন হতে পারে কিন্তু হায় কর্মফলে যে দুজনের মাঝে দুস্তর ব্যবধান! চরণের নূপুর ঘন ঘন বেজে ওঠে, ওদিকে রাত্রিও চন্দ্রালোকে উজ্জ্বল, বৈরিনী ননদিনীর চোখেও ঘুম নেই, রাধারানী আক্ষেপ করে বলছেন, এমন অবস্থা যে সবই আমার আয়ত্তের বাইরে। রাধারানী তাই দূতীকে কাতর অনুনয় করে বলছেন, দূতী, তুমি কানুকে আমার অবস্থার কথা বুঝিয়ে বোলো, আজ রাতে যদি আমার যাওয়া নাও ঘটে সে জানো মনে রাগ না করে! আমি চরণের নূপুর হাত দিয়ে খুলে ফেলবো, যাতে কেউ শুনতে না পায়। কালো শাড়িতে ঢেকে নেব দেহ, যেন কেউ দেখতে না পায়, আর ননদিনীকে আমি খেলায় কৌতুকে ভুলিয়ে রাখবো যেন সে জানতে না পারে আমার এ অভিসার! দূতী তাকে বোলো আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব যাতে আমার অভিসারে যেতে বিলম্ব না হয়! কিন্তু তবুও যদি না যেতে পারি তবে তাকে বোলো সে যেন আমার ওপর রাগ না করে! রাধারানীর কি আকুল দশা, একদিকে নূতন প্রেম আর অন্যদিকে কুলের কলঙ্ক! প্রেমে সকল দিক বুঝি বা আর সামলানো যায় না। হঠকারীতায় নারীর বিনাশ ঘটে! বিদ্যাপতি রাধারানীকে উপদেশ দিয়ে বলছেন, যে প্রেম উদীয়মান তাকেই সেবা কর, মদনকেই আগে চিন্তা কর। প্রেমের জন্য জীবন উপেক্ষা কোরো, তাতে যা হয় হোক!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী