ভজ, নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
একবার,–‘‘এস হে ও নদীয়ার চাঁদ গোরা।’’
একবার,–এস সঙ্কীর্ত্তন-পিতা—এস হে নদীয়ার
‘একবার,–এস সঙ্কীর্ত্তন-পিতা—
এসে,–তোমার কীর্ত্তন তুমি কর—এস সঙ্কীর্ত্তন-পিতা
আমাদের—পাগলা প্রভু নিতাই-সনে—এস হে নদীয়ার
প্রিয়,–গদাধর অদ্বৈত সঙ্গে—এস হে নদীয়ার
লয়ে—শ্রীবাসাদি-সাঙ্গোপাঙ্গে—এস হে নদীয়ার
‘লয়ে,–শ্রীবাসাদি-সাঙ্গোপাঙ্গে’—
আসি,–বিহার কীর্ত্তন-রঙ্গে,–লয়ে—শ্রীবাসাদি—সাঙ্গোপাঙ্গে
‘আমার,–রসরাজ গৌরাঙ্গ নট—এসে,–হৃদয়ে উদয় হও
‘আমার,–রসরাজ গৌরাঙ্গ নট’—
ওহে,–সঙ্কীর্ত্তন-সুলম্পট—আমার,–রসরাজ গৌরাঙ্গ নট
এসে,–সঙ্কীর্ত্তনে রাস কর প্রকট—আমার,–রসরাজ গৌরাঙ্গ নট
এসে তোমার,–সঙ্কীর্ত্তন-রাস কর প্রকট—আমার,–রসরাজ গৌরাঙ্গ নট
ওহে,–সঙ্কীর্ত্তন-রাস-বিহারী—এসে,–হৃদয়ে উদয় হও
‘ওহে,–সঙ্কীর্ত্তন-রাস-বিহারী’—
লয়ে,–পারিষদ্-সহচারী-ওহে,–সঙ্কীর্ত্তন-রাস-বিহারী
মাতাও সবার হিয়া
প্রতি-হৃদয়ে উদয় হইয়া—মাতাও সবার হিয়া
সঙ্কীর্ত্তনে রাস প্রকট করিয়া—মাতাও সবার হিয়া
সঙ্কীর্ত্তন-রাস প্রকট করিয়া—মাতাও সবার হিয়া
সঙ্কীর্ত্তন,–নাটুয়া-বেশে দেখা দিয়া—মাতাও সবার হিয়া
আমরা তোমার বলে,–বলী হয়ে গৌর বলি—এস,–সীতানাথ বল দাও
আমরা তোমার,–কূলে দাঁড়ায়ে গৌর বলি—এস,–গদাধর কুলে লও
আমরা তোমার,–আনুগত্যে গৌর বলি—এস,–নরহরি আনুগত্য দাও
তোমার অঙ্গনের,–নাটুয়া-মুরতি হিয়ায় জাগাও—এস,–শ্রীবাস-পণ্ডিত ভক্তি
প্রাণ-গৌরাঙ্গগণ কৃপা কর
ওহে ভূবন-পাবন—প্রাণ,–গৌরাঙ্গগণ কৃপা কর
প্রাণ-গৌরাঙ্গের,–কীর্ত্তন-বিহার হিয়ায় জাগাও—প্রাণ,–গৌরাঙ্গগণ কৃপা কর
গৌর,–প্রেমে মত্ত মহাবলী—এস,–এস আমার পাগলা নিতাই
তোমার,–শ্রীগৌরাঙ্গ-নাম-প্রেমে—আজ,–আপনি মেতে মাতাও এসে
ভাই-ভাই এক-প্রাণে—আজ,–পাগল হয়ে বেড়াই মোরা
প্রাণ-গৌরাঙ্গের,–কীর্ত্তন-বিহার হিয়ায় ধরে—বেড়াই নগরে নগরে
শ্রী,–গুরু-চরণ হৃদে ধরে—বেড়াই নগরে নগরে
গৌরহরি-নামের ধবজা তুলে—বেড়াই নগরে নগরে
প্রকট-লীলায় করেন হরি স্বয়ং নৃত্য-গান ।।
অপ্রকটে নামরূপে সাক্ষাৎ ভগবান্।
কীর্ত্তন-বিহারী হয়ে আছেন বর্ত্তমান্।।
কলৌ সঙ্গীর্ত্তন-যজ্ঞে কৃষ্ণ আরাধন।
সেই সে সুমেধা পায় কৃষ্ণের চরণ।।
হরি-নামের বহু-অর্থ তাহা নাহি জানি।
শ্যাম-সুন্দর যশোদানন্দন এই মাত্র মানি।
সেই হরি গৌরহরি নদীয়া বিহরে।
নিজ ‘হরে কৃষ্ণ’ নামে জগত নিস্তারে।।
প্রভুর,–দক্ষিণে শ্রীনিত্যানন্দ বামে গদাধর।
সম্মুখেতে নৃত্যাবেশে কুবের কুমার।।
গদাধরের বামে শ্রীবাস আর নরহরি
দ্বাদশ-গোপাল চৌষট্টি-মহান্ত সঙ্গে করি।।
চারিদিকে পারিষদ মণ্ডলী করিয়া।
তার মাঝে নাচে গোরা হরিবোল বসিয়া।।
সবাকার আগে নিতাই দুবাহু তুলিয়া।
‘হরে কৃষ্ণ’ নাম-প্রেম যায় বিলাইয়া।।’’
বলে,–‘‘আবার বল হরিনাম আবার বল।’’
মধু—এই ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম—আবার বল হরিনাম
আমার,–প্রেমদাতা নিতাই বলে—আবার বল হরিনাম
নিতাই আমার,–আপে নাচে আপে গায় গৌরাঙ্গ বোলায়।।’’ রে !!
আপনি মেতে জগৎ মাতায়—আমার,–একলা নিতাই রে
‘আপনি মেতে জগৎ মাতায়’—
আমার,–একলা নিত্যানন্দ রায়—আপনি মেতে জগৎ মাতায়
লম্ফে ঝম্ফে যায় নিতাই গৌরাঙ্গ-আবেশে। রে !
গৌর-প্রেমের পাগলা নিতাই—চলে যেতে ঢলে পড়ে
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমোর ভরে—চলে যেতে ঢলে পড়ে
নিতাই,–আপনি পড়িয়া বলে—সামালিও ভাই রে
অভিন্ন-চৈতন্য-তনু নিতাই—আপনি পড়ে মানে প্রাণ-গৌর পড়ল
ঐ,–ঢলে পড়ল বিশ্বম্ভর—বলে,–নরহরি সাবধানে ধার
পাপীয়া পাষণ্ডী আর না রহিল দেশে।।’’ রে !!
আমার,–নিতাই-চাঁদের কৃপা-বশে—পতিত-নাম তার রইল না দেশে
চিরকার হইতে,–ছিল আবদ্ধ করুণা’’
আমার নিতাই খুলিয়া দিল—করুণা,–সিন্ধুর মুখ বাঁধা ছিল
আজ,–ঘরে ঘরে বুলে প্রেম-অমিয়ার বান।।’’ রে !!
আমার,–নিতাই চাঁদের কৃপা-লেশে—আজ,—জগৎ প্রেমের বন্যায় ভাসে [মাতন]
গৌরহরি বোল বলে—যায় নিতাই হেলে দুলে
পতিত দেখিয়া বলে—গৌরহরি হরিবোল
পাষণ্ডী দেখিয়া বলে—গৌরহরি হরিবোল
আচণ্ডালে যেচে বলে—গৌরহরি হরিবোল
দন্তে তৃণ ধরি’ বলে—গৌরহরি হরিবোল
গলবাসে কেঁদে বলে—গৌরহরি হরিবোল
প্রাণ,–গৌর-আজ্ঞা শিরে ধরে—দয়াল নিতাই প্রেম বিলায়
এই নদীয়ার পথে পথে—দয়াল নিতাই প্রেম বিলায়
আমার,–গৌরসুন্দর নেচে যায়
আজ,–নদীয়ার পথ আলো করে—আমার,–গৌরসুন্দর নেচে যায়
ও-মা,–নেচে যায় প্রাণ-গৌরহরি—তোরা,–দেখবি যদি আয় নাগরী
নদীয়ার রাজপথ আলো করি’—ঐ,–নেচে যায় প্রাণ-গৌরহরি
ও-মা,–‘‘ধবল পাটের যোড় পরেছে, তাতে,–‘‘রাঙ্গা রাঙ্গা পাড় দিয়েছে’’,
গৌর-অঙ্গে ধবল-পাটের যোড়—মরি মরি ভাল সেজেছে
আপনি রাঙ্গা পাড় হয়েছে
ও,–রাঙ্গা-পাড় তো কেউ দেয় নাই—আপনি রাঙ্গা-পাড় হয়েছে
অনুরাগ গড়িয়ে গিয়ে—আপনি রাঙ্গা-পাড় হয়েছে
‘অনুরাগ গড়িয়ে গিয়ে’—
যারা বসন পরায়েছে—তাদের,–অনুরাগ গড়িয়ে গিয়ে
গৌর-অনুরাগিনীর অনুরাগ—যেন,–জমে গিয়ে পাড় হয়েছে
বসন দিয়ে গড়িয়ে গিয়ে—যেন,–জমে গিয়ে পাড় হয়েছে
তাইতে রাঙ্গা-পাড় হয়েছে
ঘন হয়ে হয়েছে রাঙ্গা-পাড়
বসে গিয়ে অনুরাগের ধার—ঘন হয়ে হয়েছে রাঙ্গা-পাড়
ঐ ধবল পাটের যোড়—কত,–অনুরাগে পরায়েছে
ধবল-পাটে রাঙ্গা-পাড়—বড়’ শোভা পেতেছে
অনুরাগ মূরতি ধরেছে—বড় শোভা পেতেছে
সে কেন থাকবে অমূর্ত্ত
এবার,–সকলই যদি হয়েছে মূর্ত্ত—সে কেন থাকবে অমূর্ত্ত
ব্রজে,–যা ছিল ব্যবহারে—এবার সবাই মূর্ত্তি ধরেছে
চরণ-উপর দুলে যেছে কোঁচা।’’ গো !
চরণ পেয়েছে বলে—কোঁচা,–কত গরব করে দুল্ছে
‘চরণ পেয়েছে বলে’—
লক্ষ্মী-বিষ্ণুপ্রিয়া-নাথের—চরণ পেয়েছে বলে
শুধু দুলে যাওয়া নয়
অনুরাগিনীর প্রাণে মারছে খোঁচা
ও-তো, দোলা নয় কোঁচার –অনুরাগিনীর প্রাণে মারছে খোঁচা
তাতে আবার দুলছে কোঁচা
দেখে,–দায় হল পরাণে বাঁচা—চরণ-উপর দুলছে কোঁচা
‘দায় হল পরাণে বাঁচা’—
অনুরাগিনী নদে-রমণীর—দায় হল পরাণে বাঁচা
তা’ দেখে,–প্রাণে বাঁচে কি নদীয়া-রমণী—ও-মা,–কিবা কোঁচার দোলনী
কোঁচার,–বলনী দেখে ভুলে রমণী—ও-মা,–কিবা কোঁচার বলনী
কোঁচা,–চরণ-উপর গরবেতে দুলছে—টেনে এনে লুটায়ে দিছে
নদীয়া-রমণীর মন—টেনে এনে লুটায়ে দিচ্ছে
বাঁকমল সোণার নুপুর, বেজে যেছে মধুর মধুর,’’
যখন চরণে পরায়ে ছিল—তখন গৌরের,–মল বুঝি বাঁকা ছিল না
ভাবনিধির চরণ-পরশ পেয়ে—ভাবে বুঝি বাঁকা হয়েছে
পরশ পেয়ে,–অনুরাগে গলে গেছে—নূপুর বাঁকা হয়ে গেছে
গৌরের,–কি জানি কোথা আছে বাঁকা
নৈলে,–চরণ-পরশে কেন হবে বাঁকা—গৌরের,–কি জানি কোথা আছে বাঁকা
গড়ন দেখে মনে হয়—গৌরের,–ভিতরে বাঁকা আছে আঁকা
ওর,–চলন বাঁকা বলন বাঁকা—গৌরের,–ভিতরে বাঁকা আছে আঁকা
গৌরের,–রাঙ্গা-পায়ে সোণার নূপুর—বেজে যেছে মধুর মধুর
মন মজাতে নদীয়া-বধূর—নূপুর বাজে মধুর মধুর
যেন,–সৌভাগ্য রটাইছে
ও-তো,–নূপুরের ধবনি নয়—যেন—সৌভাগ্য রটাইছে
চরণ আমি পেয়েছি বলে—যেন,–সৌভাগ্য রটাইছে
‘চরণ আমি পেয়েছি বলে’—
বিষ্ণুপ্রিয়া-প্রাণবঁধুর-চরণ আমি পেয়েছি বলে
শুধু কেবল তাই নয়
ও-তো,–নূপুর বাজা নয় মধুর মধুর
গাইছে গুণ,–বিষ্ণুপ্রিয়া-প্রাণবঁধুর—ও-তো,–নূপুর বাজা নয় মধুর মধুর
যদি,–ভাগ্যবতী হতে চাও
গৌরাঙ্গ-চরণে বিকাও—যদি,–ভাগ্যবতী হতে চাও
নূপুর চরণ-কমলে রাজে—কত না গরব করে বাজে
নূপুরের ধ্বনি,–গৌর-অনুরাগিণীর বুকে বাজে—রাঙ্গা,–পায়ে সোণার নূপুর বাজে
রূপ দেখিতে ভুবন মূরছা।।’’ গো !!
হেরি ঐ,–নবরসের গোরারায়—ভুবন মূরছা পায়
যদি একবার,–হরি বলে ফিরে চায়—কে না বিকায় গোরার পায়
‘যদি একবার,–হরি বলে ফিরে চায়’—
ঐ,–নবরসের গোরারায়—যদি একবার,–হরি বলে ফিরে চায়
বাঁকা-নয়নে মৃদু-হেসে—যদি একবার,–হরি বলে ফিরে চায়
জন্মের মত কেনা হয়ে—কে না বিকায় গোরার পায়
গরব করে বলতে পারি—কে না বিকায় গোরার পায়
এমন নারী কে আছে কোথায়—কে না বিকায় গোরার পায়
জীবন যৌবন দিয়ে—কে না বিকায় গোরার পায়
কুলের মুখে কালি দিয়ে—কে না বিকায় গোরার পায়
প্রাণ,–গৌর তোমার হলাম বলে—কে না বিকায় গোরার পায়
দীঘল দীঘল চাঁচর-চুল, তায় গুঁজেছে চাঁপার ফুল
গৌরের,–চাঁচর-চুলে চাঁপার ফুল—মজালে মজালে কুল
উপাড়িয়া কুলের মূল—মজালে মজালে কূল
ও-তো,–চাঁচর-চুল নয়—যেন’-চামর দুলছে
স্বর্ণ-সুমেরু-শিখরে—যেন,–চামর দুলছে
কুঁদ-মালতীর মালা বেড়া ঝোঁটা। গো !
‘‘চন্দন-মাখা গোরা-গায়, বাহু দোলায়ে চলে যায়,’’
তাতে আবার,–
বাহু দোলায়ে হেলে দুলে—চলে যায় আর লয়ে যায়
জাতি, কুল, লজ্জা, ধৈর্য্য—বাহু দোলায়ে লয়ে যায়
আমার গৌরাঙ্গ-ললাটে—ও-তো নয় চন্দনের ফোঁটা
ও-যে,–কুলবতীর কূলের খোঁটা—ও-তো নয় চন্দনের ফোঁটা
ও-তো,–চন্দনের বিন্দু নয়—ও-যে,–মদন-বিজয়ী ধবজা
আমার প্রাণ গৌরহরি—মদন-বিজয় করেছে
সঙ্কীর্ত্তন,–মহা-মহারাস-রঙ্গে—মদন-বিজয় করেছে
মদনের বড় গরব ছিল
আমি,–জগ-মাঝে সুপুরুষ বলে—মদনের বড় গরব ছিল
ভুবন-মোহন,–গৌরাঙ্গ-মূরতি হেরে—সে গরব ভেঙ্গে গেছে
‘গৌরাঙ্গ-মূরতি হেরে’—
সঙ্কীর্ত্তন-রাস-রঙ্গিয়া—গৌরাঙ্গ-মূরতি হেরে
তার,–পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে
মদনের সরবন-ধন—পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে
গৌরের,–কটাক্ষ-শরাঘাতে—তার,–পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে
মদনের সরবন-ধন—পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে
গৌরের,–কটাক্ষ-শরাঘাতে—তার,–পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে
একবার,–চেয়েছিল আঁখি-কোণে—তাই,–পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে
‘একবার,–চেয়েছিল আঁখি কোণে’—
গৌর,–হরি বলে নেচে যেতে—একবার,–চেয়েছিল আঁখি—কোণে
গৌরের,–কটাক্ষ-শরাঘাতে—তার,–পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে
মদনের পঞ্চ-বাণ—ভেঙ্গে হল খান্ খান্
লেগে গৌরের,–কুটিল-কটাক্ষ-বাণ—ভেঙ্গে হল খান্ খান্[মাতন]
পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে—ভালই হয়েছে সাজা
পঞ্চ-শর বর্ষণ করে—জগজনে জ্বালায়ে মারে
জগজনে জ্বালায়ে মারত—ভেঙ্গে গেছে ভাল হয়েছে
সরবস-ধন-হীন—মদ্নের দুর্দ্দশা দেখে
বিকাইছে গেরার পায়
কামের রতি ছাড়ি পতি—বিকাইছে গোরার পায়
রতির,–মদনের রতি গেল টলে—রতি,–বিকায় গোরার পদ-তলে
আমার,–প্রাণপতি গৌরাঙ্গ বলে—রতি,–বিকায় গোরার পদ-তলে[মাতন]
নারী ভুলবে কিবা কথা
দেখ নাগরী চেয়ে দেখ
কত-পুরুষ কেদে আঁকুল
ঐ-দেখ্,–দলে দলে ছুট্ছে
কত পুরুষ-দেহ-ধারী—ঐ দেখ,–দলে দলে ছুঁটেছে
পুরুষ-অভিমান ভুলে—ঐ দেখ্,–দলে দলে ছুটেছে
‘পুরুষ—অভিমান ভুলে’—
হেরি’ ঐ শচীদুলালে—পুরুষ-অভিমান ভুলে
পাগল হয়ে ছুটেছে
প্রাণ-বল্লভ গৌর বলে—পাগল হয়ে ছুটেছে
মদনেরও টলল মতি
দেখি’ রতির গৌরের রতি—মদনেরও টলল মতি
দেখি’ রতির গৌরে রতি—মদনের হল বিপরীত মতি
উলটো দেশে বাস গো—এবার,–উলটো করতে এসেছে
গৌরের,–বিবর্ত্তে গড়া মূরতি—তাই,–সব বিপরীত গতি গো
রতির দেখে গৌরাঙ্গে রতি—মদনের হল বিপরীত মতি
রতির আনুগত্যে মদন—রতির,–ভোগ-লালসায় গেল মাতি
রতির সৌভাগ্য মানি’—মদন মনে মনে গণে
গৌর-পদে বিকাইতাম—আমি যদি রতি হতাম
মদন হল গৌর-অনুরাগবতী—মদনের হল গৌরাঙ্গ রতি
মদনে করিল আলি—গৌরের,–এমনি মধুর নাগরালি
বাহুর হেলন দোলন দেখি’, হাতীর শুণ্ড কিসে লেখি,’’
সম্ভোগ-রসেতে মাতি’—গৌর আমার,–চলে যেছে মাতা-হাতী
নয়ান বয়ান যেন কুঁদে কোঁদা।’’ গো।
মাধুর্য্য-রস-বারিধি—আমার,–গৌর গড়েছে কোন বিধি
নিঙ্গাড়ি’ অখিল-রসের নিধি—আমার,–গৌর গড়েছে কোন বিধি
জগৎ,–ছানিয়া রস নিঙ্গাড়িয়া’—
তাতে,–মাধুর্য্য-রসের রসান দিয়া—জগৎ,–ছানিয়া রস নিঙ্গড়িয়া
বিধাতা কি পাতিয়াছে ফাঁদ। গো !
একবার যেই হেরে, সে মন ফিরাতে নারে,
মন-উন্মাদন গোরাচাঁদ।। গো !!
হেরিয়ে গৌরাঙ্গ-গতি, থূৎকৃত গজেন্দ্র-গতি,
গজ সে সামান্য-মদে মাতা।’’ গো !
গজ সামান্য-মদে মাতা—গৌর,–প্রেম-মদে মত্ত সদা
আমার—গৌরাঙ্গ-বদন হেরে, সকলঙ্ক-চন্দ্রোপরে,
ঘৃণা করে সকল-জনতা।।’’ গো !!
আমার গৌরাঙ্গ-সনে—বলে,–তুলনা তুল না
কলঙ্কি-গগনচাঁদের—বলে,–তুলনা তুল না
গগনচাঁদে প্রতিপদ আছে
‘এ-যে,–অকলঙ্ক-ষোলকলা’—গগনচাঁদে প্রতিপদ আছে
‘এ-যে,–অকলঙ্ক-ষোলকলা’—
গৌরাঙ্গ-বদনচাঁদ—এ-যে,–অকলঙ্ক-ষোলকলা
এ-যে,–নিশিদিশি সমান উদয়
গৌরাঙ্গ-বদনচাঁদ—এ-যে,–নিশিদিশি সমান উদয়
ঐ,–বদন হেরে গগনচাঁদ—অভিমানে দশখণ্ড হল
আসি’,–পদনখে শরণ নিল—অভিমানে দশখণ্ড হল
গৌর-কান্তি ঝলমল, তার আগে স্বর্ণাচল,
অচল সে তাবে কি গণিব।’’ গো !
মানি আপন মনস্তাপে।
নিজ-তনু জারি’, ভসম-সম করইতে,
পৈঠল অনল-সন্তাপে।।’’
কিসে বা তুলনা দিব
আমার গৌরাঙ্গ-রূপের—কিসে বা তুলনা দিব
শোণ-কুসুম, গোরাচনা। গো !
হরিতাল সে কোন্ ছার, বিকার সে মৃত্তিকার,
সে কি গোরারূপের তুলনা।। গো !!
ধিক্ চন্দ্রকান্ত-মণি, তার বর্ণ কিসে গণি,
ফণি-মণি, সৌদামিনী আর। গো !
তুলনা কি দিব আমি তার।। গো !!
জগতে তুলনা নাই, যার তুলনা তার ঠাঁই,
অমিয়া মিশাব কেন বিশে।’’ গো !
যার তুলনা তার ঠাঁই—জগতে তুলনা নাই
অচল সে কারে কি গণিব। গো !
গৌরাঙ্গ-মধুর-বাণী, অমৃত-তরঙ্গ জিনি,
পিলে মন করে পিব পিব।।’’ গো !!
গৌর-কথা একবার,–পশে যার শ্রবণ-বিবরে—সে,–কোটি-শ্রুতি বাসনা করে
না না সে ত’ রসিক নয়
গড়ে বুঝি দেখে নাই মা
দেখলে ছেড়ে দিত না—গড়ে বুঝি দেখে নাই মা
মা দেখলে ছেড়ে দিত না
পরাণ-পুতলী করে রাখত—দেখলে ছেড়ে দিত না
দেখেছে মজেছে
বড়ই ভাল লেগেছে
তাইতে ছেড়ে দিয়েছে
আমার,–গৌর-রাজ্যের এই ত’ রীতি
একা ভোগে হয় না মতি—আমার,–গৌর-রাজ্যের এই ত’ রীতি
একা ভোগ করে না তারা
আশা ত’ মিটে না
পাঁচে দিয়ে না খাওয়ালে—আশা ত’ মিটে না
একা ভোগ করতে নারে—তাইতে ছেড়ে দিয়েছে
খাইয়ে খাওয়া স্বভাব বলে—তাইতে ছেড়ে দিয়েছে
জগজনে দেখবে বলে—তাইতে ছেড়ে দিয়েছে
‘জগত-জীবন গোরা—জগজনে দেখবে বলে
মধুর মধুর কয় গো কথা, শ্রবণ-মনের ঘুচায় ব্যথা,’’
কথা,–বিষ্ণুপ্রিয়া-প্রাণবঁধুর—মরি মরি কতই মধুর
মনে হয় দেখে গৌর-মূরতি—বুঝি মধুর,–রস-বিলাসে ওর উৎপত্তি
যে অঙ্গেতে পড়ে গো নয়ন—দেখা যায় হতেছে মধুর বর্ষণ
সকলই মধুর গো
মধুর-গৌরাঙ্গের—সকলই মধুর গো
মধুর মধুর সব সহচর মধুর মধুর হাট।।’’ গো !!
মধুর-গৌরাঙ্গ হেরে—সবাই মত্ত মধুরে
অবিচারে মধুর দিতে—বুঝি,–প্রকট এবার নদীয়াতে
‘অবিচারে মধুর দিতে’—
কলি-পীড়িত-জগতে-অবিচারে মধুর দিতে
মধুর-রসের বাদর করল
দেখ্ নাগরী চেয়ে দেখ—মধুর-রসের বাদর করল
মধুর-ভাবে সবাই মাতল—মধুর-রসের বাদর করল
মধুর-গৌরাঙ্গ-বঁধুরে—মধুর-ভাবে সবাই হেরে
শোন্ শোন্ শোন্ নাগরী—ঐ,–গাওত মধুর-গান
মধুর-রসে মাতি ভকত—ঐ,–গাওত মধুর-গান
দেখ্, নাগরীচেয়ে দেখ্ –দেখ্ অপরূপ রঙ্গ
কত পুরুষ-দেহধারী—প্রকৃতি-ভাবে কেঁদে আকুল
আমার,–প্রাণ-বল্লভ গৌর বলে—তাদের,–বয়ান ভাসে নয়ন-জলে[মাতন]
‘‘মধুর মধুর কয় গো কথা,শ্রবণ-মনের ঘুচায় ব্যথা,
চাঁদে যেন উগারয়ে সুধা।।’’ গো !!
যেন,–চাঁদ ফেটে অমিয়া ঝরল
অকলঙ্ক-ষোলকলা—যেন,–চাঁদ ফেটে অমিয়া ঝরল
আমার,–গৌরহরি ‘হরি’ বলল যেন,–চাঁদ ফেটে অমিয়া ঝরল
জগৎ অমৃতময় করল—যেন,–চাঁদ ফেটে অমিয়া ঝরল
শ্রীগৌরাঙ্গ-মুখের বচন—যেন,–অমিয়ার প্রস্রবণ
হৃৎ-কর্ণ-রসায়ন—যেন,–অমিয়ার প্রস্রবণ
যদি কেউ,–
নয়ন-ভরে দেখি রূপখানি।’’ গো !
আশ মিটায়ে—আমরা,–গৌর দেখব মনে করি
কিন্তু,–দাঁড়াও বলে বলতে নারি
আমরা,–কুলের নারী ডরে মরি—কিন্তু,–দাঁড়াও বলে বলতে নারি
‘আমরা,–কুলের নারী ডরে মরি’—
আমাদের,–শাশুড়ী ননদী বৈরী—আমরা,–কূলের নারী ডরে মরি
কিন্তু,–দাঁড়াও বলে বলতে নারি
যদি কেউ,–
নয়ন-ভরে দেখি রূপখানি।’’ গো !
যদি,–দেখ্বি গৌর-নটন-মাধুরী—আয় নাগরী ত্বরা করি’
তোদের,–গৃহকাজ সব পরিহরি—আয় নাগরী ত্বর করি’
গৌর-নটন দেখবি আয়—গৃহকাজ ত’ সদাই আছে
ও-মা,–আমায় কেন দেখালি না
গৌর-সুন্দর নেচে গেল—ও-মা,–আমায় কেন দেখালি না
আয়,–দেখ্বি গোরা নটরাজ—তোদের,–গৃহকাজে পড়ুক বাজ
কত,–রূপের নাগর রসের সাগর—ঐ নেচে যেছে, রূপ-রসের করি’ বাদর
চিতচোর,–গৌরাঙ্গের নটন-মাধুরী—তোরা,–দেখবি যদি আয় নাগরী
নদীয়ার পথ,–আলো করে রূপ-লাবণ্য-ছটায়—ঐ,–সোণার গৌর নেচে যায়
আয় যদি দেখবি আয়—ঐ,–সোণার গৌর নেচে যায়
আয় নাগরী দেখবি আয় গো—গমন নটন-লীলা
আয় আয় দেখ্বি আয় গো-–গমন নটন-লীলা
আমাদের,–শচীদুলাল প্রাণ-গৌরাঙ্গের—গমন নটন-লীলা
আমাদের,–নদীয়া-বিনোদ গৌরাঙ্গের—গমন নটন-লীলা
সীতানাথের আনানিধির—গমন নটন-লীলা
শ্রীবাস-অঙ্গনের নাটুয়ার—গমন নটন-লীলা
রসরাজ-গৌরাঙ্গ-নটের—গমন নটন-লীলা
সঙ্কীর্ত্তন,-সুলম্পটের—গমন নটন-লীলা
সঙ্কীর্ত্তন,–কেলি-কলা-রস-বিনোদিয়ার—গমন নটন-লীলা
গদাধরের প্রাণ-বঁধুয়ার—গমন নটন-লীলা
নরহরির চিতচোরের—গমন নটন-লীলা
নিতাই-পাগল-করা গোরার—গমন নটন-লীলা
এমন কখনও দেখিস নাই—আয় আয় দেখবি আয় গো
নদীয়ার পথ আলো করে—রসের নেটো নেচে যায়
নাটুয়া-মূরতি গৌর আমার—চলে যেতে নেচে যেছে
প্রাণ-গৌরাঙ্গের,–নাটুয়া-মূরতি নটন-গতি—চলে যেতে নেচে যেছে
ভাবনিধি গোরা,–ভাব-হিল্লোলে হেলে দুলে—চলে যেতে নেচে যেছে
রূপে,–সুরধুনীর কূল আলো করেছে—চলে যেতে নেচে যেছে
ওর,–সহজ-চলন মধুর-নটন—ও-তো,–সহজে চলিতে নারে
এ স্বভাব পেয়েছে কোথায়—চলতে গেলেই নেচে যায়
বুঝি—ওর কেউ গুরু আছে
কোন,–দেশ হতে শিখে এসেছে
নটন-শিক্ষার গুরু পেয়ে—কোন্–দেশ হতে শিখে এসেছে
স্বভাবেতে বসে গেছে—নেচে নেচে নটন-গতি হয়েছে
না,না, বুঝি,–নটনেই উৎপত্তি উহার
ওর,–মূরতি দেখে মনে হয়—না, না, বুঝি,–নটনেই উৎপত্তি উহার
কোন-দেশে কোন-নিগূঢ়-খেলায়—না, না, বুঝি,–নটনেই উৎপত্তি উহার
নৈলে কেন,–চলে যেতে নেচে যায়—না, না, বুঝি,–নটনেই উৎপত্তি উহার
নিকুঞ্জ-কেলি-তল্লোপরি—ওর,–নটনেতেই উৎপত্তি
ও কি,–সহজ-কথা কইতে নারে—সঙ্গীতেতে কথা কহিছে
কথা,–কইতে গেলেই গান করে—ওর,–সহজ-কথাই গান বটে
মনে হয় ওর গুরু আছে
বুঝি তার স্বভাব ধরেছে
যার কাছে গান শিখেছে—বুঝি তার স্বভাব ধরেছে
তাই,–সহজ-কথা কইতে নারে—সঙ্গীত,–করতে করতে স্বভাব ধরেছে
এখানে লোক মাতাইছে—সেখান হতে শিখে এসেছে
গমনে নটন বচনে গান,–ওর,–কিছুই ত’ নিজস্ব নয়
যে নটন-গায়ন জানে—তার কাছেই ধার করেছে
ওর,–গমনে নটন বচনে গান
আয় নাগরী,–দেখবি শুনবি আয় গো—ওর,–গমনে নটন বচনে গান
আমার,–শচীদুলাল প্রাণ-গৌরাঙ্গের—গমনে নটন বচনে গান
নদীয়া-বিনোদ গৌরাঙ্গের—গমনই নটন বচনই গান
রসময় গৌরাঙ্গ-রায়—চলতে নাচে বলতে গায়
যেন,কতশত-কোকিল কূহরিছে
পঞ্চ ম-রাগ জিনি—যেন,–কতশত-কোকিল কুহরিছে
যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
জগৎ,–অমৃতময় করবে বলে—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
আমার,–গৌরহরি ‘হরি’ বলিছে—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
আমার মনে এই হয়—ও-তো,–হরিবোল বলা নয় গো
‘হরি’ বলে প্রচার করছে
আগে থাকতে প্রচার করছে
আমি হরণ করব বলে—আগে থাকতে প্রচার করছে
গৌরহরি ‘হরি’ বলে—ডেকে হেকে চলে যেছে
আমি হরণ করব বলে—ডেকে হেঁকে চলে যেছে
এ যে দুপুরে ডাকাতি গো—ডেকে হেঁকে চলে যেছে
গৌরহরি মুখে ‘হরি’ ঘোষণ—যেন,–অমিয়ার প্রস্রবণ—
হৃদয়-ভাণ্ডার লয় গো লুটি
বৃক্ষ-লতা-পশু-পাখীর—হৃদয় ভাণ্ডার লয় গো লুটি
শ্রবণ-দ্বারে পশি—হৃদয় ভাণ্ডার লয় গো লুটি
শ্রবণ-দ্বারে পশি—হৃদয়-ভাণ্ডার লয় গো লুটি
মধুর-চাহনি আকর্ষণ।’’
ওর,–মাঝে আছে আকর্ষণী
কেড়ে নিছে পরাণী
ওর মধুর-চাহনি—কেড়ে নিছে পরাণী
একবার,–‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে—তারই আঁখি মন হরিছে
‘একবার,–‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে’—
রসের গোরা নেচে নেচে—একবার,–‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে
রসাবেশে হেসে হেসে—একবার,–‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে
মৃদু-মন্দ-হেসে বাঁকা-দিঠে—একবার,–‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে
এ বুঝি ওর চির-স্বভাব
যারে হেরে তার মন হরে—এ বুঝি ওর চির-স্বভাব
মন হরে আপন করে
বুঝি তাই ভালবাসে গো
হরে নিয়ে আপনার করতে—বুঝি তাই ভালবাসে গো
আপনার মনে বুঝতে পারছি—কারে বা শুধাব বল
হেরি’ ঐ গৌরাঙ্গ-সোণা—কারো,–ঘরে যেতে মন সরে না
সকলই ত’ আছে বটে—কিন্তু কারো,–ঘরে যেতে মন সরে না
গৌর একবার যার পানে চায়—তার,–কিছু ভাল লাগে না গো
প্রাকৃত-ভোগ-সুখ-বিলাস—তার,–কিছু লাগে না গো
কেবল, নিশিদিশি গুণেতে ঝুরে
নিরজনে আপন-মন—কেবল,–নিশিদিশি গুণেতে ঝুরে
গৌরের,–গুণ স্মঙরি গুমরি গুমরি—পাঁজর ঝাঁঝর হয়ে যায় রে
গৌরাঙ্গ-বিরহানলে—গুমরি গুমরি কেঁদে মরে
সেই,–হরিবোলা-রসের বদন—তার,–রয়ে রয়ে মনেতে পড়ে
তখন সে,–পাগল হয়ে বেড়ায় রে
কূলে তিলাঞ্জলি দিয়ে—তখন সে,–পাগল হয়ে বেড়ায় রে
কুল, শীল, মান তেয়াগিয়ে—তখনসে,–পাগল হয়ে বেড়ায় রে
এ জগতের সবর্বস্ব ছাড়ি—কেঁদে বলে হা গৌরহরি
দীন-হীন-কাঙ্গালের বেশে—ঘুরে বেড়ায় দেশ-বিদেশে
দয়া করে বলে দাও
আমি,–কেমন করে গৌর পাব—দয়া করে বলে দাও
বলিহারি তার হরণ-চাতুরী—শচীর,–দুলাল গোরা বটে গো ‘হরি’
বৃন্দাবনের নন্দদুলাল—আমার,–শুনেছি এক চোরের কথা
চুরি করাই স্বভাব উহার—সবাই ত’ জানত
চোর নাম খ্যাত ছিল—সবাই ত’ জানত
ঐ চোর আসছে বলে—তাই,–সকলেই সন্ত্রস্ত হত
বাইরেতে সাধুর বেশে ধরেছে
ভিতরেতে কিন্তু কালই আছে—বাইরেতে সাধুর বেশ ধরেছে
সাধু সেজে এসেছে—এ যে বিষম চোর বটে
বড় ভাল-মানুষ বলে—এখন,–সবাই দেখে ভুলে যায়
সাধু-বুদ্ধি করে সবে—অনায়াসে সঙ্গ করে
মৃদু,–মন্দ-হসনে চেয়ে বাঁক্-নয়নে—চোরে যে সবর্বস্ব হরে
বলে,–হরি হরি হরি হরি
ও-তো,–‘হরি’ বলা নয় গো
উল্লাসের ধ্বনি গো
নিজ-কার্য্য-সিদ্ধির—উল্লাসের ধ্বনি গো
মনে মনে বলে—এবার কেমন হয়েছে
আনন্দেতে বলে—এবার কেমন হয়েছে
সব চুরি করেছি—এবার কেমন হয়েছে
আমার,–আপন করে নিয়েছি—সব চুরি করেছি
সব,–নিয়েও আশা মিটে না
হরণ করেও সুখ হয় না
অভাব হরে স্বভাব জাগায়
তারই স্বভাব জাগায়ে দেয়
একবার,–আড়্-নয়নে যার পানে চায়—তারই স্বভাব জাগায়ে দেয়
মধুর,–চাহনিতে যারে হেরে—তারে,–মধুর-ভাবে মাতায়ে দেয় রে
ভাব-দিঠে যারে হেরে—তার,–মধুর-ভাব জাগে অন্তরে
গৌরহরি চায় যার পানে—সে,–অপানারে রাধাদাসী মানে
চেয়ে,–গোরা-রসের বদন-পানে—পরাণ-বঁধু করে সম্বোধনে
চাহনিতে,–স্বভাব জাগায় বরজ-বধুর—গোরা-চাহনি কি বা মধুর
মৃদু মৃদু মন্দ হেসে—ও-তো,–নয় গো মধুর-চাহন
চাহনির বালাই যাই গো
তাতে পঞ্চ-বাণ হানে
গৌর যারে হেরে নয়নে—তাতে পঞ্চ-বাণ হানে
কটির বসন খসে পড়ে—তার সবর্বাঙ্গ শিথিল করে
ভাবনিধি যারে হেরে—সে,–ভাবাবেশে ঢলে পড়ে
ভাবেতে অবশ হয়ে—সে অমনি ঢলে পড়ছে
ভাবনিধি যার পানে চাইছে—সে,–ভাবাবেশে ঢলে পড়ছে
প্রাণে প্রাণে,–আরও কিছু চাইছে
ঐ,–চাহনি যেন বলে দিছে—প্রাণে প্রাণে,–আরও কিছু চাইছে
দেখ নাগরী চেয়ে দেখ গো—অপরূপ গৌরাঙ্গ-রঙ্গ
হেম-কিরণ ছড়াইয়ে—আমার,–সোণার গৌরাঙ্গ নাচে
আমার,–রসিয়া গৌরাঙ্গ নাচে
আমার,–বিলাসী গৌরাঙ্গ নাচে
সঙ্কীর্ত্তন-রাস-রসোন্মাদী—আমার,–বিলাসী গৌরাঙ্গ নাচে
না জানি কোন ভোগে মাতি’—আমার,–বিলাসী গৌরাঙ্গ নাচে
যে ঢলে,–পড়ে তারে বুকে ধরে—আমার,–বিলাসী গৌরাঙ্গ নাচে
কীর্ত্তন,–কেলি-রস-তৎপর—নাচিছে গোরা নাগরবর
আজ নদীয়ায় গৌরকিশোর—করিছে মা রসের বাদর
মৃদু,–মন্দ-হসনে বাঁক-নয়নে—চাহনির বুঝি ঐ মর্ম্ম
আমার,-রঙ্গিয়া প্রাণ-গৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
আমার,–নদীয়া-বিনোদ-গৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
আমার,–অনঙ্গ-মোহন-গৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
রঙ্গের মন্দির গোরার—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
‘রঙ্গের মন্দির গোরা’
নবীন-কামের কোঁড়া—রঙ্গের মন্দির গোরা
করে অনঙ্গ-রঙ্গ
গৌরের প্রতি-অঙ্গ—করে অনঙ্গ-রঙ্গ
সে অমনি,–বিদ্ধ হয় অনঙ্গ-শরে,–গৌরের,–কোন অঙ্গে যার নয়ন পড়ে
বিশেষ-অঙ্গের অপেক্ষা না করে—গৌরের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গ করে
বিশেষ-অঙ্গের নাহি অবসর—প্রতি-অঙ্গে অনঙ্গ-শর
শর,–বরষিছে নিরন্তর—প্রতি-অঙ্গে অনঙ্গ-শর
নিজ,–পারিষদ-উপর—শর,–বরষিছে নিরন্তর
প
শর,–বরিষণের নাহি অবসর
পারিষদ হইল জ্বর-জ্বর
নিরন্তর শর বরিষণে—পারিষদ হইল জ্বর জ্বর
ধেয়ে গিয়ে গোরা করে কোর—পারিষদ হইল জ্বর জ্বর
রঙ্গ করাই স্বভাব উহার—এ,–স্বভাব ও কোথায় পেল
দেখে,–মনে হয় গৌর-ব্যবহার—রঙ্গ করাই স্বভাব উহার
থাকতে নারে রঙ্গ ছাড়া—গৌরাঙ্গের—স্বভাব কেবল রঙ্গ করা
এ,–স্বভাব ও কোথায় পেল
অঙ্গ দেখে মনে হয়
গৌরাঙ্গের রঙ্গময়—অঙ্গ দেখে মনে হয়
মনে হয় দেখে গৌর-মূরতি—বুঝি,–রঙ্গেতে ওর উৎপত্তি
তাই,–রঙ্গেতে উহার স্থিত—বুঝি,–রঙ্গেতে ওর উৎপত্তি
কোন-দেশে রঙ্গিণী-সংহতি—রঙ্গেতেই ওর উৎপত্তি
কোন-নিগূঢ়-রঙ্গ-লীলায়—রঙ্গেতেই ওর উৎপত্তি
আগে বুঝি ব্রজে ছিল
স্বভাব দেখে মনে হয়—আগে বুঝি ব্রজে ছিল
স্বর্ণ-বর্ণ ভেদ করে—ঐ যে উজ্জ্বল,–নীলমণির ছটা উঠছে
রঙ্গ,–আশা বুঝি মিটে নাই
বৃন্দাবনের রাস-রঙ্গে,–আশা বুঝি মিটে নাই
সঙ্কীর্ত্তন,–মহা-রাস-রঙ্গে—এবার,–আশ মিটাতে এসেছে
সবারে গোপী করে—এবার,–আশ মিটাতে এসেছে
স্থাবর, জঙ্গম, গুল্ম, লতা—সবার,–গোপী-স্বভাব প্রকট করে
ও-যে,–পরিণতি-মূরতি
বৃন্দাবনের রাস-কেলির—ও-যে,–পরিণতি-মূরতি
নারী, পুরুষ বাছা নাই—সবারই আঁখি মন হরিছে
পুরুষাকৃতি-ধারী—সে-ও হয়ে যেতেছে নারী
রসের নাগর গৌর হেরি’—সে-ও হয়ে যেতেছে নারী
পুরুষ-অভিমান ভুলে—প্রাণ-বল্লভ বলে ডাকছে
একলা পুরুষ গৌরহরি
জগ-ভরি’ সবাই নারী—একলা পুরুষ গৌরহরি
এ-যে,–নাগরীর নাগরালি—সবারে করিল আলী
আমার,–ভাবনিধি প্রাণ-গৌরাঙ্গ—অভাবের সঙ্গ করে না
রঙ্গ ছাড়া রইতে পারে না—অভাবের সঙ্গ করে না
ভাবনিধির এই ত’ স্বভাব—ভাবের অভাব দেখতে পারে না
ভাবের রতি ভাবেতে স্থিতি—ভাবের অভাব দেখতে পারে না
অন্তরঙ্গ-ভাবুক সঙ্গে—নিশিদিশি ভাব-প্রসঙ্গ
স্বভাব জাগায়ে বুকে ধরে—ভাবের অভাব দেখতে নারে
ও-মা ওর কি গরজ বালাই—স্বভাব জাগায়ে করে সঙ্গ
স্বরূপ জাগান স্বরূপ গোরা—স্বভাব জাগায়ে করে সঙ্গ
স্থাবর-জঙ্গম-গুল্ম-লতার—স্বভাব জাগায়ে করে সঙ্গ
‘হরি’,–বলে চেয়ে অভাব ঘুচায়ে—স্বভাব জাগায়ে করে সঙ্গ
প্রতি-জনে ভাব ধরাতে—বুঝি,–এসেছে এবার নদীয়াতে
ভাবে,–বিভাবিত হয়ে রাধার—স্বভাব জাগাতে এসেছে এবাব
স্থাবর-জঙ্গম-গুল্ম-লতার—স্বভাব জাগাতে এসেছে এবার
সঙ্কীর্ত্তন-মহা-রাস-রঙ্গে—স্বভাব জাগাতে এসেছে এবার
হরণ করে পূরণ করে—অভাব নিয়ে স্বভাব দেয়
সবার স্বভাব জাগাইয়ে—রঙ্গ করতে এসেছে
কম্প-অশ্রু-পুলকাদি—ভাব-ভূষণে ভূষিত অঙ্গ
আরে আরে আরে আমার—গৌর কিশোর-বর
আরে আমার—গৌর কিশোর-বর
আরে আমার চিতচোর—গৌর কিশোর-বর
রসে তনু ঢর ঢর—গৌর কিশোর-বর
‘রসে তনু ঢর ঢর’—
গৌরাঙ্গ নাগর-বর—রসে তনু ঢর ঢর
অখিল-মরম-চোর—গৌর কিশোর-বর
‘অখিল-মরম-চোর’
শ্রী,–নবদ্বীপ-পুরন্দর—অখিল-মরম-চোর
ওর,–স্বরূপ দেখে মনে হয়—শুধু ও-তো রস নয়
তাহাতে স্বভাব জাগাইছে
মহাভাব ওর সঙ্গে সঙ্গে আছে—তাইতে স্বভাব জাগাইছে
রাই-রসবতীর সঙ্গে মিলে—হয়েছে নব-রসরাজ
স্বরূপ জাগান তার কাজ—হয়েছে নব-রসরাজ
মহাভাব রসের সম্মিলন—আমার,–মধুর, গৌরাঙ্গ-গঠন
স্বভাব দিয়ে রস ভোগ করায়—রসের নেটো নেচে যায়
যদি পুরুষ দেখতে চাও
‘হরি’ বলে নদে যাও—যদি পুরুষ দেখতে চাও
আয় নাগরী দেখবি আয়—সোণার গৌরাঙ্গ নাচে
দয়াল নিতাই প্রেম যাচে—সোণার গৌরাঙ্গ নাচে
আমার নিতাই,–যারে দেখে তারে বলে—একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
ত্রিতাপ-জ্বালায় হবে বিরাম—বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
চৌরাশী,–লক্ষ-যোনি করে ভ্রমণ—পেয়েছ সাধের মানব-জনম
এ-তো,–রিপু-সেবার জনম নয় রে
শৃগাল-কুক্কুরের মত—এ-তো,–রিপু-সেবার জনম নয় রে
সুদুর্ল্লভ এই মানব-জনম—এ-যে,–শ্রীহরি-ভজনের জনম
কি,–করবে বলে এই জনম পেলে—সকল কথাই ভুলে গেছ ভাই
গর্ভের অনলে পুড়ে ডাকিলে কাতরে।।’’ রে !!
তুমি,—কোথায় আছ প্রাণের হরি
আমি,–আর যাতনা সইতে নারি—তুমি,–কোথায় আছ প্রাণের হরি
জননী-জঠরে কঠোর—যাতনা আর সইতে নারি
এবার আমায় জনম দাও
আমি—আর তোমায় ভুলব না প্রভু—এবার আমায় জনম দাও
তোমায় ভুলে আমার এ দুর্গতি—ভাল বুঝতে পেরেছি এবার
এবার আমায় জনম দাও
ভজব তোমার পদ-যুগলে
জনমিয়ে ভবে গিয়ে—ভজবে তোমার পদ-যুগলে
সপ্তম-মাসে মাতৃগর্ভে—জীব-মাত্রের এই প্রতিজ্ঞা
জনমিয়ে হরি ভজব—জীব-মাত্রের এই প্রতিজ্ঞা
প্রণব জঠর-স্মৃতি অন্তর হইল।।’’ রে !!
গর্ভবাসে যা বলে এলে—জনম পেয়েই ভুলে গেলে
শৈশবেতে দিবা-রেতে—রইলো ধূলা-খেলার ছলে
কাটালে কৈশোর-কাল পুস্তক-পঠনে।।’’ রে !!
যে,–পড়া পড়্তে জনম পেলে—কই,–একদিনও ত’ স্মরণ কর নাই
প্রাণারাম—হরিনামের পড়া’—
সবর্ব-বিদ্যার জীবনী-শক্তি—প্রাণারাম-হরিনামের পড়া
অবিদ্যা অর্জ্জনে মত্ত হলে
জগতে,–লাভ-পূজা-প্রতিষ্ঠা-আশে—অবিদ্যা অর্জ্জনে মত্ত হলে
তুমি,–যুবাকালে মোহ-জালে—পড়িলে রিপুর কৌশলে
যৌবন-মদিরা-পানে মেতে—হিতাহিত বিবেচনা গেল
মায়া-সনে সম্বন্ধ কৈলে
পুরুষ-অভিমানে মেতে—মায়া-সনে সম্বন্ধ কৈলে
ষড়্রিপুর কিঙ্কর হয়ে—পাশবাচারে প্রবৃত্ত হলে
দেখতে মানুষ, আচার পশুর—নরকৃতি পশু হলে
বড়ই জুড়াবে বলে—সাধ করে গলায় পর্লে
কামিনী-সাপিনীর মালা—সাধ করে গলায় পর্লে
জায়ার ভয়ে নত হয়ে—পড়িলে তার পদতলে
মায়ার মূরতি নারী—তিনি,–হলেন—তোমার ইষ্টদেবতা
‘মায়ার মূরতি নারী’—
দিনে মোহিনী রাতে বাঘিনী—মায়ার মূরতি নারী
হল তোমার উপাসনা
অবিচারে তার আজ্ঞাপালন—হল তোমার উপাসনা
হলেন অধিক—পূজনীয়া
তোমার,–পিতা-মাতা হলেও তিন—হলেন অধিক-পূজনীয়া
তার মনস্তুষ্টির লাগি’—কিছুই করতে ভয়বাস না
পাতক,–অতিপাতক মহাপাতক—কিছুই করতে ভয়বাস না
তার,–আজ্ঞা হলে পিতা-মাতায়—অনায়াসে ত্যাগ করতে পার
দয়াল নিতাই,–কেঁদে বলে ছি ছি—ভাই তোমার এ কি ভ্রম
তুমি কৃষ্ণের নিত্য-কিঙ্কর—তুমি—কেন হলে মায়ার নফর
কৃষ্ণ প্রভু পাসরিয়ে—তুমি,–কেন হলে মায়ার নফর
‘‘সংসার-চিন্তাতে পড়ে প্রৌঢ়কাল গেল। রে !
ক্রমে বক্ষে বদ্ধমূল হল পাপ-শেল।।’’ রে !!
মায়াজালে বিজড়িত—ছিলে দ্বিপদ হলে ষটপদ
দারা-সুত-আদি মায়ার শৃঙ্খল—হাতে পায়ে গলে বাঁধা
শুভ্র কেশ, লোল চর্ম্ম, কোটরে নয়ন।।’’ রে !!
এখন,–ভজ্তে চাইলেও ভজ্তে নারবে
হল সবের্বন্দ্রিয় শকতি হীন—এখন,–ভজতে চাইলেও ভজতে নারবে
রসনা ক্রমে অবশ হল—হরি-কথা বলতে নারবে
শ্রবণ-শকতি গেল—হরি-কথা শুনতে নারবে
সর্ব্বাঙ্গ ক্রমে অবশ হল—হরিক্ষেত্রে যেতে নারবে
ত্যজি,–মায়া-ছিব (তোমার) আয়ুরবি—যাবে কাল অস্তাচলে
হল,–আজ কাল বলে কাল আগত—বল,–এখন আর কি করিবে
যে,–ভিক্ষায় বের হয় সন্ধ্যাকালে—সে ভিখারীর কি ভিক্ষা মিলে
এই বেলা ফিরে বল ভাই
যা হবার তা হয়ে গেছে—এই বেলা ফিরে বস ভাই
পাগ্লা নিতাই কেঁদে বলে—ভজ প্রাণের গৌরহরি
মায়ামোহ পরিহরি—ভজ প্রাণের গৌরহরি
শ্রী,–বৃন্দা-বিপিন-বিহারী-ভজ প্রাণের রাধারমণ
ও সে,–রসময় বংশীধারী—ভজ প্রাণের রাধারমণ
অভিনব-রাস, রসিক-বর নাগর,’’
আমার প্রাণ রাধারমণ—নিতুই নিতুই নব নব
বরজ,–যুবতীকূলে দিতে কালি—নব নব বিভ্রমশালী
ব্রজ,–নাগরীগণ-কৃত—নিশিদিশি সেব্যমান
গোপস্ত্রী-পরিসেবিত—গোপাল-চূড়ামণি
ব্রজপতি-দম্পতি,- হৃদয়-আনন্দন,’’
আমার প্রাণের রাধারমণ—মা-যশোদার নীলমণি
বিশুদ্ধ,–বাৎসল্য-প্রেমার বশে—দণ্ডে দশবার খায় নবনী
শ্যাম নবজলদ—নন্দ-হৃদি আনন্দদ
নবঘন শ্যাম—নয়নাভিরাম
বরজ-বাসীগণ—নয়নাভিরাম
নন্দীশ্বর পুর, পুরট পটাম্বর’’,
আমার বরজ-শশী—নন্দীশ্বর-পুররাসী
শ্যাম-সুন্দর—পীতাম্বর-ধর
নব-কৈশোর নটবর—পীতাম্বর-ধর
শ্যাম-অঙ্গে পীতাম্বর—যেন,–থির-বিজুরী-জড়িত-নবঘনে
আবেশে নিতাই বলে—বলরামের ছোট ভাই
আপনি বলাই তা—ভুলে যে গেছে গো
আদর করে সদাই ডাকে
কা-কা-কাহ্লাইয়া—আদর করে সদাই ডাকে
‘কা-কা-কাহ্নাইয়া—
আরে আরে মেরো ভেইয়া—কা-কা-কাহ্নাইয়া
শ্রীদুম-সুদাম,– সুবল-সখা সুন্দর,’’
বিশুদ্ধ সখ্য-প্রেমার বশে—শ্রীদামের উচ্ছিষ্ট-ভোজী
খেতে খেতে বেঁধে রাখে
বনফল মিঠ লাগলে—খেতে খেতে বেঁধে রাখে
এ যে বড় মিঠ লাগল—বলে,–আর ত’ খাওয়া হল না
আধ থাক ভাই কানাইকে দিব—বলে,–আর ত’ খাওয়া হল না
কত,–যতন করে—ধড়ার,–অঞ্চলে বেঁধে রাখে
বাম-করে গলা জড়ায়ে ধরে—চাঁদ-মুখে তুলে দেয়
অনিমিখে বদন-চেয়ে—বলে,–খা রে আমার প্রাণ-কানাই
এ, যে,–বড়-মিঠ-ফল ভাই—বলে,–খা রে আমার প্রাণ-কানাই
মিঠ,–লেগেছে তাই খেতে পারি নাই—বলে,–খা রে আমার প্রাণ-কানাই
সুবলের মরম-সখা
শ্যাম ত্রিভঙ্গ বাঁকা—সুবলের মরম-সখা
রাই-বিরহে প্রাণ-রাখা—সুবলের মরম-সখা
কালীয়-দমন শ্যাম—ব্রজ-রাখালের পরাণ
সে,–বিনোদিয়ার বিনোদ-চূড়া—বিনোদ বিনোদ বিনোদ দোলে
বিনোদ-বায়ে বিনোদ-বরিহা-বিনোদ বিনোদ বিনোদ দোলে
চূড়ার দোলন দেখে মদন—মূরছি পড়ে ভূমিতলে
তার,–যুগল-কর্ণে—মকর-কুণ্ডল দোলে
মকরাকৃতি—কুণ্ডল দোলে গো
মকরাকৃতি কুণ্ডল—মুখ ব্যাদান করে দোলে
মনোমীন গিলিবে বলে—মুখ ব্যাদান করে দোলে
‘মনোমীন গিলিবে বলে—
বরজ-ললনার—মনোমীন গিলিবে বলে
গোবর্দ্ধনৃ-ধর, ধরণী-সুধাকর,’’
ব্রজবাসী-রক্ষা-করা—বাম-করে গিরি-ধরা
লীলামৃত-রসপুর—বরজ-সুধাকর
নিজ,–লীলামৃত বরিষণে—সিঞ্চে চৌদ্দ-ভুবনে
শ্রী,–নন্দকুল-চন্দ্রমা—তাপ-বিমোচন
ব্রজ,–তরুণী-লোচন—তাপ-বিমোচন
নব-কৈশোর নটবর—বেণু-বাদনপর
‘নব-কৈশোর নটবর’—
গোপবেশ বেণু-কর—নব-কৈশোর নটবর
সে,–বেণু বাজায় গো
ধীরসমীরে যমুনা-তীরে—সে,–বেণু বাজায় গো
বংশীবট-তটে—সে,–বেণু বাজায় গো
‘বংশীবট—তটে’—
ধীরসমীরে যমুনা-নিকটে—বংশীবট-তটে
ললিত-ত্রিভঙ্গ-ঠামে—বেণু বাজায় গো
‘ললিত-ত্রিভঙ্গ-ঠামে’—
বংশীবট-হেলনে—ললিত-ত্রিভঙ্গ-ঠামে
মধুর-পঞ্চ ম-তানে—বেণু বাজায় গো
সেই মধুর-বেণু-রবে—চৌদ্দ-ভূবন আকর্ষিত
জগবাসীর প্রাণ টানে
ধ্বনি,–পশিয়া মরম-স্থানে—জগবাসীর প্রাণ টানে
যমুনা-পুলিন-পানে—জগবাসীর প্রাণ টানে
মুনি-জনার ধ্যান টলে—যোগী যোগ ভুলে গো
তরল কঠিন, কঠিন তরল—হয়,–সচল অচল, অচল সচল
শ্যামের,–মোহন-মুরলী-স্বরে—বিপরীত-ধর্ম্ম ধরে
পাষাণ গলিয়া যায়—যমুনার জল ঘন হয়
পবন স্থির হয়—গিরিরাজ চলে গো
শ্যামের,–মোহন-মুরলী-স্বরে—যমুনা উজান চলে
মোহন-মুরলী-রোলে—নেচে নেচে উজান চলে
উত্তাল-তরঙ্গ-ছলে—নেচে নেচে উজান চলে
যমুনার জলে হেলে দুলে—মকর-মীন নাচে গো
‘যমুনার জলে হেলে দুলে’
মোহন-মুরলী-রোলে—যমুনার জলে হেলে দুলে
তরু-লতা পুলকিত
শ্যামের,–মুরলীর গানে হয়—তরু-লতা পুলকিত
মোহন-মুরলী-স্বরে—মৃততরু মুঞ্জরে
হয়,–পুষ্পিত ফলিত
নব নব ফুল-ফলে—হয়-পুষ্পিত ফলিত
একই কালে—ষড়্ঋতুর উদয় হয়
পাষাণ গলিয়া যায়
সেই মধুর-বেণুরবে—পাষাণ গলিয়া যায়
ধায়,–কাননে ব্রজ-কামিনী—ত্যজি নিজ-কূলে গো
‘ধায়,–কাননে ব্রজ-কামিনী’—
আমার,–প্রাণ-বল্লভ কৃষ্ণ বলে—ধায়,–কাননে ব্রজ-কামিনী
কালীয়-দমন,- গমন জিতি কুঞ্জর
কুঞ্জ রচিত রতি-অঙ্গ।’’
আমার প্রাণের রাধারমণ—অপ্রাকৃত নবীন-মদন
সাক্ষাৎ,–মন্মথ-মন্মথ—অপ্রাকৃত নবীন-মদন
চড়ি’ গোপীর মনোরথে—সাক্ষাৎ,–মন্মথের মন মথে
কন্দর্প-দর্প-হারী
রাস-রস-বিহারী—কন্দর্প-দর্প-হারী
নাগর রসিয়া—কেলি-রস-বিনোদিয়া
রাস-রসিক-বর—কেলি-রস-তৎপর
মদন-দরপ-হর—কেলি-রস-তৎপর
শৃঙ্গার-রসময়-মূরতি—কেলি-রস-ভূপতি
শ্রীরাধা-নায়ক নাগর শ্যাম।
সো শচীনন্দন, নদীয়া-পুরন্দর’’,
নন্দের নন্দন যেই—শচীসুত হইল সেই
সেই কৃষ্ণ অবতীর্ণ চৈতন্য-গোসাঞি।।’’ রে !!
‘‘সো শচীনন্দন, নদীয়া-পুরন্দর,
সুর-মুনি-গণ-মনোমোহন-ধাম
গৌর-কথা কইতে কইতে—মাতল নিতাই রে
দুনয়নে শত-ধারা—পুলকেতে অঙ্গ ভরা
গৌরাঙ্গ-রহস্য—ভাবাবেশে বলে রে
জয় নিজ-প্রেয়সী-ভাব-বিনোদ।
ব্রজ-তরুণীগণ,- লোচন-মঙ্গল,
নদীয়া-বধূগণ-নয়ন-আমোদ।।’’
কেঁদে বলে জীবের দ্বারে দ্বারে—এসেছে রে তোদের তরে
গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে—এসেছে রে তোদের তরে
‘গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে’
রাধাভাব-কান্তি লয়ে—গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে
হাত ধরে বলে দিয়েছে
নিরজনে বসে কেঁদে কেঁদে—হাতে ধরে বলে দিয়েছে
অবিচারে নাম-প্রেম বিলাতে—হাতে ধরে বলে দিয়েছে
পতিত খুঁজে নাম-প্রেম দিতে—হাতে ধরে বলে দিয়েছে
আমার,–নিতাই ডাকে—আয় কলিহত-জীব
পাপ-তাপ সব আমি নিব
তোদের জন্ম-জন্মার্জ্জিত—পাপ-তাপ সব আমি নিব
পাপ-তাপের বোঝা নিব—বিনামূলে বিকাইব
একবার গৌরহরি বোল—-বিকাইব প্রেম দিব
আমার—গৌর-প্রেমের পাগলা নিতাই—হেলে দুলে যায় রে
গৌর-প্রেম-মদিরা পান করি’—যায় রে নিতাই মাতাকরী
নিতাই-করী,–পাষণ্ড-কদলী দলবে বলে—যায়,–বাহু-শুণ্ড দোলাইয়া
প্রেমিক-নিতাই প্রেম-দিঠে—যে দিকে চায় প্রেমে মাতায়
স্থাবর, জঙ্গম, গুল্ম, লতা—যার পানে চায় প্রেমে মাতায়
আমার,–নিতাই-চাঁদের পদ-ভার—ধরণী আর ধরতে নারে
বড়-ভাগ্যবতী—ধরণীর,–আনন্দ আর ধরে না রে
আজ,–ধরণীধরে হৃদে ধরে—ধরণীর, আনন্দ আর ধরে না রে
গৌরপ্রেমের,–মূরতি নিতাই হৃদে ধরে—ধরণী প্রেমে টলমল করে
গতি মত্ত-সিংহ জিনি, কম্পবান্ মেদিনী,’’
নিতাই আমার,–গৌর-সিংহ হৃদে ধরে—সিংহ গতি চলে যায় রে
পাষণ্ডীগণ হেরিয়া বিকল।।’’ রে !!
আমার,–পাষণ্ড-দলন নিতাই হেরে—তাদের,–পাষণ্ড-স্বভাব দূরে গেল রে
আজ,–পাষণ্ডী পাষণ্ড-স্বভাব ভুলে—আমার,–নিতাই-চাঁদকে দেখে বলে
ঐ পতিতের বন্ধু নিতাই,–ঐ যে,–হেলে দুলে নেচে আসছে
আমার, হই—না কেন মহাপতিত—ভাই রে,–আর আমাদের ভাবনা কিসের
ঐ যে,–পতিতের বন্ধু নিতাই এল—আর পতিতের ভয় কি বল
নিতাই-চাঁদকে দেখে বলে—আমরি কি মধুর মূরতি
পাষণ্ডীগণ,–প্রেম-দৃষ্টি পেয়ে বলে—আমরি কি মধুর মূরতি
একবার চেয়ে দেখ ভাই—আমরি কি মধুর মূরতি
ও যে,–গৌরাঙ্গ-প্রণয়-রসময়-পুরন্দর।।’’ রে ! !
‘‘গোরা-রসে-গঠিত (ঐ) নিতাই-কলেবর। রে !
গোরা-রস-কমলের মত্ত-মধুকর।। রে !!
গোরা-রস-চাঁদের চকোর নিত্যানন্দ। রে !
জীব-হৃদি-তমোবিনাশের পূর্ণতম-চন্দ্র।।‘ রে !!
কলিহত—জীব-হৃদি,–তমোবিনাশের পূর্ণচন্দ্র
মূরতি ধরে এসেছে—হৃদিও—তমোবিনাশের পূর্ণচন্দ্র
ঐ জগদ্-গুরু নিত্যানন্দ—হৃদি,–তমোবিনাশের পূর্ণচন্দ্র
ও তো,–প্রেম বিনে আর কিছু নাই—গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই
প্রেমের মূরতি আমার প্রভু নিত্যানন্দ।।’’ রে !!
প্রাকৃত-জগতে সবাই—কামকে দেখেই প্রেম বল
প্রেমের অনুভব নাই তাই-প্রেম বলিতে কামকে বুঝ
কৃষ্ণ-সুখ-হেতু-কার্য্য ধরে ‘প্রেম’ নাম।।’’ রে !!
শ্রীকৃষ্ণ-সুখের একমাত্র উপাদান—সেই প্রেমের মূরতি নিতাই
গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই—প্রেমে চলে প্রেমে বলে
প্রেম-হিল্লোলে হেলে দুলে—প্রেমে চলে প্রেমে বলে
প্রেম-বাহু পসারিয়ে—প্রেমে কোল দেয় আচণ্ডালে
প্রেম-স্বরে আয় আয় বলে—প্রেম কোল দেয় আচণ্ডালে
প্রেমিক নিতাই—প্রেমে নাচে প্রেমে যাচে
পতিতের বন্ধু নিতাই—ধেয়ে যায় পতিতের কাছে
বলে,–আর কে কোথা পতিত আছে
পতিতের কাছে নিতাই পুজে—বলে,–আর কে কোথা পতিত আছে
ত্বরা করে বল্ বল্ –বলে,–আর কে কোথা পতিত আছে
সুরধুনীর কুলে দাঁড়ায়ে—বাহু তুলে নিতাই ডাকে
আমার,–নিতাই ডাকে—আয় কলিহত-জীব
পাপ-তাপ সব আমি নিব
তোদের জন্ম-জন্মার্জ্জিত—পাপ-তাপ সব আমি নিব
পাপ-তাপের বোঝা নিব—বিনামূলে বিকাইব
একবার গৌরহরি বোল—বিকাইব প্রেম দিব
’
একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
মা-যোগমায়ার প্রাণারাম—একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
এ যে,–ভোলা-ভুলান নাম—একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
এ যে,–ভোলা-পাগল-করা নাম—একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
ভোলানাথ,–পঞ্চ মুখে নাম গায় অবিরাম—একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
এই,–কলিযুগের একমাত্র বল—একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
ধনী, মানী, কুলীন, পণ্ডিত বলে—কি ছার,–অভিমানে নাম ভুলে আছ ভাই
এমন,–সাধের মানব-জনম পেয়ে—কেন,–কুল কুল করে কুল হারাও রে
ব্যাকুল হয়ে না ডাকিলে—কুলে কি গোবিন্দ মিলে
ব্যাকুল-প্রাণে না কাঁদিলে—কুলে কি গোবিন্দ মিলে
‘ব্যাকুল-প্রাণে না কাঁদিলে’—
গোবিন্দ তোমার হলাম বলে—ব্যাকুল-প্রাণে না কাঁদিলে
কোন-কুলে কেন, জনম হউক্, না,
কেবল ভকত মূল ।।
দেখ,–কপিকুলে ধন্য, বীর হনুমন্ত,
শ্রীরাম-ভকত-রাজ।’’
শ্রী,–সীতারামের যুগল-রূপ—যে,–হৃদয় চিরে দেখায়ে ছিল
বনের,–বানর হয়ে কেবল ভকতির-বলে—যে,–হৃদয় চিরে দেখায়ে ছিল
সে তো,–পশু হতেও অধম বটে
যে,–মানুষ হয়ে হরি না ভজে—সে-তো,–পশু হতেও অধম বটে
শ্রীরাম-ভকত-রাজ।
রাক্ষস হইয়া, বিভীষণ বৈসে,
ঈশ্বর-সভার মাঝ।।
দৈত্যের ঔরসে, প্রহ্লাদ জনমে,
ভূবনে যাহার যশ।
স্ফটিক-স্তম্ভেতে, প্রকট নরহরি,
হইয়া যাহার বশ।।’’
প্রহ্লাদের বিশুদ্ধ-ভকতির বলে—নরসিংহ-রূপে প্রকট হলেন
সে তো,–দৈত্য-বালক প্রহ্লাদ বটে—সে-তো নয় তার কুলের গরব
খাইল যাহার ঘরে।’’
রাজা,–দুর্যোধনের নানা উপচার ফেলে—খুদ-কণা যেচে খেলেন
বড়,–ক্ষুধা পেয়েছে দাও দাও বলে—খুদ-কণা যেচে খেলেন
আমরি,–সুধা সুধা সুধা বলে—খুদ কণা যেচে খেলেন
সে তো’,–দাসীপুত্র বিদুর বটে—সে কি তার কুলের গরব
চণ্ডাল হইয়া মিতালী করিল,
গুহক-চণ্ডালবরে।।’’
চণ্ডাল হয়ে পূর্ণ-ব্রহ্মে—রামামিতে বলে ডাকিত
চণ্ডাল-কন্যা শবরী—উচ্ছিষ্ট-ফল খেতে দিল
সে যে,–কেবল ভকতির বল—সে-তো নয় তার কুলের গরব
গোকুলে গোপের নারী।।’’
যেমন নাচায় তেমনি নাচে
চণ্ডাল-কন্যা শবরী—উচ্ছিষ্ট-ফল খেতে দিল
সে যে,–কেবল ভকতির বল—সে-তো নয় তার কুলের গরব
গোকুলে গোপের নারী।’’
যেমন নাচায় তেমনি নাচে
শ্রীরাস-মণ্ডলের মাঝে—যেমন নাচায় তেমনি নাচে
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দে—যেমন নাচায় তেমনি নাচে
ভকতির বলে,–ক্রীড়া-পুত্তলিকার মত—যেমন নাচায় তেমনি নাচে
তাই বলি,–‘‘জাতি-কুলাচার, কি করিবে তার,
সে হরি যে ভজে তারই।।’’
জাতি-কূল-পাণ্ডিত্যের নয়—কেবল,–ভকতির ধন নীলরতন
ঠাকুর হরিদাস জন্মিলেন যবনের ঘরে।।’’ রে !!
ভজ প্রাণের গৌরহরি
জাতি,–কূল-অভিমান পরিহরি—ভজ প্রাণের গৌরহরি
‘‘প্রেমদাতা নিতাই বলে, গৌরহরি হরি বোল।’’
নিতাই,–যারে দেখে তারে বলে—বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
ত্রিতাপ-জ্বালায় হবে বিরাম—বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
চৌরাশি—লক্ষ-যোনি করে ভ্রমণ—পেয়েছ সাধের মানব-জনম
শৃগাল-কুক্কুরের মত—এ-তো,–ভোগ-বিলাসের জনম নয় রে
সুদুর্ল্লভ মানব-জনম—এ যে,–শ্রীহরি-ভজনের জনম
শ্রীহরি,–ভজন-যোগ্য এই মানব-জনম—দেবতারাও বাঞ্ছা করে
শ্রীহরি,–ভজন-যোগ্য এই মানব-জনম—দেবতারাও বাঞ্ছা করে
বলে,–ও দোকানী ও পসারী
কদিন করবে দোকানদারী
দোকানদারী দুদিন চারি
যম,–ভেঙ্গে দিবে সব ভারিভূরি—দোকানদারী দুদিন চারি
বিপত্তে ভরল দেশ।’’
দেখে শুনেও কি ভ্রম গেল না
এ তত্ত্ব জানিয়া আগে পলাওল,
শ্রবণ, দশন, কেশ।।
তার পিছু পিছু, লোচন, বচন,
তারা দুয়ে দিল ভঙ্গ।’’
তোমায়,–সংসার-রণে মাতায়ে দিয়ে—তোমার,–সৈন্যগণ সব পলায়ে গেল
যারা,–দেহে ছিল তারা পর হল—আর,–কারে আমার আমার বলছ
যমদূতে দেখে রঙ্গ।।’’
তোমার,–আমার আমার করা দেখে—তারা,–করতালী দিয়ে নাচছে
এই যে দেখছ সুন্দর-নগর—এ-যে,–মহামায়ারনাট্যশালা
নিতুই নিতুই নব নব কত—অভিনয় হয় অনিত্য-খেলা
কার,–ভাগ্যে কখন হবে বা পতন
মৃত্যুরূপী যবনিকা,–কার,–ভাগ্যে কখন হবে বা পতন
দণ্ডেক দিবস, পলক গণিছে,
কখন জানি দিবে হানা।।’’
তুমি-তো,–মোহ-নিদ্রায় নিদ্রিত আছ—তোমার,–ঘুমের ঘোরে চুরি হবে
তুমি,–যার বলে চলছে বলছ—সেই,–ধন তোমার চুরি হবে
হরি-নামকে প্রহরী করে—জিহ্বাগ্রে জাগায়ে রাখ
‘হরে কৃষ্ণ রাম’ নাম—নিশিদিশি রসনায় রট
যমদ্বারে পড়িবে কবাট—‘হরে কৃষ্ণ’ নাম রসনায় রট
সকলই নিমের তিতা।’’
স্বার্থ-সিদ্ধি-সম্বন্ধ মাত্র—কেউ-তো তোমায় ভালবাসে না
যতক্ষণ হয় স্বার্থ-সিদ্ধি—ততক্ষণই করে প্রীতি
অমনি,–মনে মনে জপ করে
এ আপদ মলেই বাঁচি—অমনি,–মনে মনে জপ করে
মোহ-বশে,–তুমি বুঝেও তা’ বুঝ না ভাই—এই-তো সংসারের সম্বন্ধ
মরণ-সময়ে, হাতে গলে বাঁধি,
মুখে জ্বালি দিবে চিতা।।’’
তোমার,–মুখে আগুন জ্বেলে দিবে
কেবল,–আমার আমার বলছ বলে—তোমার,–মুখে আগুন জ্বেলে দিবে
ভুলেও,–‘হরে কৃষ্ণ নাম বল নাই বলে—তোমার,–মুখে দিবে আগুন জ্বেলে
ভজ প্রাণের গৌরহরি
মায়ামোহ পরিহরি—ভজ প্রাণের গৌরহরি
’ [মাতন]
সুরধুনীর কূলে দাঁড়ায়ে—বাহু-তুলে নিতাই ডাকে
দুই বাহু-তুলে আমার,–নিতাই-কাণ্ডারী ডাকে—কে,–পারে যাবি আয় রে
ধন্য-কলিযুগেতে চৈতন্য অবতার।’’ রে !!
মুখে,–আমার গৌরাঙ্গ বলতে—আ’মরি,–পুলকেতে অঙ্গ ভরা
দুনয়নে শতধারা—আমরি,–পুলকেতে অঙ্গ ভরা
জ্বরা, অন্ধ, আতুর অবধি পার হয়।।’’ রে !!
আমি,–যারে তারে পার করি
বাহু,–তুলে বলে নিতাই-কাণ্ডারী—আমি,–যারে তারে পার করি
জাতি,–কুলাধিকার বিচার না করি—আমি,–যারে তারে পার করি
গোলোকের গুপ্ত-ভাণ্ডার লুট করি’—এনেছি হরি-নামের তরী
জীব তোদের,–তরাইতে ভববারি—এনেছি হরি-নামের তরী
ভবপারের ঘাটে ঘাটে—লয়ে ফিরি নামের তরী
শ্রীগুরুরূপ ধরি’—লয়ে ফিরি নামের তরী
মুখে বললে গৌরহরি—পার করে দিই ভববারি
শ্রীশ্রীনগর-সঙ্কীর্ত্তনান্তে স্বমন্দিরে প্রত্যাগমন কীর্ত্তন
প্রাণ—‘‘গৌর এল’ ঘরে আমার নিতাই এল’ ঘরে।।’’
নাম-প্রেম বিলায়ে—নিতাই গৌর ঘরে এল’
অমনি,–ধেয়ে গিয়ে শচী-মাতা গৌর কোলে করে।’’
বাম-করে চিবুক ধরে—বলে,–আমার কে এল’ রে
‘বাম-করে চিবুক ধরে—
অনিমিখে চাঁদ-বদন চেয়ে—বাম-করে চিবুক ধরে
আমার,–বাপ ঘরে এল’ রে
ও কে রে, ও কে রে—আমার,–বাপ ঘরে এল’ রে
আয়,–প্রতিবাসিনী দেখে যা তোরা—আমার,–বাপের ঠাকুর এল’ রে
তোরা দেখে যা লো,–আমার,–আঁধার-ঘর হইল আলো—আমার,–
এল’,–এল’ শচীর নয়ন-তারা
আয়-আয়,–নদীয়া-নাগরী দেখে যা তোরা—এল’—এল’ শচীর নয়ন-তারা
শচী-মাতা,–গৌরের অঙ্গ-পানে চেয়ে—বলে,–এ কি খেলা রে
বল নিমাই,–দুখিনী—মায়ের দুখ দিতে—তোর,–এ কি খেলা রে
কেন দেখি,–সোণার অঙ্গে ধূলা-মাখা—তোর,–এ কি খেলা রে
অঞ্চলের নিধি,–নয়ন-মণি ধুলা-মাখা—মায়ে কি সয় রে
বাপ্,–তোর সোণার অঙ্গে ধূলা—মায়ে কি সয় রে
সে ধূলা দিবার আগে—একবার,–চেয়েও কি দেখে নাই
এই,–ভূবন-ভোলা-বদন-পানে—একবার,–চেয়েও কি দেখে নাই
‘এই,–ভুবন-ভোলা-বদন-পানে’—
আমি,–যা দেখে সব ভুলেছি—এই,–ভুবন-ভোলা-বদন-পানে
চাইলে ধূলা দিতে নারত
অমনি’—ধেয়ে এসে হিয়ায় ধরত
আমার,–বাপ বিশ্বম্ভর বলে—অমনি,–ধেয়ে এসে হিয়ায় ধরত
‘আমার,–বাপ বিশ্বম্ভর বলে’—
হিয়ার মাণিক ওখানে কেন—আমার,–বাপ, বিশ্বম্ভর বলে
নরহরি তুই কোথায় ছিলি
শচীমাতা কেঁদে বলে বাপ—নরহরি তুই কোথায় ছিলি
আমার,–পরাণ-পুতলি ফেলি’—নরহরি তুই কোথায় ছিলি
সঙ্কীর্ত্তনে যাবার বেলায়—আমি তোর,–হাতে হাতে সোঁপে দিলাম
আমার এই,–শূন্য-দেহ ঘর রইল—আমার,–প্রাণ তোমার হাতে দিলাম
‘‘দেখো রে বাপ্, নরহরি, থেকো গৌরের কাছে। রে !
আমার,–পরাণ-পুতলি গোরা,’’
ঐ,–মুখ দেখে প্রাণ ধরে থাকি—আর দ্বিতীয় নাই রে
ও বাপ্,–নরহরি বল্ বল্ –তার এ কি প্রতিফল
অভিমানে শচীমাতা বলে—আর যেতে দিব না
সঙ্কীর্ত্তনে বিশ্বম্ভরে—আর যেতে দিব না
দুখিনীর বাছনী আমার—ঘরে বসে খেলা করবে
ঐ,–দুখ-পাসরা বদন-খানি—মনে হলেই চেয়ে দেখব
বিশুদ্ধ,–বাৎসল্যময়ী মা আমার—ভেসে যায় ভেসে যায়
স্তন-ক্ষীরে আঁখি-নীরে—ভেসে যায় ভেসে যায়
দক্ষিণ-করে চিবুক ধরে
অনিমিখে চাঁদ-বদন চেয়ে
চিবুক ধরে বলে আরে মোর—দুনয়নে বহে শত-লোর
বাপ,–তোমার পেয়েছি কত, করিয়া কামনা।।’’ রে !!
আর,–দুখিনী-মায়ে দুখ দিও না—ও দুখিনীর বাছনী
তোমার,–আপন খেলার সাথী লয়ে—ঘরে বসে খেলা করো
ওরে আমার নয়ন-মণি—চোখের আড়াল হয়ো না
তোমার ঐ,–চাঁদ-মুখ না পেখি’—দিবসে আঁধার দেখি
ঘরে বসে খেলা করো
যাখন,–যা চাইবে তাই দিব—ঘরে বসে খেলা করো
তখন,–নরহরি বসাওল, রত্নাসনোপরে।।
নানাবিধ সেবা করে, শ্রান্তি দূর করে।’’
গোরা-রসের বদন হেরি’—চামন ঢুলায় নরহরি
চামর ঢুলায় নরহরি তার—দুনয়নে বহে বারি
অনুরাগে নরহরি—প্রেম-ধারায় ধিক মানিছে
আমি,–এখন তোরে চাই না –বলে,–দূরে যা রে প্রেম-বারি
তুই যে,–হলি গৌর সেবার ঐরি—বলে,–দূরে যা রে প্রেম-বারি
গোরা-রসের,–বদন হেরি চামর করি—বলে,–দূরে যা রে প্রেম-বারি
মুখ পদ পাখালিল, সুশীতল-নীরে।।
ধীরে ধীরে মুছাত্তল, পাতল-চীরে।’’
পরাণ-গৌরাঙ্গের—রাতুল-চরণ হৃদে ধরে
রসের বদন-পানে চেয়ে—রাতুল-চরণ হৃদে ধরে
রাতুল-চরণ হৃদে ধরে—মনে মনে গণে রে
নাগরী নরহরি—মনে মনে গণে রে
এই,–কমল হতেও কোমল-পদে—কত না লেগেছে
এই নদীয়ার কঠিন-মাটি—কত না লেগেছে
তাহাতে গৌরাঙ্গ নাচুক, পদ পসারিয়া।। রে !!
মনে করি এই নদীয়া-যুড়ি, এ দেহ বিছাই। রে ।
পরাণ-গৌরাঙ্গ-চাঁদে, তাহাতে নাচাই।। রে !!
মনে করি আমার হিয়া হোক, শিরীষ-কুসুম জিনি। রে !
তাহাতে নাচুক আমার, গোরা-গুণমণি।। রে !!
মনে করি আমার হিয়া হোক, ননীর সোসর। রে !
তাহাতে নাচুক আমার, গৌরাঙ্গ-সুন্দর।।’’ রে !!
আমার,–বুকের উপর দিয়ে গৌর-হরিবোলে নেচে যাবে
ধীরে ধীরে মুছাওল, পাতল-চীরে।
তখন,–শচীমাতা আনি’ দিলা, ক্ষীর-ননী-সরে।।’’
মুখানি শুকায়ে গেছে—বলে,–নরহরি খাওয়াও রে
‘কত,–বেলা হয়েছে কিছু খায় নাই—মুখানি শুকায়ে গেছে
দণ্ডে দশবার খায়—কত,–বেলা হয়েছে কিছু খায় নাই
দারুণ-রবির তাপে—মুখানি শুকায়ে গেছে
বেলা হয়েছে অতি ভুখে—দারুণ-রবির-তাপে
মুখানি শুকায়ে গেছে—নরহরি খাওয়াও রে
গৌর তোমার,–হাতে খেতে ভালবাসে—নরহরি খাওয়াও রে
—ক্ষীর, সর, নবনী খাও
বাৎসল্য-প্রেম-মাখা—ক্ষীর, সর, নবনী খাও
মায়ের প্রীতিতে গোরা, ভোজন করে।।’’
আমায়,–বড়-মিঠে লাগছে—বলে,–নরহরি আবার দাও
‘বড়-মিঠ লাগছে’—
না জানি কি সুধা আছে—বড়-মিঠ লাগছে
পরাণ-গৌরাঙ্গের—একলা খেতে ভাল লাগে না
নিতাই-মুখে তুলে দেয়—অবধূত খাও বলে
দুহু দোহাঁর কোমল-করে—দুহুঁ-মুখে তুলে দেয়
আজ,–শচীর আঙ্গিনায়—উঠিল আনন্দ-রোল
ভোজন-বিলাস দেখে—উঠিল আনন্দ-রোল
‘ভোজন-বিলাস দেখে’—
বাৎসল্য-প্রেমের—ভোজন-বিলাস দেখে—
সবাই বলে হরিবোল—উঠিল আনন্দ-রোল
মুখ পাখালিয়া দিল, সুশীতল-নীরে।
ধীরে ধীরে মুছাওল, পাতল-চীরে।।।
অবশেষে বাঁটি দিল, সব পরিকরে।।’’
প্রেম,–দিঠে চেয়ে অমিয়া-ভাষে—নাম ধরে ডেকে ডেকে
অবশেষ পেয়ে সবে, নাচে প্রেম-ভরে।।’’
আমাদের,–নদীয়া-বিনোদিয়া—জয় শচীদুলালিয়া
জয় নিতাই রঙ্গিয়া—জয় শচীদুলালিয়া
ও প্রাণের গৌরহরি—আমরা,–আর কিছু চাই না
এ সংসারে,–মায়ার, খেলনা দিয়ে—আমাদের,–আর যেন ভুলায়ো না
হা গৌরাঙ্গ,–তোমায় ভুলে এই পুতুল-খেলা—আমরা,–অনেকদিন ত’
আমাদের,–আর যেন ভুলায়ো না
প্রভু,–নিত্যানন্দ-সঙ্গে যেন’’
পতিতের বন্ধু নিতাই—আমাদের প্রভু
প্রভু,–তুমি আর নিত্যানন্দ বিহরিবে যথা।
এই করো জন্মে জন্মে (যেন) ভৃত্য হই তথা।।’’
এই,–শ্রীগৌড়-মণ্ডল—তোমার,–বিহার-ভূমিতে জনম পাব
আমরা,–নিশিদিশি গাইব
তোমা-দোঁহার গুণ—আমরা,–নিশিদিশি গাইব
ভাই ভাই এক-প্রাণে—পাগল হয়ে বেড়াব
হা,–নিতাই গৌরাঙ্গ বলে—পাগল বয়ে বেড়াব
গাইতে না জানি তবু গাই।
সুখে বা দুঃখেতে থাকি, হা গৌরাঙ্গ বলে ডাকি,
নিরন্তর এই মতি চাই।।’’
সুখ-দুখের ঝঞ্ঝাবাতে—তোমার,–নাম যেন ভুলি না
বসুধা জাহ্নবা সহ, নিতাইচাঁদেরে ডাকি’’,
কুলের দেবা নিতাই বলে—যেন,–ব্যাকুল-প্রাণে ডাকতে পারি
‘কূলের দেবা নিতাই বলে’—
বসুধা-জাহ্নবা-প্রাণ-কুলের দেবা নিতাই বলে
ব্যাকুল-প্রাণে ডাকতে পারি
নরহরি গদাধর, শ্রীবাসাদি সহচর,
ইঁহা সবার নামে যেন মাতি।।
স্বরূপ রূপ সনাতন, রঘুনাথ সকরুণ,
ভুগর্ভ শ্রীজীব লোকনাথ।
ইঁহা সবা নাম করি, দীন প্রায় সদা ফিরি,
যেন হয় তা সবার সাথ।।
মহান্ত-সন্তান কিবা, মহান্তের গণ যে বা,
ইঁহা সবার স্থানে অপরাধ।
না হয় উদ্গম কভু, ভয়ে প্রাণ কাঁপে মুহু,
এ সাধে না পড়ে যেন বাধ।।’’
বৈষ্ণবের গ্রাস শেষে, নহে যেন অবিশ্বাসে,’’
যেন,–বৈষ্ণব-উচ্ছিষ্টে বিশ্বাস হয়
অলভ্য লাভ করেছিলেন
বৈষ্ণব-উচ্ছিষ্টে বিশ্বাসের বলে—অলভ্য লাভ করেছিলেন
রঘুনাথের খুড়া কালিদাস—অলভ্য লাভ করেছিলেন
যার,–একবিন্দু কেউ পরশ পায় না—অলভ্য গৌর-চরণামৃত
বৈষ্ণব-উচ্ছিষ্টে বিশ্বাসের বলে—তিন-অঞ্জলি পান করলেন
দন্তে তৃণ কহে হরিদাস।।’’
এমন,–পরম-করুণ প্রেমদাতা-হয় নাই আর হবার নয়
‘এমন,–পরম-করুণ প্রেমদাতা’—
নিতাইচাঁদের মত-এমন,–পরম-করুণ প্রেমদাতা
কলিতে কীর্ত্তন-যাগ, আরম্ভিলা মহাভাগ,
এই ঘোর-কলিযুগে—আর,–অন্য-সাধন নাই জেনে
একমাত্র,–হরিনাম-যজ্ঞ বিনে—আর,–অন্য-সাধন নাই জেনে
পুরাইতে অদ্বৈত-বাসনা।।’’
হরিনাম—যজ্ঞ আরম্ভিলা
চাঁদ নিতাই আমার—হরিনাম-যজ্ঞ আরম্ভিলা
অদ্বৈত-বাঞ্ছা পূরাইতে—হরিনাম-যজ্ঞ আরম্ভিলা
এই নাম-যজ্ঞে,–যজ্ঞেশ্বর শ্রীগৌরাঙ্গ হরি।
তাতে,–হোতা হইলা নিত্যানন্দ, হরিনাম-মহামন্ত্র,’’
পূর্ণ-কুম্ভ নিত্যানন্দ—কলসে কলসে ঢালে
বদ্ধ-জীবের মুক্ত-কল্প করি।।’’
চাঁদ নিতাই আমার—হরিনাম-যজ্ঞ আরম্ভিলা
নানা-যোনি ভ্রমণ করায়
শ্রীকৃষ্ণ-বৈমুখী করে—নানা-যোনি ভ্রমণ করায়
যজ্ঞ-অগ্নি হইল প্রবল।’’
জীবের,–দুবর্বাসনা—কাষ্ঠোপরি—প্রেম-ঘৃত ঢেলে ঢেলে
হরিনাম-অগ্নি সংযোগে—প্রেম-ঘৃত ঢেলে ঢেলে
তাতে,–দুর্ব্বাসনা ধর্ম্মাধর্ম্ম, অন্য-দেবাশ্রয়-মর্ম্ম,
ভস্ম কৈল ইত্যাদি সকল।।
সহচরগণ মেলি, সমাপিলা যজ্ঞ-কেলি,’’
গুণনিধি নিতাই আমার
আজ,–পূর্ণ কর হে
তোমার,–স্থাপিত নাম-যজ্ঞ তুমি—আজ,–পূর্ণ কর হে
পূর্ণ কর—হাট যেন ভেঙ্গ না সঙ্কীর্ত্তন-সুখের—হাট যেন ভঙ্গ না
জগভরি উঠুক রোল
গৌরহরি হরি বোল—জগভরি উঠুক রোল
(সভক্তাদি মুনি মেলি, সমাপিলা যজ্ঞ-কেলি,
নবদ্বীপে হইল হেন ঘটা।
শ্রী,–বৃন্দাবন-দাস ভাষে,বিথারিল দেশে দেশে’’,
এই হরিনাম-যজ্ঞ—সেই হতে প্রচার হল
‘আগে,–নবদ্বীপে—আরম্ভিল—সেই হতে প্রচার হল
‘আগে,–নবদ্বীপে আরম্ভিল’—
শ্রীবাস-অঙ্গনে—আগে,–নবদ্বীপে আরম্ভিল
শ্রীহরি-বাসর-ছলে—শ্রীনবদ্বীপে আরম্ভিল
বৈষ্ণবচিহ্ন শেষ যজ্ঞ ফোঁটা।’’
এ-যে,–পর তর—ফোঁটা,–পর রে তর রে
যদি,–এড়াবি কালের খোঁটা—পর পরতর ফোঁটা
বৈষ্ণব-চিহ্ন যজ্ঞ—ফোঁটা পর রে
মুখে,–গৌরহরি-নাম কর—বৈষ্ণব-চিহ্ন ধর
যাদবায় মাধবায় কেশবায় নামঃ।।
গোপাল গোবিন্দ রাম শ্রীমধুসূদন । {এই সব নাম প্রভুর আদি সঙ্কীর্ত্তন}
গিরিধারী গোপীনাথ মদনমোহন।।’’
শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ শ্রীঅদ্বৈত সীতা।
ভজ হরি গুরু বৈষ্ণব ভাগবত গীতা।।
জয় রূপ সনাতন ভট্ট রঘুনাথ।
শ্রীজীব গোপাল-ভট্ট দাস রঘুনাথ।।’’
‘‘শ্রীনিবাস নরোত্তম প্রভু লোকনাথ।
রামচন্দ্র দাস্য দিয়া কর আত্মসাৎ।
জয় জয় শ্যামনন্দ জয় রসিকানন্দ।
নিধুবনে নিত্যলীলায় পরম-আনন্দ।।’’
‘‘এই সব গোসাঞিএর করি চরণ-বন্দন।
যাহা হইতে বিঘ্ন-নাশ অভীষ্ট-পূরণ।।
এই সব গোসাঞি যবে ব্রজে কৈলা বাস।
শ্রীরাধাকৃষ্ণ-নিত্যলীলা করিলা প্রকাশ।।
(শ্রীগৌর-গোবিন্দ-লীলা করিলা প্রকাশ।।)
এই সব গোসাঞি যার তার মুঞি দাস।
তা সবার পদরেণু মোর পঞ্চ-গ্রাস।।
গো-কোটি দানে গ্রহণে চ কাশী।
মাঘে-প্রয়াগে কোটি-কল্প-বাসী।।
সুমেরু সমতুল্য হিরণ্য দানে।
নহি তুল্য নহি তুল্য গোবিন্দ-নামে।।
গোবিন্দ কহেন আমার রাধা সে পরাণ।
তপ জপ পরিহরি লও রাধা-নাম।।
জয় জয় রাধা-নাম প্রেম-তরঙ্গিণী।
রাধা-নাম জপিতে জপিতে উঠে অমৃতের খনি।
রাধা-নামের স্বাদ ভাল জানে শ্যাম-গুণমণি।।
তাই বাঁশী-যন্ত্রে গান করে দিবস-রজনা।’’
ধীরসমীরে যমুনা-তটে—বংশীবটে সদা রটে
অকপটে শ্যাম-নটে—বংশীবটে সদা রটে
’
নাম বরণ ধরাইল—রাধা,–নাম গেয়ে গৌর হল
সেই দুই এক-তনু প্রাণের গৌরহরি।।
এ হেন গৌরাঙ্গ-হরি পেতে যার আশ।
ধর্ম্মাধর্ম্ম পরিহরি হও নিতাইএর দাস।।
সংসারের পার হইয়া ভক্তির সাগরে।
যে ডুবিবে সে ভজুক আমার নিতাইচাঁদেরে।।
মুখেও যে জন বলে মুঞি নিত্যানন্দ-দাস।
সে,নিশ্চয় দেখিবে গোরার স্বরূপ-প্রকাশ ।।
গোপীগণের যেই প্রেম কহে ভাগবতে।
আমার,একলা নিত্যানন্দ হইতে পাইবে জগতে।।
নিত্যানন্দ প্রেমদাতা গৌরাঙ্গ পরম-ধন।
রাসবিলাসে পাবে শ্রীরাধারমণ।।
‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ নাম-তরী আরোহণে।
সংসার-সাগর-পার চল বৃন্দাবনে।।
অতিঘোর-বিষ-সম দেখিবে সম্মান।’’
শূকরী-বিষ্ঠা-সম—প্রতিষ্ঠা ত্যাগ কর
সুরা-সম—অভিমান ত্যাগ কর
রৌরব-সম—গৌরব ত্যাগ কর
(যদি) প্রেম-ধনে ধনী হতে চাও—এই তিন ত্যাগ কর
অপমান দেখ ভাই অমৃত-সমান।।’’
প্রভু,–নিত্যানন্দ স্মঙরিয়ে—অপমান অমৃত দেখ
অভিমান-শূন্য প্রভু—নিত্যানন্দ স্মঙরিয়ে
সুমধুর বৃন্দাবন কভু না ছাড়িয়া।’’
শ্রীনবদ্বীপ আর বৃন্দাবন—ভেঙে যেন করো না
ভেদ-জ্ঞানে কোটি-কল্প—ভজলেও পাবে না
ব্রজ-ভূমেতে বাস—তারই ত’ হয় রে
ঠাকুর নরোত্তম বলেছেন—তারই ত’ হয় রে
যে বা জানে চিন্তামণি—তারই ত’ হয় রে
‘যে বা জানে চিন্তামণি’—
শ্রীগৌড়মণ্ডল-ভূমি—যে বা জানে চিন্তামণি
কিছু ভিন্ন ভেদ নাই
তারাই এরা, এরাই তারা—কিছু ভিন্ন ভেদ নাই
শচীনন্দন নন্দনন্দন
পারিষদ সব গোপীগণ
নবদ্বীপে সঙ্কীর্ত্তন
শ্রী,–বৃন্দাবনে রাসলীলা—নবদ্বীপে সঙ্কীর্ত্তন
বৃন্দাবনে বংশী-ধ্বনি—নদীয়ায় সে নামের ধ্বনি
ব্রজ আর নদীয়া—দুই ঠাঁই যুগলের খেলা
ব্রজ হতে নদীয়ায়—বরং,–অধিক বিকাশ রে
বৃন্দাবনে যুগলের –কখনও মিলন কখনও ভঙ্গ
রাই-কানু-মিলিত গৌরাঙ্গ—নবদ্বীপে নাইকো ভঙ্গ
গৌরাঙ্গ-স্বরূপে—মদন-মোহনত্বের নিত্যত্ব
রাদা-সঙ্গে যখন মিলিত—তখনই ত’ মদন-মোহন
কভু মিলে কভু না মিলে—ব্রজে তার নাই নিত্যত্ব
এ যে,–রাধা-সঙ্গে সদা মিলিত—মদন-মোহনত্বের নিত্যত্ব
গৌরাঙ্গ-স্বরূপে—নাগরালির পূর্ণত্ব
ব্রজে কতক ব্রজনারী—কৃষ্ণে বলত প্রাণবল্লভ
গৌরাঙ্গ-মূরতি হেরে—সবাই বলে প্রাণবল্লভ
শ্রীরাধা-মুরলীধর ভজ প্রাণ দিয়া।।’’
রাধাকৃষ্ণ এক-অঙ্গ—গৌরাঙ্গ ভজ ভাই
শ্রীগুরু-বৈষ্ণব-পদে মজাইয়া মন।।
শ্রীগুরু-বৈষ্ণব-পাদপদ্ম করি আশ।
হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তন কহে নরোত্তম-দাস।’’
আমার,–দয়াল নিতাই অমিয়া বিলায় রে।
আমার,–শ্রীগৌরাঙ্গ সুধার আধারে,
আমার,–নিতাইচাঁদ তার অঙ্গ আধারে।।
বৃষ’—ভানু-কুল-চাঁদ নন্দ-কুল-চাঁদ—চাঁদে চাঁদে মিশে
আমাদের,–রাইচাঁদ আর শ্যামচাঁদ—চাঁদে চাঁদে মিশে
এই কলিঘোর,–অমানিশা বিনাশিতেৃ—চাঁদে চাঁদে মিশে
একা নন্দ-কুল-চাঁদের—শকতি হল না ঋণ শোধিতে
তাই হল মিশিতে
আমাদের,–ভানু-কূল-চাঁদের সনে—তাই হল মিশিতে
এসে উদয় হল নদীয়ায় আয় রে।
আয় রে তোরা লুট্বি কে আয়,
আমার,–দয়াল নিতাই অমিয়া বিলায় রে।।’’
কিশোরী-ভাণ্ডার লুটিয়া—এনেছে নিতাই প্রেম-অমিয়া
পতিত-পাষণ্ড খুঁজিয়া খুঁজিয়া—দিতেছে নিতাই যাচিয়া যাচিয়া
আমি,–বিনামূলে যাব বিকাইয়া
তোদের,–পাপ-তাপের বোঝা নিয়া—আমি,–বিনামূলে যাব বিকাইয়া
গৌরহরি বোলে আমায় লও কিনিয়া—আমি,–বিনামূলে যাব বিকাইয়া
মাথায় লয়ে নাম-প্রেমের ডালি—যেচে বেড়াইছে নিতাই-মালী
সুরধুনী-কূলে বুলি বুলি—ডাকিছে নিতাই দুবাহু তুলি
আয়,–কলিহত-জীব বলি’—ডাকিছে নিতাই দু’বাহু তুলি
আয় প্রেম,–কে নিবি আমায় কিনিবি বলি’—ডাকিছে নিতাই দুবাহু তুলি
আয় বলি,–পতিতেরে বুকে তুলি—কাঁদিছে নিতাই ফুলি ফুলি
আয় বলি,–আচণ্ডালে কোলে তুলি—কাঁদিছে নিতই আকুলি বিকুলি
একবার,— আয় রে গৌরহরি বলি’—প্রেমের ডালি দিব রে ঢালি
‘‘বোল হরিবোল, গৌরহরি বোল।’’[মাতন]
প্রেম্সে কহো শ্রীরাধে শ্রীকৃষ্ণ বলিয়ে—
প্রভু নিতাই শ্রীচৈতন্য অদ্বৈত শ্রীরাধারাণীকী জয় !
প্রেমদাতা পরম-দয়াল পতিত-পাবন শ্রীনিতাইচাঁদকী জয় !
করুণা-সিন্ধু গৌরভক্তবৃন্দকী জয় !
শ্রীশ্রীনাম-সঙ্কীর্ত্তনকী জয় !
খোল-করতালকী জয় !
শ্রীনবদ্বীপ-ধামকী জয় !
শ্রীনীলাচল-ধামকী জয় !
শ্রীবৃন্দাবন-ধামকী জয় !
চারি-ধামকী জয় !
চারি-সম্প্রদায়কী জয় !
অনন্তকোটি-ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণবকী জয় !
পরম-করুণ শ্রীগুরুদেবকী জয় !
প্রেমদাতা পরম-দয়াল পতিত-পাবন—
শিশু-পশু-পালক বালক-জীবন শ্রীমদ্রাধারমণকী জয় !