”ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
যে গ্রামে আমার, –প্রভুনিতাই বিহরিলা–যাইরে গ্রামের বালাই যাইরে
যেথা, –প্রকট হল নিতাই-গুণমণি–ধন্য,–রাঢ়দেশ একচক্রা ভূমি
হাড়াইপণ্ডিত-ঘর।”
এক চাকায় হাড়াই-পণ্ডিতের ঘর–যাইরে ঘরের বালাই যাইরে
‘এক চাকায় হাড়াই-পণ্ডিত ঘর’–
যাতে,–জনমিলা নিতাই গুণধর–এক চাকায় হাড়াই-পণ্ডিতের ঘর
যাতে,–বিলসে গৌর-বিলাস-কলেবর–এক চাকায় হাড়াই-পণ্ডিতের ঘর
মাঘী শুক্লা ত্রয়োদশী–মাস,–তিথির বালাই লয়ে মরি
যাতে উদিল নিতাই-শশী–মাস,–তিথির বালাই লয়ে মরি
‘যাতে উদিল নিতাই-শশী’–
একচাকা-আকাশে আসি–যাতে উদিল নিতাই-শশী
খণ্ডিতে পাপ-তমরাশি–যাতে উদিল নিতাই-শশী
যে আনিল প্রেমের মূরতি ধরায়–সেই, –শুভ-তিথির বালাই যাই
মাঘী শুক্লা-ত্রয়োদশীতে–আজ জগতে দেখিল সবে
যারে কেউ দেখে নাইরে’– আজ জগতে দেখিল সবে
ঘরে কেউ দেখে নাইরে
নামমাত্র শুনেছে–যারে কেউ দেখে নাইরে
‘নামমাত্র শুনেছে’–
মূরতিমন্ত গৌরপ্রেম-প্রকাশে–নামমাত্র শুনেছে
যাতে,–জনমিলা হলধর।।”
ধবল ছিল ব্রজেতে –এবে,–অনুরাগে রাঙা হয়ে
শ্রীনিত্যানন্দরূপে–এবে,–অনুরাগে রাঙা হয়ে
হাড়াই-পণ্ডিত, অতি হরষিত,
পুত্রমহোৎসব করে।”
ভাগ্যবন্ত হাড়াই-পণ্ডিতের–আজ,–আনন্দ আর ধরে নারে
নিত্যানন্দ পেয়ে পুত্ররূপে–আজ,–আনন্দ আর ধরে নারে
আনন্দ নাহিক ধরে।।”
আজ,–ভাগ্যবতী-ধরণীর –আনন্দ আর ধরে নারে
নিতাই-গুণমণি বুকে ধরি’–আজ,–ধরণীর আনন্দে ভারি
প্রেমের,–মূরতি-নিতাই হৃদে ধরে–ধরণা প্রেমে টলমল করে
করি কিছু অনুমান,”
অকস্মাৎ-আনন্দের –কারণ অনুসন্ধান করে
কে যেন বলে দিল প্রাণে–সীতানাথ অনুমান করে
কৃষ্ণের অগ্রজ রাম।।”
পিছে পিছে আস্বে শ্যাম–আগে জনমিলা রাম
আয়োজন করতে খেলার উপাদান –আগে জনমিলা রাম
‘আয়োজন করিতে খেলার উপাদান’–
যাতে, –খেলতে পারে প্রাণারাম–আযোজন করিতে খেলার উপাদান
খেলার ভূমি আগে এল
শ্রীনিত্যানন্দ সেবাবিগ্রহ–খেলার ভূমি আগে লে
নৈলে,–কোথা এসে খেল্বে বল–খেলার ভুমি আগে এল
সীতানাথের অন্তরে –আজ,–আনন্দ আর ধরে নারে
আমার ডাক পৌঁচেছে জেনে–আজ, –আনন্দ আর ধরে নারে
‘নৈলে,–খেলার ভূমি আস্বে কেনে –ডাক বুঝি বেজেছে কাণে
‘নৈলে,–খেলার ভূমি আস্বে কেনে’–
খেলার সাধ যদিনা থাকে মনে–খেলার ভূমি আস্বে কেনে
কেনে ডাক নিশ্চয় বেজেছে কাণে
এবার খেলারু আস্বে আপনি
এই যে এল খেলার ভূমি–এবার খেলারু আস্বে আপনি
নিজ-বিলাস -ভূমি ছেড়ে –বিলাসী কি থাক্তে পারে
খেলার,–ভুমি ছেড়ে কতক্ষণ থাক্বে–খেলার ভূমি এল,–
আমার প্রতিজ্ঞা এবার পূর্ণ হবে
সীতানাথের আনন্দ ধরে না
আমার,–বাসনা-পূরণের হল সূচনা–সীতানাথের আনন্দ ধরে না
আমার,–গঙ্গাজল তুলসী দেওয়া–এতদিনে সফল হল
‘আমার, –গঙ্গাজল তুলসী দেওয়া’–
অনশনে,–হা কৃষ্ণ বলে কেঁদে–আমার,–গঙ্গাজল তুলসী দেওয়া–এতদিনে
সীতানাথ গরজে গভীর
আনিলুঁ আইল বলবীর–সীতানাথ গরজে গভীর
আনন্দ-সাগরে ভাসে।”
‘যত,–ভক্তগণের আপন-আপন-মনে’–
কারণ কহে কিছু না জানে–যত,–ভক্তগণের আপন-আপন-মনে
সবার মনে তাই আনন্দ
আজ,–আইলা প্রভু নিত্যানন্দ—সবার মনে তাই আনন্দ
কহে দুঃখী কৃষ্ণদাসে।।”
পতিতের বন্ধু নিতাই এল–পতিতের দুঃখ দূরে গেল
‘পতিতের বন্ধু নিতাই এল’–
আর পতিতের ভয় কি বল–পতিতের বন্ধু নিতাই এল
খেলার ভূমি প্রস্তুত লাগি,–আগে আমার নিতাই এল
‘খেলার ভূমি প্রস্তুত লাগি’–
তার প্রিয় গোরাচাঁদের–খেলার ভূমি প্রস্তুত লাগি
রঙ্গভূমি প্রস্তুত -আশে’–
রঙ্গিয়া প্রাণগৌররের–রঙ্গভূমি প্রস্তুত-আশে
সেবাবিগ্রহ আগে আইলা চলে
সেব্য আসি খেল্বে বলে–সেবাবিগ্রহ আগে আইলা চলে
পাতিয়া করুণা অমিয়া-ফাঁদ।।
নারীগণ সবে দেখিতে যায়।”
নিতাই,–প্রাণে প্রাণে টানে সবারে–স্বভাবেতে কেউ যায় নারে
গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই –যার পানে চায় প্রেমে মাতায়
আমার, –নিতাইচাঁদের রূপ হেরে–রূপ দেখি তার নয়ন ঝুরে
নিতাইচাঁদের বদন হেরে–ঘরের কথা ভুলে যায় রে
প্রাণ যে তাদের কেড়ে নিল–কি করে ঘরে আস্বে বল
নিতাইচাঁদের বদন হেরে—এই ত ঘর মনে করে
তাদের ঘর পর হয়ে যায় রে –এই ত ঘর মনে করে
ঘরে ফিরে যেতে মন না সরে–এই ত ঘর মনে করে
অনিত্য-ঘর পর করে–নিতাইচাঁদের স্বরূপ এই বটে
তার দরশন যার ভাগ্যে ঘটে–তার,–নিত্য-ঘরে বসতি হয় রে
দেখি’ সবে মনে বিচার করে।
এই কোন মহাপুরুষ বরে।।”
অশেষ -দুঃখের আকর-এ যে পর করে দিলে
একবার মৃদু হেসে চাইল–এ যে ঘর পর করে দিল
কেন,–মন-প্রাণ আকর্ষণ করে–মহাপুরুষ না হলে পরে
নৈলে কেন মন-প্রাণ আকর্ষণ করে–এ নিশ্চয় মহাপুরুষ হবে
নিতাইচাঁদের বদন হেরে–আঁখি পালটিতে নারে
দারুণ বিধি সূজন জানে নারে
তারে কি দেয় দুটি নয়ন
যে দেখিবে নিতাই-বদন–তার কি দেয় দুটি নয়ন
আনন্দ-কন্দ নিত্যানন্দ–বুঝি,–সে বিধি দেখে নাই গো
প্রেমের মূরতি নিতাই-চাঁদে –বুঝি,–সে বিধি দেখে নাই গো
যে দেখিবে,–অমিয়াধাম নিতাই-বদন–দেখ্লে,–তার দিত না দু’টি নয়ন
তাতে আবার নিমিষ দিল
দেখে আশ মিটে না গো
যত দিখি পিয়াস বাড়ে তত–দেখে আশ মিটে না গো
নিতাই-বদন হেরিবারে –কোটি আঁখি বাসনা করে
প্রাণ যে টেনে নিয়েছে ঘরে– কোথা ঘর আর কোথা আস্বে
যখনি সাধ হবে দেখ্ব খুলি’
হৃদয়-মন্দিরে রাখ্ব পুরি’– যখনি সাধ হবে দেখ্ব খুলি’
আঁখির কাজর করে পরি–ক্ষণেক দেখে আশ মিট্ছে না
এহেন নন্দন দিল বিধাতা ।।”
পদ্মাবতী-গর্ভ-সিন্ধু হতে–একচাকা -ইন্দু উদিল রে
ভাগ্যবতী পদ্মাবতী–না জানি কত পুণ্য কৈল
যার ফলে এহেন নন্দন পেল–না জানি কত পুণ্য কৈল
এই নয়ন-মণি বুকে ধর্তাম–আমরা যদি সে ভাগ্য কর্তাম
আনন্দের ধারা পড়ে বাহিয়া।।”
হেরি’ নিতাই-মুখ-ইন্দু–উথলিল আনন্দসিন্ধু
একচাকার নারীগণের –বাৎসল্য-রস উথলিল রে
প্রেমের মূরতি নিতাই হেরে–বাৎসল্য-রস উথলিল রে
ও পদ্মাবতী তোমার তনয়ে—একবার দাও গো আমার কোলে
কোলে করে জুড়াই হিয়ে—একবার দাও গো আমার কোলে
শিবরাম আশা করয়ে মনে।।
এত অনুরাগ নিতাই-চাঁদে—কতদিনে আমার হবে
সেই,–ভূমি-গ্রামের বালাই যাইরে
যেখানে আমার নিতাই অবতীর্ণ—সেই,–ভূমি—গ্রামের বালাই যাইরে
তাহে অবতীর্ণ নিত্যানন্দ বলরাম।।
হাড়াই-পণ্ডিত নাম শুদ্ধ বিপ্ররাজ।
মূলে সর্ব্বপিতা তানে কৈল পিতা ব্যাজ।।
মহা জয়জয়-ধ্বনি পুষ্প বরিষণ।
সঙ্গোপে দেবতাগণ করিলা তখন।।’’
রাঢ়ভূমির বালাই যাই
জনমিলা প্রেমদাতা নিতাই—রাঢ়ভূমি বালাই যাই
কৃপাসিন্ধু ভক্তিদাতা শ্রীবৈষ্ণবধাম।
অবতীর্ণ হৈলা রাঢ়ে নিত্যানন্দ-রাম।।’’
শুক্লা-ত্রয়োদশী-তিথির—বলাই লয়ে মরে যাই
যাহে অবতীর্ণ নিতাই—বালাই লয়ে মরে যাই
সেই দিন হৈতে রাঢ়মণ্ডল সকল।
পুনঃ পুনঃ বাড়িতে লাগিল সুমঙ্গল।।’’
‘‘ভুবন-আনন্দকন্দ, বলরাম নিত্যানন্দ,
অবতীর্ণ হৈলা কলিকালে।’’
ভুবন-আনন্দ-কন্দ—বলরাম নিত্যানন্দ
ঘুচিল সকল দুঃখ, দেখিয়া ও-চাঁদ-মুখ,
ভাসে লোক আনন্দহিল্লোলে।।’’
নিতাই-চাঁদের মুখ হেরে—জগজনের আনন্দ মনে
আমার,–নিতাই-চাঁদের উদয়েতে—বাহির ভিতর আলো হল
জীবের পাপ-তম গেল—বাহির ভিতর আলো হল
দেখিয়া শ্রীনিত্যানন্দ—ঘুচিল জীবের ভববন্ধ
যার অভাবে দুঃখ পেতেছিল—অভাব ঘুচে সে স্বভাব জাগিল
আনন্দঘন ভোগ করিব—জীবের প্রাণে আশা জাগিল
আনন্দকন্দ নিত্যানন্দ-রামের—প্রাণভরে জয় দাও ভাই
রূপে জিতল কোটি কাম।।
ও-বদন-মণ্ডল দেখি,’ পূর্ণচন্দ্র কিসে লেখি,
দীঘল নয়ান ভাঙ ধনু।’’
দীঘল-নয়ান ভাঙ ধনু—করুণা-ভাণ্ডার জনু
নিতাই-চাঁদের নয়ন-কোণ—অবিরত করুণা ঝরে
নিতাই-চাঁদের দীঘল-নয়ন—আমরি,–ও যেন কামের কামান
তারে হানে গৌর-প্রেমবাণ
একবার,–যার পানে ফেরায় নয়ান—তারে হানে গৌর-প্রেমবাণ
কটি ক্ষীণ করি-অরি জনু।।’’
সিংহ জিনি কটি ক্ষীণ—বুঝি,–মুঠিতে ধরা যায় গো
ভাবভরে যখন দোলে—ভয় হয় পাছে ভেঙ্গে পড়ে
চরণ-কমল-মধু পানের তরে—ভকত-ভ্রমর বুলে
গৌর গুণ গুণ গুণ গুণ স্বরে—ভকত-ভ্রমর বুলে
ষোলকলা-চাঁদ ফাটিল—বাণী নয় যেন অমিয়া ঝরল
গোরাভাবে গদগদ-ভাষ—আধ-বাণী অমিয়া প্রকাশ
কহে দীন দুঃখী কৃষ্ণদাস।।’’
কলিহত-জীবে উদ্ধারিতে—আমার,–নিতাই আইলা একচাকাতে
আজ তোমার আসবার দিন
হা নিতাই প্রাণ নিতাই—আজ তোমার আসবার দিন
হা,–প্রধানা-নাগরী নিতাই—আজ তোমার আসবার দিন
রাঢ়ে,–একচাকায় হাড়াই-পণ্ডিতের ঘরে—আজ তোমার আসবার দিন
তার সেবার বিগ্রহ তুমি—তাই আগে এসেছিলে তুমি
তারে,–সুখদিবার আয়োজন করবার লাগি—তাই আগে এসেছিলে তুমি
খেলারু,–খেলবে পেলে খেলার ভূমি—তাই আগে এসেছিলে তুমি
কোথায় বসবে কোথায় খেলবে
তাই,–আগে আইলে নিতাই তুমি
তার,–সেবার আয়োজন করবার লাগি’—তাই,–আগে আইলে নিতাই তুমি
রাঢ়দেশে,–হাড়াই পণ্ডিতের ঘরে—তুমি,–এসেছিলে একচাকাতে
এই মাঘী শুক্লা ত্রয়োদশীতে—তুমি’—এসেছিলে একচাকাতে
কলিজীবে পরাগতি দিতে—তুমি’—এসেছিলে একচাকাতে
‘কলিজীবে পরাগতি দিতে’—
পরাভক্তি দান করে—কলিজীবে পরাগতি দিতে
কলিজীবে,–প্রেম দিতে গৌর দিতে—তুমি,–এসেছিলে একচাকাতে
প্রাণ গৌর এল পিছে পিছে—তুমি,–আগে এলে রাঢ়দেশে
ব্রজ পরিকর যত –সাঙ্গোপাঙ্গে সবাই এল
এই মধুর নদীয়াতে—একে একে মিলিল সবে
গোপনে,–নন্দন-আচার্য্যের ভবনে—তুমি,–আসিয়া মিলিলে কতদিনে
পেয়ে,–তোমার নিত্যনন্দ রাম—গৌর হলেন পূর্ণকাম
নাম-সঙ্কীর্ত্তন যুগধর্ম্ম—আরম্ভিলেন নিজকার্য্য
শ্রীমুখে বলেছেন শচীসুত—তোমার দ্বারে তার সকল কার্য্য
তুমি-শ্রীসেবা বিগ্রহ—তোমার দ্বারে তার সকল কার্য্য
বিশ্বভরি’ করি’ প্রেমদান—তুমি,–পূরাইলে চৈতন্যের কাম
প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠছে
দেখিতে ত পাই নাই
সেই,–প্রেম-পুরুষোত্তম-লীলা—দেখিতে ত পাই নাই
স্থাবর-জঙ্গম,–প্রমোন্মত্তকারী লীলা—দেখিতে ত পাই নাই
সেই,–লীলা-অদর্শন-শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়
শ্রীমুখের কথা শুনি’—আশা পথ চেয়ে আছি
ত্রিকালসত্য তোমাদের লীলা—শ্রীমুখে বলেছেন শ্রীগুরুদেব
আজ্ঞা পালন হয় নাই তোমার
তোমাকেই ত দিয়েছেন ভার
প্রাণের প্রাণ গৌর আমার—তোমাকেই ত দিয়েছেন ভার
নিরজনে বসে কেঁদে কেঁদে—তোমাকেই ত দিয়েছেন ভার
তার,–বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ করবার—তোমাকেই ত দিয়েছেন ভার
সে পূর্ণ হবে সুনিশ্চিত
তোমা হতে তার অভিলাষ—পূর্ণ হবে সুনিশ্চিত
তোমায়,–আজ্ঞা দিয়ে হয়েছে খালাস
তার,–বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ করবার—তোমায়,–আজ্ঞা দয়ে হয়েছে খালাস
হা,–জগদগুরু নিত্যানন্দ—তোমারি ত সকল ভার
নাম-প্রেমে বিশ্ব ভরবার—তোমারি ত সকল ভার
কৈ পূর্ণ হল কৈ
দেশবিদেশে ঘুরে দেখলাম
তোমার,–কৃপা ভোগ করবার লাগি—দেশবিদেশে ঘুরে দেখলাম
শ্রীগুরুদেবের কৃপা-প্রেরণায়—দেশবিদেশে ঘুরে দেখলাম
বাকীর কথা কিবা বলবো
বিরুদ্ধ-স্বভাবে জগৎ পূর্ণ
নিজ নিজ,–স্বার্থ নিয়ে রণোমত্ত—বিরুদ্ধ—স্বভাবে জগৎ পূর্ণ
গৌর,–পরতত্ত্ব-সীমা বলে—কেউ ত বুঝে নাই প্রাণে
তোমার প্রাণ গৌরহরি—কেউ ভজতে চায় না
হা,–জগদ্গুরু নিত্যানন্দ—তোমারি ত কাজ বটে
যে না ভজে তারে ভজান—তোমারি ত কাজ বটে
তোমার,–সঙ্কল্প যে ব্যর্থ হল—নামে যে কলঙ্ক হল
গৌর,–নাম-প্রেমে বিশ্ব ভরব—নামে যে কলঙ্ক হল
বিশ্বম্ভর নামে কলঙ্ক হল
তোমার প্রাণ গৌরহরির বিশ্বম্ভর নামে কলঙ্ক হল
কলিরাজের পীড়া ফলে—বিশ্বম্ভর নামে কলঙ্ক হল
‘কলিরাজের পীড়া ফলে’—
তোমার,–কলিজীবের উপরে—কলিরাজের পীড়া ফলে
ঘুচাও নামের কালিমা ঘুচাও
ও,–কলিপাবন অবতার—ঘুচাও নামের কালিমা ঘুচাও
জীবের,–দুঃখে দুঃখী আর কে আছে—দুঃখের কথা জানাই তোমাকে
সব বিপরীত দেখে’—বড় ব্যথা পেতেছি প্রাণে
তোমার,–হাতে ধরে গৌর বলেছিল—কৈ,–শমন ভয় কোথা গেল
তোমার গৌরের প্রেমা ভুলে—মৃত্যু ভয়ে ভীত সবে
তোমার কলিজীব-পানে—একবার দেখ চেয়ে
‘আর,–গৌর লয়ে থেকো না মেতে—একবার দেখ চেয়ে
আর,–গৌর লয়ে তেকো না মেতে’—
তোমার সঙ্কল্প ভুলে—আর,–গৌর লয়ে থেকো না মেতে
তোমার প্রাণ কি কাঁদছে না
এই,–উচ্ছৃখল জগৎ দেখে—তোমার প্রাণ কি কাঁদছে না
জগতের এই দুর্দ্দশা দেখে—তোমার আসা কি উচিত নয়
জীবের দুঃখ ঘুচাইতে—তেমনি করে এস সঙ্গী সাথে
অভিরাম গৌরীদাস আদি করে—তেমনি করে এস সঙ্গী-সাথে
বাকী শোধ করবার তরে—তেমনি করে এস সঙ্গী-সাথে
পাপ-তাপ নাও বলে—আর তোমায় বলব না
আমরা ত তোমারি বটে
যদিও হই ম্বতন্তরী—আমরা ত তোমারি বটে
পাপ-তাপ ভোগ করা—স্বভাব ত আছে আমাদের
জগজীবের পাপতাপ—কুড়ায়ে লয়ে দাও আমাদের
আমরা সব যাব নরকে—কুড়ালে লয়ে দাও আমাদের
আর তোমার আসবার দিন—তেমনি করে এস হে
কোথাও যাও নাই জানি প্রাণে—তেমনি করে এস হে
আর থেকো না লুকায়ে—তেমনি করে এস হে
প্রতিহৃদে এস হে
কলিহত পতিত-জীবের—প্রতিহৃদে এস হে
হিয়ায় ধরে তোমার পরদ্বন্দ্ব—জগৎ হোক নিত্যানন্দ
মহা,–আবরণে পড়েছে তাদের হৃদয়—জীবের আবরণ সরায়ে দাও
তুমি ত তাদের সত্তা—তাদের,–আনন্দ-সত্তা জাগায়ে দাও
‘তুমি ত তাদের সত্তা’—
ও আনন্দঘন নিতাই আমার—তুমি ত তাদের সত্তা
কেন পাবে নিরানন্দ
জীব হয় আনন্দ-কণ—কেন পাবে নিরানন্দ
ঘুচায়ে দাও সকল দ্বন্দ্ব—কেন পাবে নিরানন্দ দাও
জগৎ শান্ত করে দাও—দাও ঝগড়া মিটায়ে দাও
সবাই,–একপ্রভুর দাস জেনে—দ্বেষ হিংসা যাক্ ভুলে
কহিহত-জীব মন্দ হেরে—সকল অভাব লও কেড়ে
বাহু পসারি হিয়ায় ধরে—সকল অভাব লও কেড়ে
দুর্ব্বাসনা কপট কুটিনাটি—সকল অভাব লও কেড়ে
মহা,–স্বভাবেতে জোর করে—সকল অভার নও কেড়ে
মা,–মানে না ত কাঁদবে বলে
পুত্রের ফোঁড়া টিপলে পরে—মা,–মানে না ত কাঁদবে বলে
তার গলা টিপে ধরে –জোর করে ফোঁড়া গালে
দুর্ব্বাসনা-কপট-কুটিনাটী—তেমনি করে দূর কর
জগজীবের হৃদয় হতে—তেমনি করে দূর করে
দৈবের আশ্রয় দাও—পুরুষকার ঘুচায়ে দাও
ভজুক গৌর-পরমদেরায়
দৈব দৃষ্টি পেয়ে সবাই—ভজুক গৌর-পরমদেবায়
বলুক—গৌরহরি হরিবোল–সবাই হোক এক বোল
জগজীব হয়ে এক প্রাণ—করুক গৌরগুণ গান
ভাই ভাই করুক কোলাকুলি—সবাই কাঁদুক হা গৌর বলি’
ও আমার নিতাই সোণা—আশা কি পূরণ হবে না
এই একমাত্র বাসনা—আশা কি পূরণ হবে না
প্রকট লীলা দেখতে না পেয়ে—কোন দুঃখ নাই আমাদের
নিজ-অযোগ্যতা জেনে—কোন দুঃখ নাই আমাদের
সে যে,–রূপ সনাতনের সাধনের ধন—কোন গুণে তার দেখা পাব
সে যে,–দাসরঘুনাথের সাধ্যনিধি—কোন গুণে তার দেখা পাব
দুর্ব্বাসনার কিঙ্কর মোরা—কোন গুণে তার দেখা পাব
কপটতার মূরতি মোরা—কোন গুণে তার দেখা পাব
অভিমানের খনি মোরা—কোন গুণে তার দেখা পাব
গৌর পাবার অধিকার নাই—চাই না তোমার গৌর চাই না
ত্রিকালসত্য লীলা জেনে—বড় আশা প্রাণে জেগে আছে
একবার দেখব—বলে—বড় আশা প্রাণে জেগে আছে
গৌর,–নামপ্রেমে মাতবে সবে
আত্ম-পর ভুলে গিযে—গৌর,–নামপ্রেমে মাতবে সবে
স্বভাব-অনুরাগে বলছে সবে
পরস্পর গলা ধরে—স্বভাব-অনুরাগে বলছে সবে
ম্লেচ্ছ-যবনাদি করে—স্বভাব-অনুরাগে বলছে সবে
মরমে মরিয়া যেন থাকি।
সাধ হয় নিরন্তর, হেমকান্তি কলেবর,
সতত হিয়ার মাঝে রাখি।।
তিলেক না দেখি তায়, পাঁজর ধরিয়া যায়,
ধৈরয ধরিতে নাহি পারি।
অনুরাগের ডুরি দিয়া, অন্তরে কি করে সিয়া,
না জানি তার কতই ধার ধারি।।
সুরধুনীর কুলে গিয়া, কুল দিব ভাসাইয়া,
অনল জ্বালিয়া দিব লাজে।
গৌরাঙ্গ সম্মুখে করি, হেরিব নয়ন-ভরি,
দিন যায় মিছামিছি কাজে।।’’
ও,–জগদ্গুরু নিতাই আমার—পূরাও মোদের এই বাসনা
জগদভরি,–দেখব গৌরপ্রেমের কান্না—পূরাও মোদের এই বাসনা
তোমার প্রাণগৌর লয়ে—বিভোর হয়ে আছ কি হে
স্বকর্ম্ম কি গেছ ভুলে—বিভোর হয়ে আছ কি হে
আর কার কাছে যাব
প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠ্ছে
আজ এই স্থানে বসে—প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠছে
আর এক স্মৃতি উদয় হয়ে—প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠেছে
নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—এসেছিলেন এই উদ্যানে
নিত্যানন্দ—আবির্ভাব দিনে—এসেছিলেন এই উদ্যানে
প্রিয়গণ সঙ্গে লয়ে—এসেছিলেন এই উদ্যানে
শ্রীনিত্যানন্দ-জন্মোৎসব করিতে—এসেছিলেন এই উদ্যানে
হা,–পরমকরুণ শ্রীগুরুদেব—আজ একবার এস হে
তোমার প্রভুর জন্মোৎসব করিতে—আজ একবার এস হে
তোমার প্রভুর আদর—আমরা কিছুই জানি না
নাম-প্রসঙ্গে এই উদ্যানে—তেমনি করে এস হে
তোমার ত্রিকালসত্য লীলায়—নিশ্চয় এসেছ তুমি
তোমার প্রভু নিতাই লয়ে—নিশ্চয় এসেছ তুমি
আমাদের প্রেমনেত্র নাই—তাই দেখতে পাই না
শ্রীললিতা দিদিমণি—একবার দেখাবে কি
কিছুই না বলে কয়ে—হঠাৎ গুপ্ত হয়েছ
বাধা দিয়েছি বলে—তাই গুপ্ত হয়েছ
‘বাধা দিয়েছি বলে’—
তোমার শ্রীগুরু-সেবায়—বাধা দিয়েছি বলে
গোপনেতে ভোগ করিছ
হঠাৎ গুপ্ত হয়েছ—গোপনেতে ভোগ করিছ
নিত্যানন্দ,–জন্মোৎসবে শ্রীগুরু-বিহার—গোপনেতে ভোগ করিছ
সম্বন্ধ ধরে ডেকে—আমাদের দেখাও গো
তোমার সর্ব্বস্ব-গুরুদেবে লয়ে—একবার দেখা দাও
নিত্যানন্দ-জন্মোৎসবে—একবার দেখা দাও
আমরা,–অপরাধী দুঃখ দিব না—একটি কথা বলবো
স্বতন্তরী অপরাধী—দুঃখ ত দিব না
শুধু থেকো না আনন্দে মেতে
তোমার,–প্রভু নিতাই-জন্মোৎসবে—শুধু থেকো না আনন্দে মেতে
তুমি একবার ডাকো গো
আমাদের ব্যথার ব্যথী হয়ে—তুমি একবার ডাকো গো
তুমি প্রাণ যে জ্বলে গেল
জগতে দেখি সব বিপর্য্যয়—প্রাণ যে জ্বলে গেল
নরকের চিত্র দেখে’—তুমি একদিন কেঁদেছিলে
হা নিতাই কোথা আছ হে
পতিত পড়ে নরকেতে
পতিত-পাবন তুমি থাকতে—পতিত পড়ে নরকেতে
যদি আমায় উদ্ধারিতে চাও
আগে,–নাম-প্রেমে জগৎ মাতাও—যদি আমায় উদ্ধারিতে চাও
সে কি কেবল কথার কথা
তেমনি করে বল গো
তোমার প্রভু নিতাইচাঁদে—তেমনি করে বল হে
বুঝতে ত পারলাম না
‘তার,–কর্ণে প্রবেশ করল কি না—বুঝতে ত পারলাম না
‘তার কর্ণে প্রবেশ করল কি না’—
আমাদের কাতর প্রার্থনা—তার,–কর্ণে প্রবেশ করল কি না
তুমি বললে শুনবে সে
তুমি,–আমাদের হয়ে বল তারে,–তুমি বলবে শুনবে সে
কে এ জগতে তোমার পর
তোমার প্রভু বিশ্বম্ভর—কে এ জগতে তোমার পর
ভজুক বা না ভজুক—সবাই ত তোমার বটে
কি হিন্দু কি যবন—সবাই তা তোমার বটে
পরিচয় দিক না কেন যে বলে—সবাই ত তোমার বটে
নামে মাত্র ভিন্ন হয়েছে—সবাই ত তোমার বটে
তোমার প্রভু বিশ্বম্ভর—সবাই তোমার প্রভু কিঙ্কর
তুমি কারে ছাড়বে বল—সবাই তোমার প্রভুর কিঙ্কর
এ কোথায় দেখা যায়—সবাই,–তোমার হয়ে দুঃখ পায়
আর,–তোমার কলিজীব বড়ই দুঃখী—হা,–নিতাই তুমি প্রেমানন্দ সুখী
আর,–তোমার কলিজীব বড়ই দুঃখী—হা,–নিতাই তুমি প্রেমানন্দ সুখী
আনন্দময় করে দাও—ঘুচাও তাদের দুঃখ ঘুচাও
হিয়ায় ধরে নিতাই তোমার—গৌর-প্রেমে মাতুক সবাই
গৌরহরি হরিবোল—জগভরি’ উঠুক রোল
নিত্যানন্দ-শক্তি সঞ্চারিয়ে—একপ্রাণ করে দাও
পরস্পর পরস্পরের সুখে—সবাই হউক সুখী
তোমার,–নিতাইচাঁদের শক্তি পেয়ে—ভাই ভাই কোলে করুক
গৌর,–নাম-প্রেমে জগৎ মাতুক—এক প্রাণ করে দাও
প্রাণে প্রাণে গান করুক
পরস্পর হিয়ায় ধরে—প্রাণে প্রাণে গান করুক
গৌর,–নামময় জগৎ দেখে—এই,–প্রার্থনা জানাও নিতাইচাঁদে
জগজীবের চরণে—আমরা গিয়া লুটিব সবে
তাদের চরণে পড়ে—প্রার্থনা করব কাতরে
যেন নামে থাকি মাতি
শ্রীগুরুচরণে রাখি রতি—যেন নামে থাকি মাতি
শ্রীগুরুদত্ত নামাবলী—যেন,–প্রাণভরে গান করি
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
জয় নিত্যানন্দরাম
অখিল আনন্দময়—জয় নিত্যানন্দরাম
আমার,–পাগলা প্রভুর প্রাণারাম—জয় নিত্যানন্দরাম
জীবে,–গৌর ভজায়ে কর পূর্ণকাম—জয় নিত্যানন্দ
ভুবন আনন্দ কন্দ—জয় প্রভু নিত্যানন্দ