শ্রীশ্রী নগর-সঙ্কীর্ত্তন

শ্রীশ্রীরাধারমণো জয়তি

‘‘শ্রীশ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।’’
ভজ, নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
একবার,–‘‘এস হে ও নদীয়ার চাঁদ গোরা।’’

এস হে, –নদীয়ার চাঁদ গোরা

একবার,–এস সঙ্কীর্ত্তন-পিতা—এস হে নদীয়ার
‘একবার,–এস সঙ্কীর্ত্তন-পিতা—
এসে,–তোমার কীর্ত্তন তুমি কর—এস সঙ্কীর্ত্তন-পিতা

এস হে নদীয়ার

আমাদের—পাগলা প্রভু নিতাই-সনে—এস হে নদীয়ার
প্রিয়,–গদাধর অদ্বৈত সঙ্গে—এস হে নদীয়ার
লয়ে—শ্রীবাসাদি-সাঙ্গোপাঙ্গে—এস হে নদীয়ার
‘লয়ে,–শ্রীবাসাদি-সাঙ্গোপাঙ্গে’—
আসি,–বিহার কীর্ত্তন-রঙ্গে,–লয়ে—শ্রীবাসাদি—সাঙ্গোপাঙ্গে

[মাতন]
এসে,–হৃদয়ে উদয় হও

‘আমার,–রসরাজ গৌরাঙ্গ নট—এসে,–হৃদয়ে উদয় হও
‘আমার,–রসরাজ গৌরাঙ্গ নট’—
ওহে,–সঙ্কীর্ত্তন-সুলম্পট—আমার,–রসরাজ গৌরাঙ্গ নট
এসে,–সঙ্কীর্ত্তনে রাস কর প্রকট—আমার,–রসরাজ গৌরাঙ্গ নট
এসে তোমার,–সঙ্কীর্ত্তন-রাস কর প্রকট—আমার,–রসরাজ গৌরাঙ্গ নট

এসে,–হৃদয়ে উদয় হও

ওহে,–সঙ্কীর্ত্তন-রাস-বিহারী—এসে,–হৃদয়ে উদয় হও
‘ওহে,–সঙ্কীর্ত্তন-রাস-বিহারী’—
লয়ে,–পারিষদ্-সহচারী-ওহে,–সঙ্কীর্ত্তন-রাস-বিহারী

এসে,–হৃদয়ে উদয় হও
মাতাও সবার হিয়া

প্রতি-হৃদয়ে উদয় হইয়া—মাতাও সবার হিয়া
সঙ্কীর্ত্তনে রাস প্রকট করিয়া—মাতাও সবার হিয়া
সঙ্কীর্ত্তন-রাস প্রকট করিয়া—মাতাও সবার হিয়া
সঙ্কীর্ত্তন,–নাটুয়া-বেশে দেখা দিয়া—মাতাও সবার হিয়া

এস,–সীতানাথ বল দাও

আমরা তোমার বলে,–বলী হয়ে গৌর বলি—এস,–সীতানাথ বল দাও

এস,–গদাধর কুলে লও

আমরা তোমার,–কূলে দাঁড়ায়ে গৌর বলি—এস,–গদাধর কুলে লও

এস,–নরহরি আনুগত্য দাও

আমরা তোমার,–আনুগত্যে গৌর বলি—এস,–নরহরি আনুগত্য দাও

এস,–শ্রীবাস-পণ্ডিত ভক্তি শক্তি দাও

তোমার অঙ্গনের,–নাটুয়া-মুরতি হিয়ায় জাগাও—এস,–শ্রীবাস-পণ্ডিত ভক্তি

শক্তি দাও
প্রাণ-গৌরাঙ্গগণ কৃপা কর

ওহে ভূবন-পাবন—প্রাণ,–গৌরাঙ্গগণ কৃপা কর
প্রাণ-গৌরাঙ্গের,–কীর্ত্তন-বিহার হিয়ায় জাগাও—প্রাণ,–গৌরাঙ্গগণ কৃপা কর

এস,–এস আমার পাগলা নিতাই

গৌর,–প্রেমে মত্ত মহাবলী—এস,–এস আমার পাগলা নিতাই

আজ,–আপনি মেতে মাতাও এসে

তোমার,–শ্রীগৌরাঙ্গ-নাম-প্রেমে—আজ,–আপনি মেতে মাতাও এসে

আজ,–পাগল হয়ে বেড়াই মোরা

ভাই-ভাই এক-প্রাণে—আজ,–পাগল হয়ে বেড়াই মোরা

বেড়াই নগরে নগরে

প্রাণ-গৌরাঙ্গের,–কীর্ত্তন-বিহার হিয়ায় ধরে—বেড়াই নগরে নগরে
শ্রী,–গুরু-চরণ হৃদে ধরে—বেড়াই নগরে নগরে
গৌরহরি-নামের ধবজা তুলে—বেড়াই নগরে নগরে

[মাতন]

‘‘প্রকট-অপ্রকট-লীলার দুই ত’ বিধান।
প্রকট-লীলায় করেন হরি স্বয়ং নৃত্য-গান ।।
অপ্রকটে নামরূপে সাক্ষাৎ ভগবান্।
কীর্ত্তন-বিহারী হয়ে আছেন বর্ত্তমান্‌।।
কলৌ সঙ্গীর্ত্তন-যজ্ঞে কৃষ্ণ আরাধন।
সেই সে সুমেধা পায় কৃষ্ণের চরণ।।
হরি-নামের বহু-অর্থ তাহা নাহি জানি।
শ্যাম-সুন্দর যশোদানন্দন এই মাত্র মানি।
সেই হরি গৌরহরি নদীয়া বিহরে।
নিজ ‘হরে কৃষ্ণ’ নামে জগত নিস্তারে।।
প্রভুর,–দক্ষিণে শ্রীনিত্যানন্দ বামে গদাধর।
সম্মুখেতে নৃত্যাবেশে কুবের কুমার।।
গদাধরের বামে শ্রীবাস আর নরহরি
দ্বাদশ-গোপাল চৌষট্টি-মহান্ত সঙ্গে করি।।
চারিদিকে পারিষদ মণ্ডলী করিয়া।
তার মাঝে নাচে গোরা হরিবোল বসিয়া।।
সবাকার আগে নিতাই দুবাহু তুলিয়া।
‘হরে কৃষ্ণ’ নাম-প্রেম যায় বিলাইয়া।।’’
বলে,–‘‘আবার বল হরিনাম আবার বল।’’


মধু—এই ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম—আবার বল হরিনাম
আমার,–প্রেমদাতা নিতাই বলে—আবার বল হরিনাম

(মাতন)

প্রেমদাতা নিতাই বলে, গৌরহরি হরিবোল।।’’ [মাতন]

(পথে যাইতে যাইতে)

‘‘পাষণ্ড-দলন-বানা শ্রীনিত্যানন্দ রায়।’’ রে।
নিতাই আমার,–আপে নাচে আপে গায় গৌরাঙ্গ বোলায়।।’’ রে !!

আমার,–একলা নিতাই রে

আপনি মেতে জগৎ মাতায়—আমার,–একলা নিতাই রে
‘আপনি মেতে জগৎ মাতায়’—
আমার,–একলা নিত্যানন্দ রায়—আপনি মেতে জগৎ মাতায়

[মাতন]
নিতাই আমার,–‘‘আপে নাচে আপে গায় গৌরাঙ্গ বোলায়।। রে !!
লম্ফে ঝম্ফে যায় নিতাই গৌরাঙ্গ-আবেশে। রে !
চলে যেতে ঢলে পড়ে

গৌর-প্রেমের পাগলা নিতাই—চলে যেতে ঢলে পড়ে
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমোর ভরে—চলে যেতে ঢলে পড়ে

বলে,–সামালিও ভাই রে

নিতাই,–আপনি পড়িয়া বলে—সামালিও ভাই রে

আপনি পড়ে মানে গৌর পড়লে

অভিন্ন-চৈতন্য-তনু নিতাই—আপনি পড়ে মানে প্রাণ-গৌর পড়ল

বলে,–নরহরি সাবধানে ধর

ঐ,–ঢলে পড়ল বিশ্বম্ভর—বলে,–নরহরি সাবধানে ধার

[মাতন]

‘‘লম্ফে ঝম্ফে যায় নিতাই গৌরাঙ্গ-আবেশে। রে !
পাপীয়া পাষণ্ডী আর না রহিল দেশে।।’’ রে !!

পতিত-নাম আর রইল না দেশে

আমার,–নিতাই-চাঁদের কৃপা-বশে—পতিত-নাম তার রইল না দেশে

[মাতন]

‘‘ছিল আবদ্ধ করুণা,
চিরকার হইতে,–ছিল আবদ্ধ করুণা’’

করুণা,–সিন্ধুর মুখ বাঁধা ছিল

আমার নিতাই খুলিয়া দিল—করুণা,–সিন্ধুর মুখ বাঁধা ছিল

‘‘ছিল আবদ্ধ করুণা নিতাই কাটিয়া মোহান। রে !
আজ,–ঘরে ঘরে বুলে প্রেম-অমিয়ার বান।।’’ রে !!

আজ,–জগৎ প্রেমের বন্যায় ভাসে

আমার,–নিতাই চাঁদের কৃপা-লেশে—আজ,—জগৎ প্রেমের বন্যায় ভাসে [মাতন]

যায় নিতাই হেলে দুলে

গৌরহরি বোল বলে—যায় নিতাই হেলে দুলে

‘‘প্রেমদাতা নিতাই বলে, গৌরহরি হরিবোল।।’’ [মাতন]

[পথে যাইতে যাইতে]

পতিত দেখিয়া বলে—গৌরহরি হরিবোল
পাষণ্ডী দেখিয়া বলে—গৌরহরি হরিবোল
আচণ্ডালে যেচে বলে—গৌরহরি হরিবোল
দন্তে তৃণ ধরি’ বলে—গৌরহরি হরিবোল
গলবাসে কেঁদে বলে—গৌরহরি হরিবোল

‘‘প্রেমদাতা নিতাই বলে, গৌরহরি হরিবোল।।‘’ [মাতন]

[পথে যাইতে যাইতে]
দয়াল নিতাই প্রেম বিলায়

প্রাণ,–গৌর-আজ্ঞা শিরে ধরে—দয়াল নিতাই প্রেম বিলায়
এই নদীয়ার পথে পথে—দয়াল নিতাই প্রেম বিলায়

নিতাই,–যারে দেখে তারে বলে
আমার,–গৌরসুন্দর নেচে যায়

আজ,–নদীয়ার পথ আলো করে—আমার,–গৌরসুন্দর নেচে যায়

তোরা,–দেখবি যদি আর নাগরী

ও-মা,–নেচে যায় প্রাণ-গৌরহরি—তোরা,–দেখবি যদি আয় নাগরী

ঐ, — নেচে যায় প্রাণ-গৌরহরি

নদীয়ার রাজপথ আলো করি’—ঐ,–নেচে যায় প্রাণ-গৌরহরি
ও-মা,–‘‘ধবল পাটের যোড় পরেছে, তাতে,–‘‘রাঙ্গা রাঙ্গা পাড় দিয়েছে’’,

মরি মরি ভাল সেজেছে

গৌর-অঙ্গে ধবল-পাটের যোড়—মরি মরি ভাল সেজেছে

বসন ভেদি’ কিরণ উঠছে

‘‘ধবল-পাটের যোড় পরেছে, তাতে,–রাঙ্গা রাঙ্গা পাড় দিয়েছে’’

ও-তো,–পাড় দেওয়া নয় গো
আপনি রাঙ্গা পাড় হয়েছে

ও,–রাঙ্গা-পাড় তো কেউ দেয় নাই—আপনি রাঙ্গা-পাড় হয়েছে
অনুরাগ গড়িয়ে গিয়ে—আপনি রাঙ্গা-পাড় হয়েছে
‘অনুরাগ গড়িয়ে গিয়ে’—
যারা বসন পরায়েছে—তাদের,–অনুরাগ গড়িয়ে গিয়ে

যেন,–জমে গিয়ে পাড় হয়েছে

গৌর-অনুরাগিনীর অনুরাগ—যেন,–জমে গিয়ে পাড় হয়েছে
বসন দিয়ে গড়িয়ে গিয়ে—যেন,–জমে গিয়ে পাড় হয়েছে

অনুরাগ ত’ রক্তবর্ণ
তাইতে রাঙ্গা-পাড় হয়েছে
ঘন হয়ে হয়েছে রাঙ্গা-পাড়

বসে গিয়ে অনুরাগের ধার—ঘন হয়ে হয়েছে রাঙ্গা-পাড়

কত,–অনুরাগে পরায়েছে

ঐ ধবল পাটের যোড়—কত,–অনুরাগে পরায়েছে

বড় শোভা পেতেছে

ধবল-পাটে রাঙ্গা-পাড়—বড়’ শোভা পেতেছে
অনুরাগ মূরতি ধরেছে—বড় শোভা পেতেছে

অনুরাগ মূরতি ধরেছে
সে কেন থাকবে অমূর্ত্ত

এবার,–সকলই যদি হয়েছে মূর্ত্ত—সে কেন থাকবে অমূর্ত্ত

এবার সবাই মূর্ত্তি ধরেছে

ব্রজে,–যা ছিল ব্যবহারে—এবার সবাই মূর্ত্তি ধরেছে

অনুরাগ মূর্ত্তি ধরেছে

‘‘ধবল-পাটের যোড় পরেছে তাতে,–‘‘রাঙ্গা রাঙ্গা পাড় দিয়েছে,
চরণ-উপর দুলে যেছে কোঁচা।’’ গো !

কোঁচা,–কত গরব করে দুলেছে

চরণ পেয়েছে বলে—কোঁচা,–কত গরব করে দুল্‌ছে
‘চরণ পেয়েছে বলে’—
লক্ষ্মী-বিষ্ণুপ্রিয়া-নাথের—চরণ পেয়েছে বলে

[মাতন]
কত গরব করে দুলছে
শুধু দুলে যাওয়া নয়
অনুরাগিনীর প্রাণে মারছে খোঁচা

ও-তো, দোলা নয় কোঁচার –অনুরাগিনীর প্রাণে মারছে খোঁচা

একে ত’, সহজরূপে,–দেখে দায় কূল রাখা
তাতে আবার দুলছে কোঁচা

‘‘চরণ-উপর দুলে যেছে কোঁচা।’’ গো !

চরণ-উপর দুলছে কোঁচা

দেখে,–দায় হল পরাণে বাঁচা—চরণ-উপর দুলছে কোঁচা
‘দায় হল পরাণে বাঁচা’—
অনুরাগিনী নদে-রমণীর—দায় হল পরাণে বাঁচা

ও-মা,–কিবা কোঁচার দোলনী

তা’ দেখে,–প্রাণে বাঁচে কি নদীয়া-রমণী—ও-মা,–কিবা কোঁচার দোলনী
কোঁচার,–বলনী দেখে ভুলে রমণী—ও-মা,–কিবা কোঁচার বলনী

টেনে এনে লুটায়ে দিচ্ছে

কোঁচা,–চরণ-উপর গরবেতে দুলছে—টেনে এনে লুটায়ে দিছে
নদীয়া-রমণীর মন—টেনে এনে লুটায়ে দিচ্ছে

[মাতন]

‘‘চরণ-উপর দুলে যেছে কোঁচা। গো !
বাঁকমল সোণার নুপুর, বেজে যেছে মধুর মধুর,’’

গৌরের,–মল বুঝি বাঁকা ছিল না

যখন চরণে পরায়ে ছিল—তখন গৌরের,–মল বুঝি বাঁকা ছিল না

ভাবে বুঝি বাঁকা হয়েছে

ভাবনিধির চরণ-পরশ পেয়ে—ভাবে বুঝি বাঁকা হয়েছে

নূপুর বাঁকা হয়ে গেছে

পরশ পেয়ে,–অনুরাগে গলে গেছে—নূপুর বাঁকা হয়ে গেছে

চরণ,–পরশ পেয়ে হয়েছে বাঁকা
গৌরের,–কি জানি কোথা আছে বাঁকা

নৈলে,–চরণ-পরশে কেন হবে বাঁকা—গৌরের,–কি জানি কোথা আছে বাঁকা

গৌরের,–ভিতরে বাঁকা আছে আঁকা

গড়ন দেখে মনে হয়—গৌরের,–ভিতরে বাঁকা আছে আঁকা
ওর,–চলন বাঁকা বলন বাঁকা—গৌরের,–ভিতরে বাঁকা আছে আঁকা

তাই,–পরশ পেয়ে নূপুর হয়েছে বাঁকা

‘‘বাঁকমল সোণার নূপুর, বেজে যেছে মধুর মধুর’’

বেজে যেছে মধুর মধুর

গৌরের,–রাঙ্গা-পায়ে সোণার নূপুর—বেজে যেছে মধুর মধুর

নূপুর বাজে মধুর মধুর

মন মজাতে নদীয়া-বধূর—নূপুর বাজে মধুর মধুর

ও-তো,–নূপুরের বাজা নয়
যেন,–সৌভাগ্য রটাইছে

ও-তো,–নূপুরের ধবনি নয়—যেন—সৌভাগ্য রটাইছে
চরণ আমি পেয়েছি বলে—যেন,–সৌভাগ্য রটাইছে
‘চরণ আমি পেয়েছি বলে’—
বিষ্ণুপ্রিয়া-প্রাণবঁধুর-চরণ আমি পেয়েছি বলে

[মাতন]
যেন সৌভাগ্য রটাইছে
শুধু কেবল তাই নয়
ও-তো,–নূপুর বাজা নয় মধুর মধুর

গাইছে গুণ,–বিষ্ণুপ্রিয়া-প্রাণবঁধুর—ও-তো,–নূপুর বাজা নয় মধুর মধুর

নূপুর,–ধ্বনি-ছলে প্রচার করছে
যদি,–ভাগ্যবতী হতে চাও

গৌরাঙ্গ-চরণে বিকাও—যদি,–ভাগ্যবতী হতে চাও

কত না গরব করে বাজে

নূপুর চরণ-কমলে রাজে—কত না গরব করে বাজে

রাঙ্গা,–পায়ে সোণার নূপুর বাজে

নূপুরের ধ্বনি,–গৌর-অনুরাগিণীর বুকে বাজে—রাঙ্গা,–পায়ে সোণার নূপুর বাজে

‘‘বাঁকমল সোণার নূপুর, বেজে যেছে মধুর মধুর,
রূপ দেখিতে ভুবন মূরছা।।’’ গো !!

ভুবন মূরছা পায়

হেরি ঐ,–নবরসের গোরারায়—ভুবন মূরছা পায়

[মাতন]
কে না বিকায় গোরার পায়

যদি একবার,–হরি বলে ফিরে চায়—কে না বিকায় গোরার পায়
‘যদি একবার,–হরি বলে ফিরে চায়’—
ঐ,–নবরসের গোরারায়—যদি একবার,–হরি বলে ফিরে চায়

[মাতন]

বাঁকা-নয়নে মৃদু-হেসে—যদি একবার,–হরি বলে ফিরে চায়

কে না বিকায় গোরার পায়

জন্মের মত কেনা হয়ে—কে না বিকায় গোরার পায়
গরব করে বলতে পারি—কে না বিকায় গোরার পায়
এমন নারী কে আছে কোথায়—কে না বিকায় গোরার পায়
জীবন যৌবন দিয়ে—কে না বিকায় গোরার পায়
কুলের মুখে কালি দিয়ে—কে না বিকায় গোরার পায়
প্রাণ,–গৌর তোমার হলাম বলে—কে না বিকায় গোরার পায়

[মাতন]

‘‘রূপ দেখিতে ভূবন মূরছা।। গো !!
দীঘল দীঘল চাঁচর-চুল, তায় গুঁজেছে চাঁপার ফুল

মজালে মজালে কূল

গৌরের,–চাঁচর-চুলে চাঁপার ফুল—মজালে মজালে কুল
উপাড়িয়া কুলের মূল—মজালে মজালে কূল

যেন,–চামর দুলছে

ও-তো,–চাঁচর-চুল নয়—যেন’-চামর দুলছে
স্বর্ণ-সুমেরু-শিখরে—যেন,–চামর দুলছে

‘‘দীঘল দীঘল চাঁচর-চুল তায় গুঁজেছে চাঁপার ফুল
কুঁদ-মালতীর মালা বেড়া ঝোঁটা। গো !
‘‘চন্দন-মাখা গোরা-গায়, বাহু দোলায়ে চলে যায়,’’

একে-তো,–সহজে-রূপে ভুবন ভুলে

তাতে আবার,–

‘‘চন্দন-মাখা গোরা-গায়, বাহু দোলায় চলে যায়’’

চলে যার আর লয়ে যায়

বাহু দোলায়ে হেলে দুলে—চলে যায় আর লয়ে যায়

বাহু দোলায়ে লয়ে যায়

জাতি, কুল, লজ্জা, ধৈর্য্য—বাহু দোলায়ে লয়ে যায়

‘‘কপাল মাঝে ভুবন মোহন ফোঁটা।।‘’ গো !!

ও-তো নয় চন্দনের ফোঁটা

আমার গৌরাঙ্গ-ললাটে—ও-তো নয় চন্দনের ফোঁটা
ও-যে,–কুলবতীর কূলের খোঁটা—ও-তো নয় চন্দনের ফোঁটা

ও-যে,–মদন-বিজয়া ধবজা

ও-তো,–চন্দনের বিন্দু নয়—ও-যে,–মদন-বিজয়ী ধবজা

মদন-বিজয় করেছে

আমার প্রাণ গৌরহরি—মদন-বিজয় করেছে
সঙ্কীর্ত্তন,–মহা-মহারাস-রঙ্গে—মদন-বিজয় করেছে

হার মেনেছে মদন-রাজা
মদনের বড় গরব ছিল

আমি,–জগ-মাঝে সুপুরুষ বলে—মদনের বড় গরব ছিল

সে গরব ভেঙ্গে গেছে

ভুবন-মোহন,–গৌরাঙ্গ-মূরতি হেরে—সে গরব ভেঙ্গে গেছে
‘গৌরাঙ্গ-মূরতি হেরে’—
সঙ্কীর্ত্তন-রাস-রঙ্গিয়া—গৌরাঙ্গ-মূরতি হেরে

হার মেনেছে মদন-রাজা
তার,–পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে

মদনের সরবন-ধন—পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে
গৌরের,–কটাক্ষ-শরাঘাতে—তার,–পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে
মদনের সরবন-ধন—পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে
গৌরের,–কটাক্ষ-শরাঘাতে—তার,–পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে
একবার,–চেয়েছিল আঁখি-কোণে—তাই,–পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে
‘একবার,–চেয়েছিল আঁখি কোণে’—
গৌর,–হরি বলে নেচে যেতে—একবার,–চেয়েছিল আঁখি—কোণে

তার,–পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে

গৌরের,–কটাক্ষ-শরাঘাতে—তার,–পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে

ভেঙ্গে হল খান্ খান্

মদনের পঞ্চ-বাণ—ভেঙ্গে হল খান্ খান্
লেগে গৌরের,–কুটিল-কটাক্ষ-বাণ—ভেঙ্গে হল খান্ খান্[মাতন]

ভালই হয়েছে সাজা

পঞ্চ-শর ভেঙ্গে গেছে—ভালই হয়েছে সাজা

জগজনে জ্বালায়ে মারে

পঞ্চ-শর বর্ষণ করে—জগজনে জ্বালায়ে মারে

ভেঙ্গে গেছে ভাল হয়েছে

জগজনে জ্বালায়ে মারত—ভেঙ্গে গেছে ভাল হয়েছে

মদনের দুর্দ্দশা দেখে

সরবস-ধন-হীন—মদ্নের দুর্দ্দশা দেখে

রতির টলে গেল রতি
বিকাইছে গেরার পায়

কামের রতি ছাড়ি পতি—বিকাইছে গোরার পায়

রতি,–বিকায় গোরার পদ-তলে

রতির,–মদনের রতি গেল টলে—রতি,–বিকায় গোরার পদ-তলে
আমার,–প্রাণপতি গৌরাঙ্গ বলে—রতি,–বিকায় গোরার পদ-তলে[মাতন]

নারী-কূলের কিবা কথা
নারী ভুলবে কিবা কথা
দেখ নাগরী চেয়ে দেখ
কত-পুরুষ কেদে আঁকুল
ঐ-দেখ্,–দলে দলে ছুট্ছে

কত পুরুষ-দেহ-ধারী—ঐ দেখ,–দলে দলে ছুঁটেছে
পুরুষ-অভিমান ভুলে—ঐ দেখ্,–দলে দলে ছুটেছে
‘পুরুষ—অভিমান ভুলে’—
হেরি’ ঐ শচীদুলালে—পুরুষ-অভিমান ভুলে

[মাতন]
দলে দলে ছুটেছে
পাগল হয়ে ছুটেছে

প্রাণ-বল্লভ গৌর বলে—পাগল হয়ে ছুটেছে

[মাতন]
দেখিয়া রতির গতি
মদনেরও টলল মতি

দেখি’ রতির গৌরের রতি—মদনেরও টলল মতি

মদনের হল বিপরীত মতি

দেখি’ রতির গৌরে রতি—মদনের হল বিপরীত মতি

এবার,–উলটো করতে এসেছে

উলটো দেশে বাস গো—এবার,–উলটো করতে এসেছে

সব বিপরীত গতি গো

গৌরের,–বিবর্ত্তে গড়া মূরতি—তাই,–সব বিপরীত গতি গো

মদনের হল বিপরীত মতি

রতির দেখে গৌরাঙ্গে রতি—মদনের হল বিপরীত মতি

রতির,–ভোগ-লালসায় গেল মাতি

রতির আনুগত্যে মদন—রতির,–ভোগ-লালসায় গেল মাতি

মদন মনে মনে গণে

রতির সৌভাগ্য মানি’—মদন মনে মনে গণে

আমি যদি রতি হতাম

গৌর-পদে বিকাইতাম—আমি যদি রতি হতাম

[মাতন]
মদনের হল গৌরাঙ্গে রতি

মদন হল গৌর-অনুরাগবতী—মদনের হল গৌরাঙ্গ রতি

গৌরের,–এমনি মধুর নাগরালি

মদনে করিল আলি—গৌরের,–এমনি মধুর নাগরালি

‘‘কপালে-মাঝে ভুবন-মোহন ফোঁটা।। গো !!
বাহুর হেলন দোলন দেখি’, হাতীর শুণ্ড কিসে লেখি,’’

গৌর আমার,–চলে যেছে মাতা-হাতী

সম্ভোগ-রসেতে মাতি’—গৌর আমার,–চলে যেছে মাতা-হাতী

‘‘বাহুর হেলন দোলন দেখি’, হাতীর শুণ্ড কিসে লেখি,
নয়ান বয়ান যেন কুঁদে কোঁদা।’’ গো।

আমার,–গৌর গড়েছে কোন বিধি

মাধুর্য্য-রস-বারিধি—আমার,–গৌর গড়েছে কোন বিধি
নিঙ্গাড়ি’ অখিল-রসের নিধি—আমার,–গৌর গড়েছে কোন বিধি
জগৎ,–ছানিয়া রস নিঙ্গাড়িয়া’—
তাতে,–মাধুর্য্য-রসের রসান দিয়া—জগৎ,–ছানিয়া রস নিঙ্গড়িয়া

গৌর গড়েছে কোন রসিক বিধি

‘‘সকল-জনার মন, করিবারে আকর্ষণ,
বিধাতা কি পাতিয়াছে ফাঁদ। গো !
একবার যেই হেরে, সে মন ফিরাতে নারে,
মন-উন্মাদন গোরাচাঁদ।। গো !!
হেরিয়ে গৌরাঙ্গ-গতি, থূৎকৃত গজেন্দ্র-গতি,
গজ সে সামান্য-মদে মাতা।’’ গো !

গৌর,–প্রেম-মদে মত্ত সদা

গজ সামান্য-মদে মাতা—গৌর,–প্রেম-মদে মত্ত সদা

‘‘গজ সে সামান্য-মদে মাতা। গো !
আমার—গৌরাঙ্গ-বদন হেরে, সকলঙ্ক-চন্দ্রোপরে,
ঘৃণা করে সকল-জনতা।।’’ গো !!

বলে,–তুলনা তুল না

আমার গৌরাঙ্গ-সনে—বলে,–তুলনা তুল না
কলঙ্কি-গগনচাঁদের—বলে,–তুলনা তুল না

গগনচাঁদে কলঙ্ক আছে
গগনচাঁদে প্রতিপদ আছে

‘এ-যে,–অকলঙ্ক-ষোলকলা’—গগনচাঁদে প্রতিপদ আছে
‘এ-যে,–অকলঙ্ক-ষোলকলা’—
গৌরাঙ্গ-বদনচাঁদ—এ-যে,–অকলঙ্ক-ষোলকলা

গগনচাঁদে প্রতিপদ আছে
এ-যে,–নিশিদিশি সমান উদয়

গৌরাঙ্গ-বদনচাঁদ—এ-যে,–নিশিদিশি সমান উদয়

অভিমানে দশখণ্ড হল

ঐ,–বদন হেরে গগনচাঁদ—অভিমানে দশখণ্ড হল
আসি’,–পদনখে শরণ নিল—অভিমানে দশখণ্ড হল

[মাতন]
তাই বলি,–তুলনা তুল না

‘‘ঘৃণা করে সকল-জনতা।।’’ গো !!
গৌর-কান্তি ঝলমল, তার আগে স্বর্ণাচল,
অচল সে তাবে কি গণিব।’’ গো !

স্বর্ণ নয় সে কান্তির উপমা

সুবরণ-বরণ, হেরি’ নিজ-কুবরণ,
মানি আপন মনস্তাপে।
নিজ-তনু জারি’, ভসম-সম করইতে,
পৈঠল অনল-সন্তাপে।।’’

তাই বলি,–স্বর্ণ নয় সে কান্তির উপমা
কিসে বা তুলনা দিব

আমার গৌরাঙ্গ-রূপের—কিসে বা তুলনা দিব

‘‘শারদ-চন্দ্রিকা, স্বর্ণ, ধিক্ চম্পকের বর্ণ,
শোণ-কুসুম, গোরাচনা। গো !
হরিতাল সে কোন্‌ ছার, বিকার সে মৃত্তিকার,
সে কি গোরারূপের তুলনা।। গো !!
ধিক্‌ চন্দ্রকান্ত-মণি, তার বর্ণ কিসে গণি,
ফণি-মণি, সৌদামিনী আর। গো !


এ সব প্রপঞ্চ রূপ, গোরা,–অপ্রপঞ্চ রসভূপ,
তুলনা কি দিব আমি তার।। গো !!
জগতে তুলনা নাই, যার তুলনা তার ঠাঁই,
অমিয়া মিশাব কেন বিশে।’’ গো !

জগতে তুলনা নাই

যার তুলনা তার ঠাঁই—জগতে তুলনা নাই

[মাতন]

‘‘গৌর-কান্তি ঝলমল, তার আগে স্বর্ণাচল,
অচল সে কারে কি গণিব। গো !
গৌরাঙ্গ-মধুর-বাণী, অমৃত-তরঙ্গ জিনি,
পিলে মন করে পিব পিব।।’’ গো !!

কোটি-শ্রুতি বাসনা করে

গৌর-কথা একবার,–পশে যার শ্রবণ-বিবরে—সে,–কোটি-শ্রুতি বাসনা করে

গৌর,–গড়েছে কোন রসিক বিধি
না না সে ত’ রসিক নয়
গড়ে বুঝি দেখে নাই মা

দেখলে ছেড়ে দিত না—গড়ে বুঝি দেখে নাই মা

ভাল করে দেখে নাই
মা দেখলে ছেড়ে দিত না

পরাণ-পুতলী করে রাখত—দেখলে ছেড়ে দিত না

না না গড়েছে দেখেছে
দেখেছে মজেছে
বড়ই ভাল লেগেছে
তাইতে ছেড়ে দিয়েছে
আমার,–গৌর-রাজ্যের এই ত’ রীতি

একা ভোগে হয় না মতি—আমার,–গৌর-রাজ্যের এই ত’ রীতি

গৌর-রাজ্যে ভোগী যারা
একা ভোগ করে না তারা
আশা ত’ মিটে না

পাঁচে দিয়ে না খাওয়ালে—আশা ত’ মিটে না

তাইতে ছেড়ে দিয়েছে

একা ভোগ করতে নারে—তাইতে ছেড়ে দিয়েছে
খাইয়ে খাওয়া স্বভাব বলে—তাইতে ছেড়ে দিয়েছে
জগজনে দেখবে বলে—তাইতে ছেড়ে দিয়েছে
‘জগত-জীবন গোরা—জগজনে দেখবে বলে

[মাতন]
তাইতে ছেড়ে দিয়েছে

‘‘নয়ান বয়ান যেন কুঁদে কোঁদা। গো !
মধুর মধুর কয় গো কথা, শ্রবণ-মনের ঘুচায় ব্যথা,’’

মরি মরি কতই মধুর

কথা,–বিষ্ণুপ্রিয়া-প্রাণবঁধুর—মরি মরি কতই মধুর

বুঝি মধুর,–রস-বিলাসে ওর উৎপত্তি

মনে হয় দেখে গৌর-মূরতি—বুঝি মধুর,–রস-বিলাসে ওর উৎপত্তি

দেখা যায় হতেছে মধুর-বর্ষণ

যে অঙ্গেতে পড়ে গো নয়ন—দেখা যায় হতেছে মধুর বর্ষণ

মধুরেতেই গড়া মূরতি
সকলই মধুর গো

মধুর-গৌরাঙ্গের—সকলই মধুর গো

মধুর মধুর গৌর-কিশোর মধুর মধুর নাট। গো !
মধুর মধুর সব সহচর মধুর মধুর হাট।।’’ গো !!

সবাই মত্ত মধুরে

মধুর-গৌরাঙ্গ হেরে—সবাই মত্ত মধুরে

বুঝি—প্রকট এবার নদীয়াতে

অবিচারে মধুর দিতে—বুঝি,–প্রকট এবার নদীয়াতে
‘অবিচারে মধুর দিতে’—
কলি-পীড়িত-জগতে-অবিচারে মধুর দিতে

বুঝি,–প্রকট এবার নদীয়াতে
মধুর-রসের বাদর করল

দেখ্ নাগরী চেয়ে দেখ—মধুর-রসের বাদর করল
মধুর-ভাবে সবাই মাতল—মধুর-রসের বাদর করল

[মাতন]
মধুর-ভাবে সবাই হেরে

মধুর-গৌরাঙ্গ-বঁধুরে—মধুর-ভাবে সবাই হেরে

ঐ,–গাওত মধুর গান

শোন্ শোন্ শোন্ নাগরী—ঐ,–গাওত মধুর-গান
মধুর-রসে মাতি ভকত—ঐ,–গাওত মধুর-গান

দেখ্ অপরূপ রঙ্গ

দেখ্, নাগরীচেয়ে দেখ্ –দেখ্ অপরূপ রঙ্গ

প্রকৃতি-ভাবে কেঁদে আকুল

কত পুরুষ-দেহধারী—প্রকৃতি-ভাবে কেঁদে আকুল

তাদের,–বয়ান ভাসে নয়ন-জলে

আমার,–প্রাণ-বল্লভ গৌর বলে—তাদের,–বয়ান ভাসে নয়ন-জলে[মাতন]
‘‘মধুর মধুর কয় গো কথা,শ্রবণ-মনের ঘুচায় ব্যথা,
চাঁদে যেন উগারয়ে সুধা।।’’ গো !!

মনে হয় যেন চাঁদ ফাটল
যেন,–চাঁদ ফেটে অমিয়া ঝরল

অকলঙ্ক-ষোলকলা—যেন,–চাঁদ ফেটে অমিয়া ঝরল

[মাতন]

আমার,–গৌরহরি ‘হরি’ বলল যেন,–চাঁদ ফেটে অমিয়া ঝরল
জগৎ অমৃতময় করল—যেন,–চাঁদ ফেটে অমিয়া ঝরল

যেন,–অমিয়ার প্রস্রবণ

শ্রীগৌরাঙ্গ-মুখের বচন—যেন,–অমিয়ার প্রস্রবণ
হৃৎ-কর্ণ-রসায়ন—যেন,–অমিয়ার প্রস্রবণ

‘‘চাঁদে যেন উগারয়ে সুধা।।’’ গো !!


যদি কেউ,–

‘‘এমন-ব্যথার ব্যথী থাকে, কথার ছলে খানিক রাখে,
নয়ন-ভরে দেখি রূপখানি।’’ গো !

আমার,–গৌর দেখব মনে করি

আশ মিটায়ে—আমরা,–গৌর দেখব মনে করি

আমরা,–মনে করি গৌরাঙ্গ হেরি
কিন্তু,–দাঁড়াও বলে বলতে নারি

আমরা,–কুলের নারী ডরে মরি—কিন্তু,–দাঁড়াও বলে বলতে নারি
‘আমরা,–কুলের নারী ডরে মরি’—
আমাদের,–শাশুড়ী ননদী বৈরী—আমরা,–কূলের নারী ডরে মরি
কিন্তু,–দাঁড়াও বলে বলতে নারি
যদি কেউ,–

‘‘এমন-ব্যথার ব্যথী থাকে, কথার ছলে খানিক রাখে,
নয়ন-ভরে দেখি রূপখানি।’’ গো !

আয় নাগরী ত্বরা করি

যদি,–দেখ্বি গৌর-নটন-মাধুরী—আয় নাগরী ত্বরা করি’
তোদের,–গৃহকাজ সব পরিহরি—আয় নাগরী ত্বর করি’

গৃহকাজ ত’ সদাই আছে

গৌর-নটন দেখবি আয়—গৃহকাজ ত’ সদাই আছে

তখন আবার কত বলবি
ও-মা,–আমায় কেন দেখালি না

গৌর-সুন্দর নেচে গেল—ও-মা,–আমায় কেন দেখালি না

তোদের,–গৃহকাজে পড়ুক বাজ

আয়,–দেখ্‌বি গোরা নটরাজ—তোদের,–গৃহকাজে পড়ুক বাজ

[মাতন]
ঐ নেচে যেছে, –রূপ রসের করি’ বাদর;

কত,–রূপের নাগর রসের সাগর—ঐ নেচে যেছে, রূপ-রসের করি’ বাদর

তোরা,–দেখ্‌বি যদি আয় নাগরী

চিতচোর,–গৌরাঙ্গের নটন-মাধুরী—তোরা,–দেখবি যদি আয় নাগরী

ঐ,–সোণার গৌর নেচে যায়

নদীয়ার পথ,–আলো করে রূপ-লাবণ্য-ছটায়—ঐ,–সোণার গৌর নেচে যায়
আয় যদি দেখবি আয়—ঐ,–সোণার গৌর নেচে যায়

ও,–‘‘গমন নটন-লীলা,’’

গমন-নটন-লীলা

আয় নাগরী দেখবি আয় গো—গমন নটন-লীলা
আয় আয় দেখ্‌বি আয় গো-–গমন নটন-লীলা
আমাদের,–শচীদুলাল প্রাণ-গৌরাঙ্গের—গমন নটন-লীলা
আমাদের,–নদীয়া-বিনোদ গৌরাঙ্গের—গমন নটন-লীলা
সীতানাথের আনানিধির—গমন নটন-লীলা
শ্রীবাস-অঙ্গনের নাটুয়ার—গমন নটন-লীলা
রসরাজ-গৌরাঙ্গ-নটের—গমন নটন-লীলা
সঙ্কীর্ত্তন,-সুলম্পটের—গমন নটন-লীলা
সঙ্কীর্ত্তন,–কেলি-কলা-রস-বিনোদিয়ার—গমন নটন-লীলা
গদাধরের প্রাণ-বঁধুয়ার—গমন নটন-লীলা
নরহরির চিতচোরের—গমন নটন-লীলা
নিতাই-পাগল-করা গোরার—গমন নটন-লীলা

[মাতন]
আয় আয় দেখবি আয় গো

এমন কখনও দেখিস নাই—আয় আয় দেখবি আয় গো

রসের নেটো নেচে যায়

নদীয়ার পথ আলো করে—রসের নেটো নেচে যায়

চলে যেতে নেচে যেছে

নাটুয়া-মূরতি গৌর আমার—চলে যেতে নেচে যেছে
প্রাণ-গৌরাঙ্গের,–নাটুয়া-মূরতি নটন-গতি—চলে যেতে নেচে যেছে
ভাবনিধি গোরা,–ভাব-হিল্লোলে হেলে দুলে—চলে যেতে নেচে যেছে
রূপে,–সুরধুনীর কূল আলো করেছে—চলে যেতে নেচে যেছে

ও-তো সহজে চলিতে নারে

ওর,–সহজ-চলন মধুর-নটন—ও-তো,–সহজে চলিতে নারে

চলতে গেলেই নেচে যায়

এ স্বভাব পেয়েছে কোথায়—চলতে গেলেই নেচে যায়

এমন নটন কোথা শিখেছে
বুঝি—ওর কেউ গুরু আছে
কোন,–দেশ হতে শিখে এসেছে

নটন-শিক্ষার গুরু পেয়ে—কোন্‌–দেশ হতে শিখে এসেছে

নেচে নেচে নটন-গতি হয়েছে

স্বভাবেতে বসে গেছে—নেচে নেচে নটন-গতি হয়েছে

বুঝি,–নটিনী স্বভাব দিয়েছে
না,না, বুঝি,–নটনেই উৎপত্তি উহার

ওর,–মূরতি দেখে মনে হয়—না, না, বুঝি,–নটনেই উৎপত্তি উহার
কোন-দেশে কোন-নিগূঢ়-খেলায়—না, না, বুঝি,–নটনেই উৎপত্তি উহার
নৈলে কেন,–চলে যেতে নেচে যায়—না, না, বুঝি,–নটনেই উৎপত্তি উহার

ওর,–নটনেতেই উৎপত্তি

নিকুঞ্জ-কেলি-তল্লোপরি—ওর,–নটনেতেই উৎপত্তি

‘‘গমন নটন-লীল, বচন সঙ্গীত-কলা,’’

সঙ্গীতেতে কথা কহিছে

ও কি,–সহজ-কথা কইতে নারে—সঙ্গীতেতে কথা কহিছে

ওর,–সহজ-কথাই গান বটে

কথা,–কইতে গেলেই গান করে—ওর,–সহজ-কথাই গান বটে

এমন,–সঙ্গীত কার কাছে শিখেছে
মনে হয় ওর গুরু আছে
বুঝি তার স্বভাব ধরেছে

যার কাছে গান শিখেছে—বুঝি তার স্বভাব ধরেছে

সঙ্গীত,–করতে করতে স্বভাব ধরেছে

তাই,–সহজ-কথা কইতে নারে—সঙ্গীত,–করতে করতে স্বভাব ধরেছে

সেখানে হতে শিখে এসেছে

এখানে লোক মাতাইছে—সেখান হতে শিখে এসেছে

ওর,–কিছুই ত’ নিজস্ব নয়

গমনে নটন বচনে গান,–ওর,–কিছুই ত’ নিজস্ব নয়

তার কাছেই ধার করেছে

যে নটন-গায়ন জানে—তার কাছেই ধার করেছে

তার স্বভাবে বিভাবিত
ওর,–গমনে নটন বচনে গান

আয় নাগরী,–দেখবি শুনবি আয় গো—ওর,–গমনে নটন বচনে গান
আমার,–শচীদুলাল প্রাণ-গৌরাঙ্গের—গমনে নটন বচনে গান

গমনই নটন বচনই গান

নদীয়া-বিনোদ গৌরাঙ্গের—গমনই নটন বচনই গান

চল্‌তে নাচে বলতে গায়

রসময় গৌরাঙ্গ-রায়—চলতে নাচে বলতে গায়

[মাতন]
সঙ্গীতেতে কথা কহিছে
যেন,কতশত-কোকিল কূহরিছে

পঞ্চ ম-রাগ জিনি—যেন,–কতশত-কোকিল কুহরিছে

না, না, তাতেও তুলনা হয় না
যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে

জগৎ,–অমৃতময় করবে বলে—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
আমার,–গৌরহরি ‘হরি’ বলিছে—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে

[মাতন]
ও-তো,–হরিবোল বলা নয় গো

আমার মনে এই হয়—ও-তো,–হরিবোল বলা নয় গো

ওর,–মনে আছে হরণ-বৃত্তি
‘হরি’ বলে প্রচার করছে
আগে থাকতে প্রচার করছে

আমি হরণ করব বলে—আগে থাকতে প্রচার করছে

ডেকে হেঁকে চলে যেছে

গৌরহরি ‘হরি’ বলে—ডেকে হেকে চলে যেছে
আমি হরণ করব বলে—ডেকে হেঁকে চলে যেছে
এ যে দুপুরে ডাকাতি গো—ডেকে হেঁকে চলে যেছে

যেন,–অমিয়ার প্রস্রবণ

গৌরহরি মুখে ‘হরি’ ঘোষণ—যেন,–অমিয়ার প্রস্রবণ—

‘হরিবোল’ বুলি,–বুঝি ওর সিঁৎকাটি
হৃদয়-ভাণ্ডার লয় গো লুটি

বৃক্ষ-লতা-পশু-পাখীর—হৃদয় ভাণ্ডার লয় গো লুটি
শ্রবণ-দ্বারে পশি—হৃদয় ভাণ্ডার লয় গো লুটি
শ্রবণ-দ্বারে পশি—হৃদয়-ভাণ্ডার লয় গো লুটি

‘‘গমন নটন-লীলা, বচন সঙ্গীত-কলা
মধুর-চাহনি আকর্ষণ।’’

ও-তো নয় শুধু চাহনি
ওর,–মাঝে আছে আকর্ষণী
কেড়ে নিছে পরাণী

ওর মধুর-চাহনি—কেড়ে নিছে পরাণী

তারই আঁখি মন হরিছে

একবার,–‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে—তারই আঁখি মন হরিছে
‘একবার,–‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে’—
রসের গোরা নেচে নেচে—একবার,–‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে

[মাতন]

রসাবেশে হেসে হেসে—একবার,–‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে

[মাতন]

মৃদু-মন্দ-হেসে বাঁকা-দিঠে—একবার,–‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে

তারই আঁখি মন হরিছে
এ বুঝি ওর চির-স্বভাব

যারে হেরে তার মন হরে—এ বুঝি ওর চির-স্বভাব

শুধু মন হরণ করা নয়
মন হরে আপন করে
বুঝি তাই ভালবাসে গো

হরে নিয়ে আপনার করতে—বুঝি তাই ভালবাসে গো

কারে বা শুধাব বল

আপনার মনে বুঝতে পারছি—কারে বা শুধাব বল

কারো,–ঘরে যেতে মন সরে না

হেরি’ ঐ গৌরাঙ্গ-সোণা—কারো,–ঘরে যেতে মন সরে না
সকলই ত’ আছে বটে—কিন্তু কারো,–ঘরে যেতে মন সরে না

কিছু ভাল লাগে না গো

গৌর একবার যার পানে চায়—তার,–কিছু ভাল লাগে না গো
প্রাকৃত-ভোগ-সুখ-বিলাস—তার,–কিছু লাগে না গো

কাকেও কিছু বলতে নারে
কেবল, নিশিদিশি গুণেতে ঝুরে

নিরজনে আপন-মন—কেবল,–নিশিদিশি গুণেতে ঝুরে

পাঁজর ঝাঁজর হয়ে যায় রে

গৌরের,–গুণ স্মঙরি গুমরি গুমরি—পাঁজর ঝাঁঝর হয়ে যায় রে

গুমরি গুমিরি কেঁদে মরে

গৌরাঙ্গ-বিরহানলে—গুমরি গুমরি কেঁদে মরে

তার,–রয়ে রয়ে মনেতে পড়ে

সেই,–হরিবোলা-রসের বদন—তার,–রয়ে রয়ে মনেতে পড়ে

দ্বিগুণ আগুন জ্বলে উঠে
তখন সে,–পাগল হয়ে বেড়ায় রে

কূলে তিলাঞ্জলি দিয়ে—তখন সে,–পাগল হয়ে বেড়ায় রে
কুল, শীল, মান তেয়াগিয়ে—তখনসে,–পাগল হয়ে বেড়ায় রে

কেঁদে বলে হা গৌরহরি

এ জগতের সবর্বস্ব ছাড়ি—কেঁদে বলে হা গৌরহরি

ঘুরে বেড়ায় দেশ-বিদেশে

দীন-হীন-কাঙ্গালের বেশে—ঘুরে বেড়ায় দেশ-বিদেশে

যারে দেখে শুধায় তারে
দয়া করে বলে দাও

আমি,–কেমন করে গৌর পাব—দয়া করে বলে দাও

[মাতন]
শচীর,–দুলাল গোরা বটে গো ‘হরি’

বলিহারি তার হরণ-চাতুরী—শচীর,–দুলাল গোরা বটে গো ‘হরি’

[মাতন]
আমার,–শুনেছি এক চোরের কথা

বৃন্দাবনের নন্দদুলাল—আমার,–শুনেছি এক চোরের কথা

সবাই ত’ জানত

চুরি করাই স্বভাব উহার—সবাই ত’ জানত
চোর নাম খ্যাত ছিল—সবাই ত’ জানত

তাই—সকলেই সন্ত্রস্ত হত

ঐ চোর আসছে বলে—তাই,–সকলেই সন্ত্রস্ত হত

তাই এবার,–কপটতার বেশ ধরেছে
বাইরেতে সাধুর বেশে ধরেছে

ভিতরেতে কিন্তু কালই আছে—বাইরেতে সাধুর বেশ ধরেছে

এ যে বিষম চোর বটে

সাধু সেজে এসেছে—এ যে বিষম চোর বটে

এখন,–সবাই দেখে ভুলে যায়

বড় ভাল-মানুষ বলে—এখন,–সবাই দেখে ভুলে যায়

অনায়াসে সঙ্গ করে

সাধু-বুদ্ধি করে সবে—অনায়াসে সঙ্গ করে

চোরে যে সবর্বস্ব হরে

মৃদু,–মন্দ-হসনে চেয়ে বাঁক্‌-নয়নে—চোরে যে সবর্বস্ব হরে

সবর্বস্ব হরি’ গৌরহরি
বলে,–হরি হরি হরি হরি
ও-তো,–‘হরি’ বলা নয় গো
উল্লাসের ধ্বনি গো

নিজ-কার্য্য-সিদ্ধির—উল্লাসের ধ্বনি গো

এবার কেমন হয়েছে

মনে মনে বলে—এবার কেমন হয়েছে
আনন্দেতে বলে—এবার কেমন হয়েছে
সব চুরি করেছি—এবার কেমন হয়েছে

সব চুরি করেছি

আমার,–আপন করে নিয়েছি—সব চুরি করেছি

এবার কেমন হয়েছে
সব,–নিয়েও আশা মিটে না
হরণ করেও সুখ হয় না
অভাব হরে স্বভাব জাগায়
তারই স্বভাব জাগায়ে দেয়

একবার,–আড়্‌-নয়নে যার পানে চায়—তারই স্বভাব জাগায়ে দেয়

মত্ত করে তারে মধুরে

মধুর,–চাহনিতে যারে হেরে—তারে,–মধুর-ভাবে মাতায়ে দেয় রে

তার—মধুর-ভাব জাগে অন্তরে

ভাব-দিঠে যারে হেরে—তার,–মধুর-ভাব জাগে অন্তরে

সে,–আপনারে রাধাদাসী মানে

গৌরহরি চায় যার পানে—সে,–অপানারে রাধাদাসী মানে

পরাণ বঁধূ করে সম্বোধনে

চেয়ে,–গোরা-রসের বদন-পানে—পরাণ-বঁধু করে সম্বোধনে

গোরা-চাহনি কি বা মধুর

চাহনিতে,–স্বভাব জাগায় বরজ-বধুর—গোরা-চাহনি কি বা মধুর

[মাতন]
ও-তো,–নয় গো মধুর-চাহন

মৃদু মৃদু মন্দ হেসে—ও-তো,–নয় গো মধুর-চাহন

মধুর-রস করছে বর্ষণ
চাহনির বালাই যাই গো
তাতে পঞ্চ-বাণ হানে

গৌর যারে হেরে নয়নে—তাতে পঞ্চ-বাণ হানে

তার সবর্বাঙ্গ শিথিল করে

কটির বসন খসে পড়ে—তার সবর্বাঙ্গ শিথিল করে

ভাবাবেশে ঢলে পড়ে

ভাবনিধি যারে হেরে—সে,–ভাবাবেশে ঢলে পড়ে

সে অমনি ঢলে পড়ছে

ভাবেতে অবশ হয়ে—সে অমনি ঢলে পড়ছে
ভাবনিধি যার পানে চাইছে—সে,–ভাবাবেশে ঢলে পড়ছে

তাতেও আশা মিটে না
প্রাণে প্রাণে,–আরও কিছু চাইছে

ঐ,–চাহনি যেন বলে দিছে—প্রাণে প্রাণে,–আরও কিছু চাইছে

অপরূপ গৌরাঙ্গ-রঙ্গ

দেখ নাগরী চেয়ে দেখ গো—অপরূপ গৌরাঙ্গ-রঙ্গ

–আমার,–সোণার গৌরাঙ্গ নাচে

হেম-কিরণ ছড়াইয়ে—আমার,–সোণার গৌরাঙ্গ নাচে

আমার,–রসের গৌরাঙ্গ নাচে
আমার,–রসিয়া গৌরাঙ্গ নাচে
আমার,–বিলাসী গৌরাঙ্গ নাচে

সঙ্কীর্ত্তন-রাস-রসোন্মাদী—আমার,–বিলাসী গৌরাঙ্গ নাচে
না জানি কোন ভোগে মাতি’—আমার,–বিলাসী গৌরাঙ্গ নাচে
যে ঢলে,–পড়ে তারে বুকে ধরে—আমার,–বিলাসী গৌরাঙ্গ নাচে

[মাতন]
নাচিছে গোরা নাগরবর

কীর্ত্তন,–কেলি-রস-তৎপর—নাচিছে গোরা নাগরবর

করিছে মা রসের বাদর

আজ নদীয়ায় গৌরকিশোর—করিছে মা রসের বাদর

‘‘মধুর-চাহনি আকর্ষণ।’’

চাহনির বুঝি ঐ মর্ম্ম

মৃদু,–মন্দ-হসনে বাঁক-নয়নে—চাহনির বুঝি ঐ মর্ম্ম

ওর,–ভোগ-লিপ্সা মনে আছে

‘ বিনে নাহি অঙ্গ, ভাব বিনে নাহি সঙ্গ’’,

প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া

আমার,-রঙ্গিয়া প্রাণ-গৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
আমার,–নদীয়া-বিনোদ-গৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
আমার,–অনঙ্গ-মোহন-গৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
রঙ্গের মন্দির গোরার—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
‘রঙ্গের মন্দির গোরা’
নবীন-কামের কোঁড়া—রঙ্গের মন্দির গোরা

[মাতন]
প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
করে অনঙ্গ-রঙ্গ

গৌরের প্রতি-অঙ্গ—করে অনঙ্গ-রঙ্গ

গৌরের,–কোন অঙ্গে যার নয়ন পড়ে

সে অমনি,–বিদ্ধ হয় অনঙ্গ-শরে,–গৌরের,–কোন অঙ্গে যার নয়ন পড়ে

গৌরের,–প্রতি-অঙ্গ রঙ্গ করে

বিশেষ-অঙ্গের অপেক্ষা না করে—গৌরের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গ করে

প্রতি-অঙ্গে অনঙ্গ-শর

বিশেষ-অঙ্গের নাহি অবসর—প্রতি-অঙ্গে অনঙ্গ-শর
শর,–বরষিছে নিরন্তর—প্রতি-অঙ্গে অনঙ্গ-শর

শর,–বরষিছে নিরন্তর

নিজ,–পারিষদ-উপর—শর,–বরষিছে নিরন্তর

্রতি-অঙ্গে অনঙ্গ-শর
শর,–বরিষণের নাহি অবসর
পারিষদ হইল জ্বর-জ্বর

নিরন্তর শর বরিষণে—পারিষদ হইল জ্বর জ্বর
ধেয়ে গিয়ে গোরা করে কোর—পারিষদ হইল জ্বর জ্বর

এ,–স্বভাব ও কোথায় পেল

রঙ্গ করাই স্বভাব উহার—এ,–স্বভাব ও কোথায় পেল

রঙ্গ করাই স্বভাব উহার

দেখে,–মনে হয় গৌর-ব্যবহার—রঙ্গ করাই স্বভাব উহার

গৌরাঙ্গের,–স্বভাব কেবল রঙ্গ করা

থাকতে নারে রঙ্গ ছাড়া—গৌরাঙ্গের—স্বভাব কেবল রঙ্গ করা

রঙ্গ-রসে আছে ভোরা
এ,–স্বভাব ও কোথায় পেল
অঙ্গ দেখে মনে হয়

গৌরাঙ্গের রঙ্গময়—অঙ্গ দেখে মনে হয়

বুঝি,–রঙ্গেতে ওর উৎপত্তি

মনে হয় দেখে গৌর-মূরতি—বুঝি,–রঙ্গেতে ওর উৎপত্তি
তাই,–রঙ্গেতে উহার স্থিত—বুঝি,–রঙ্গেতে ওর উৎপত্তি

রঙ্গেতেই ওর উৎপত্তি

কোন-দেশে রঙ্গিণী-সংহতি—রঙ্গেতেই ওর উৎপত্তি
কোন-নিগূঢ়-রঙ্গ-লীলায়—রঙ্গেতেই ওর উৎপত্তি

ব্যবহারে মনে হয়
আগে বুঝি ব্রজে ছিল

স্বভাব দেখে মনে হয়—আগে বুঝি ব্রজে ছিল

ঐ যে উজ্জ্বল,–নীলমণির ছটা উঠছে

স্বর্ণ-বর্ণ ভেদ করে—ঐ যে উজ্জ্বল,–নীলমণির ছটা উঠছে

ব্রজে,–আশা বুঝি মিটে নাই
রঙ্গ,–আশা বুঝি মিটে নাই

বৃন্দাবনের রাস-রঙ্গে,–আশা বুঝি মিটে নাই

এবার,–আশ মিটাতে এসেছে

সঙ্কীর্ত্তন,–মহা-রাস-রঙ্গে—এবার,–আশ মিটাতে এসেছে
সবারে গোপী করে—এবার,–আশ মিটাতে এসেছে

সবার,–গোপী-স্বভাব প্রকট করে

স্থাবর, জঙ্গম, গুল্ম, লতা—সবার,–গোপী-স্বভাব প্রকট করে

এবার,–আশ মিটাতে এসেছে
ও-যে,–পরিণতি-মূরতি

বৃন্দাবনের রাস-কেলির—ও-যে,–পরিণতি-মূরতি

সবারই আঁখি মন হরিছে

নারী, পুরুষ বাছা নাই—সবারই আঁখি মন হরিছে

সে-ও হয়ে যেতেছে নারী

পুরুষাকৃতি-ধারী—সে-ও হয়ে যেতেছে নারী
রসের নাগর গৌর হেরি’—সে-ও হয়ে যেতেছে নারী

[মাতন]
প্রাণ-বল্লভ বলে ডাকছে

পুরুষ-অভিমান ভুলে—প্রাণ-বল্লভ বলে ডাকছে

আমরি কি মাধুরী
একলা পুরুষ গৌরহরি

জগ-ভরি’ সবাই নারী—একলা পুরুষ গৌরহরি

[মাতন]
সবারে করিল আলী

এ-যে,–নাগরীর নাগরালি—সবারে করিল আলী

‘‘রঙ্গ বিনে নাহি অঙ্গ, ভাব বিনে নাহি সঙ্গ,’’

অভাবের সঙ্গ করে না

আমার,–ভাবনিধি প্রাণ-গৌরাঙ্গ—অভাবের সঙ্গ করে না
রঙ্গ ছাড়া রইতে পারে না—অভাবের সঙ্গ করে না

ভাবের অভাব দেখতে পারে না

ভাবনিধির এই ত’ স্বভাব—ভাবের অভাব দেখতে পারে না
ভাবের রতি ভাবেতে স্থিতি—ভাবের অভাব দেখতে পারে না

নিশিদিশি ভাব-প্রসঙ্গ

অন্তরঙ্গ-ভাবুক সঙ্গে—নিশিদিশি ভাব-প্রসঙ্গ

ভাবের অভাব দেখতে নারে

স্বভাব জাগায়ে বুকে ধরে—ভাবের অভাব দেখতে নারে

স্বভাব জাগায়ে করে সঙ্গ

ও-মা ওর কি গরজ বালাই—স্বভাব জাগায়ে করে সঙ্গ
স্বরূপ জাগান স্বরূপ গোরা—স্বভাব জাগায়ে করে সঙ্গ
স্থাবর-জঙ্গম-গুল্ম-লতার—স্বভাব জাগায়ে করে সঙ্গ
‘হরি’,–বলে চেয়ে অভাব ঘুচায়ে—স্বভাব জাগায়ে করে সঙ্গ

[মাতন]
বুঝি,–এসেছে এবার নদীয়াতে

প্রতি-জনে ভাব ধরাতে—বুঝি,–এসেছে এবার নদীয়াতে

স্বভাব জাগাতে এসেছে এবার

ভাবে,–বিভাবিত হয়ে রাধার—স্বভাব জাগাতে এসেছে এবাব

[মাতন]

স্থাবর-জঙ্গম-গুল্ম-লতার—স্বভাব জাগাতে এসেছে এবার
সঙ্কীর্ত্তন-মহা-রাস-রঙ্গে—স্বভাব জাগাতে এসেছে এবার

[মাতন]
অভাব নিয়ে স্বভাব দেয়

হরণ করে পূরণ করে—অভাব নিয়ে স্বভাব দেয়

স্বভাব জাগানর ঐ-ত’ মর্ম্ম
রঙ্গ করতে এসেছে

সবার স্বভাব জাগাইয়ে—রঙ্গ করতে এসেছে

‘‘রঙ্গ বিনে নাহি অঙ্গ, ভাব বিনে নাহি সঙ্গ’’

ভাব-ভূষণে ভূষিত অঙ্গ

কম্প-অশ্রু-পুলকাদি—ভাব-ভূষণে ভূষিত অঙ্গ

ও-না,–‘‘রসময় দেহেরি গঠন।।’’

গৌর কিশোর-বর

আরে আরে আরে আমার—গৌর কিশোর-বর
আরে আমার—গৌর কিশোর-বর
আরে আমার চিতচোর—গৌর কিশোর-বর
রসে তনু ঢর ঢর—গৌর কিশোর-বর
‘রসে তনু ঢর ঢর’—
গৌরাঙ্গ নাগর-বর—রসে তনু ঢর ঢর

গৌর কিশোর-বর

অখিল-মরম-চোর—গৌর কিশোর-বর
‘অখিল-মরম-চোর’
শ্রী,–নবদ্বীপ-পুরন্দর—অখিল-মরম-চোর

[মাতন]
শুধু ও-তো রস নয়

ওর,–স্বরূপ দেখে মনে হয়—শুধু ও-তো রস নয়

ভাব রস দুই মিলেছে
তাহাতে স্বভাব জাগাইছে

মহাভাব ওর সঙ্গে সঙ্গে আছে—তাইতে স্বভাব জাগাইছে

হয়েছে নব-রসরাজ

রাই-রসবতীর সঙ্গে মিলে—হয়েছে নব-রসরাজ
স্বরূপ জাগান তার কাজ—হয়েছে নব-রসরাজ

[মাতন]
আমার,–মধুর গৌরাঙ্গ-গঠন

মহাভাব রসের সম্মিলন—আমার,–মধুর, গৌরাঙ্গ-গঠন

[মাতন]
রসের নেটো নেচে যায়

স্বভাব দিয়ে রস ভোগ করায়—রসের নেটো নেচে যায়

[মাতন]
আর একজন প্রচার করছে
যদি পুরুষ দেখতে চাও

‘হরি’ বলে নদে যাও—যদি পুরুষ দেখতে চাও

[মাতন]
সোণার গৌরাঙ্গ নাচে

আয় নাগরী দেখবি আয়—সোণার গৌরাঙ্গ নাচে
দয়াল নিতাই প্রেম যাচে—সোণার গৌরাঙ্গ নাচে

[মাতন]

‘প্রেমদাতা নিতাই বলে, গৌরহরি হরিবোল।’’ [মাতন]


[পথে যাইতে যাইতে]

একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’

আমার নিতাই,–যারে দেখে তারে বলে—একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’

বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’

ত্রিতাপ-জ্বালায় হবে বিরাম—বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’

পেয়েছ সাধের মানব-জনম

চৌরাশী,–লক্ষ-যোনি করে ভ্রমণ—পেয়েছ সাধের মানব-জনম

এ-তো,–ভোগ-বিলাসের জনম নয় রে
এ-তো,–রিপু-সেবার জনম নয় রে

শৃগাল-কুক্কুরের মত—এ-তো,–রিপু-সেবার জনম নয় রে

এ-যে,–শ্রীহরি-ভজনের জনম

সুদুর্ল্লভ এই মানব-জনম—এ-যে,–শ্রীহরি-ভজনের জনম

[মাতন]
সকল কথাই ভুলে গেছ ভাই

কি,–করবে বলে এই জনম পেলে—সকল কথাই ভুলে গেছ ভাই

একবার মনে করে দেখ

‘‘সপ্তম-মাসেতে যবে জননী-জঠরে। রে !
গর্ভের অনলে পুড়ে ডাকিলে কাতরে।।’’ রে !!

কোথায় আছ ও দীননাথ
তুমি,—কোথায় আছ প্রাণের হরি

আমি,–আর যাতনা সইতে নারি—তুমি,–কোথায় আছ প্রাণের হরি

যাতনা আর সইতে নারি

জননী-জঠরে কঠোর—যাতনা আর সইতে নারি

তুমি,–কোথায় আছ প্রাণের হরি
এবার আমায় জনম দাও

আমি—আর তোমায় ভুলব না প্রভু—এবার আমায় জনম দাও

ভাল বুঝতে পেরেছি এবার

তোমায় ভুলে আমার এ দুর্গতি—ভাল বুঝতে পেরেছি এবার

আর তোমায় ভুলব না প্রভু
এবার আমায় জনম দাও
ভজব তোমার পদ-যুগলে

জনমিয়ে ভবে গিয়ে—ভজবে তোমার পদ-যুগলে

জীব-মাত্রের এই প্রতিজ্ঞা

সপ্তম-মাসে মাতৃগর্ভে—জীব-মাত্রের এই প্রতিজ্ঞা
জনমিয়ে হরি ভজব—জীব-মাত্রের এই প্রতিজ্ঞা

‘‘ভূমিষ্ঠ হইতে মায়া জ্ঞান হরি’ নিল। রে !
প্রণব জঠর-স্মৃতি অন্তর হইল।।’’ রে !!

সকল কথাই ভুলে গেলে

গর্ভবাসে যা বলে এলে—জনম পেয়েই ভুলে গেলে

রইলো ধূলা-খেলার ছলে

শৈশবেতে দিবা-রেতে—রইলো ধূলা-খেলার ছলে

বাল্যেতে খেলিলে সদা সঙ্গীগণ-সনে রে !
কাটালে কৈশোর-কাল পুস্তক-পঠনে।।’’ রে !!

একদিন ত’ স্মরণ কর নাই

যে,–পড়া পড়্‌তে জনম পেলে—কই,–একদিনও ত’ স্মরণ কর নাই
প্রাণারাম—হরিনামের পড়া’—
সবর্ব-বিদ্যার জীবনী-শক্তি—প্রাণারাম-হরিনামের পড়া

একদিন ত’ স্মরণ কর নাই
অবিদ্যা অর্জ্জনে মত্ত হলে

জগতে,–লাভ-পূজা-প্রতিষ্ঠা-আশে—অবিদ্যা অর্জ্জনে মত্ত হলে

পড়িলে রিপুর কৌশলে

তুমি,–যুবাকালে মোহ-জালে—পড়িলে রিপুর কৌশলে

হিতাহিত বিবেচনা গেল

যৌবন-মদিরা-পানে মেতে—হিতাহিত বিবেচনা গেল

মনুষ্যত্ব হারাইলে
মায়া-সনে সম্বন্ধ কৈলে

পুরুষ-অভিমানে মেতে—মায়া-সনে সম্বন্ধ কৈলে

পাশবাচারে প্রবৃত্ত হলে

ষড়্‌রিপুর কিঙ্কর হয়ে—পাশবাচারে প্রবৃত্ত হলে

নরাকৃতি পশু হলে

দেখতে মানুষ, আচার পশুর—নরকৃতি পশু হলে

সাধ করে গলায় পরলে

বড়ই জুড়াবে বলে—সাধ করে গলায় পর্‌লে
কামিনী-সাপিনীর মালা—সাধ করে গলায় পর্‌লে

পড়িলে তার পদতলে

জায়ার ভয়ে নত হয়ে—পড়িলে তার পদতলে

তিনি,–হলেন তোমার ইষ্টদেবতা

মায়ার মূরতি নারী—তিনি,–হলেন—তোমার ইষ্টদেবতা
‘মায়ার মূরতি নারী’—
দিনে মোহিনী রাতে বাঘিনী—মায়ার মূরতি নারী

তিনি,–হলেন তোমার ইষ্টদেবতা
হল তোমার উপাসনা

অবিচারে তার আজ্ঞাপালন—হল তোমার উপাসনা
হলেন অধিক—পূজনীয়া
তোমার,–পিতা-মাতা হলেও তিন—হলেন অধিক-পূজনীয়া

কিছুই করতে ভয়বাস না

তার মনস্তুষ্টির লাগি’—কিছুই করতে ভয়বাস না
পাতক,–অতিপাতক মহাপাতক—কিছুই করতে ভয়বাস না

অনায়াসে ত্যাগ করতে পার

তার,–আজ্ঞা হলে পিতা-মাতায়—অনায়াসে ত্যাগ করতে পার

ভাই তোমার এ কি ভ্রম

দয়াল নিতাই,–কেঁদে বলে ছি ছি—ভাই তোমার এ কি ভ্রম

তুমি,–কেন হলে মায়ার নফর

তুমি কৃষ্ণের নিত্য-কিঙ্কর—তুমি—কেন হলে মায়ার নফর
কৃষ্ণ প্রভু পাসরিয়ে—তুমি,–কেন হলে মায়ার নফর
‘‘সংসার-চিন্তাতে পড়ে প্রৌঢ়কাল গেল। রে !
ক্রমে বক্ষে বদ্ধমূল হল পাপ-শেল।।’’ রে !!

ছিলে দ্বিপদ হলে ষটপদ

মায়াজালে বিজড়িত—ছিলে দ্বিপদ হলে ষটপদ

হাতে পায়ে গলে বাঁধা

দারা-সুত-আদি মায়ার শৃঙ্খল—হাতে পায়ে গলে বাঁধা

এখন,–‘‘এলো রে বার্দ্ধক্য ঐ অতীব ভীষণ। রে !
শুভ্র কেশ, লোল চর্ম্ম, কোটরে নয়ন।।’’ রে !!

বল,–এখন আর কি করিবে
এখন,–ভজ্‌তে চাইলেও ভজ্‌তে নারবে

হল সবের্বন্দ্রিয় শকতি হীন—এখন,–ভজতে চাইলেও ভজতে নারবে

হরি-কথা বলতে নারবে

রসনা ক্রমে অবশ হল—হরি-কথা বলতে নারবে

হরি-কথা শুনতে নারবে

শ্রবণ-শকতি গেল—হরি-কথা শুনতে নারবে

হরিক্ষেত্রে যেতে নারবে

সর্ব্বাঙ্গ ক্রমে অবশ হল—হরিক্ষেত্রে যেতে নারবে

যাবে কাল অস্তাচালে

ত্যজি,–মায়া-ছিব (তোমার) আয়ুরবি—যাবে কাল অস্তাচলে

বল, –এখন আর কি করিবে

হল,–আজ কাল বলে কাল আগত—বল,–এখন আর কি করিবে

সে ভিখারীর কি ভিক্ষা মিলে

যে,–ভিক্ষায় বের হয় সন্ধ্যাকালে—সে ভিখারীর কি ভিক্ষা মিলে

আমায়,–দয়াল নিতাই কেঁদে বলে
এই বেলা ফিরে বল ভাই

যা হবার তা হয়ে গেছে—এই বেলা ফিরে বস ভাই

ভজ প্রাণের গৌরহরি

পাগ্‌লা নিতাই কেঁদে বলে—ভজ প্রাণের গৌরহরি
মায়ামোহ পরিহরি—ভজ প্রাণের গৌরহরি

[মাতন]

‘‘প্রেমদাতা নিতাই বলে, গৌরহরি হরি বোল।।’’ [মাতন]

[পথে যাইতে যাইতে]
ভজ প্রাণের রাধারমণ

ভজ,– ‘‘শ্রীরাধারমণ, রমণী-মনোমোহন,’’

ভজ প্রাণের রাধারমণ

শ্রী,–বৃন্দা-বিপিন-বিহারী-ভজ প্রাণের রাধারমণ
ও সে,–রসময় বংশীধারী—ভজ প্রাণের রাধারমণ

‘‘শ্রীবৃন্দাবন-বনদেবা।
অভিনব-রাস, রসিক-বর নাগর,’’

নিতুই নিতুই নব নব

আমার প্রাণ রাধারমণ—নিতুই নিতুই নব নব

নব নব বিভ্রমশালী

বরজ,–যুবতীকূলে দিতে কালি—নব নব বিভ্রমশালী

ব্রজ,–‘‘নাগরীগণ-কৃত-সেবা।।’’

নিশিদিশি সেব্যমান

ব্রজ,–নাগরীগণ-কৃত—নিশিদিশি সেব্যমান

গোপাল-চূড়ামণি

গোপস্ত্রী-পরিসেবিত—গোপাল-চূড়ামণি

ব্রজ,–‘‘নাগরীগণ-কৃত-সেবা।।
ব্রজপতি-দম্পতি,- হৃদয়-আনন্দন,’’

মা-যশোদার নীলমণি

আমার প্রাণের রাধারমণ—মা-যশোদার নীলমণি

দণ্ডে দশবার খায় নবনী

বিশুদ্ধ,–বাৎসল্য-প্রেমার বশে—দণ্ডে দশবার খায় নবনী

‘‘নন্দন নবঘন-শ্যাম।’’

নন্দ-হৃদি আনন্দদ

শ্যাম নবজলদ—নন্দ-হৃদি আনন্দদ

নয়নাভিরাম

নবঘন শ্যাম—নয়নাভিরাম
বরজ-বাসীগণ—নয়নাভিরাম

‘‘নন্দন-নবঘন-শ্যাম।
নন্দীশ্বর পুর, পুরট পটাম্বর’’,

নন্দীশ্বর-পুরবাসী

আমার বরজ-শশী—নন্দীশ্বর-পুররাসী

পীতাম্বর-ধর

শ্যাম-সুন্দর—পীতাম্বর-ধর
নব-কৈশোর নটবর—পীতাম্বর-ধর

যেন,–থির-বিজুরী-জড়িত-নবঘনে

শ্যাম-অঙ্গে পীতাম্বর—যেন,–থির-বিজুরী-জড়িত-নবঘনে

রামানুজ গুণধাম।।’’

বলরামের ছোট ভাই

আবেশে নিতাই বলে—বলরামের ছোট ভাই

আপনা ভুলেছে

আপনি বলাই তা—ভুলে যে গেছে গো

বলে,–বলরামের ছোট ভাই
আদর করে সদাই ডাকে

কা-কা-কাহ্লাইয়া—আদর করে সদাই ডাকে
‘কা-কা-কাহ্নাইয়া—
আরে আরে মেরো ভেইয়া—কা-কা-কাহ্নাইয়া

[মাতন]
আদর করে সদাই ডাকে

‘‘রামানুজ গুণধাম।।
শ্রীদুম-সুদাম,– সুবল-সখা সুন্দর,’’

শ্রীদামের উচ্ছিষ্ট-ভোজী

বিশুদ্ধ সখ্য-প্রেমার বশে—শ্রীদামের উচ্ছিষ্ট-ভোজী

আধ খেয়ে আধ খাওয়ায়
খেতে খেতে বেঁধে রাখে

বনফল মিঠ লাগলে—খেতে খেতে বেঁধে রাখে

বলে,–আর ত’ খাওয়া হল না

এ যে বড় মিঠ লাগল—বলে,–আর ত’ খাওয়া হল না
আধ থাক ভাই কানাইকে দিব—বলে,–আর ত’ খাওয়া হল না

ধড়ার,–অঞ্চলে বেঁধে রাখে

কত,–যতন করে—ধড়ার,–অঞ্চলে বেঁধে রাখে

ছুটে এসে তুলে দেয়

বাম-করে গলা জড়ায়ে ধরে—চাঁদ-মুখে তুলে দেয়

বলে,–খা রে আমার প্রাণ-কানাই

অনিমিখে বদন-চেয়ে—বলে,–খা রে আমার প্রাণ-কানাই
এ, যে,–বড়-মিঠ-ফল ভাই—বলে,–খা রে আমার প্রাণ-কানাই
মিঠ,–লেগেছে তাই খেতে পারি নাই—বলে,–খা রে আমার প্রাণ-কানাই

শ্রীদামের উচ্ছিষ্ট-ভোজী
সুবলের মরম-সখা

শ্যাম ত্রিভঙ্গ বাঁকা—সুবলের মরম-সখা
রাই-বিরহে প্রাণ-রাখা—সুবলের মরম-সখা

[মাতন]
ব্রজ-রাখালের পরাণ

কালীয়-দমন শ্যাম—ব্রজ-রাখালের পরাণ

শিখি,–‘‘চন্দ্রক-চারু-অবতংস।’’

বিনোদ বিনোদ বিনোদ দোলে

সে,–বিনোদিয়ার বিনোদ-চূড়া—বিনোদ বিনোদ বিনোদ দোলে
বিনোদ-বায়ে বিনোদ-বরিহা-বিনোদ বিনোদ বিনোদ দোলে

মূরছি পড়ে ভূমিতলে

চূড়ার দোলন দেখে মদন—মূরছি পড়ে ভূমিতলে

মকর-কুণ্ডল দোলে

তার,–যুগল-কর্ণে—মকর-কুণ্ডল দোলে

কুণ্ডল দোলে গো

মকরাকৃতি—কুণ্ডল দোলে গো

মুখ ব্যাদান করে দোলে

মকরাকৃতি কুণ্ডল—মুখ ব্যাদান করে দোলে
মনোমীন গিলিবে বলে—মুখ ব্যাদান করে দোলে
‘মনোমীন গিলিবে বলে—
বরজ-ললনার—মনোমীন গিলিবে বলে

[মাতন]
মুখ ব্যাদান করে দোলে

শিখি,–‘‘চন্দ্রক-চারু-অবতংস।
গোবর্দ্ধনৃ-ধর, ধরণী-সুধাকর,’’

বাম-করে গিরি-ধরা

ব্রজবাসী-রক্ষা-করা—বাম-করে গিরি-ধরা

বরজ-সুধাকর

লীলামৃত-রসপুর—বরজ-সুধাকর

সিঞ্চে চৌদ্দ-ভূবনে

নিজ,–লীলামৃত বরিষণে—সিঞ্চে চৌদ্দ-ভুবনে

তাপ-বিমোচন

শ্রী,–নন্দকুল-চন্দ্রমা—তাপ-বিমোচন
ব্রজ,–তরুণী-লোচন—তাপ-বিমোচন

[মাতন]

‘‘মুখরিত মোহন-বংশ।।’’

বেণু-বাদনপর

নব-কৈশোর নটবর—বেণু-বাদনপর
‘নব-কৈশোর নটবর’—
গোপবেশ বেণু-কর—নব-কৈশোর নটবর

[মাতন]
বেণু-বাদনপর
সে,–বেণু বাজায় গো

ধীরসমীরে যমুনা-তীরে—সে,–বেণু বাজায় গো
বংশীবট-তটে—সে,–বেণু বাজায় গো
‘বংশীবট—তটে’—
ধীরসমীরে যমুনা-নিকটে—বংশীবট-তটে

বেণু বাজায় গো

ললিত-ত্রিভঙ্গ-ঠামে—বেণু বাজায় গো
‘ললিত-ত্রিভঙ্গ-ঠামে’—
বংশীবট-হেলনে—ললিত-ত্রিভঙ্গ-ঠামে

বেণু বাজায় গো

মধুর-পঞ্চ ম-তানে—বেণু বাজায় গো

চৌদ্দ-ভূবন আকর্ষিত

সেই মধুর-বেণু-রবে—চৌদ্দ-ভূবন আকর্ষিত

প্রাণ পণে প্রাণ টানে
জগবাসীর প্রাণ টানে

ধ্বনি,–পশিয়া মরম-স্থানে—জগবাসীর প্রাণ টানে
যমুনা-পুলিন-পানে—জগবাসীর প্রাণ টানে

[মাতন]
যোগী যোগ ভুলে গো

মুনি-জনার ধ্যান টলে—যোগী যোগ ভুলে গো

হয়,–সচল অচল, অচল সচল

তরল কঠিন, কঠিন তরল—হয়,–সচল অচল, অচল সচল

বিপরীত-ধর্ম্ম ধরে

শ্যামের,–মোহন-মুরলী-স্বরে—বিপরীত-ধর্ম্ম ধরে

[মাতন]
যমুনার জল ঘন হয়

পাষাণ গলিয়া যায়—যমুনার জল ঘন হয়

[মাতন]
গিরিরাজ চলে গো

পবন স্থির হয়—গিরিরাজ চলে গো

যমুনা উজান চলে

শ্যামের,–মোহন-মুরলী-স্বরে—যমুনা উজান চলে

নেচে নেচে উজান চলে

মোহন-মুরলী-রোলে—নেচে নেচে উজান চলে
উত্তাল-তরঙ্গ-ছলে—নেচে নেচে উজান চলে

[মাতন]
মকর-মীন নাচে গো

যমুনার জলে হেলে দুলে—মকর-মীন নাচে গো
‘যমুনার জলে হেলে দুলে’
মোহন-মুরলী-রোলে—যমুনার জলে হেলে দুলে

মকর-মীন নাচে গো
তরু-লতা পুলকিত

শ্যামের,–মুরলীর গানে হয়—তরু-লতা পুলকিত

মৃততরু মুঞ্জরে

মোহন-মুরলী-স্বরে—মৃততরু মুঞ্জরে

তরু—লতা পুলকিত
হয়,–পুষ্পিত ফলিত

নব নব ফুল-ফলে—হয়-পুষ্পিত ফলিত

ষড়্‌ ঋতুর উদয় হয়

একই কালে—ষড়্‌ঋতুর উদয় হয়

বিপরীত-ধর্ম্ম ধরে
পাষাণ গলিয়া যায়

সেই মধুর-বেণুরবে—পাষাণ গলিয়া যায়

ত্যজি নিজ-কুলে গো

ধায়,–কাননে ব্রজ-কামিনী—ত্যজি নিজ-কূলে গো
‘ধায়,–কাননে ব্রজ-কামিনী’—
আমার,–প্রাণ-বল্লভ কৃষ্ণ বলে—ধায়,–কাননে ব্রজ-কামিনী

[মাতন]

‘‘মুখরিত মোহন-বংশ।।
কালীয়-দমন,- গমন জিতি কুঞ্জর
কুঞ্জ রচিত রতি-অঙ্গ।’’

অপ্রাকৃত নবীন-মদন

আমার প্রাণের রাধারমণ—অপ্রাকৃত নবীন-মদন
সাক্ষাৎ,–মন্মথ-মন্মথ—অপ্রাকৃত নবীন-মদন

সাক্ষাৎ,–মন্মথের মন মথে

চড়ি’ গোপীর মনোরথে—সাক্ষাৎ,–মন্মথের মন মথে

নাম ধরে মদন-মোহন
কন্দর্প-দর্প-হারী

রাস-রস-বিহারী—কন্দর্প-দর্প-হারী

কেলি-রস-বিনোদিয়া

নাগর রসিয়া—কেলি-রস-বিনোদিয়া

কেলি-রস-তৎপর

রাস-রসিক-বর—কেলি-রস-তৎপর
মদন-দরপ-হর—কেলি-রস-তৎপর

কেলি-রস-ভূপতি

শৃঙ্গার-রসময়-মূরতি—কেলি-রস-ভূপতি

[মাতন]

সেই,–‘‘শ্রীনন্দ-নন্দন, গোপীজন-বল্লভ,
শ্রীরাধা-নায়ক নাগর শ্যাম।
সো শচীনন্দন, নদীয়া-পুরন্দর’’,

শচীসুত হইল সেই

নন্দের নন্দন যেই—শচীসুত হইল সেই

‘‘নন্দসুত বলি যারে ভগবতে গায়। রে !
সেই কৃষ্ণ অবতীর্ণ চৈতন্য-গোসাঞি।।’’ রে !!
‘‘সো শচীনন্দন, নদীয়া-পুরন্দর,
সুর-মুনি-গণ-মনোমোহন-ধাম

মাতল নিতাই রে

গৌর-কথা কইতে কইতে—মাতল নিতাই রে

পুলকেতে অঙ্গ ভরা

দুনয়নে শত-ধারা—পুলকেতে অঙ্গ ভরা

ভাবাবেশে বলে রে

গৌরাঙ্গ-রহস্য—ভাবাবেশে বলে রে

‘‘জয় নিজ-কান্তা,- কান্তি-কলেবর,
জয় নিজ-প্রেয়সী-ভাব-বিনোদ।
ব্রজ-তরুণীগণ,- লোচন-মঙ্গল,
নদীয়া-বধূগণ-নয়ন-আমোদ।।’’

এসেছে রে তোদের তরে

কেঁদে বলে জীবের দ্বারে দ্বারে—এসেছে রে তোদের তরে
গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে—এসেছে রে তোদের তরে
‘গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে’
রাধাভাব-কান্তি লয়ে—গোবিন্দ গৌরাঙ্গ হয়ে

[মাতন]
এসেছে রে তোদের তরে
হাত ধরে বলে দিয়েছে

নিরজনে বসে কেঁদে কেঁদে—হাতে ধরে বলে দিয়েছে
অবিচারে নাম-প্রেম বিলাতে—হাতে ধরে বলে দিয়েছে
পতিত খুঁজে নাম-প্রেম দিতে—হাতে ধরে বলে দিয়েছে

আয় কলিহত-জীব

আমার,–নিতাই ডাকে—আয় কলিহত-জীব

আর তোদের ভয় নাই রে
পাপ-তাপ সব আমি নিব

তোদের জন্ম-জন্মার্জ্জিত—পাপ-তাপ সব আমি নিব

বিনামূলে বিকাইব

পাপ-তাপের বোঝা নিব—বিনামূলে বিকাইব

বিকাইব প্রেম দিব

একবার গৌরহরি বোল—-বিকাইব প্রেম দিব

[মাতন]

‘‘প্রেমদাতা নিতাই বলে, গৌরহরি হরি বোল।।’’[মাতন]


[পথে যাইতে যাইতে]

হেলে দুলে যায় রে

আমার—গৌর-প্রেমের পাগলা নিতাই—হেলে দুলে যায় রে

‘‘গজেন্দ্র-গমনে যায়, সকরুণ-দিঠে চায়,’’

যায় রে নিতাই মাতাকরী

গৌর-প্রেম-মদিরা পান করি’—যায় রে নিতাই মাতাকরী

যায়,–বাহু-শুণ্ড দোলাইয়া

নিতাই-করী,–পাষণ্ড-কদলী দলবে বলে—যায়,–বাহু-শুণ্ড দোলাইয়া

‘‘গজেন্দ্র-গমনে যায়, সকরুণ-দিঠে চায়,’’

যে দিকে চায় প্রেমে মাতায়

প্রেমিক-নিতাই প্রেম-দিঠে—যে দিকে চায় প্রেমে মাতায়

যার পানে চায় প্রেমে মাতায়

স্থাবর, জঙ্গম, গুল্ম, লতা—যার পানে চায় প্রেমে মাতায়

‘‘পদ-ভরে মহী টলমল।’’ রে !

ধরণী আর ধরতে নারে

আমার,–নিতাই-চাঁদের পদ-ভার—ধরণী আর ধরতে নারে

ধরণীর—আনন্দ আর ধরে নারে

বড়-ভাগ্যবতী—ধরণীর,–আনন্দ আর ধরে না রে
আজ,–ধরণীধরে হৃদে ধরে—ধরণীর, আনন্দ আর ধরে না রে

ধরণী প্রেমে টলমল করে

গৌরপ্রেমের,–মূরতি নিতাই হৃদে ধরে—ধরণী প্রেমে টলমল করে

[মাতন]

‘‘পদ-ভরে মহী টলমল। রে !
গতি মত্ত-সিংহ জিনি, কম্পবান্‌ মেদিনী,’’

সিংহ-গতি চলে যায় রে

নিতাই আমার,–গৌর-সিংহ হৃদে ধরে—সিংহ গতি চলে যায় রে

‘‘গতি মত্ত-সিংহ জিনি, কম্পবান্‌ মেদিনী,
পাষণ্ডীগণ হেরিয়া বিকল।।’’ রে !!

তাদের,–পাষণ্ড-স্বভাব দূরে গেল রে

আমার,–পাষণ্ড-দলন নিতাই হেরে—তাদের,–পাষণ্ড-স্বভাব দূরে গেল রে

আমার, নিতাই-চাঁদকে দেখে বলে

আজ,–পাষণ্ডী পাষণ্ড-স্বভাব ভুলে—আমার,–নিতাই-চাঁদকে দেখে বলে

ঐ যে,–আওত অবধূত করুণার সিন্ধু।’’ রে !

ঐ যে,–হেলে দুলে নেচে আসছে

ঐ পতিতের বন্ধু নিতাই,–ঐ যে,–হেলে দুলে নেচে আসছে

[মাতন]
ভাই রে,–আর আমাদের ভাবনা কিসের

আমার, হই—না কেন মহাপতিত—ভাই রে,–আর আমাদের ভাবনা কিসের

আর পতিতের ভয় কি বল

ঐ যে,–পতিতের বন্ধু নিতাই এল—আর পতিতের ভয় কি বল

[মাতন]
আ’মরি কি মধুর মূরতি

নিতাই-চাঁদকে দেখে বলে—আমরি কি মধুর মূরতি
পাষণ্ডীগণ,–প্রেম-দৃষ্টি পেয়ে বলে—আমরি কি মধুর মূরতি
একবার চেয়ে দেখ ভাই—আমরি কি মধুর মূরতি

‘‘দেখ রে নয়ন-ভরি’ (ঐ) নিতাই-সুন্দর। রে !
ও যে,–গৌরাঙ্গ-প্রণয়-রসময়-পুরন্দর।।’’ রে ! !
‘‘গোরা-রসে-গঠিত (ঐ) নিতাই-কলেবর। রে !
গোরা-রস-কমলের মত্ত-মধুকর।। রে !!
গোরা-রস-চাঁদের চকোর নিত্যানন্দ। রে !
জীব-হৃদি-তমোবিনাশের পূর্ণতম-চন্দ্র।।‘ রে !!

হৃদি,–তমোবিনাশের পূর্ণচন্দ্র

কলিহত—জীব-হৃদি,–তমোবিনাশের পূর্ণচন্দ্র
মূরতি ধরে এসেছে—হৃদিও—তমোবিনাশের পূর্ণচন্দ্র
ঐ জগদ্‌-গুরু নিত্যানন্দ—হৃদি,–তমোবিনাশের পূর্ণচন্দ্র

‘‘প্রেমে গর গর মন, করে হরি-সঙ্কীর্ত্তন

গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই

ও তো,–প্রেম বিনে আর কিছু নাই—গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই

‘‘কেউ কি দেখেছ ভাই প্রেম মূর্ত্তিমন্ত। রে !
প্রেমের মূরতি আমার প্রভু নিত্যানন্দ।।’’ রে !!

মুখে,–প্রেমে প্রেম সবাই বল

প্রাকৃত-জগতে সবাই—কামকে দেখেই প্রেম বল
প্রেমের অনুভব নাই তাই-প্রেম বলিতে কামকে বুঝ

‘‘আত্ম-সুখ-ইচ্ছা যাতে তারে বলি কাম। রে !
কৃষ্ণ-সুখ-হেতু-কার্য্য ধরে ‘প্রেম’ নাম।।’’ রে !!

সেই প্রেমের মূরতি নিতাই

শ্রীকৃষ্ণ-সুখের একমাত্র উপাদান—সেই প্রেমের মূরতি নিতাই

প্রেমে চলে প্রেমে বলে

গৌর-প্রেমের মূরতি নিতাই—প্রেমে চলে প্রেমে বলে
প্রেম-হিল্লোলে হেলে দুলে—প্রেমে চলে প্রেমে বলে

প্রেমে কোল দেয় আচণ্ডালে

প্রেম-বাহু পসারিয়ে—প্রেমে কোল দেয় আচণ্ডালে
প্রেম-স্বরে আয় আয় বলে—প্রেম কোল দেয় আচণ্ডালে

প্রেমে নাচে প্রেমে যাচে

প্রেমিক নিতাই—প্রেমে নাচে প্রেমে যাচে

ধেয়ে যায় পতিতের কাছে

পতিতের বন্ধু নিতাই—ধেয়ে যায় পতিতের কাছে

কেঁদে কেঁদে তারে পুছে
বলে,–আর কে কোথা পতিত আছে

পতিতের কাছে নিতাই পুজে—বলে,–আর কে কোথা পতিত আছে
ত্বরা করে বল্ বল্ –বলে,–আর কে কোথা পতিত আছে

বাহু তুলে নিতাই ডাকে

সুরধুনীর কুলে দাঁড়ায়ে—বাহু তুলে নিতাই ডাকে

আয় কলিহত-জীব

আমার,–নিতাই ডাকে—আয় কলিহত-জীব

আর তোদের ভয় নাই রে
পাপ-তাপ সব আমি নিব

তোদের জন্ম-জন্মার্জ্জিত—পাপ-তাপ সব আমি নিব

বিনামূলে বিকাইব

পাপ-তাপের বোঝা নিব—বিনামূলে বিকাইব

বিকাইব প্রেম দিব

একবার গৌরহরি বোল—বিকাইব প্রেম দিব

[মাতন]

‘‘প্রেমদাতা নিতাই বলে, গৌরহরি হরি বোল।।’

[মাতন]

[পথে যাইতে যাইতে]

নিতাই,–যারে দেখে তারে বলে
একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’

মা-যোগমায়ার প্রাণারাম—একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
এ যে,–ভোলা-ভুলান নাম—একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
এ যে,–ভোলা-পাগল-করা নাম—একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
ভোলানাথ,–পঞ্চ মুখে নাম গায় অবিরাম—একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
এই,–কলিযুগের একমাত্র বল—একবার,–বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’

কি ছার,–অভিমানে নাম ভুলে আছ ভাই

ধনী, মানী, কুলীন, পণ্ডিত বলে—কি ছার,–অভিমানে নাম ভুলে আছ ভাই

‘‘কি করে বরণ কুল।’’

কেন,–কুল কুল করে কুল হারাও রে

এমন,–সাধের মানব-জনম পেয়ে—কেন,–কুল কুল করে কুল হারাও রে

কুলে কি গোবিন্দ মিলে

ব্যাকুল হয়ে না ডাকিলে—কুলে কি গোবিন্দ মিলে
ব্যাকুল-প্রাণে না কাঁদিলে—কুলে কি গোবিন্দ মিলে
‘ব্যাকুল-প্রাণে না কাঁদিলে’—
গোবিন্দ তোমার হলাম বলে—ব্যাকুল-প্রাণে না কাঁদিলে

[মাতন]
কুলে কি গোবিন্দ মিলে

‘‘কি করে বরণ, কুল।
কোন-কুলে কেন, জনম হউক্‌, না,
কেবল ভকত মূল ।।
দেখ,–কপিকুলে ধন্য, বীর হনুমন্ত,
শ্রীরাম-ভকত-রাজ।’’

যে,–হৃদয় চিরেচ দেখায়ে ছিল

শ্রী,–সীতারামের যুগল-রূপ—যে,–হৃদয় চিরে দেখায়ে ছিল
বনের,–বানর হয়ে কেবল ভকতির-বলে—যে,–হৃদয় চিরে দেখায়ে ছিল

মানুষ হয়ে তোমার গরব কিসের
সে তো,–পশু হতেও অধম বটে

যে,–মানুষ হয়ে হরি না ভজে—সে-তো,–পশু হতেও অধম বটে

দেখ,–‘কপিকুলে ধন্য, বীর হনুমন্ত,
শ্রীরাম-ভকত-রাজ।
রাক্ষস হইয়া, বিভীষণ বৈসে,
ঈশ্বর-সভার মাঝ।।
দৈত্যের ঔরসে, প্রহ্লাদ জনমে,
ভূবনে যাহার যশ।
স্ফটিক-স্তম্ভেতে, প্রকট নরহরি,
হইয়া যাহার বশ।।’’

নরসিংহ-রূপে প্রকট হলেন

প্রহ্লাদের বিশুদ্ধ-ভকতির বলে—নরসিংহ-রূপে প্রকট হলেন

সে কি তার কুলের গরব

সে তো,–দৈত্য-বালক প্রহ্লাদ বটে—সে-তো নয় তার কুলের গরব

‘‘দেখ না কি কুল, বিদুরের ছিল,
খাইল যাহার ঘরে।’’

খুদ-কণা যেচে খেলেন

রাজা,–দুর্যোধনের নানা উপচার ফেলে—খুদ-কণা যেচে খেলেন
বড়,–ক্ষুধা পেয়েছে দাও দাও বলে—খুদ-কণা যেচে খেলেন
আমরি,–সুধা সুধা সুধা বলে—খুদ কণা যেচে খেলেন

সে কি তার কুলের গরব

সে তো’,–দাসীপুত্র বিদুর বটে—সে কি তার কুলের গরব

‘‘খাইল যাহার ঘরে।
চণ্ডাল হইয়া মিতালী করিল,
গুহক-চণ্ডালবরে।।’’

রামামিতে বলে ডাকিত

চণ্ডাল হয়ে পূর্ণ-ব্রহ্মে—রামামিতে বলে ডাকিত

উচ্ছিষ্ট-ফল খেতে দিল

চণ্ডাল-কন্যা শবরী—উচ্ছিষ্ট-ফল খেতে দিল

সে কি তার কুলের গরব

সে যে,–কেবল ভকতির বল—সে-তো নয় তার কুলের গরব

‘‘দেখ না কি বা, সাধন করিল,
গোকুলে গোপের নারী।।’’

তারা-তো গোয়ালার মেয়ে
যেমন নাচায় তেমনি নাচে

চণ্ডাল-কন্যা শবরী—উচ্ছিষ্ট-ফল খেতে দিল

সে কি তার কুলের গরব

সে যে,–কেবল ভকতির বল—সে-তো নয় তার কুলের গরব

‘‘দেখ না কি বা, সাধন করিল,
গোকুলে গোপের নারী।’’

তারা-তো গোয়ালার মেয়ে
যেমন নাচায় তেমনি নাচে

শ্রীরাস-মণ্ডলের মাঝে—যেমন নাচায় তেমনি নাচে
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দে—যেমন নাচায় তেমনি নাচে
ভকতির বলে,–ক্রীড়া-পুত্তলিকার মত—যেমন নাচায় তেমনি নাচে

‘‘গোকুলে গোপের নারী !
তাই বলি,–‘‘জাতি-কুলাচার, কি করিবে তার,
সে হরি যে ভজে তারই।।’’

ভকতির ধন নীলরতন

জাতি-কূল-পাণ্ডিত্যের নয়—কেবল,–ভকতির ধন নীলরতন

‘‘জাতি-কুল নিরর্থক বুঝাবার তরে। রে !
ঠাকুর হরিদাস জন্মিলেন যবনের ঘরে।।’’ রে !!


নিতাই কেঁদে বলে করযুড়ি
ভজ প্রাণের গৌরহরি


জাতি,–কূল-অভিমান পরিহরি—ভজ প্রাণের গৌরহরি

[মাতন]

‘‘প্রেমদাতা নিতাই বলে, গৌরহরি হরি বোল।’’

[মাতন]

[পথে যাইতে যাইতে]

বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’

নিতাই,–যারে দেখে তারে বলে—বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’
ত্রিতাপ-জ্বালায় হবে বিরাম—বল ‘হরে কৃষ্ণ রাম’

পেয়েছ সাধের মানব-জনম

চৌরাশি—লক্ষ-যোনি করে ভ্রমণ—পেয়েছ সাধের মানব-জনম

এ-তো,–ভোগ-বিলাসের জনম নয় রে

শৃগাল-কুক্কুরের মত—এ-তো,–ভোগ-বিলাসের জনম নয় রে

এ যে—শ্রীহরি—ভজনের জনম

সুদুর্ল্লভ মানব-জনম—এ যে,–শ্রীহরি-ভজনের জনম

দেবতারাও বাঞ্ছা করে

শ্রীহরি,–ভজন-যোগ্য এই মানব-জনম—দেবতারাও বাঞ্ছা করে
শ্রীহরি,–ভজন-যোগ্য এই মানব-জনম—দেবতারাও বাঞ্ছা করে

কেন,–এমন জনম হেলায় হারাও
বলে,–ও দোকানী ও পসারী
কদিন করবে দোকানদারী
দোকানদারী দুদিন চারি

যম,–ভেঙ্গে দিবে সব ভারিভূরি—দোকানদারী দুদিন চারি

নিতাই,–কেঁদে বলে করযুড়ি

‘‘বল হরি হরি, ছন্দ না করিহ,
বিপত্তে ভরল দেশ।’’


দেখে শুনেও কি ভ্রম গেল না

‘‘বিপত্তে ভরল দেশ।
এ তত্ত্ব জানিয়া আগে পলাওল,
শ্রবণ, দশন, কেশ।।
তার পিছু পিছু, লোচন, বচন,
তারা দুয়ে দিল ভঙ্গ।’’

একে একে সব পলায়ে গেল

তোমায়,–সংসার-রণে মাতায়ে দিয়ে—তোমার,–সৈন্যগণ সব পলায়ে গেল

আর,–কারে আমার আমার বলছ

যারা,–দেহে ছিল তারা পর হল—আর,–কারে আমার আমার বলছ

তবু—‘‘আমার আমার করি, রাত্রি দিবা মর,
যমদূতে দেখে রঙ্গ।।’’

তারা,–করতালী দিয়ে নাচছে

তোমার,–আমার আমার করা দেখে—তারা,–করতালী দিয়ে নাচছে

এই,–‘‘সুন্দর-নগরে, প্রতি ঘরে ঘরে,’’

এ-যে,–মহামায়ার নাট্যশালা

এই যে দেখছ সুন্দর-নগর—এ-যে,–মহামায়ারনাট্যশালা

অভিনয় হয় অনিত্য-খেলা

নিতুই নিতুই নব নব কত—অভিনয় হয় অনিত্য-খেলা

ফুরাইলে জীবন-লীলা
কার,–ভাগ্যে কখন হবে বা পতন

মৃত্যুরূপী যবনিকা,–কার,–ভাগ্যে কখন হবে বা পতন

‘‘বিষম-যমের থানা।
দণ্ডেক দিবস, পলক গণিছে,
কখন জানি দিবে হানা।।’’

তোমার,–ঘুমের ঘোরে চুরি হবে

তুমি-তো,–মোহ-নিদ্রায় নিদ্রিত আছ—তোমার,–ঘুমের ঘোরে চুরি হবে

সেই,–ধন তোমার চুরি হবে

তুমি,–যার বলে চলছে বলছ—সেই,–ধন তোমার চুরি হবে

এই বেলা জাগায়ে রাখ

হরি-নামকে প্রহরী করে—জিহ্বাগ্রে জাগায়ে রাখ

নিশিদিশি রসনায় রট

‘হরে কৃষ্ণ রাম’ নাম—নিশিদিশি রসনায় রট

‘‘হরে কৃষ্ণ’ নাম রসনায় রট

যমদ্বারে পড়িবে কবাট—‘হরে কৃষ্ণ’ নাম রসনায় রট

‘‘দারা-সুত-যাদের, আপনা বলিছ,
সকলই নিমের তিতা।’’

কেউ-তো তোমায় ভালবাসে না

স্বার্থ-সিদ্ধি-সম্বন্ধ মাত্র—কেউ-তো তোমায় ভালবাসে না

ততক্ষণই করে প্রীতি

যতক্ষণ হয় স্বার্থ-সিদ্ধি—ততক্ষণই করে প্রীতি

যখনই স্বার্থে পড়ে বাধা
অমনি,–মনে মনে জপ করে

এ আপদ মলেই বাঁচি—অমনি,–মনে মনে জপ করে

এই-তো সংসারের সম্বন্ধ

মোহ-বশে,–তুমি বুঝেও তা’ বুঝ না ভাই—এই-তো সংসারের সম্বন্ধ

‘‘সকলই নিমের তিতা।
মরণ-সময়ে, হাতে গলে বাঁধি,
মুখে জ্বালি দিবে চিতা।।’’

তোমার,–যেমন কর্ম্ম তেমনি ফল
তোমার,–মুখে আগুন জ্বেলে দিবে

কেবল,–আমার আমার বলছ বলে—তোমার,–মুখে আগুন জ্বেলে দিবে

তোমার,–মুখে দিবে আগুন জ্বেলে

ভুলেও,–‘হরে কৃষ্ণ নাম বল নাই বলে—তোমার,–মুখে দিবে আগুন জ্বেলে

[মাতন]
নিতাই,–কেঁদে বলে করযুড়ি
ভজ প্রাণের গৌরহরি

মায়ামোহ পরিহরি—ভজ প্রাণের গৌরহরি

‘‘প্রেমদাতা নিতাই বলে, গৌরহরি হরি বোল।’

’ [মাতন]

[পথে যাইতে যাইতে]

বাহু-তুলে নিতাই ডাকে

সুরধুনীর কূলে দাঁড়ায়ে—বাহু-তুলে নিতাই ডাকে

ওরে,–‘‘কে যাবি কে যাবি ভাই ভবসিন্ধু-পাব।’’ রে !

কে,–পারে যাবি আয় রে

দুই বাহু-তুলে আমার,–নিতাই-কাণ্ডারী ডাকে—কে,–পারে যাবি আয় রে

‘‘কে যাবি কে যাবি ভাই ভবসিন্ধু-পার।’’ রে !
ধন্য-কলিযুগেতে চৈতন্য অবতার।’’ রে !!

এমন,–হয় নাই আর হবার নয় রে

বলে,–‘‘আমার চৈতন্যের ঘাটে’’

কত,–গরব করে নিতাই বলে—‘‘আমার চৈতন্যের ঘাটে’’
আ’মরি,–পুলকেতে অঙ্গ ভরা

মুখে,–আমার গৌরাঙ্গ বলতে—আ’মরি,–পুলকেতে অঙ্গ ভরা
দুনয়নে শতধারা—আমরি,–পুলকেতে অঙ্গ ভরা

বলে,–‘‘আমার চৈতন্যের ঘাটে আদান-খেয়া বয়। রে !
জ্বরা, অন্ধ, আতুর অবধি পার হয়।।’’ রে !!

কারো যেতে বাধা নাই রে
আমি,–যারে তারে পার করি

বাহু,–তুলে বলে নিতাই-কাণ্ডারী—আমি,–যারে তারে পার করি
জাতি,–কুলাধিকার বিচার না করি—আমি,–যারে তারে পার করি

এনেছি হরি-নামের তরী

গোলোকের গুপ্ত-ভাণ্ডার লুট করি’—এনেছি হরি-নামের তরী
জীব তোদের,–তরাইতে ভববারি—এনেছি হরি-নামের তরী

লয়ে ফিরি নামের তরী

ভবপারের ঘাটে ঘাটে—লয়ে ফিরি নামের তরী
শ্রীগুরুরূপ ধরি’—লয়ে ফিরি নামের তরী

পার করে দিই ভববারি

মুখে বললে গৌরহরি—পার করে দিই ভববারি

‘‘প্রেমদাতা নিতাই বলে, গৌরহরি হরি বোল।’’


[পথে যাইতে যাইতে]

শ্রীশ্রীনগর-সঙ্কীর্ত্তনান্তে স্বমন্দিরে প্রত্যাগমন কীর্ত্তন

‘‘নগর ভ্রমিয়ে আমার গৌর এল’ ঘরে।
প্রাণ—‘‘গৌর এল’ ঘরে আমার নিতাই এল’ ঘরে।।’’

ঘরে ঘরে নাম বিলায়ে, গৌর এল
প্রাণ,–‘‘গৌর এল’ ঘরে আমার নিতাই এল’ ঘরে।।’’

নাম-প্রেম বিলায়ে—নিতাই গৌর ঘরে এল’

[মাতন]

প্রাণ,–‘‘গৌর এল’ ঘরে আমার নিতাই এল’ ঘরে।।
অমনি,–ধেয়ে গিয়ে শচী-মাতা গৌর কোলে করে।’’

বলে,–আমার কে এল’ রে

বাম-করে চিবুক ধরে—বলে,–আমার কে এল’ রে
‘বাম-করে চিবুক ধরে—
অনিমিখে চাঁদ-বদন চেয়ে—বাম-করে চিবুক ধরে

বলে,–আমার কে এল’ রে
আমার,–বাপ ঘরে এল’ রে

ও কে রে, ও কে রে—আমার,–বাপ ঘরে এল’ রে

আমার,–বাপের ঠাকুর এল’ রে

আয়,–প্রতিবাসিনী দেখে যা তোরা—আমার,–বাপের ঠাকুর এল’ রে

আমার,–আঁধার-ঘরের মাণিক এল’

তোরা দেখে যা লো,–আমার,–আঁধার-ঘর হইল আলো—আমার,–

আঁধার-ঘরের মাণিক এল’
এল’,–এল’ শচীর নয়ন-তারা

আয়-আয়,–নদীয়া-নাগরী দেখে যা তোরা—এল’—এল’ শচীর নয়ন-তারা

বলে,–একি খেলা রে

শচী-মাতা,–গৌরের অঙ্গ-পানে চেয়ে—বলে,–এ কি খেলা রে
বল নিমাই,–দুখিনী—মায়ের দুখ দিতে—তোর,–এ কি খেলা রে
কেন দেখি,–সোণার অঙ্গে ধূলা-মাখা—তোর,–এ কি খেলা রে

মায়ে কি সয় রে

অঞ্চলের নিধি,–নয়ন-মণি ধুলা-মাখা—মায়ে কি সয় রে
বাপ্,–তোর সোণার অঙ্গে ধূলা—মায়ে কি সয় রে

একবার,–চেয়েও কি দেখে নাই

সে ধূলা দিবার আগে—একবার,–চেয়েও কি দেখে নাই
এই,–ভূবন-ভোলা-বদন-পানে—একবার,–চেয়েও কি দেখে নাই
‘এই,–ভুবন-ভোলা-বদন-পানে’—
আমি,–যা দেখে সব ভুলেছি—এই,–ভুবন-ভোলা-বদন-পানে

চেয়েও কি দেখে নাই
চাইলে ধূলা দিতে নারত
অমনি’—ধেয়ে এসে হিয়ায় ধরত

আমার,–বাপ বিশ্বম্ভর বলে—অমনি,–ধেয়ে এসে হিয়ায় ধরত
‘আমার,–বাপ বিশ্বম্ভর বলে’—
হিয়ার মাণিক ওখানে কেন—আমার,–বাপ, বিশ্বম্ভর বলে

[মাতন]
ধেয়ে এসে হিয়ায় ধরত
নরহরি তুই কোথায় ছিলি

শচীমাতা কেঁদে বলে বাপ—নরহরি তুই কোথায় ছিলি
আমার,–পরাণ-পুতলি ফেলি’—নরহরি তুই কোথায় ছিলি

আমি তোর,–হাতে হাতে সোঁপে দিলাম

সঙ্কীর্ত্তনে যাবার বেলায়—আমি তোর,–হাতে হাতে সোঁপে দিলাম

‘‘দেখো রে বাপ্ নরহরি,’’

আমার,–প্রাণ তোমার হাতে দিলাম

আমার এই,–শূন্য-দেহ ঘর রইল—আমার,–প্রাণ তোমার হাতে দিলাম

[মাতন]

‘‘দেখো রে বাপ্, নরহরি, থেকো গৌরের কাছে। রে !
আমার,–পরাণ-পুতলি গোরা,’’

আর দ্বিতীয় নাই রে

ঐ,–মুখ দেখে প্রাণ ধরে থাকি—আর দ্বিতীয় নাই রে

আমার,–‘‘পরাণ-পুতলি গোরা, ধূলায় পড়ে পাছে।।’’ রে !!

তার এই কি প্রতিফল

ও বাপ্,–নরহরি বল্ বল্ –তার এ কি প্রতিফল

আর যেতে দিব না

অভিমানে শচীমাতা বলে—আর যেতে দিব না
সঙ্কীর্ত্তনে বিশ্বম্ভরে—আর যেতে দিব না

ঘরে বসে খেলা করবে

দুখিনীর বাছনী আমার—ঘরে বসে খেলা করবে

মনে হলেই চেয়ে দেখব

ঐ,–দুখ-পাসরা বদন-খানি—মনে হলেই চেয়ে দেখব

[মাতন]

এত বলি,’—‘‘ধূলা ঝেড়ে শচীমাতা গৌর কোলে করে।’’

ভেসে যায় ভেসে যায়

বিশুদ্ধ,–বাৎসল্যময়ী মা আমার—ভেসে যায় ভেসে যায়
স্তন-ক্ষীরে আঁখি-নীরে—ভেসে যায় ভেসে যায়

বাম-ঊরুতে বসাইয়ে
দক্ষিণ-করে চিবুক ধরে
অনিমিখে চাঁদ-বদন চেয়ে

বলে,–‘‘আরে মোর, আরে মোর,’’

দুনয়নে বহে শত-লোর

চিবুক ধরে বলে আরে মোর—দুনয়নে বহে শত-লোর

বলে,–আরে মোর, আরে মোর গৌরাঙ্গ সোণা। রে !
বাপ,–তোমার পেয়েছি কত, করিয়া কামনা।।’’ রে !!

ও দুখিনীর বাছনী

আর,–দুখিনী-মায়ে দুখ দিও না—ও দুখিনীর বাছনী

ঘরে বসে খেলা করো

তোমার,–আপন খেলার সাথী লয়ে—ঘরে বসে খেলা করো

চোখের আড়াল হয়ো না

ওরে আমার নয়ন-মণি—চোখের আড়াল হয়ো না

দিবসে আঁধার দেখি

তোমার ঐ,–চাঁদ-মুখ না পেখি’—দিবসে আঁধার দেখি

চোখের আড়াল হয়ো না
ঘরে বসে খেলা করো

যাখন,–যা চাইবে তাই দিব—ঘরে বসে খেলা করো

[মাতন]

এত বলি’,–‘‘ধূলা ঝেড়ে শতীমাতা, গৌর কোলে করে।
তখন,–নরহরি বসাওল, রত্নাসনোপরে।।
নানাবিধ সেবা করে, শ্রান্তি দূর করে।’’

চামর ঢুলায় নরহরি

গোরা-রসের বদন হেরি’—চামন ঢুলায় নরহরি

দুনয়নে বহে বারি

চামর ঢুলায় নরহরি তার—দুনয়নে বহে বারি

প্রেম-ধারায় ধিক মানিছে

অনুরাগে নরহরি—প্রেম-ধারায় ধিক মানিছে

বলে,–দূরে যা রে প্রেম-বারি

আমি,–এখন তোরে চাই না –বলে,–দূরে যা রে প্রেম-বারি
তুই যে,–হলি গৌর সেবার ঐরি—বলে,–দূরে যা রে প্রেম-বারি
গোরা-রসের,–বদন হেরি চামর করি—বলে,–দূরে যা রে প্রেম-বারি

[মাতন]

‘‘নানাবিধ সেবা করে, শ্রান্তি দূর করে।
মুখ পদ পাখালিল, সুশীতল-নীরে।।
ধীরে ধীরে মুছাত্তল, পাতল-চীরে।’’

রাতুল-চরণ হৃদে ধরে

পরাণ-গৌরাঙ্গের—রাতুল-চরণ হৃদে ধরে
রসের বদন-পানে চেয়ে—রাতুল-চরণ হৃদে ধরে

মনে মনে গণে রে

রাতুল-চরণ হৃদে ধরে—মনে মনে গণে রে
নাগরী নরহরি—মনে মনে গণে রে

কত না লেগেছে

এই,–কমল হতেও কোমল-পদে—কত না লেগেছে
এই নদীয়ার কঠিন-মাটি—কত না লেগেছে

আমি,–মনে করি এই নদীয়া-যুড়ি, হউক মোর হিয়া। রে !
তাহাতে গৌরাঙ্গ নাচুক, পদ পসারিয়া।। রে !!
মনে করি এই নদীয়া-যুড়ি, এ দেহ বিছাই। রে ।
পরাণ-গৌরাঙ্গ-চাঁদে, তাহাতে নাচাই।। রে !!
মনে করি আমার হিয়া হোক, শিরীষ-কুসুম জিনি। রে !
তাহাতে নাচুক আমার, গোরা-গুণমণি।। রে !!
মনে করি আমার হিয়া হোক, ননীর সোসর। রে !
তাহাতে নাচুক আমার, গৌরাঙ্গ-সুন্দর।।’’ রে !!

হরিবোলে নেচে যাবে

আমার,–বুকের উপর দিয়ে গৌর-হরিবোলে নেচে যাবে

[মাতন]

‘‘নানাবিধ সেবা করে, শ্রান্তি দূর করে।।
ধীরে ধীরে মুছাওল, পাতল-চীরে।
তখন,–শচীমাতা আনি’ দিলা, ক্ষীর-ননী-সরে।।’’

বলে,–নরহরি খাওয়াও রে

মুখানি শুকায়ে গেছে—বলে,–নরহরি খাওয়াও রে
‘কত,–বেলা হয়েছে কিছু খায় নাই—মুখানি শুকায়ে গেছে
দণ্ডে দশবার খায়—কত,–বেলা হয়েছে কিছু খায় নাই
দারুণ-রবির তাপে—মুখানি শুকায়ে গেছে
বেলা হয়েছে অতি ভুখে—দারুণ-রবির-তাপে
মুখানি শুকায়ে গেছে—নরহরি খাওয়াও রে
গৌর তোমার,–হাতে খেতে ভালবাসে—নরহরি খাওয়াও রে

‘‘নরহরি যতন করি’, খাওয়ায় গোরারে।

প্রাণ-গৌর খাও হে
—ক্ষীর, সর, নবনী খাও

বাৎসল্য-প্রেম-মাখা—ক্ষীর, সর, নবনী খাও

[মাতন]

‘‘নরহরি যতন করি’, খাওয়ায় গোরারে।
মায়ের প্রীতিতে গোরা, ভোজন করে।।’’

বলে,–নরহরি আবার দাও

আমায়,–বড়-মিঠে লাগছে—বলে,–নরহরি আবার দাও
‘বড়-মিঠ লাগছে’—
না জানি কি সুধা আছে—বড়-মিঠ লাগছে

নরহরি আবার দাও

‘‘মায়ের প্রীতিতে গোরা, ভোজন করে।।’’

একলা খেতে ভাল লাগে না

পরাণ-গৌরাঙ্গের—একলা খেতে ভাল লাগে না

তাই,–‘‘নিতাই-মুখে তুলে দেয় গৌর নিজ করে।।’’

অবধূত খাও বলে

নিতাই-মুখে তুলে দেয়—অবধূত খাও বলে

দুহুঁ-মুখে তুলে দেয়

দুহু দোহাঁর কোমল-করে—দুহুঁ-মুখে তুলে দেয়

উঠিল আনন্দ-রোল

আজ,–শচীর আঙ্গিনায়—উঠিল আনন্দ-রোল
ভোজন-বিলাস দেখে—উঠিল আনন্দ-রোল
‘ভোজন-বিলাস দেখে’—
বাৎসল্য-প্রেমের—ভোজন-বিলাস দেখে—

উঠিল আনন্দ-রোল

সবাই বলে হরিবোল—উঠিল আনন্দ-রোল

[মাতন]

‘‘মায়ের প্রীতিতে গোরা, ভোজন করে।।
মুখ পাখালিয়া দিল, সুশীতল-নীরে।
ধীরে ধীরে মুছাওল, পাতল-চীরে।।।
অবশেষে বাঁটি দিল, সব পরিকরে।।’’

নাম ধরে ডেকে ডেকে

প্রেম,–দিঠে চেয়ে অমিয়া-ভাষে—নাম ধরে ডেকে ডেকে

‘‘অবশেষ বাঁটি দিল, সব পরিকরে।
অবশেষ পেয়ে সবে, নাচে প্রেম-ভরে।।’’

বলে,–জয় শচীদুলালিয়া

আমাদের,–নদীয়া-বিনোদিয়া—জয় শচীদুলালিয়া
জয় নিতাই রঙ্গিয়া—জয় শচীদুলালিয়া

[মাতন]

বলে,–‘‘এই কৃপা কর মোদের গৌরাঙ্গ-শ্রীহরি।’’ হে !

আমার,–আর কিছু চাই না

ও প্রাণের গৌরহরি—আমরা,–আর কিছু চাই না

আমাদের,–আর যেন ভুলায়ো না

এ সংসারে,–মায়ার, খেলনা দিয়ে—আমাদের,–আর যেন ভুলায়ো না

আমার,–অনেকদিন ত’ খেলেছি হে

হা গৌরাঙ্গ,–তোমায় ভুলে এই পুতুল-খেলা—আমরা,–অনেকদিন ত’

খেলেছি হে
আমাদের,–আর যেন ভুলায়ো না

‘‘এই কৃপা কর মোদের গৌরাঙ্গ-শ্রীহরি। হে !
প্রভু,–নিত্যানন্দ-সঙ্গে যেন’’

আমাদের প্রভু

পতিতের বন্ধু নিতাই—আমাদের প্রভু

প্রভু,–‘‘নিত্যানন্দ-সঙ্গে যেন তোমা না পাসরি।। হে !!
প্রভু,–তুমি আর নিত্যানন্দ বিহরিবে যথা।
এই করো জন্মে জন্মে (যেন) ভৃত্য হই তথা।।’’

তোমার,–বিহার-ভূমিতে জনম পাব

এই,–শ্রীগৌড়-মণ্ডল—তোমার,–বিহার-ভূমিতে জনম পাব

তোমার,–দাসানুদাসের সঙ্গ পাব
আমরা,–নিশিদিশি গাইব

তোমা-দোঁহার গুণ—আমরা,–নিশিদিশি গাইব

পাগল হয়ে বেড়াব

ভাই ভাই এক-প্রাণে—পাগল হয়ে বেড়াব
হা,–নিতাই গৌরাঙ্গ বলে—পাগল বয়ে বেড়াব

[মাতন]

‘‘নাচিতে না জানি তবু, নাচিয়ে গৌরাঙ্গ বলি,
গাইতে না জানি তবু গাই।
সুখে বা দুঃখেতে থাকি, হা গৌরাঙ্গ বলে ডাকি,
নিরন্তর এই মতি চাই।।’’

তোমার,–নাম যেন ভুলি না

সুখ-দুখের ঝঞ্ঝাবাতে—তোমার,–নাম যেন ভুলি না

‘‘নিরন্তর এই মতি চাই।।
বসুধা জাহ্নবা সহ, নিতাইচাঁদেরে ডাকি’’,

যেন,–ব্যাকুল-প্রাণে ডাকতে পারি

কুলের দেবা নিতাই বলে—যেন,–ব্যাকুল-প্রাণে ডাকতে পারি
‘কূলের দেবা নিতাই বলে’—
বসুধা-জাহ্নবা-প্রাণ-কুলের দেবা নিতাই বলে

[মাতন]

ব্যাকুল-প্রাণে ডাকতে পারি

‘‘সীতার সহিতে সীতাপতি।
নরহরি গদাধর, শ্রীবাসাদি সহচর,
ইঁহা সবার নামে যেন মাতি।।
স্বরূপ রূপ সনাতন, রঘুনাথ সকরুণ,
ভুগর্ভ শ্রীজীব লোকনাথ।
ইঁহা সবা নাম করি, দীন প্রায় সদা ফিরি,
যেন হয় তা সবার সাথ।।
মহান্ত-সন্তান কিবা, মহান্তের গণ যে বা,
ইঁহা সবার স্থানে অপরাধ।
না হয় উদ্‌গম কভু, ভয়ে প্রাণ কাঁপে মুহু,
এ সাধে না পড়ে যেন বাধ।।’’

যেন,–অবিচারে ভজতে পারি

‘‘এ সাধে না পড়ে যেন বাধ।।
বৈষ্ণবের গ্রাস শেষে, নহে যেন অবিশ্বাসে,’’

এই কৃপা কর হে
যেন,–বৈষ্ণব-উচ্ছিষ্টে বিশ্বাস হয়
অলভ্য লাভ করেছিলেন

বৈষ্ণব-উচ্ছিষ্টে বিশ্বাসের বলে—অলভ্য লাভ করেছিলেন
রঘুনাথের খুড়া কালিদাস—অলভ্য লাভ করেছিলেন

অলভ্য গৌর-চরণামৃত

যার,–একবিন্দু কেউ পরশ পায় না—অলভ্য গৌর-চরণামৃত

তিন-অঞ্জলি পান করলেন

বৈষ্ণব-উচ্ছিষ্টে বিশ্বাসের বলে—তিন-অঞ্জলি পান করলেন

[মাতন]

‘‘বৈষ্ণবের গ্রাস শেষে, নহে যেন অবিশ্বাসে,
দন্তে তৃণ কহে হরিদাস।।’’

ভাই রে,–‘‘দেখ নিতাইচাঁদের করুণা।’’
এমন,–হয় নাই আর হবার নয়

এমন,–পরম-করুণ প্রেমদাতা-হয় নাই আর হবার নয়
‘এমন,–পরম-করুণ প্রেমদাতা’—
নিতাইচাঁদের মত-এমন,–পরম-করুণ প্রেমদাতা

হয় নাই আর হবার নয়

‘‘দেখ নিতাইচাঁদের করুণা।
কলিতে কীর্ত্তন-যাগ, আরম্ভিলা মহাভাগ,

অন্য-সাধন নাই জেনে

এই ঘোর-কলিযুগে—আর,–অন্য-সাধন নাই জেনে
একমাত্র,–হরিনাম-যজ্ঞ বিনে—আর,–অন্য-সাধন নাই জেনে

‘‘কলিতে কীর্ত্তন-যাগ, আরম্ভিলা মহাভাগ,
পুরাইতে অদ্বৈত-বাসনা।।’’

চাঁদ নিতাই আমার
হরিনাম—যজ্ঞ আরম্ভিলা

চাঁদ নিতাই আমার—হরিনাম-যজ্ঞ আরম্ভিলা
অদ্বৈত-বাঞ্ছা পূরাইতে—হরিনাম-যজ্ঞ আরম্ভিলা

‘‘শ্রীঅদ্বৈত যজমান, শ্রীবাস-আলয় যজ্ঞস্থান,
এই নাম-যজ্ঞে,–যজ্ঞেশ্বর শ্রীগৌরাঙ্গ হরি।
তাতে,–হোতা হইলা নিত্যানন্দ, হরিনাম-মহামন্ত্র,’’

কলসে কলসে ঢালে

পূর্ণ-কুম্ভ নিত্যানন্দ—কলসে কলসে ঢালে

‘‘হোতা হইলা নিত্যানন্দ, হরিনাম-মহামন্ত্র,
বদ্ধ-জীবের মুক্ত-কল্প করি।।’’

হরিনাম-যজ্ঞ আরম্ভিলা

চাঁদ নিতাই আমার—হরিনাম-যজ্ঞ আরম্ভিলা

জীবের,–‘‘বাসনা-আদি কাষ্ঠগণ, তাতে—প্রেম-ঘৃত নিরমন্থন’’
যাতে,–যাতায়াত হয় রে
নানা-যোনি ভ্রমণ করায়

শ্রীকৃষ্ণ-বৈমুখী করে—নানা-যোনি ভ্রমণ করায়

‘‘বাসনা-আদি কাষ্ঠগণ, প্রেম-ঘৃত নিরমন্থন,
যজ্ঞ-অগ্নি হইল প্রবল।’’

প্রেম-ঘৃত ঢেলে ঢেলে

জীবের,–দুবর্বাসনা—কাষ্ঠোপরি—প্রেম-ঘৃত ঢেলে ঢেলে
হরিনাম-অগ্নি সংযোগে—প্রেম-ঘৃত ঢেলে ঢেলে

‘‘যজ্ঞ-অগ্নি হইল প্রবল।
তাতে,–দুর্ব্বাসনা ধর্ম্মাধর্ম্ম, অন্য-দেবাশ্রয়-মর্ম্ম,
ভস্ম কৈল ইত্যাদি সকল।।
সহচরগণ মেলি, সমাপিলা যজ্ঞ-কেলি,’’

চাঁদ নিতাই আমার
গুণনিধি নিতাই আমার
আজ,–পূর্ণ কর হে

তোমার,–স্থাপিত নাম-যজ্ঞ তুমি—আজ,–পূর্ণ কর হে

হাট যেন ভঙ্গ না

পূর্ণ কর—হাট যেন ভেঙ্গ না সঙ্কীর্ত্তন-সুখের—হাট যেন ভঙ্গ না

পূর্ণ কর হে
জগভরি উঠুক রোল

গৌরহরি হরি বোল—জগভরি উঠুক রোল

[মাতন]

‘‘সহচরগণ মেলি, সমাপিলা যজ্ঞ-কেলি,
(সভক্তাদি মুনি মেলি, সমাপিলা যজ্ঞ-কেলি,
নবদ্বীপে হইল হেন ঘটা।
শ্রী,–বৃন্দাবন-দাস ভাষে,বিথারিল দেশে দেশে’’,

সেই হতে প্রচার হল

এই হরিনাম-যজ্ঞ—সেই হতে প্রচার হল
‘আগে,–নবদ্বীপে—আরম্ভিল—সেই হতে প্রচার হল
‘আগে,–নবদ্বীপে আরম্ভিল’—
শ্রীবাস-অঙ্গনে—আগে,–নবদ্বীপে আরম্ভিল
শ্রীহরি-বাসর-ছলে—শ্রীনবদ্বীপে আরম্ভিল

সেই হতে প্রচার হল

শ্রী—বৃন্দাবন-দাস ভাষে, বিথারল দেশে দেশে,
বৈষ্ণবচিহ্ন শেষ যজ্ঞ ফোঁটা।’’

ফোঁটা,–পর রে তর রে

এ-যে,–পর তর—ফোঁটা,–পর রে তর রে

পর পর তর ফোঁটা

যদি,–এড়াবি কালের খোঁটা—পর পরতর ফোঁটা

ফোঁটা পর রে

বৈষ্ণব-চিহ্ন যজ্ঞ—ফোঁটা পর রে
মুখে,–গৌরহরি-নাম কর—বৈষ্ণব-চিহ্ন ধর

[মাতন]

‘‘হরি হরয়ে নমঃ কৃষ্ণ যাদবায় নমঃ।
যাদবায় মাধবায় কেশবায় নামঃ।।
গোপাল গোবিন্দ রাম শ্রীমধুসূদন । {এই সব নাম প্রভুর আদি সঙ্কীর্ত্তন}
গিরিধারী গোপীনাথ মদনমোহন।।’’
শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ শ্রীঅদ্বৈত সীতা।
ভজ হরি গুরু বৈষ্ণব ভাগবত গীতা।।
জয় রূপ সনাতন ভট্ট রঘুনাথ।
শ্রীজীব গোপাল-ভট্ট দাস রঘুনাথ।।’’
‘‘শ্রীনিবাস নরোত্তম প্রভু লোকনাথ।
রামচন্দ্র দাস্য দিয়া কর আত্মসাৎ।
জয় জয় শ্যামনন্দ জয় রসিকানন্দ।
নিধুবনে নিত্যলীলায় পরম-আনন্দ।।’’
‘‘এই সব গোসাঞিএর করি চরণ-বন্দন।
যাহা হইতে বিঘ্ন-নাশ অভীষ্ট-পূরণ।।
এই সব গোসাঞি যবে ব্রজে কৈলা বাস।
শ্রীরাধাকৃষ্ণ-নিত্যলীলা করিলা প্রকাশ।।
(শ্রীগৌর-গোবিন্দ-লীলা করিলা প্রকাশ।।)
এই সব গোসাঞি যার তার মুঞি দাস।
তা সবার পদরেণু মোর পঞ্চ-গ্রাস।।
গো-কোটি দানে গ্রহণে চ কাশী।
মাঘে-প্রয়াগে কোটি-কল্প-বাসী।।
সুমেরু সমতুল্য হিরণ্য দানে।
নহি তুল্য নহি তুল্য গোবিন্দ-নামে।।
গোবিন্দ কহেন আমার রাধা সে পরাণ।
তপ জপ পরিহরি লও রাধা-নাম।।
জয় জয় রাধা-নাম প্রেম-তরঙ্গিণী।
রাধা-নাম জপিতে জপিতে উঠে অমৃতের খনি।
রাধা-নামের স্বাদ ভাল জানে শ্যাম-গুণমণি।।
তাই বাঁশী-যন্ত্রে গান করে দিবস-রজনা।’’

বংশীবটে সদা বটে

ধীরসমীরে যমুনা-তটে—বংশীবটে সদা রটে
অকপটে শ্যাম-নটে—বংশীবটে সদা রটে

‘‘রাধা-নাম গেয়ে গৌর হল ব্রজের নীলমণি।।’

রাধা,–নাম গেয়ে গৌর হল

নাম বরণ ধরাইল—রাধা,–নাম গেয়ে গৌর হল

‘‘শ্রীরাধা-গোবিন্দ দোঁহার যুগল-মাধুরী
সেই দুই এক-তনু প্রাণের গৌরহরি।।
এ হেন গৌরাঙ্গ-হরি পেতে যার আশ।
ধর্ম্মাধর্ম্ম পরিহরি হও নিতাইএর দাস।।
সংসারের পার হইয়া ভক্তির সাগরে।
যে ডুবিবে সে ভজুক আমার নিতাইচাঁদেরে।।
মুখেও যে জন বলে মুঞি নিত্যানন্দ-দাস।
সে,নিশ্চয় দেখিবে গোরার স্বরূপ-প্রকাশ ।।
গোপীগণের যেই প্রেম কহে ভাগবতে।
আমার,একলা নিত্যানন্দ হইতে পাইবে জগতে।।
নিত্যানন্দ প্রেমদাতা গৌরাঙ্গ পরম-ধন।
রাসবিলাসে পাবে শ্রীরাধারমণ।।
‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ নাম-তরী আরোহণে।
সংসার-সাগর-পার চল বৃন্দাবনে।।
অতিঘোর-বিষ-সম দেখিবে সম্মান।’’

প্রতিষ্ঠা ত্যাগ কর

শূকরী-বিষ্ঠা-সম—প্রতিষ্ঠা ত্যাগ কর
সুরা-সম—অভিমান ত্যাগ কর
রৌরব-সম—গৌরব ত্যাগ কর
(যদি) প্রেম-ধনে ধনী হতে চাও—এই তিন ত্যাগ কর

‘‘অতিঘোর-বিষ-সমদেখিবে সম্মান।
অপমান দেখ ভাই অমৃত-সমান।।’’

অপমান অমৃত দেখ

প্রভু,–নিত্যানন্দ স্মঙরিয়ে—অপমান অমৃত দেখ
অভিমান-শূন্য প্রভু—নিত্যানন্দ স্মঙরিয়ে

[মাতন]

‘‘অপমান দেখ ভাই অমৃত-সমান।।
সুমধুর বৃন্দাবন কভু না ছাড়িয়া।’’

ভেদ যেন কারো না

শ্রীনবদ্বীপ আর বৃন্দাবন—ভেঙে যেন করো না

ভজলেও পাবে না

ভেদ-জ্ঞানে কোটি-কল্প—ভজলেও পাবে না

তারই ত’ হয় রে

ব্রজ-ভূমেতে বাস—তারই ত’ হয় রে
ঠাকুর নরোত্তম বলেছেন—তারই ত’ হয় রে
যে বা জানে চিন্তামণি—তারই ত’ হয় রে
‘যে বা জানে চিন্তামণি’—
শ্রীগৌড়মণ্ডল-ভূমি—যে বা জানে চিন্তামণি

[মাতন]
তাই বলি,–ভেদ যেন করো না
কিছু ভিন্ন ভেদ নাই

তারাই এরা, এরাই তারা—কিছু ভিন্ন ভেদ নাই

নবদ্বীপ বৃন্দাবন
শচীনন্দন নন্দনন্দন
পারিষদ সব গোপীগণ
নবদ্বীপে সঙ্কীর্ত্তন

শ্রী,–বৃন্দাবনে রাসলীলা—নবদ্বীপে সঙ্কীর্ত্তন

নদীয়ায় সে নামের ধ্বনি

বৃন্দাবনে বংশী-ধ্বনি—নদীয়ায় সে নামের ধ্বনি

[মাতন]
দুই ঠাঁই যুগলের খেলা

ব্রজ আর নদীয়া—দুই ঠাঁই যুগলের খেলা

বরং,–অধিক বিকাশ রে

ব্রজ হতে নদীয়ায়—বরং,–অধিক বিকাশ রে

কখনও মিলন কখনও ভঙ্গ

বৃন্দাবনে যুগলের –কখনও মিলন কখনও ভঙ্গ

নবদ্বীপে নাইকো ভঙ্গ

রাই-কানু-মিলিত গৌরাঙ্গ—নবদ্বীপে নাইকো ভঙ্গ

[মাতন]
মদন-মোহনত্বের নিত্যত্ব

গৌরাঙ্গ-স্বরূপে—মদন-মোহনত্বের নিত্যত্ব

তখনই ত’ মদন-মোহন

রাদা-সঙ্গে যখন মিলিত—তখনই ত’ মদন-মোহন

ব্রজে তার নাই নিত্যত্ব

কভু মিলে কভু না মিলে—ব্রজে তার নাই নিত্যত্ব
এ যে,–রাধা-সঙ্গে সদা মিলিত—মদন-মোহনত্বের নিত্যত্ব

[মাতন]
নাগরালির পূর্ণত্ব

গৌরাঙ্গ-স্বরূপে—নাগরালির পূর্ণত্ব

কৃষ্ণে বলত প্রাণবল্লভ

ব্রজে কতক ব্রজনারী—কৃষ্ণে বলত প্রাণবল্লভ

সবাই বলে প্রাণবল্লভ

গৌরাঙ্গ-মূরতি হেরে—সবাই বলে প্রাণবল্লভ

[মাতন]

‘‘সুমধুর-বৃন্দাবন কভু না ছাড়িয়া।
শ্রীরাধা-মুরলীধর ভজ প্রাণ দিয়া।।’’

গৌরাঙ্গ ভজ ভাই

রাধাকৃষ্ণ এক-অঙ্গ—গৌরাঙ্গ ভজ ভাই

[মাতন]

‘‘মনের আনন্দে বল হরি ভজ বৃন্দাবন।
শ্রীগুরু-বৈষ্ণব-পদে মজাইয়া মন।।
শ্রীগুরু-বৈষ্ণব-পাদপদ্ম করি আশ।
হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তন কহে নরোত্তম-দাস।’’


‘‘আয় রে তোরা লুটবি কে আয়,
আমার,–দয়াল নিতাই অমিয়া বিলায় রে।
আমার,–শ্রীগৌরাঙ্গ সুধার আধারে,
আমার,–নিতাইচাঁদ তার অঙ্গ আধারে।।


চাঁদে চাঁদে মিশে দুটী চাঁদ,’’


বৃষ’—ভানু-কুল-চাঁদ নন্দ-কুল-চাঁদ—চাঁদে চাঁদে মিশে
আমাদের,–রাইচাঁদ আর শ্যামচাঁদ—চাঁদে চাঁদে মিশে
এই কলিঘোর,–অমানিশা বিনাশিতেৃ—চাঁদে চাঁদে মিশে

শকতি হল না ঋণ শোধিতে

একা নন্দ-কুল-চাঁদের—শকতি হল না ঋণ শোধিতে

শ্রী,–রাধিকার প্রেম-ঋণ শোধিতে
তাই হল মিশিতে

আমাদের,–ভানু-কূল-চাঁদের সনে—তাই হল মিশিতে

‘‘চাঁদে চাঁদে মিশে দুটী চাঁদ,
এসে উদয় হল নদীয়ায় আয় রে।
আয় রে তোরা লুট্‌বি কে আয়,
আমার,–দয়াল নিতাই অমিয়া বিলায় রে।।’’

এনেছে নিতাই প্রেম-অমিয়া

কিশোরী-ভাণ্ডার লুটিয়া—এনেছে নিতাই প্রেম-অমিয়া

দিতেছে নিতাই যাচিয়া যাচিয়া

পতিত-পাষণ্ড খুঁজিয়া খুঁজিয়া—দিতেছে নিতাই যাচিয়া যাচিয়া

বলিছে নিতাই কাঁদিয়া কাঁদিয়া
আমি,–বিনামূলে যাব বিকাইয়া

তোদের,–পাপ-তাপের বোঝা নিয়া—আমি,–বিনামূলে যাব বিকাইয়া
গৌরহরি বোলে আমায় লও কিনিয়া—আমি,–বিনামূলে যাব বিকাইয়া

যেচে বেড়াইছে নিতাই-মালী

মাথায় লয়ে নাম-প্রেমের ডালি—যেচে বেড়াইছে নিতাই-মালী

ডাকিছে নিতাই দুবাহু তুলি

সুরধুনী-কূলে বুলি বুলি—ডাকিছে নিতাই দুবাহু তুলি
আয়,–কলিহত-জীব বলি’—ডাকিছে নিতাই দু’বাহু তুলি
আয় প্রেম,–কে নিবি আমায় কিনিবি বলি’—ডাকিছে নিতাই দুবাহু তুলি

কাঁদিছে নিতাই ফুলি ফুলি

আয় বলি,–পতিতেরে বুকে তুলি—কাঁদিছে নিতাই ফুলি ফুলি

কাঁদিয়ে নিতাই আকুলি বিকুলি

আয় বলি,–আচণ্ডালে কোলে তুলি—কাঁদিছে নিতই আকুলি বিকুলি

বলিছে,–প্রেমের ডালি দিব রে ঢালি

একবার,— আয় রে গৌরহরি বলি’—প্রেমের ডালি দিব রে ঢালি

[মাতন]

একবার,,–‘‘গৌরহরি বোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।।’’ [মাতন]
‘‘বোল হরিবোল, গৌরহরি বোল।’’[মাতন]


——-


প্রেম্‌সে কহো শ্রীরাধে শ্রীকৃষ্ণ বলিয়ে—
প্রভু নিতাই শ্রীচৈতন্য অদ্বৈত শ্রীরাধারাণীকী জয় !
প্রেমদাতা পরম-দয়াল পতিত-পাবন শ্রীনিতাইচাঁদকী জয় !
করুণা-সিন্ধু গৌরভক্তবৃন্দকী জয় !
শ্রীশ্রীনাম-সঙ্কীর্ত্তনকী জয় !
খোল-করতালকী জয় !
শ্রীনবদ্বীপ-ধামকী জয় !
শ্রীনীলাচল-ধামকী জয় !
শ্রীবৃন্দাবন-ধামকী জয় !
চারি-ধামকী জয় !
চারি-সম্প্রদায়কী জয় !
অনন্তকোটি-ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণবকী জয় !
পরম-করুণ শ্রীগুরুদেবকী জয় !
প্রেমদাতা পরম-দয়াল পতিত-পাবন—
শিশু-পশু-পালক বালক-জীবন শ্রীমদ্‌রাধারমণকী জয় !

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌরহরি বোল ।।’’


——–



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ