“শুন ধনী রাই, তান কিছু গাই
রাগেতে রাগিণী মেলা।
গাইতে গাইতে মুগধ হইলা
নন্দের নন্দন কালা।।
পুনঃ কহে শ্যাম ‘অতি অনুপাম
শুনিতে মধুর ধ্বনি।
রাধা রাধা বলি ডাকিছে বীণাটি
মুগধ হইল শুনি।।’
এই রস তান অনেক সন্ধান
শুনিল রসিক শ্যাম।
অতি বড় সুখী সুখেতে মোহিত
গাইতে রাধার নাম।।
ভাবে গদ্‌গদ অতি সে আমোদ
সে হেন রসিক কান।
রাধা নাম বিনে আন নাহি জানে
শ্রবণে শুনল গান।।
নয়ন-কমল যেন ঢল ঢল
লোরেতে কমল-আঁখি ।
যেমন ঘনের বরিখে শ্রাবণে
তেমতি ধরণ দেখি।।
রাধা রাধা রাধা আন সব বাধা
কেবল রাধার ধ্যান।
রাধা-নাম-গানে কমল-নয়নে
কিছুই নাহিক আন।।
এই সব রস শুনিয়া অবশ
রসিক নাগর কান।
সে নব নাগর রসের সাগর
শ্রবণে শুনয়ে গান।।
যখন বাজানু রাই-নাম-সুধা
কান্দিয়া আকুল শ্যাম।
হইয়া মুগধ অতি সে আমোদ
দিল মুকুতার দাম।।
দেখ দেখ ধনি, আমার উরসে
এই মুকুতার মালা।
সে নব নাগর গুণের সাগর
রাধা-নামে বড় ভোলা।।
এই সব রসে তার মন তোষে
বীণাতে করিল গান।
বিকল কিসে বা না জানি কেন
কিসের কারণে ধ্যান।।
কুঞ্জে একাকিনী করেতে বাঁশীটি
ধরিয়া নাগর রায়।
তোমারে কিছুই তান শোনাইতে
আইল মাধবী-ছায়।”
চণ্ডীদাস দেখি– অতি অপরূপ
অপার দোঁহার লীলা।
কে ইহা জানিবে নিগূঢ় মরম
দোঁহে দুঁহু রসমেলা।।