যমুনা কিনারে

সজনী, অপুরুব পেখল রামা

সজনী, অপুরুব পেখল রামা।
কনক-লতা অবলম্বন ঊঅল
হরিন-হীন হিমধামা।।
নয়ন নলিনি দও অঞ্জনে রঞ্জই
ভৌঁহ বিভঙ্গ-বিলাসা।
চকিত চকোর জোর বিধি বান্ধল
কেবল কাজর পাসা।।
গিরিবর-গরুঅ পয়োধর-পরসিত
গিম গজ-মোতিক হারা।
কাম কম্বু ভরি কনক-সম্ভু পরি
ঢারত সুরধনি-ধারা।।
পয়সি পয়াগে জাগ সত জাগই
সোই পাবএ বহুভাগী।।
বিদ্যাপতি কহ গোকুল-নায়ক
গোপীজন অনুরাগী।

অন্তঃকথন:
শ্রীমতীর অপরূপ রূপ দর্শনে বনমালীর মনে পূর্বরাগ জন্ম নিয়েছে। মাধব সেই অপূর্ব রূপবতী বামার রূপকীর্তন করছেন। কৃষ্ণ বলছেন, সজনি, কি অপরূপ রমনীর দর্শন পেলাম! তার স্বর্ণতনুলতায় নিষ্কলঙ্ক মুখচন্দ্র উদিত হয়েছে। চাঁদের সৌন্দর্যেও কলঙ্ক রয়েছে কিন্তু রাধার মুখচন্দ্রমা মালিন্যহীন, বিভাময়! তার দুটি ভ্রমর কৃষ্ণ নয়নে সে কাজল পরেছে, তার ওপর তার ভ্রূভঙ্গীর বিলাস! সে কটাক্ষ দেখে মনে হয় বিধাতা কেবল কাজল-পাশে দুটি চঞ্চল নয়ন খঞ্জন কে আবদ্ধ করেছেন। আসলে সেই কাজল নয়নের জালে মাধবের মনও যে বাঁধা পড়েছে! রাধিকার কণ্ঠের গজমোতির মালা তার কুচযুগকে স্পর্শ করে আছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন কন্দর্প শঙ্খ ভরে দুই কনক মহেশের ওপর সুরধুনী ধারা বর্ষন করছেন। শ্রীমতীর সুগঠিত ত্রিবলী সমন্বিত কণ্ঠদেশ তো শঙ্খকেও হার মানায়। আর সেই কণ্ঠদেশ বিলম্বিত মুকুতা মালা যে পীন পয়োধরে স্পর্শ করে আছে সে দুটিতো সাক্ষাৎ দুই স্বর্ণ শিবলিঙ্গ! মাধব শ্রীমতীর দর্শনে কি করেই বা নিজেকে স্থির রাখেন! মাধবের মনে হচ্ছে যে জন ত্রিবেণী সঙ্গমে শত যজ্ঞ উদযাপন করেছেন তিনিও যদি শ্রীরাধিকাকে পান তাহলে নিজেকে পরম সৌভাগ্যবান মনে করবেন! এমনই বহু সাধনার ধন আমাদের শ্রীমতী। আর তাঁরই প্রেমে আকূল আমাদের বনমালী বিদ্যাপতি বলছেন মাধবও আমাদের যে সে নন তিনি গোকুল-নায়ক, সকল গোপীজনের মনোলোভা! সেই গোকুল নায়ক, শ্রীমতীর প্রেমে উৎসর্গ করেছেন নিজেকে। এক বার তাঁর দর্শন করে, হাজার বর্ণনাতেও সে রূপের ব্যাখ্যা করে উঠতে পারছেন না!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী